মায়ের চিঠি

মা (মে ২০১৯)

চন্দ্ররূপ ব্যানার্জী
  • ৩৪
সোহম তার মাকে নিয়ে নবনীড় বৃদ্ধাশ্রমের গেটের কাছে এসে দাঁড়াতেই সুনীতা দেবী খানিক বিস্মিত হয়ে ছেলেকে প্রশ্ন করলেন, “ হ্যাঁ রে সমু এই তুই আমাকে কোথায় নিয়ে এলি ?”
সোহম তার মায়ের দিকে না তাকিয়েই জবাব দিলো,“ বুঝলে তো মা এখন থেকে তুমি এখানেই থাকবে”।
“ মানে ? তুই কি বলছিস সমু ? তোদের ছাড়া আমি থাকবো কি করে ? আর তুই আমাকে এভাবে এখানে একা রেখে দিয়ে চলে যাবি বাবা ?”
“ আহা একা থাকবে কেন ? তোমার মতো আরও কতজন এখানে আছে বলোতো তুমি তাদের সাথে বেশ আনন্দেই থাকবে। আর তাছাড়া তুমি তো জানোই আমি আর তোমার ব‌উমা কাজ নিয়ে কতটা ব্যস্ত ।সবসময় তোমার দেখভাল করাতো সম্ভব নয় তাই তোমাকে এখানে নিয়ে এলাম। আর চিন্তার কিছু নেই আমি মাঝে মাঝে না হয় আসবো তোমার সাথে দেখা করতে”।
সুনীতা দেবী কিছুক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন তার নিজের পেটের সন্তানের দিকে। তারপর ছেলের সাথে বৃদ্ধাশ্রমের গেট খুলে প্রবেশ করলেন তিনি। অভিমানের অগ্নিতে জ্বলতে থাকা সুনীতা দেবী তারপর যতক্ষণ ছেলে ছিলো ছেলের সঙ্গে একটাও কথা বলেন নি। শুধু তিনি বুঝতে পারছেন তার চোখ দুটো আজ প্রচন্ড জ্বালা করছে হয়তো বা তা বারবার আঁচলের খুঁটে চোখ মোছার কারণেই।
দুদিন পর......
আগামীকাল সোহমের শ্বশুর শাশুড়ি আসবেন তাই সোহম মায়ের ঘরটা পরিস্কার করছিল। এমনসময় সে মায়ের বালিশের তলা থেকে একটা চিঠি পেল। কাঁপা কাঁপা হাতে চিঠিটা তার মায়ের‌ই লেখা।
সমু,
আমি জানি তুই আমাকে খুব তাড়াতাড়িই কোনো বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে রেখে আসবি। আমি বোধহয় তোদের একটু বেশিই যন্ত্রণা দিচ্ছি তাই না ?
তবুও এই চিঠিতে কিছু কথা লিখে রেখে গেলাম যা আজ হয়তো তুই ভুলে গিয়েছিস।
তোর মনে নেই হয়তো ছোটোবেলায় তোর মাঝে মাঝেই শরীর খারাপ হতো আর শরীর খারাপ হলেই তুই আমার কোলে চলে আসতিস। সারাটা রাত তোকে কোলে নিয়ে বসে থাকতাম, তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম । আর তুইও আমার কোলে শান্তিতে ঘুমোতিস। তুই যখন আমার কোলে থাকতিস তখন মাঝে মাঝে পায়খানা বাথরুম করে ফেললেও আমি হাসি মুখে তাড়াতাড়ি পরিস্কার হয়ে এসে আবার তোকে কোলে নিতাম। আমাদের নিত্য অভাবের সংসারে আমি আর তোর বাবা কোনো কোনো দিন আধপেটা খেয়ে থাকলেও তোকে কোনোদিন কষ্ট পেতে দি‌ইনি। তোর পছন্দের খেলনা কেনার জন্য নিজের ছেঁড়া জুতো জোড়া আর পাল্টানো হয় নি। এরকম আরও অনেক কথা আছে যা পাতার পর পাতা লিখেও শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আজ সেই তুই যে আমার সবচেয়ে আপনজন আমাকে পর করে দিলি। এখন আর তুই আমার কাছে আসিস না। আমাকে মা বলে আর জড়িয়ে ধরিস না। সারাদিন তোর একবারও সময় হয় না আমার খোঁজ নেওয়ার। একবারও জিজ্ঞেস করিস না ' মা তুমি কেমন আছো? '
আমি তবুও আজ‌ও তোকে ভালবাসি রে সমু আজ‌ও ভালোবাসি।
— ইতি
তোর মা

সোহমের চোখদুটো অনেকক্ষণ আগেই ঝাপসা হয়ে এসেছিল কিন্তু এখন যেন তার ভেতর টা কেমন করতে লাগলো। দুঃখ আর বেদনার পুঞ্জীভূত মেঘ তার গলায় এসে আটকে গেছে। এমনসময় 'নবনীড় বৃদ্ধাশ্রম' থেকে ফোন এলো সোহমের মোবাইলে। গতকাল বার দুই ফোন এলেও সোহম ফোন তোলার প্রয়োজন বোধ করেনি কিন্ত আজ তড়িঘড়ি সে ফোন তুলতেই ফোনের ওপাশ থেকে কন্ঠস্বর ভেসে এলো একজনের,
“ আপনি কী শ্রীমতী সুনীতা সেনের ছেলে বলছেন ? ”
– “ হ্যাঁ কিন্তু.....”
“ দেখুন খুবই দুঃখের সাথে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে আপনার মা আর নেই। আজ সকালবেলা আচমকা হার্ট-অ্যাটাকে উনি মারা গেছেন”।
সোহমের দিক থেকে কোনো প্রত্যুত্তর পাওয়া গেল না। সে শূন্য দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতক্ষনে জমে থাকা মেঘের বিস্ফোরণ ঘটে। চিৎকার করে কাঁদতে থাকে সোহম। সে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি রত্ন টাই যে হারিয়ে ফেলেছে !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বাসু দেব নাথ কয়েকটি কুলাঙ্গার সন্তানের কারনে মা-বাবার ভালোবাসাও সংকটে পরে যায়।
মুহম্মদ মাসুদ মা-বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ।। এদের মতো আপন কেউ নেই। ভালো লাগলো তবে সোহমের জন্য রইলো তিরস্কার। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রই।
রণতূর্য ২ সন্তানের প্রতি মায়ের আবেগঘন চিঠি।শেষ মুহূর্তে বোধোধয় হলেও তা অনেক দেরি হয়ে গেল।ভোট ও শুভকামনা রইল।আমার কবিতায় আসবেন।মন্তব্য করলে অনুপ্রানিত হব।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এই গল্প টি ‘ মা ' বিষয়ের উপর আধারিত।

২৫ নভেম্বর - ২০১৮ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪