সেদিন সন্ধের পর সেনবাড়ি রোড ধরে মেসে ফিরছিলো অনিকেত । যথারীতি তার কাঁধে ঝোলানো ছিলো একটা থলে । তার থলে সবসময়ই বিভিন্ন প্রকার বইয়ে পরিপূর্ণ থাকে । আজও তার ব্যতিক্রম ছিলো না । সার্কিট হাউজ মাঠে একটা বিশেষ কাজে গিয়েছিলো ।

সেদিনের সেই ক্লান্ত মুখটা বিনুকে বড্ড অস্থির করে তুলেছিল। কোন ছল করে হলেও তাঁর সাথে যে বিনুর দেখা করা চাইই চাই।
অনেক কষ্টে দেখা করার একটা উপলক্ষ তৈরি করতে পারলো।

দেখো নীলা, বিছানায় অর্ণব কত সুন্দর করে ঘুমাচ্ছে, মুখটা কত নিষ্পাপ সুন্দর! আচ্ছা নীলা, তুমি তো অর্নবের মা, আমার জীবনসঙ্গিনী। ধরো, তুমি একটি দানা পেলে খাওয়ানোর জন্য সারা পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে, যে দানা ভাগ-জোখ করা যাবে না। যে খাবে সেই বাঁচবে, অপরজন চলে যাবে। কাকে খাওয়াবে?

এই ঘ‌রের দ‌খি‌নে জানালা নেই তাই প‌শ্চি‌মের খোলা জানালাটা দি‌য়েই হালকা কিন্ত মি‌ষ্টি কা‌মিনী ফু‌লের সুঘ্রাণ মেশা‌নো বাতাস আস‌ছে । এই বাতা‌সের সা‌থে যেমন ভা‌লোবাসা মি‌শে থা‌কে তেম‌নি হাহাকারও মেশা‌নো থা‌কে ।

উত্তুরে বাতাসে কেমন যেন একটা মাদকতা মিশে থাকে। গাছে গাছে পাতায় পাতায় কীসের যেন অজানা শিহরণ। সদ্য যৌবনার মতো রহস্যময় লুকোনো পদচারণ...ফিসফিসিয়ে কানাকানি। আর অকারণে হেসে লুটিয়ে পড়া ঝঙ্কারের মতোই ব্যস্ত হাওয়ারা শব্দ তোলে শনশন।

জালের ঠিক মাঝখানে বসে আছে মাকড়শাটি। কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাতের ঠাণ্ডার পরিমাণ বোঝা যাচ্ছে মাকড়শাটির জালের গায়ের বিন্দু বিন্দু ছোট-বড় শিশির কণা দেখে।

“কি ভালো আমার লাগলো এই আকাশের দিকে তাকিয়ে,
চারদিক সবুজ পাহাড়ে আঁকাবাঁকা, কুয়াশায় ধোঁয়াটে,
মাঝখানে চিল্কা উঠছে ঝিলকিয়ে!”

এখনো মাঝে মাঝে বিকালের সূর্যের আভায় লাল হয়ে যাওয়া পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে এসব কথা ভাবে ফাতেমা, যদিও এ সবিই পাঁচ-ছয় বছর আগের কথা। এখন তার ভাইও তার সাথে কথা পড়ে, সে তার মত না, কথাও বলতে পারে।

চাচা আপনার ছেলে নেই? চাচা বলল- ছেলে আছে বাবা। তোমার থেকে বড়। ছেলের আবার দুই ছেলে মেয়ে। আমি বললাম- ছেলে কি করে?

এই বাড়ির পেছনদিকে যাওয়ার দুটো দরজা আছে। একটি দরজা কিচেন থেকে, অন্যটি গ্যারেজ থেকে। দুটো দরজা থাকার কারণ আছে। গ্যারেজ থেকে যে দরজা, সে দরজা দিয়ে পেছনদিকে গেলে নাক বরাবর ছোট খুপরি ঘর আছে,

সুমনার প্রস্তাব শুনে তরুণ দোটানায় পড়ে গেছে। সে বলল, ‘এভাবে ঘর পালালে লোকে কি বলবে?’
‘লোকে বলবে আমার ছাই! লোক-লজ্জার ভয় থাকলে প্রেম করতে বলেছিল কে? তাও আবার একজনের বউয়ের সাথে!’ তরুণকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সুমনা।

বর্ষাকাল চারিদিকে পানি থৈ থৈ করছে, তার মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম। গ্রামের নাম অজান্তাপুর। এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষই জেলে। মাছ ধরাই তাঁদের বংশগত পেশা।

রাস্তার এপাশে দাঁড়িয়ে ভাবছে শৈলেন রায়, ঐপাশে যাবে কিনা। ঐপাশের এলাকাটা, সহজ বাংলায় যাকে বলে বেশ্যাখানা, শুদ্ধ বাংলায় পতিতালয়। শৈলেন এর আজ মন ভালো নেই,

বিরক্তিটা গলায় যথাসম্ভব ফুটিয়ে তুলে বলি আমি, কমফর্টারটা আর একটু ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে। মার্চ পড়ে গেলেও, আজ গুগল ওয়েদারে পনেরো দেখাচ্ছে। সপ্তা'র সবেধন নীলমণি রোব্বার। এইমাত্র টেবিল-ক্লকটা কাঁপতে কাঁপতে আড়াইটের অ্যালার্ম বাজিয়ে শান্ত হয়েছে। আকাশের যা অবস্থা তাতে যেকোন সময় হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামবে।

বাসার সবাই ভালো আছে রে?
-হুম ভালো
হোসনে আরা কেমন আছে?
-হোসনে আরা?? হোসনে আরা তো মারা গেছে!!!
মারা গেছে ???