যে আগুনে অন্তর জলে

কামনা (আগষ্ট ২০১৭)

জসিম উদ্দিন আহমেদ
  • ১০
  • ৪৬

সুমনার প্রস্তাব শুনে তরুণ দোটানায় পড়ে গেছে। সে বলল, ‘এভাবে ঘর পালালে লোকে কি বলবে?’
‘লোকে বলবে আমার ছাই! লোক-লজ্জার ভয় থাকলে প্রেম করতে বলেছিল কে? তাও আবার একজনের বউয়ের সাথে!’ তরুণকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সুমনা। সুমনা খুব নির্বিকার ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে। যেন লোক লজ্জার ভয় থাকলে কারো প্রেম করতে নেই।
তরুন ভাবতে শুরু করে দেয়। সে ভাবুক টাইপের ছেলে। কোন একটি জটিল বিষয় সামনে এলে সে ভাবনার খোরাক পেয়ে যায়। এই মুহুর্তে তার ভাবনার বিষয়, যাদের লোক-লজ্জার ভয় বেশি তাদের গোপন প্রেম অভিসার ইত্যাদি করা উচিত কি-না!

সুমনার সামনে এলে তরুণের সকল ভাবনা এলোমেলো হয়ে যায়। যাকে বলে একেবারে আউলাঝাউল। সত্যি! পুরুষের মাথা আউলাঝাউলা করে দেয়ার মত রূপ ও ‘যোগ্যতা’ দুটোই সুমনার আছে। সে খুব একরোখা। নিজের যা প্রয়োজন তা হাসিলের জন্য যা যা করা দরকার তা করতে সুমনা একেবারে সিদ্ধহস্ত। এক্ষেত্রে ন্যায়নীতি ও যুক্তিতর্কের ধার সে খুব একটা ধারে না। নিজের কাজের স্বপক্ষে অকাট্য সব যুক্তি দাঁড় করাবার ক্ষমতা রয়েছে তার।

তরুন সুমনার ঠিক বিপরীত স্বভাবের। সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণহারা। নিজের ন্যায়সঙ্গত দাবিও সে কারো কাছ থেকে আদায় করতে পারে না। সে কথা খুব কম বলে, যেটুকু বলে তা সঠিকভাবে বলতে না পারার কারনে শ্রোতা কথা শুনার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। ফলে তাকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল বুঝে চলে যায়। নিজের কথা গুছিয়ে কাউকে ভাল করে বুঝাতে তো সে পারেই না বরং অন্যের দেয়া বুঝ নিয়ে ফিরে আসে। নিজের সামন্য ভুলচুক হয়ে গেলে অপরাধবোধ তাকে গ্রাস করে। তখন সারাটা দিন কাটে তার অনুশোচনা করে। তাই বলে সে যে পুনরায় ভুল করে না তা নয়। বরং তরুণের অনুশোচনার পরিমাণ যত বেশি হয় ভুলের পরিমাণও তত বেশি হয়। বলা যায়, সে অনুশোচনা করে পুনরায় ভুল করার বৈধতা পাওয়ার জন্য; নিজেকে সংশোধন করার জন্য নয়। আত্মনিমগ্নতা আর অনুশোচনা করা ছাড়া পৃথিবীতে করার জন্য আরো কিছু থাকতে পারে তা তরুণের ধারণার বাইরে! জগতের সকল বিষয়ে তার রয়েছে বিতৃঞ্চা আর অবিশ্বাস। এরকম একজন পেসিমিস্ট ছেলের সাথে অপটিমিস্ট সুমনার জুড়ে যাওয়াটাও কাকতালীয়।

সুমনার স্বামী মজনু মিয়া নেতা-গোছের লোক। এলাকায় তার প্রভাব প্রতিপত্তির কমতি নেই। শালিস বিচার থেকে শুরু করে সবার ভাল মন্দের দেখভাল সে করে! বছর দশেক আগে যখন সুমনার রূপ যৌবনের নেশায় মাতোয়ারা হয়ে একাধিক পাণিপ্রার্থী তাকে পাওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে অশুভ প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়ে এলাকার শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই সেই রঙ্গমঞ্চে মজনু মিয়ার আবির্ভাব ঘটে। রাজনীতিতে কোন সংসদীয় আসনে নির্বাচনের সময় একই দলের একাধিক প্রার্থী হলে দলীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে যেমন দলের কর্তাব্যক্তি নিজেই সেই আসনে নির্বাচন করেন অথবা ছোট বাচ্চাদের হাতে কোন ‘মারণাস্ত্র’ পড়ে গেলে বড়রা যেমন সমূহবিপদের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে তা কেড়ে নিয়ে ছোটদের উদ্ধার করে, মজনু মিয়াও তখন সুমনাকে বিয়ে করে সকলকে উদ্ধার করেছিল! কিন্তু সৃষ্টিকর্তাই জানেন কোন লোভের বশবর্তী হয়ে তিনি সুমনাকে সকলের সামনে হতে ছোঁ মেরে তুলে এনেছিল। তারপর দশটি বছর কেটে গেছে। সুমনার একমাত্র ছেলের বয়স এখন আট বছর। রাজনীতি আর নিজের ব্যবসায় ব্যস্ত মজনু মিয়ার দশা অনেকটা পাড়া-বেড়ানো মোরগের মত, সারাদিন পাড়া বেড়িয়ে শুধু রাতের বেলাটা নিজের খোপে এসে যে মোরগ রাত কাটায়।

নির্ঘুম এক একটা রাত সুমনার কাটতেই চাইত না। বাড়ীটা তার জন্য নরকে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। নিজের কামনার আগুনে সে অনেককেই দগ্ধ করতে চেয়েছে। কিন্তু মজনু মিয়ার ভয়ে কেউ তার অশুভ আহবানে সাড়া দেয় নি। এমনি এক সময়ে তরুন মজনু মিয়ার বাড়ীতে প্রবেশ করে। প্রথমে সে মজনু মিয়ার চাউলের আড়তে জমা খরচের হিসাব কষত। কিন্তু তরুনের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে মজনু মিয়া তাকে বাড়ীতে ঠাঁয় দেয়। ছেলেটি অসহায়, তবে শিক্ষিত ও ভদ্র। তরুনের দায়িত্ব পড়ে আড়তে ম্যানেজারি করার পাশাপাশি বাড়ীতে থেকে মজনু মিয়ার ছেলে অভিকে লেখাপড়া শিখানোর। আজ তিন বছর ধরে সে অভিকে পড়ায়।
প্রথম প্রথম সে সুমনার আহবানে সাড়া দেয়নি, যদিও সুমনার রূপ যৌবন তাকে দূর্বার গতিতে টানত। যে তাকে আশ্রয় দিয়েছে, তার সাথে বেঈমানি করতে কিছুতেই তরুনের মন সায় দিত না। কিন্তু নৈতিক শক্তি বলে কোন জিনিস তরুনের কোন দিনই ছিল না। অন্যদিকে সুমনা ছিল খুবই দৃঢ়চেতা মেয়ে। সে যা চায় তা যেকোন মূল্যে হাসিল করে নিতে জানে। তরুনের বেলাতেও তাই হয়েছে। সুমনার কামনার কাছে অল্পদিনেই তাকে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। তারপর থেকে সে সুমনার হাতের পুতুল হয়ে গেছে, একেবারে সেক্সডল।

তরুন ভাবনায় ডুবে থাকে। সুমনা আবার প্রশ্ন করে, ‘তাহলে কালই আমরা বেরিয়ে পড়ছি?’ তার কথায় প্রশ্নের চেয়ে আদেশের মাত্রা বেশি।
‘আমি বলছিলাম কী-’ তরুন আমতা আমতা করে।
সুমনা চোখমুখ কঠিন করে তরুনের দিকে তাকায়। ‘আমাকে নিয়ে তোমার কিসের ভয়? খেতে পরতে দিতে পারবে না এই ভয় তো। আমি তোমাকে বলছি, না খেয়ে মরে গেলেও কোনদিন তোমার কাছে অভিযোগ করব না। আমার ভালবাসা এত ঠুনকো না।’
তরুন বলে ‘আমি আমাদের কথা ভাবছি না। আমি অভির কথা ভাবছি। আমরা এভাবে পালিয়ে গেলে বিষয়টি ওর মনে কী প্রভাব ফেলবে একবার ভেবে দেখেছ! এই বয়সে মা-হারা হলে..’
সুমনা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। অভি তার ছেলে। মা হয়ে নিজের ছেলের কথা যে সে ভাবেনি তা নয়। কিন্তু অভিকে সাথে করে নিয়ে যেতে চাইলে অনেক ঝামেলা হবে। ছেলেটা হয়েছে তার বাবার মত। এই বয়সেই ওর মধ্যে একটা নেতা নেতা ভাব চলে এসেছে। তাছাড়া তাদের সাথে করে নিয়ে গেলে অভির ক্ষতিই হবে। অভি তার বাবার কাছে থাকলে নিশ্চিত একটা আশ্রয় তো পাবে। তরুনকে সে জানত দায়িত্বজ্ঞান হীন নিরেট গাধা হিসেবে। অভির প্রতি তার মমতা দেখে সুমনার ভাল লাগে। এইটুকু জেনে সে শান্তি পায় যে, দায়িত্ব জ্ঞানহীন একটা বোকার সাথে সে জুড়ে যায়নি। নিজের মনের ভাবকে চাপা রেখে সে তরুনের উদ্দেশ্যে ব্যঙ্গ করে বলে, আমার ছেলের কথা তুমি খুব ভাব দেখছি। মা যেমন তেমন এখন তো দেখছি ছেলের প্রতিই তোমার দরদ বেশি। আসলে সবই তোমার অজুহাত। এটা সেটা বলে তুমি আমার কাছ থেকে পালাতে চাইছ!
তরুন অভিযোগ খন্ডণের চেষ্টা করে। বলে, ‘তুমি সব সময় আমাকে ভুল বুঝতে থাক। আচ্ছা, এক কাজ করলে কেমন হয়। অভিকেও আমাদের সাথে নিয়ে যাই চলো!’
‘আহারে আমার মহামানব! আপনি শুতে জায়গা নেই আবার শংকরাকে ডাকে! ওসবে আমার কাজ নেই। আমাকে কোথাও নিয়ে যেতে হবে না তোমার। থাক তুমি তোমার মত করে। আমি সত্যিই তোমাকে খুব বিরক্ত করি। আজকের পর থেকে আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করব না। এই বলে দিলাম’, সুমনা প্রেমিকের উপর অভিমান করে। তার দুচোখে পানি। সে তরুনকে সত্যিই ভালবেসে ফেলেছে!
বাক-বিতন্ডার শেষে বরাবরের মত সুমনারই জয় হলো। দুজনে মিলে স্থির করল, আগামীকাল কাকডাকা ভোরে সকলের অগোচরে তারা দুইজন নিরুদ্দ্যেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেবে! অভিকে তারা সাথে নিবে না। অভি তার বাবার কাছেই থাকবে। এতে অভির জন্য মঙ্গল হবে।


স্ত্রীর পলায়নের খবর যখন মজনু মিয়ার কানে পৌছাঁল, তখন তিনি তাঁর আড়তে বসে শালিস করছিলেন। কাকতালীয় বিষয় এই যে, মজনু মিয়া সেদিন একজনের বউপালানো কেসেরই শালিস করছিলেন। তার ভিতর নিজের বউয়ের সুকীর্তির কথা তার কানে এসে পৌছাঁয়। খবর শুনে তার মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা দিল না। খবরবাহক মিজান মজনু মিয়ার তরফ হতে যেরকম রি-অ্যাকশন আশা করছিল তা দেখতে না পেয়ে কিছুটা হতাশ হল। খবরটা সে মজনু মিয়াকে মোবাইল ফোনেও জানাতে পারত। কিন্তু বউ পালানোর খবর শুনে তার লিডার মজনু মিয়ার অভিব্যক্তি কেমন হয়, সেটা দেখার জন্যই সে সরাসরি এসে মজনু মিয়াকে খবরটা দিয়েছে। মিজান অধৈর্য হয়ে পুনরায় মজনু মিয়ার কানে খবরের পুনরাবৃত্তি করে। এবারও মজনু মিয়ার তেমন ভাবান্তর হলো না। সে মুখে শুধু বলল, ‘যাক চলে! মাগির *** খুৃব বেশি।’ তারপর আবার সে শালিসে মনযোগ দিল।
মিজান অতি উৎসাহী ছেলে। যে কোন বিষয়ে তার অহেতুক কৌতুহল। তার লিডার মজনু মিয়া কাউকে ধরে আনতে বললে সে তাকে বেঁধে নিয়ে আসে। কিন্তু এরকম একটা ঘটনায় লিডারের নিরাবতা দেখে সে আশাহত হলো। সে মজনু মিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ভাই ঘরের ইজ্জতের ব্যাপার। কয়দিন পর নির্বাচন। আপনে একটা কিছু করেন। ভাবিকে যেকোন মূল্যে ফিরিয়ে আনতে হবে। দেরি হলে হারামির বাচ্চা মাস্টারটা হাতছাড়া হয়ে যাবে! আমাদের ভাবির মত এরকম সহজ সরল মেয়েকে ফুসমন্তর দিয়ে ঐ মাস্টারটা....’

মজনু মিয়া মিজানের দিকে তাকায়। মজনুর চোখ পিটপিট করছে। লিডারের চোখ পিটপিট করার অর্থ মিজানের জানা আছে। এবার ভয়ানক কান্ড কিছু একটা ঘটবে। মিজান মনে মনে খুশি হয়। সবসময় একটা ঝামেলার ভিতর দিয়ে না গেলে মিজানের ভাল লাগে না!
মজনু মিয়া খুব শান্ত গলায় বলে, ‘কোন দিকে গেছে বান্দির বাচ্চারা! সবখানে মোবাইল করে দে, যেন কোনভাবেই পালাতে না পারে!’

কয়েক ঘন্টার মধ্যে সুমনা ও তরুন মজনু মিয়ার লোকের কাছে ধরা পড়ে যায়। দুইজনকে মজনু মিয়ার নিকট হাজির করা হয়েছে। তারা অপরাধীর মতো হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে আছে।
মিজানের হাত নিসপিস করছে। এতবড় অপরাধীকে ধরার পরও সে কোন মারধর করতে পারেনি। মজনু মিয়ার কড়া নির্দেশ ছিল কেউ যেন তরুনের গায়ে হাত না তোলে!
মজনু মিয়া শান্ত গলায় তার বউকে বাড়ী পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তার সাথে বোঝাপড়া পরে হবে। তারপর সে তরুনের জামার কলার ধরে টানতে টানতে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। মিজান সাথে আসতে চাইলে মজনু মিয়া হাত ইশারায় মিজানকে থামিয়ে দেয়।
এতবড় একটা ঘটনার কোন এ্যাকশান হচ্ছে না দেখে মিজান হতাশ হয়েছিল। কিন্তু এবার কিছু একটা ঘটবে। লিডার হয়ত মাস্টার ব্যাট্যাকে জানেই মেরে ফেলবে। কত বড় কলিজা ব্যাটার, লিডারের ঘরের ইজ্জতের দিকে হাত বাড়ায়! ওই মাস্টার ব্যাটার মরাই উচিত! মিজান মনে মনে খুশি হয়!

মজনু মিয়া চেয়ারে বসে একের পর পর এক সিগারেট টেনে শেষ করছে। তরুন তার পা জড়িয়ে ধরে আছে। মজনু মিয়া যতই বলে, ‘তোমার কোন ভয় নেই মাস্টার! আমি আমার স্ত্রীকে ভাল করে চিনি! তুমি পা ছেড়ে উঠে বস’। তরুণ আরো শক্ত করে পা জড়িয়ে ধরে! তার ধারণা পা ছাড়লে মজনু মিয়া তাকে মেরেই ফেলবে!
‘আচ্ছা! আমার বউ নিয়ে পালিয়েই যখন গেলে তখন আবার আমাকে মোবাইল করে সেঁধে ধরা দিলে কেন? সাহসে কুলায় নাই?’ মজনু মিয়া শান্ত স্বরে জিজ্ঞেস করে। এই একই প্রশ্ন সে এতক্ষণ যাবৎ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করেই যাচ্ছে কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছে না।
তরুন এবারও উত্তর দেয়না। মজনু মিয়ার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। সে সজোরে লাথি মেরে তরুনকে মেঝেতে ফেলে দেয়,‘বান্দির বাচ্চা! আমার সাথে তামাশা কর! আমার বউ নিয়ে পালিয়ে যাও আবার আমাকেই ফোন করে খবর জানাও কোথায় পালিয়েছ! আমি তোমার তামাশার পাত্র! তামাশা আমি বের করছি!’
তরুন মেঝ থেকে উঠে ধাতস্থ হয়। লাথি খাওয়ার পরে তার জবান খোলে। সে লম্বা কাহিনী শুরু করে দেয়। তার জীবনের কাহিনী। তরুন যখন অভির বয়সী তখন এমনি করে তার মা তাকে রেখে একজনের হাত ধরে পালিয়ে যায়। মা-হারা হয়ে তরুন সারা জীবন যে কষ্টের ভিতর দিয়ে বড় হয়েছে অভির জীবনেও সেরকম কিছু ঘটুক তা সে চায় নি। মায়ের কামনার খেসারত তরুনের মত অভিকেও সারাজীবন দিয়ে যেতে হবে তা তরুন কিছুতেই হতে দিবে না। তাই বিবেকের দংশন সহ্য করতে না পেরে সুমনার অজ্ঞাতে সে মজনু মিয়াকে মোবাইল করে ধরা দিয়েছে।
মজনু মিয়া ধৈর্য্য ধরে তার প্রতিটি কথা শুনে আর যাচাই করে সে সত্যি কথা বলছে কি-না। হ্যাঁ! মাস্টার সত্যি কথাই বলছে! মজনু মিয়া আগের মত শান্ত গলায় তরুনকে বলে, ‘মাস্টার তুমি আর কখনো এই এলাকায় আসবা না! তোমারে যেন আমি আর কখনো না দেখি!

তরুনকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে ঘর থেকে বের হতে দেখে মিজান নিরাশ হলো। এবার সত্যি সত্যি তার ধৈয্যচ্যুতি ঘটল। সে মজনু মিয়াকে গিয়ে বলল, ভাই আর তো মেনে নেয়া যায় না! এই হারামির বাচ্চাটা এখনো সুস্থ শরীরে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে! আমি তো আর সহ্য করতে পারছি না ভাই!’
মজনু মিয়া মিজানকে স্বান্তনা দেয়। ‘ব্যাটা! মনটা বড় করতে হয়! সব সময় ছোট কাম করলে চলে না, মাঝে মাঝে মহৎ কামও করা লাগে! মনটা বড় র্ক! মনটা বড় র্ক!’
মিজান ফ্যালফ্যাল করে তার লিডার মজনু মিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মজনু মিয়ার কথা আজ তার মাথায় ঢুকছে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিনায়ক চক্রবর্তী বেশ লাগল। এ-সংখ্যায় অনেককটাই ভালো গল্প পড়লাম।
অশেষ ধন্যবাদ, দাদা।
মোঃ মোখলেছুর রহমান গল্প ও বিষয় যুতসই, বর্তমানটাও বেশ উঠে এসেছে,ভোট সহ শুভকামনা রইল।
কেতকী দাম্পত্যজীবনে উভয়ের প্রতি উভয়ের আন্তরিক থাকাটা জরুরী। নইলে সুমনাদের বিপথ যাত্রা অনিবার্য। যদিও বেশিরভাগ মেয়েরাই নীরবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। শুভেচ্ছা সহ ভোট রইল।
শায়লা আক্তার বেশ সুন্দর গল্প। পাঠে মুগ্ধ হয়ে ভোট রেখে গেলাম।
ইমরানুল হক বেলাল গ্রাম্য সমাজের নানান কর্ম কান্ড ফুটে ওঠেছে আপনার লেখায়। সত্যিই প্রশংসনীয় রচনা। পাঠে ভোট (4) এবং মুগ্ধতা রেখে গেলাম। আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
বেলাল ভাই, কোন জায়গায় ‘গন্ডগোল’ আছে তা কিন্তু উল্লেখ করেন নি। উল্লেখ করলে সংশোধনের সুযোগ পাব।
সেলিনা ইসলাম আপা যা বললেন, আমার ও একই মত। তবুও সুন্দর হয়েছে গল্পটি।
সেলিনা ইসলাম গল্পের প্রথমে ভূমিকাটুকু বাদ দিয়ে যদি সুমনার মত মেয়েরা কেন এমন জঘন্য ঘৃণিত পথ বেঁছে নিতে বাধ্য হয়? এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত উল্লেখ করা হত তাহলে গল্পটা আরও বেশি ভালো হত। শেষে এসে তরুণের মায়ের কথাটা গল্পে খুব জঘন্য লেগেছে। যে ছেলের মায়েরও ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে সে আর যাই করুক সেই ঘটনার প্রথম দিকেই নিজেকে সরিয়ে নেবে। বা ঐ নারীকে নিবৃত করবে। প্রয়োজনে নিজের জীবনের ঘটনা জানিয়ে হলেও। এখানে সুমনার চেয়ে তরুণ দায়ী বেশি। আর যদি সে নারীর প্রতি ঘৃণা থেকে(মায়ের কারণে) এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকে? তাহলে গল্পের বিষয়টি ঠিক আসে না। যেটাকে ফিগার অফ স্পিচ বা ভাষালঙ্কার বলা হয় তা মিসিং মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে গল্পে আরও কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। আরও ভালো ভালো লেখা পড়ার প্রত্যাশায় শুভকামনা সতত।
গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তরুনের চরিত্রটি যদি আপনি বিশ্লেষণ করেন তাহলে দেখবেন যে, সে একজন অস্থির চরিত্রের লোক। নিজের উপর তার কোন আস্থা নেই। সে কোন অপরাধ করে বারবার অনুশোচনায় ভোগে, কিন্তু সেই অপরাধের বৃত্ত হতে বেরিয়ে আসতে পারে না। এককথায় তার নৈতিকতা বলে কিছুই নেই। আর একটা বিষয়, বাবা মা যে ধরণের ভুল করে তা জানা সত্বেও সন্তানরা যে একই প্রকার ভুল করে না তা নয়। বহু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ পিতার সন্তানেরা বড় হয়ে ঠিক একই ভুল করছে। যে মেয়ের মা সংসার ত্যাগী হয়েছে, বড় হয়ে আমরা দেখি সেই একই দোষ মেয়ের মধ্যেও বিরাজ করছে। এগুলো তো হরহামেশাই ঘটছে। আপনি অারেকটা জিনিস লক্ষ্য করে থাকবেন, কন্যা দেখার সময় লোকে কন্যার সাথে সাথে তার মায়ের স্বভাব-চরিত্রেরও খোঁজ খবর করে, এর কারণ কী? কারন জিনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে মায়ের কোন খারাপ স্বভাব মেয়ের উপর যাতে না পড়ে এটাই যাচাই করা। তরুনের ক্ষেত্রেও বিষয়টা সেরকম। কিন্তু সে সুমনার আশ্রিত, একদিকে সুমনাকে পাওয়ার লোভ, অন্যদিনে এই অপরাধের পরিণাম ও ভয়াবহতা সম্পর্কে সে জ্ঞাত বলে পালিয়ে গিয়েও সে মজনু মিয়ার কাছে সেঁধে ধরা দিয়েছে।.. প্রত্যুত্তর করতে গিয়ে আরেকটি গল্প লিখে ফেলাম। দোষক্রটি মার্জনীয়। শুভকামনা রইল।
আসলে তর্কের খাতিরে মন্তব্য করিনি বা ভুলও ধরছি না। লেখকের দায়িত্ব সমাজকে আলোর পথ দেখানো। লেখাটা পড়ে সমাজের মানুষের যাতে ভালো কিছু হয় এটাই লেখকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ ভেবেই কথাগুলো বলেছিলাম। আপনি যে উদাহরণগুলো তুলে ধরেছেন তা খুবই বিরল ঘটনা। দুই একটা ঘটনা কখনো উদাহরণ হতে পারেনা। কিন্তু আপনার লেখায় যে বিষয়টি খুব জোরালোভাবে এসেছে আমাদের সমাজে তা বর্তমানে ভয়াবহ একটা সমস্যা। আর এইজন্যই আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম। এখানে আমরা যারা লেখালেখি করি তারা সবাই একজন আরেকজনকে লেখা পড়ে পরামর্শ দেব এটাই সবার সবার মুল উদ্দেশ্য হওয়া বলে আমি মনে করি। লেখা ভালো হলে ভালো বলব তেমনি ভালো না হলে বলব ভালো হয়নি। তোমার/আপনার কাছে থেকে আরও ভালো লেখা আশা করি। যতটা প্রাপ্তি তার থেকে একটু কম বললে লেখকের উপর হয়। কিন্তু বেশি বললে লেখকের বরং ক্ষতিই হয়। এটা আমি সব সময় মাথায় রাখা চেষ্টা করেই মন্তব্য দেবার চেষ্টা করি। এটা একজন পাঠক হিসাবে আমার লেখকের প্রতি ভালোবাসাও বলতে পারেন। অতিরিক্ত বা অতিরঞ্জিত কিছু বলে কারো ক্ষতি করার চেয়ে চুপ থাকাই শ্রেয় বলে মনে হয়। আর তাই সবাইকে পরামর্শ আমি দেই না। আশাকরি কিছু মনে করবেন না। নিরন্তর শুভকামনা।
আপা, অাপনি যে গঠনমূলক পরমর্শ দিয়েছেন, তা আমি সাদরে গ্রহণ করছি। ভবিষ্যতের লেখায় তার প্রভাব দেখতে পাবেন। আমি অনেকটা ‘নেগেটিভ চরিত্র’ নিয়ে লেখতে চেষ্টা করি। ভবিষ্যতে পজেটিভ কারেন্টর নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। আর আপনি আমাকে ‘তুমি’ করেই সম্বোধন করবেন, আমি খুশি হব। অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
জসিম উদ্দিন আহমেদ আপনার পরামর্শ মনে থাকবে। আমার গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফেরদৌস আলম জসীম ভাই, গল্প অবশ্যই ভালো লাগলো। তবে কেন জানি বর্ণনাটা বেশ সাদামাটা মনে হল। উপমার উপস্থিতি, চমৎকারিত্ব এখনও পলাতক। তাই আরেকটু দেখবেন।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গ্রামীণ সমাজের বর্তমান কর্মকান্ড গুলো বেশ নৈশিকতার সাথে রুপায়িত করছেন। অনেক অনেক ভালো লাগলো ভাই। ভোট রইলো। সময় পেলে আমার পাতা ঘুরে আসারর আমন্ত্রণ রইলো....
আহা রুবন আজকালকার গ্রামের চিত্র বেশ দক্ষতার সঙ্গে এঁকেছেন৷ প্রথম দিকে বেশি ভাল হয়েছ৷ শুভেচ্ছা রইল৷

১২ ডিসেম্বর - ২০১৫ গল্প/কবিতা: ১৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪