অক্টোবরের মিঠে মিঠে শীতের সন্ধ্যায় দেশি রেস্তোরাঁয় কফি খেয়ে শুক্কুর মিয়ার সাথে গল্প করতে করতে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ ষ্ট্রিট ধরে শামসুল হক হেঁটে হেঁটে যখন ঘরে ফিরছিলেন তখন শুক্কুর মিয়া মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলেছিলেন, ‘হবে না।’শামসুল হক হাঁটা থামিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বলেছিলেন, ‘হবে না মানে? কেন …
চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। উস্কো খুস্কো চুল আর শীতের শুস্ক প্রভাবে ঠোঁট দুটো একদম ফেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়ার অবস্থা। পরণের জামাটি আর প্যান্টটিও ধুলোবালির আবরণ পড়ে নোংরা হয়ে গেছে। বিষন্নতার চাঁদরে যেন মুখটি ঢেকে গেছে। তবুও যেন বেঁচে থাকার প্রবল তাগিদে পথচলা। বিজয় কি, বিজয়ের স্বাদ কেমন, বিজয়ের স্বাদ …
advertisement
নভেম্বর ২০১৯ সংখ্যায় পাঠকদের ভোটে নির্বাচিত২৫টি গল্প ও ২৫টি কবিতা
গল্পের বিষয়“শীত”
কবিতার বিষয়“শীত”
শোন মিয়া। এই যে দেশের মাটিতে আজ দাঁড়ায় আছো! গলাবাজি,টাউটগিরি করে গুষ্টির বারোটা বাজাচ্ছো! এই মাটি যে অপবিত্র করতেছো- তা কি একবারও ভাবিছো?" গ্রামের মুদি দোকানে বসে আমি এভাবেই সবাইকে কথা শুনাচ্ছি! কিন্তু প্রচণ্ড কাশি আমাকে ভীষণ জ্বালাচ্ছে। বয়সও হয়ে গেছে। মনে হয় না কেউ আমার কথা শুনছে! আজকাল কেউ …
বদ্বীপের বংশী মাতার নামটি মুখে আসার সাথে সাথেই হৃদয়ে একটা মোচড় দিয়ে মনকে নিয়ে যায় সোনালী দিনের পরে নিরন্তর দুর অতিতের স্মৃতির পদটীকার বেদনাদায়ক নৈরাশ্যের এক বিভিশিখাময় অধ্যায়ে।ইতিহাস ও সংস্কৃতি হতে বাংলার প্রাচীনতম যে ইতিহাস পাওয়া যায় তার নির্যাস হচ্ছে যুগ যুগ শত বছর ধরে মানবতার উপর নির্মমতা। …
এখানে মার্চ মাসেও মৃদু মৃদু শীত অনুভূত হয়। বরুণ কুয়োর পাশে পিড়ি পেতে গায়ে সরিষার তেল মেখে নেয় একচোট। এতে শরীর কিছুটা গরম হয় আর কুয়োর পানিটা গায়ে ঠান্ডার কামড় বসাতে পারে না। বালতি দিয়ে পানি উঠিয়ে পাশে রাখা ড্রামটা ভরে নিল। ঝপাৎ ঝপাৎ পানি ঢেলে শরীর মুছতে মুছতেই হাক …
আব্দুল ওয়াদুদ সাহেব যথারীতি অফিসে গেলেন। যেতে তো হবেই। মন খারাপ থাকলে তো আর অফিসে না গিয়ে বসে থাকা যায় না। তাহলে তো চাকুরিটাই চলে যাবে। চাকুরিটা চলে গেলে তখন জীবনটা আরো দূর্বিষহ হয়ে উঠবে। তাইতো অফিসে যেতে হল তাকে। কিন্তু অফিসে গিয়েও কেন যেন সময় কাটছিল না তার। মন …
ভাষা যখন প্রাণ হারায়; হারায় যখন তার বাকশক্তি। নিঠুর নিস্তব্ধতা ঘিরে উছলে উছলে পড়ে শত কথা; শত ভালবাসার উক্তি।ক্ষেতের পাশে সারি সারি তাল গাছ আর দিগন্ত পানে তাকালে ধনুকের জ্যায়ের মত হালকা বাঁকানো গাছ-গাছালির তৈরি ধনুক বলে মনে হয়। সরিষা ক্ষেতে হলুদাভে ছেয়ে গেছে পুরো মাঠ। ফাঁকা মাঠের ভিতর …
সুখের প্রহরগুলো অসুখের দমকা হাওয়া এসে করে দেয় লণ্ডভণ্ড;কত শত রোগব্যাধী এসে সহসা দেহে বাঁধে বাসা,এখানে এই শহরে নিত্য রোগের মতই ছড়ানো যেনো কত শত ভন্ড;খাবারে ভেজাল মিশিয়ে ভণ্ডদের বুক পকেট হয় কড়িতে ঠাসা।এখানে এই শহরের পথঘাট বছর ধরে খুঁড়াখুঁড়ি...... সহসা কাজ বন্ধবর্ষার জল …
ছেলেটার পড়াশুনায় মন নেই। স্কুলের থেকে ফিরেই খেলতে চলে যায়। বাচ্চাদের খেলার যে খোলা জায়গাটা ছিল ,সেটা কারা যেন দখল করেছিল বিল্ডিং করবে বলে । সে ভীষন কষ্ট পেল। মা দেখলেন , ছেলেটা কাগজে বড় বড় করে লিখছে ,' মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাঠে পার্কে খেলার সুযোগ দিন', ' নগর …
ছুটির ঘন্টা পড়তেই ছেলে মিয়ে গুলো দৌড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে আসলো, তাদের বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসের ঢেউ ছরিয়ে পড়ছে চারিদিকে। প্রত্যন্ত গ্রামের ছোটবড় গাছের ভিড়ে নদীর কাছে এই স্কুলটারর চারদিক তাদের কোলাহলে প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। বই গুল হাতে নিয়ে দল বেধে গল্প করতে করতে বাড়ির পথ ধরে ছোট ছেলে মিয়ে …
এক চটকানা দিমু, হালার বেডা, তরে না কইছি খাইয়া এহন ঘুমা, তর পুলিশ বাপে আইলে এইহানে ঘুমাইবার দিবো না। লাইথ্থাইয়া খেদাইবো। তাইলে তুই এহন মাসি পিসির গানহান গা, হেলে ঘুম পাইবো। হারাদিন রাইত ঘুমাইতে পারুম । একজন মায়ের বুইন, আরেক জন বাপের বুইন। আইচ্ছা! হেরা কি হুদাই ঘুম পাড়ায় ? …
ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে একটা কাঠি হাতে মিছিল করে বাড়িময় দৌড়া দৌড়ি করছে ইসমাইল, বয়স ওর দেড় বছর সবেমাত্র। উঠানে বসে পান খাচ্ছিল রমিজ মিয়া সে দেখল নাতি কাঠি হাতে নিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে নাচছে , এক হাতে চুণ মুখে দিয়ে পানের পিক ফেলতে ফেলতে পাশে বসে থাকা রমিলা …
নিতু আপু মারা গেল ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সনে কাজলা গ্রামে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর । একটা দাগ টানা খাতায় যুদ্ধদিনের অনেক কথা লিখে রাখতেন তিনি। তার মৃত্যুর ৭ বছর পরে ১৯৭৮ সনে আমরা স্ব-পরিবারে কাজলা গ্রামে চলে আসি। শখের ঘুড়ি,লাটাই,ছিপ লাটিম আর দাদাবাড়ীর অকৃত্রিম ভালোবাসা …
আরিফের ঘুম ভাঙ্গে হট্টগোলের শব্দে। বেলা ৭টা হবে হয়তো। গত রাতে দম দেয়া ঘড়িটা অচল হয়ে আছে। সময় দেখাচ্ছে দুটো- এর মানে হলো রাত দুটোর দিকে ঘড়ির দমটা শেষ হয়েছে। চৌমাথার চায়ের দোকানটায় না যাওয়া পর্যন্ত সময় মেলানো যাবে না।বিছানা ছেড়ে পুকুর পাড়ে যেতে যেতে শুনতে পায় ঘটনার …
এক. ধোঁয়া ওঠা গনগনে গরম হারিসের প্লেটের দিকে কেবল হাত বাড়িয়েছি,'আংকেল' বলে একটা নরম মেয়েলী ডাক শুনে মাঝপথেই হাতটা থেমে গেলো। আস্তে করে হাতটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালাম। মখমলের পর্দা সরিয়ে একটা মুখ মজলিশের দিকে ঝুঁকে আছে। শরীরের বাকি অংশ পর্দার পেছনে। মেয়েটার মাথায় …
১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ই অগষ্ট মধ্যরাতে সুদীর্ঘ সংগ্রাম ও অসংখ্য মানুষের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বৃটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে অখন্ড ভারত। কিন্তু সেই ভারত মাস্টারদা বা রবীন্দ্রনাথের কল্পিত ভারত নয়, ধর্মের ভিত্ততে দ্বিখন্ডিত ভারত। রাডক্লিফ এর কলমের আঁচড়ে আমাদের সোনার বাংলাও ভাগ হয়ে গেলো পূর্ব বাংলা আর পশ্চিম …
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই দীপার সঙ্গে পরিচয় হয় রাজের। দীপাই প্রথম প্রশ্ন করে,কোন দল করেন?উত্তরে রাজ বলল, কোনো দল করি না। -কেন করেন না?-কারণ, বিদ্যমান দলগুলোর কোনোটির উদ্দেশ্য ও আদর্শই আমার ভালো লাগে না। তাছাড়া আমার কল্পনায় যে দলের অস্তিত্ব আমি অনুভব করি সে দলের আজও জন্মই হয় …