মুঠোফোনের রিংটোনটি মাঝে মাঝে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয় সপ্তর্ষিকে। কোনটা কোকিল আর কোনটা রিংটোন, বুঝা বেশ মুশকিল। ঢাকা শহরে কোকিলতো দূরের কথা কাকও এখন বিলুপ্তির পথে। যখন সে ঢাকাতে ছাত্রী নিবাসে অবস্থান করে থাকে, তখন বেশ কিছু সময় পর মনে হয় রিংটোন। গ্রামের বাড়িতে থাকাকালীন রিংটোন ও প্রকৃত কোকিলের ডাকে ফোনটা’ই অনেক সময় ধরা হয়ে উঠে না তার।

সেবার গরমকালটা ভালো যাচ্ছিলোনা। শুরু থেকেই ঝড় বৃষ্টির তোড়ে গ্রীষ্মকে বর্ষা থেকে আলাদা করাই মুশকিল হয়ে পরেছিলো। সহদেবের মন সকাল থেকেই খুব খারাপ! একেতো ঘোড়ার গাড়িটা নিয়ে বাহিরে বের হওয়া যাচ্ছেনা।

সকাল ১০ টা বাজে। প্রচন্ড জ্যামের মধ্যে গাড়িটা থেমে আছে। গাড়ির ভিতরে ড্রাইভার রফিক আর বৃদ্ধ আবু তাহের সরকার। তাহের সরকারের বয়স ৭০ হবে। বাহিরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে এবং হালকা বাতাস বইছে। আবু তাহের সরকার গাড়ির গ্লাসটা একটু নামালো, আর রফিককে অনুরোধ করে বললো, "বাবা, এসিটা কষ্ট করে একটু বন্ধ করে দিবেন"।

উঠানের দক্ষিণ পাশের বড় কাঁঠাল গাছের নিচে মেহগনি কাঠের তৈরি হাতলওয়ালা চেয়ারে বসেছেন যদু মুন্সি। ফাল্গুন মাসের সকাল। রোদ এখনও তেতে উঠেনি। একটি ছেলে হুট করে কোথা থেকে একটি হুকা নিয়ে এসে হাজির। তা দেখে যদু মুন্সি ধমক দিয়ে ওঠেন, ‘এখন কিসের হুক্কা? আইজ জুম্মাবার না, নামাজে যামু। আর হুক্কা টানুম না। ’

একটু পরেই আবার আমি মায়ের ছুটাছুটি দেখছি। ঝিরঝির পাতার শব্দে মনে কাঁপন তুলে যাচ্ছে। আজ এই পার্কে এসে মা আমার,একেবারে ছোট্ট শিশু হয়ে গেছে। আমি মায়ের চঞ্চলতা উপভোগ করছি। ঠিক যেমন মায়েরা তাঁদের সন্তানের উড়ে চলা উপভোগ করে মনের তৃষ্ণা মেটায়। মনের তৃপ্তি মেটায়।

আমি মধ্যবিত্ত ঘরের একজন সাধারণ মেয়ে i কালিদাসের শকুন্তলা বা রবীন্দ্রনাথের লাবণ্য নই I অবশ্য এখন যুগ পাল্টে গেছে i সময়ের আবর্তনে রবি ঠাকুর বিস্মৃত একটি নাম I আমার শৈশব কেটেছে বিংশ শতাব্দির অন্তিম প্রান্তে i বাবা সরকারি চাকরি করতেন i ঢাকা শহরে মোহাম্মদপুরে তিন রুমের একটা কোয়ার্টারে আমরা থাকতাম i বাড়িটি তিন তলা i নিচের তলা আমাদের জন্য বরাদ্দi বাড়িতে মায়ের ঘরে একটা ক্যাসেট ছিল i

আমার মা, ১২ বছর বয়সেই তার বিয়ে হয় ।তখনকার আমলে নাকি পরিবহন ব্যাবস্থা তেমন ভালো ছিলনা । ৩ মাইলের পথ ৪০ টাকা ভাড়ায় গরুর গাড়িতে করে সে শ্বশুরবাড়িতে আসে । তার শ্বশুরবাড়ি আসার পেছনের ঘটনাটাও বিভ্রান্তিকর । আমার মায়ের বয়স যখন ১২ ছুই ছুই ঠিক তখনই বনেদী ঘর থেকে তার বিয়ে আসতো।