বাংলাদেশ

বাংলাদেশ (ডিসেম্বর ২০১৯)

আমেনা বেগম
  • 0
  • ৪২৬
ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে একটা কাঠি হাতে মিছিল করে বাড়িময় দৌড়া দৌড়ি করছে ইসমাইল, বয়স ওর দেড় বছর সবেমাত্র।
উঠানে বসে পান খাচ্ছিল রমিজ মিয়া সে দেখল নাতি কাঠি হাতে নিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে নাচছে , এক হাতে চুণ মুখে দিয়ে পানের পিক ফেলতে ফেলতে পাশে বসে থাকা রমিলা বেগমকে বলল,
শুনছ, রফিকের মা, নাতি তো ভাল নাচ শিখছে , রমিলা বেগমও নাতির দিকে তাকাল – হ কয়দিন ধরেই দেখতাছি লাডি হাতে নিয়া নাচে কই শিখছে কে জানে
নাচে গানও গায় কি গায় বুঝা যায় না। আর যাই কর বাংলাদেশি নাচ শিখাইয় না,পাকিস্থানি ভাষাও শিখাইবা নাচও শিখাইবা । আর কয়েকটা দিন তাইলেই পাকিস্থান মুক্তিযুদ্ধাদের মেরে শেষ করে দেবে। তারপর কি করবি তোরা খুব তো শেখ মুজিবরে লইয়া লাফাইতাছস এই লাফানি বেশিদিন থাকত না। রফিকের মা মেজর সাহেবরে দাওয়াত খাওয়াইয়াম খুব শখ আমার তুমি কয়েকজন লোক কইয়া রাখবা যারা ভালা কইরা রান্তারে । আহা! কয়জনের সৌভাগ্য হয় পাকিস্থানীদের যত্ন করার আল্লাহ আমারে সে সৌভাগ্য দিছে, খাঁসি কয়টা লাগে আজ মানিকরে লইয়া হিসাব করব।
হুনছুইন রফিকের বাপ আমি কই কি, পাকিস্থানীদের কাজ কারবার আমার ভাল্লাগে না, ছেলে বুড়া কাওরেই এরা নিস্তার দিতাছেনা সামনে পাইলেই মাইরা ফালায় মেয়েরারে ক্যম্পে ধরে নিয়ে যায়।
জলচৌকি উল্টিয়ে লাফিয়ে চোখ দুটো লাল করে হুংকার দেয় রমিজ মিয়া কি কইলা তুমি। একজন রাজাকার বাহিনির কমান্ডারের বউ হইয়া তুমি এই কথা কইলা তারা যদি হুনে এই পদে আমারে রাখব। আমার লাইগ্যা এই গেরামডা বাচছে দেহ গিয়া অন্য গেরামগুলি ধ্বংশ করে দিছে। আমিই ধরাইয়া দিছি খুজে খুজে । আর আমি জোয়ান মেয়ে ,ছেলে নাতি লইয়া ভাল আছি। দাও ছাতাডা পশ্চিম পাড়ের কুবেরের ছেলে নাকি মুক্তিবাহিনীতে গেছে ক্যাম্পে হেই খবর পৌছাঁতে অইব, আর হোন পাকিস্থানীরা যা করতাছে ভালর লাইগ্যাই করতাছে হেরারে খুশি করতে পারলে ভবিষ্যতে ভাল থাকবা। বল পাকিস্থান জিন্দাবাদ , নাতিডা তখনও লাঠি হাতে লাফাচ্ছে ,
রমিজ মিয়া নাতির কাছে বসল বল পাকিস্থান জিন্দাবাদ ,
নাতি লাফায়-ভাঙ্গা, ভাঙ্গা,
বল- পাকিস্থান, পাকিস্থান ,
ভাঙ্গা! ভাঙ্গা!
না কিযে ভাঙ্গা ভাঙ্গা শিখছস বুঝলাম না।
ভাষা শিখলে উর্দুটা শিখবি খানদানি ভাষা বড় অইলে কাজে দিব ।
নাতি কি বুঝল কে জানে সে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলেই নাচছে।
যাই মেজর সাহেব অপেক্ষা করতাছে।
রমিজ মিয়া চলে যাওয়ার পর রফিক বেরিয়ে এল ঘর থেকে মা আজকের মত যাই মা দোয়া কর।
পাশের ঘর থেকে বেরিয়ে আসে রেহেনা ভাইজান, আমারে নিয়া যাও দেশের এই বিপদে আমি কি করে ঘরে বসে থাকি ।
বোনরে অবশ্যই তোরে নিয়ে যাব, আগে একটা ব্যবস্থা করে নিই ,আপাতত তুই মা আর তোর ভাবিকে দেখে রাখিস যুদ্ধ শুধু অশ্র হাতেই হয়না রাজাকারের হাত থেকে মানুষকে বাচানোও একটা যুদ্ধ তুই আপাতত মুক্তিবাহিনীর ক্যম্পে খবর পৌছাতে থাক।
রফিক চলে গেল তিন জন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
মেজর সাহেব খুশ মেজাজেই আছেন , আজ মুক্তিবাহিনীর সাথে ছোট অপারেশন হয়েছে দুইটি মুক্তি কতল বাকিগুলো পালিয়ে গেছে। রমিজ মিয়াই তাদের মুক্তিবাহিনীর খবর দিয়েছিল। দুর থেকে রমিজ মিয়াকে আসতে দেখে জিঙ্গাস করলেন , কেয়া খবর রমিজ মিয়া সব ঠিক হ্যায়, আজ মিসন কামিয়াব রাহা হ্যায় । আপ ক্যায়া এজিন চাহাতা হ্যায়। নো নো মেজর সাব আপনি আমার বাড়িতে তসরিফ রাখবেন তাহাই আমি খুশি । হো একদিন হোগা। রমিজ সাহেব কানে কানে কি যেন বললেন মেজর সাব খুশিতে আটখানা হয়ে বলল । আজ রাততে পাট্টি হোগি। মেয়েলোককা পার্টি।
রেহেনা বোরকা পড়ে বাইরে বেড়িয়ে এল আজ কয়েকটা মেয়েকে ক্যম্পে ধরে নিয়ে যাবে ওদের সড়াতে হবে। রেহেনা শহরের কলেজে আইএ পড়ছে হোষ্টেলে থাকে এই গ্রামে তার চলাফেরায় কোন বাধা নেই কারণ সে রাজাকার কমান্ডারের মেয়ে তবুও তার বাবার ইচ্ছা সে বোরকা পড়ে চলাচল করুক। এতে তার বরং সুবিধাই হয়েছে একেক দিন একেক রংয়ের বোরকা পড়ে কোথায় যাচ্ছে তা কেউ বুঝতে পারছে না। তার বাবার খাস চাকর যার কাছ থেকে কৌশলে সে জেনে নেয় আজ কার উপর হামলা হবে। সে সেখানে গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। আজও সে জেনেছে রাতের পার্টি হবে তার ছোট বেলার বান্ধবী জোসনাকে দিয়ে জোসনার বিয়ে হয়েছিল কয়েকদিন পরই কলেরায় স্বামী মারা গেছে। অভাগী কোনমতে গরীব বাপের ঘর আগলে পড়ে আছে।
সে জোসনাদের বাড়ি চলে এসেছে , ঘরের ভিতরে ডুকে গেল মুখ খুলে বলল জোসনা এই বোরকাটা পড়।
কেন কি হয়েছে? কোথায় যাব? কোন কথা না। যা করতে বলছি কর। জোসনাকে বোরকা পড়িয়ে জঙ্গলের ভিতর দিয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে এল। বোরকা খোল আর ভয় নেই
কি হয়েছে সই?
রাতে শুনতে পাবি।
হা সন্ধার পর রমিজ মিয়া দলবল নিয়ে গেল জোসনাকে আনতে গিয়ে দেখল জোসনা পালিয়ে গেছে, রমিজ মিয়া জোসনাকে বের করার জন্য তার বাবাকে মারতে লাগল তার বাবা জানেনা জোসনা কোথায়, অগত্যা তার বাবাকেই ক্যম্পে ধরে নিয়ে এল জোসনা এলে তার বাবাকে ছাড়া হবে। জোসনা জেনে ফেলল তার বাবাকে ধরে নিয়ে গেছে। জোসনা ক্যম্পে যেতে চাইল রেহেনা বলল জোসনা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস, এটা আমি দেখব কিভাবে তোর বাবাকে আনা যায়।
আজ বিকেলে রেহেনা বাবার কাছে আবদার করল বাবা আমি পাকিস্থানীদের সাথে পরিচিত হতে চাই। বাবা প্রথমে রাজি না হলেও পরে চিন্তা করল কোনমতে মেজর সাহেব যদি তার মেয়েকে পছন্দ করে তাহলে জামাই বানাতে অসুবিদা কোথায়? আচ্ছা মা বোরকা পড়ে যাবা ছালাম দিবা আর হিন্দিতে কথা বলার চেষ্টা করবা।
ঠিক আছে বাবা
এ ক্যায়া হে রমিজ মিয়া
হামার লাড়কি স্যার।
বহুত সুন্দর!
কিয়া নাম হে তুমহারা
রেহেনা, ,মেরা নাম রেহেনা হ্যায়
তুম খানা পাকাইতে পার
জি সাব আমি সব পারি
বহুত আচ্ছা
রেহেনা চেয়ার ছেড়ে ক্যম্প ঘুরে দেখতে লাগল মেজর সাহেব পিছন পিছন আসছেন, এক জায়গায় জোসনার বাবাকে পেল সে তার বাধন খুলে দিল বলল যান চাচা।
এয়া কিয়া করতাহে রেহেনা। এ মেরা জাল হ্যায় উসকে খুব সুরত বেটি হ্যায় । ঠিক হ্যায় আপ চাতেহে গো হয়ে যাইয়েগা। মে আজ তোমহারি ঘর খানা খাউঙ্গা। তুম পাকায়ে আইচ্যে
ওকে স্যার, আজ তাহলে যাই।
ওকে সি ইউ এগেইন।
মেজর সাহেব খুশি মনে এদিকে আসছে রমিজ মিয়া তুমহারি বেটি বহুত সুন্দর মে আপকা বেটিকা হাতঙ্গ খায়েঙ্গা ।
সত্যি স্যার
সত্যি যাও খানা পাকাওউঙ্গে।
রমিজ উদ্দিন খুব খুশি রাতেই খানার পর সে মেজর সাহেবকে মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব দেবে। তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন মেজর সাহেব তার মেয়েকে পছন্দ করছে।
বাড়িতে ডুকতেই বাড়ির উঠানে দেখল নাতিকে কোলে নিয়ে বৌমা দাড়িয়ে আছে নাতির হাতে ছোট্ট সেই কাঠিটা তাতে একটা সবুজ কাপড়ের টুকরা বাধা, সে নাতির হাত থেকে কাঠিটা নিতে চাইল । নাতি কান্না শুরু করে দিল। ঠিক আছে দাদু আমাকে দিবানা এটা তোমার কাছেই থাক। বউমা একে তোমার শাশুড়ির কাছে দিয়ে খাবার আয়োজন কর। আজ মেজর সাব আমাদের এখানে খেতে রাজি হয়েছেন। আমি খাঁসি জবাইয়ের লোক নিয়ে আসি।
রেহেনা তারাতাড়ি বোরকা খুলল হা রাতেই তার মুক্তিবাহিনীকে খবর পৌছাতে হবে। খাওয়ার মাঝেই শেষ করতে হবে ওদের। জোসনাকে বলল তার বাপের মুক্তির খবর পিছন দিক দিয়ে আরেক বোরকা পড়িয়ে একটা চিঠি লিখে দিল মুক্তি বাহিনীর ক্যম্পে পৌছানোর জন্য। খুবই গোপন।
বাড়িতে বিশাল আয়োজন রমিজ মিয়া আনন্দে দৌড়াদৌড়ি করছে কখনও রান্না ঘরে যাচ্ছে ভাত যেন নরম না হয় , কখনও খাঁসিটা ঠিকমত সিদ্ধ যেন হয় , রেজালাটা ভাল করে রান্না করবি। বাড়িতে হ্যাজাক বাতির ব্যবস্থা হয়েছে । উঠানে দপ দপ করছে সাদা আলো। নাতিটার হাতে সেই সবুজ কাপড়ের কাঠিটা রয়েছে ওটা হাতে নিয়েই উঠানে দৌড়া দৌড়ি করছে। রমিজ মিয়া বলছে ,দাদু দাদু ওদিকে যাইয় না আগুনে পড়ে যাবে। একটু পরই মেজর সাহেব আসল সাথে আরও সাত আটজন পাকিস্থানী।
মেজর সাব বলল, রমিজ মিয়া খাসা খানা পাকিয়ে বহুত সুন্দর খুসবু আতি হ্যায়
মে গরীব নাদান স্যার সামান্য আয়োজন ঘরে আইয়ে স্যার।
রমিজ মিয়া চাকরদের দিয়ে সব ঘরে এনে আচ্ছা মত খাওয়াইলেন।
রমিজ মিয়া বহুত আচ্ছা খানা খায়েঙ্গে ও ঘর হ্যায় বুলাও তুমহারা সুন্দরী বেটিকে আর সুন্দরী বধুয়াকে আজ রাত মেরা পার্টি উতা কার সাথ
কি বলেন স্যার আমার মেয়ে কুমারী স্যার , আপনি আমার মেয়েকে বউ রুপে গ্রহণ করুন। হা হা হাসালে রমিজ মিয়া থুরা বাঙ্গালী তুম পাকিস্থানী জামাই চাতাহে তুমহারা বেটিকে একরাত মেরা বহু বানেগা হা হা হা চলিয়ে। আর তুমহারা পুত্রবধুকে একরাত।
পাকিস্থানী বেঈমান তুই আমার মেয়ের দিকে এই নজরে তাকাইসিছ , আমি তোরে ...
রাজাকার রমিজ তোর চাকরি খতম বলেই গুলি করে বসে রমিজ মিয়াকে, চার পাঁচ জন ধরে নিয়ে আসে পাশের ঘরে থাকা রেহেনা ও রফিকের বউকে।ভয়ে চাকর বাকরেরা সব পালিয়েছে ততক্ষণে মুক্তিবাহিনী ঘিরে ফেলেছে পুরো বাড়ি।শুরু হয়ে গেল পাল্টাপাল্টি আক্রমণ মেজর সাহেব গুলি করল রেহেনা ও রফিকের বউকে রফিকের বাচ্চাটা সবুজ কাপড়ের কাঠিটা হাতে নিয়ে তখন্ও পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছিল।মুক্তিবাহিনীর হাতে মারা গেল মেজর সাব সহ ৮ জন পাকিস্থানী। মুক্তিবাহিনীর চারজন গুলি খেল , রফিকও ছিল ওই বাহিনীতে। জয়বাংলা বলে চিতকার দিয়ে সে ঘরে এসে ডুকল রফিকের বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠে বিছানা থেকে নেমে মায়ের দেহের পাশে এসে দাড়িয়েছে হাতের কাঠিটা পড়ে গেল মায়ের রক্তে ভেজা বুকের উপর । কাঠিতে লাগানো সবুজ কাপড়টা লাল হয়ে গেল রক্তে। জন্ম নিল একটি পতাকা জন্ম নিল একটি দেশ বাংলাদেশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান অনেক ভাল লিখেছেন। স্বাগত গল্প কবিতায়।
ভালো লাগেনি ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯
সাইদ খোকন নাজিরী অনেক সুন্দর লিখনি।ভাষাও ভাল। শুভকামনা রইল।
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯
ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯
Abdul Hannan লেখা অব্যাহত রাখুন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

রমিজ মিয়ার ছোট্ট নাতি বাংলাদেশ বলাটা স্পষ্ট শিখেছি সবুজ কাপড় নিয়ে সে শুধু ভাঙ্গা ভাঙ্গা বলে মিছিল করে, শেষে মায়ের রক্তে ভিজে সবুজ কাপড়টা লাল হয়ে যায়। গঠিত হয় বাংলাদেশের পতাকা।

১৯ জুলাই - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪