ক্লিনিক থেকে যখন কল এলো, তখন প্রায় বিকেল তিনটা। একটু পরে আসছি বলে, মাত্রই বিছানায় এলিয়ে দেয়া শরীরটার ভেঙে চুরে আসা টায়ার্ডনেসের সাথে যুদ্ধ শেষ করতে উদ্যত হলাম।
- ম্যাডাম একটু তাড়াতাড়ি আসবেন? মেয়েটার অনেক ব্যথা। মাত্র পাঁচ মিনিট পরেই আবার ফোন...
মোটামুটি দৌড়ে গিয়ে পড়লাম বাসার পাশের ক্লিনিকে। এতো মায়াবী মুখ মেয়েটার! কিন্তু এতো অল্প বয়স! যদিও বলছে আঠারো কিন্তু ষোলর বেশী মনে হয় না...
হুম.. পরীক্ষা করে দেখি, লেবার প্রসিডিউর শুরু হয়ে গেছে। তাই এতো কান্না মেয়েটার। সাথে থাকা একমাত্র এটেনডেন্ট নিজেকে মা হিসেবে পরিচয় দিলেন। স্বামী বললেন বিদেশে থাকে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউ এখনো আসেনি,অচিরেই নাকি চলে আসবে।
প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা দিয়ে চেম্বারে চলে গেলাম। ডেলিভারী করানোর জন্য ডাক্তার, নার্স সহ পর্যাপ্ত ব্যবস্হা আছে ক্লিনিকটায়। কাজেই খুব একটা টেনশনের কিছু ছিলো না।
দু ঘন্টা পর আবার ফোন।
- ম্যডাম, ডেলিভারী হয়ে গেছে। কোন সমস্যা হয় নি।
- আলহামদুলিল্লাহ। এবার তাহলে পরবর্তী ঔষধ গুলো দিয়ে দাও,আমি বাসায় য়াওয়ার আগে দেখে যাবো।
কেবিনে গিয়ে দেখি এক খাটে মা আর মেয়ে বসে কথা বলছে, অন্য খাটে বাচ্চাটা... মা যেমন আদুরে, ছেলেটাও এতো সুন্দর হয়েছে! গালটা টিপে আদর করে অনুমতি নিয়ে একটা ছবি তুলতে চাইলাম। কিন্ত মা মেয়ে দুজনেই তীব্র ভাবে মাথা নেড়ে না করলো। আমি একটু বিব্রত হলেও মেনে নিলাম ওদের প্রাইভেসীর ব্যপারটা।
পরেরদিন সকাল আটটা বাজে প্রায়। অফিস যাবার জন্য রেডী হচ্ছি। ফোন এলো সেই ক্লিনিক থেকেই...
ম্যাডাম, তাড়াতাড়ি আসেন। সিস্টারের গলার কাঁপুনি ফোনেই বুঝা যাচ্ছে। কি হয়েছে হঠাৎ করে! প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, যা রোগীকে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করায়? না, অন্য কোন বিপদ! সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কেবিনের কাছে যেতেই দেখি... এতো ভীড়! ফ্লোরের সব সিস্টার, আয়া, অন্য রোগীর লোকজন যেনো হামলে পড়ছে কেবিনটায়!
যথেষ্ট ঠেলেঠুলে ঢুকে যা দেখলাম আর শুনলাম তাতে আমার চক্ষু ছানাবড়া। বাচ্চাটা একা শুয়ে আছে। আর কেউ নেই। বিগত কয়েক ঘন্টা ধরে মা মেয়ে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের কাপড় চোপড়ও নেই। দারোয়ান সহ সবাই অনেকক্ষন ধরে খোঁজ করেছে, লাপাত্তা। সন্দেহ ঘনীভূত সবার মনে....
আমার রোগী, তাই আমিই পড়লাম মহা ফ্যাসাদে। সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছে কি করবে? বললাম দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করো। কেউ আসে কি না দেখো... দাদাবাড়ীরও কেউ আসতে পারে।
অফিসের পুরোটা সময়ে প্রচন্ড অস্বস্তি লাগলো। কি হবে বাচ্চাটাকে নিয়ে এই টেনশনে অস্হির ছিলাম... অফিস শেষে গিয়ে দেখি বিরাট নাটক অপেক্ষা করছে। বাচ্চাটা দিদিদেরই কোলে কোলে , আর বাচ্চা কোলে নিতে গিয়ে কাঁথার ভাঁজে কাঁচা হাতে লেখা একটা চিঠি পেযেছিলো...
" আপনারা আমাদের মাফ করি দিয়েন। আমি আমার মেয়ে নিয়ে চলে গেলাম। এই বাচ্চা আপনারা ভালো কাউরে দিয়ে দেন। কোন দাবীদার নাই। এতোদিন বেড়াতে গেছে বলে মেয়েরে নানা বাড়িতে লুকাই রাখসি। ওর বিয়ে হয় নাই। যেই ভুল হয়ে গেছে এই বাচ্চা নিলে মেয়ের জীবনটা শেষ হবে আর ওর আব্বা বিদেশ থেকে আসলে আমাকেও বাড়ী থেকে বাইর করি দিবে। আমার মেয়েটারে অভিশাপ দিয়েন না আপনারা"
আহা! মাতৃত্ব.... কতো তার রং! কতো যে তার অতৃপ্তি! গর্ভে ধারণ করেও মা হয় না অনেকে...
( বাচ্চাটা আমাদের পরিচিত এক দিদি নিয়েছে তার আপন বোনের জন্য, এবং দুবছর পরে খবর নিয়ে জানলাম খুব ভালো আছে, সুস্হ আছে। যারা নিয়েছে তারা কলিজার টুকরো করে রেখেছে ছেলেটাকে। আপনারাও দোয়া করবেন, অতীত না জেনেই যেনো ছেলেটা বর্তমান নিয়ে তৃপ্ত থাকে। নিজের মা তাকে ফেলে গেলেও অন্য মা তাকে সমস্ত মমতা দিয়েই মানুষ করছেন। জন্ম দিলেই মা হওয়া যায় না।)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রণতূর্য ২
গল্পটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে বলেই মনে হলো।একজন ডাক্তারের জীবনে ঘটে যাওয়া অনভিপ্রেত ঘটনাই বটে।সুন্দর বর্ণনা করেছেন।ভোট ও শুভকামনা রইল।
আমার কবিতায় আপনাকে আমন্ত্রণ রইল।মন্তব্য করে অনুপ্রানিত করলে খুশি হবো।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পটিতে মাতৃত্বের বিষয় টি তুলে ধরা হয়েছে ........।
১৪ মে - ২০১৭
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।