ছেলেটার পড়াশুনায় মন নেই। স্কুলের থেকে ফিরেই খেলতে চলে যায়। বাচ্চাদের খেলার যে খোলা জায়গাটা ছিল ,সেটা কারা যেন দখল করেছিল বিল্ডিং করবে বলে । সে ভীষন কষ্ট পেল। মা দেখলেন , ছেলেটা কাগজে বড় বড় করে লিখছে ,' মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের মাঠে পার্কে খেলার সুযোগ দিন', ' নগর পরিকল্পনায় খেলার মাঠ , পার্ক নিশ্চিত করতে হবে ,' খেলার মাঠে কোন স্হাপনা নয় ' এরকম আরো ৪-৫ রকম লেখা দিয়ে সে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে প্রতিবাদ শুরু করে সাফোয়ান আর তার বন্ধুরা । ছেলেটার সাহস দেখে মা -বাবা অবাক হয়ে গেলেন। আরো অবাক হলেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার ,ডিসি এলেন যখন। সাফোয়ানের সাক্ষাৎকার দেখাল টিভিতে । সে বলে,'খেলার মাঠ চাই , আমরা মাঠে খেলাধূলা করতে চাই , এখানে খেলব না কোথায় খেলাধূলা করব তাহলে? কতক্ষন আমরা আর ঘরে বসে কম্পিউটারে গেমস খেলব?'
ডিসি সাহেব বলেন ,' সামাজিকীকরণের জন্য পার্ক আর খেলার মাঠ খুব প্রয়োজন ।যেসব পার্ক আর খেলার মাঠ দখল হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধার করতে হবে । বাংলাদেশের প্রতিটি শহরেই পার্ক আর খেলার মাঠ থাকা প্রয়োজন । এর রক্ষনাবেক্ষন স্হানীয় মানুষেরা করবেন ,যাতে দখল দারিত্ব বা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংগঠিত না হয় । নগর পরিকল্পনায় খেলার মাঠ ও পার্ক কে গুরুত্ব দিতে হবে। তরুন সমাজকে আত্নকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠা থেকে প্রতিহত করতে হলে উন্মুক্ত ও গণপরিসরে তাদের সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে । পার্ক, খেলার মাঠ সামাজিকীকরণ, বিনোদন ,খেলাধূলা ,মানসিক প্রশান্তি ও শরীরচর্চার ক্ষেত্র তৈরিতে সাহায্য করে ।'সাফোয়ান আর তার বন্ধুরা প্ল্যাকার্ড হাতে আশ্বাস দেন যে জমি দখল হবে না।
কয়েকমাস পর । সাফোয়ানের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে । কিন্তু সে কোচিংএ না যেয়ে পাড়ার অলিতে -গলিতে ক্রিকেট খেলে বেড়ায় । ক্রিকেট ছাড়াও ফুটবলও খেলে সে । তবে তার ধ্যান জ্ঞান ক্রিকেট।
এদিকে এসএসসির রেজাল্ট বের হবে এক সপ্তাহ পরে । নাহিদ বানু সাফোয়ানকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন , ' এই তুই পাশ করতে পারবি তো নাকি ?তোর আব্বা তো কাউকে মুখ দেখাতে পারবেন না তুই ফেল করলে ।'
সাফোয়ান টিভি দেখতে দেখতে উত্তর দেয় ,' আম্মা আমি ক্রিকেট খেলব । আমি 'সাঙ্গাকারা 'মতো হতে চাই । আমার স্বপ্ন বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন হওয়া । যখন আমি অনেক বড় ক্রিকেটার হতে পারব , তখন আর আব্বার কাউকে মুখ দেখাতে কষ্ট হবে না '
যেদিন রেজাল্ট দেবে , সেদিন সাফোয়ানকে আর খুঁজে পাওয়া গেলো না । ভোর রাত থেকেই সে গায়েব । নাহিদ বানু সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় খুঁজলেন ।পেলেন না । এদিকে আত্নীয় স্বজন, স্কুলের বন্ধুরা, টিচাররা সবাই জেনে গেছে যে সাফোয়ান পাশ করতে পারে নি । সাজিদের মা বাবা তো খুবই খুশি সাজিদকে নিয়ে । সে জিপিএ ৫ পেয়েছে । সাফোয়ানের স্কুলের বন্ধুরা প্রায় সবাই ভাল রেজাল্ট করেছে । সাফোয়ানের স্কুল বরাবরই বোর্ডে ভাল রেজাল্ট করে । সব বাবা -মা ই তো আশা করে তাদের সন্তান মানুষের মত মানুষ হবে । মা -বাবার ভালবাসার মূল্যায়ন কখনই সন্তানরা করে না ।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। বাবা মায়ের তো চাওয়া এটাই তার সন্তানের ভবিষ্যত যেন সুরক্ষিত হয়।
সাফোয়ানের বাবা -মায়ের সারাদিন কেটেছে উৎকন্ঠায়। সন্ধ্যায় সাফোয়ানের স্কুলের হেডস্যার সাফোয়ানকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। সারাদিন সে কোথায় ছিল জানতে পারেন যে সারোয়ার সাহেব মানে সাফোয়ানের আব্বার পিটুনির ভয়ে সে হেডস্যারের বাসায় পালিয়ে ছিলো ।
হেডস্যার সাফোয়ানের আব্বাকে বললেন , ' ছেলেটাকে মারধোর করবেন না দয়া করে ।সবাইকেই উচ্চশিক্ষা নিতে হবে বিষয়টা এমন নয় । ছেলেটা ক্রিকেট খেলতে যখন এত ভালবাসে তখন ওর পছন্দের কাজটাই ওকে করতে দেন। ওরাই হবে আামাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যত। দেখবেন একদিন ওরাই বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলবে। বাংলাদেশ সন্মানিত হবে বিশ্বের কাছে । আপনারা ওকে কোন ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে ভর্তি করে দেন । ট্রেনিং পেলে ও আরো ভালো খেলবে। বলা যায় না হয়তো দেখলেন সে ন্যাশনাল টিমে খেলছে । কতটা গর্বের কথা ভেবে দেখেন ।'
এরপর সাফোয়ানের আব্বা আম্মা আর কিছু বলেন নি , মেনে নিয়েছেন তার ক্রিকেট খেলার প্রতি প্রেম ।
সাফোয়ান যেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি নির্ভরতার প্রতীক হয়ে উঠেন মনে মনে নাহিদা বানু এই দোয়া করলেন ।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
বাংলাদেশের মানুষকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয় , খেলাধূলায়ও উন্নতি করতে হবে । আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। আগামী দিনের শিশুদের সুস্হ পরিবেশ আমাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা দেশের মুখ উজ্জল করতে পারে। শুধু শাসন নয় সন্তানদের মানসিকতা বাবা মাকে বুঝতে হবে ।
১১ অক্টোবর - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
২৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪