ভদ্রলোক আব্দুল মান্নান সৈয়দ তার একটা কবিতায় লিখেছিলেন, "লোকে জিজ্ঞেস করে—তোমার কবিতায় এত বিষণ্ন রঙ কেন আজকাল?" তো এই প্রশ্নের উত্তর তিনি পুরোটা কবিতা জুড়েই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, উত্তরটা এক লাইনে যা দাড়ায় তা হোল—আমার চারপাশে তোমরা বলতে যারা আছো, তারা সবাই বিষণ্ণ তাই আমার কবিতার রঙও বিষণ্ণ! শুধু এই ভদ্রলোকের কথা বলেই না বরং বেশিরভাগ কবিরাই নির্দিষ্ট-অনির্দিষ্ট সকল সময়ের ভিতর দিয়ে যাওয়া চারপাশের সমস্ত কিছুকেই প্রথমে মনে ধারন করেন তারপর কবিতায়। অথচ এই 'মনে ধারন' করার ক্ষমতাটা থাকা উচিৎ ছিল রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের যারা কিনা রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে আসেন কিংবা আসতে চান। এইসব নেতা-নেত্রীদের দাপট যে ক্রমেই ফুরিয়ে আসছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমার মনেহয় একদিন এই জায়গাটা নিয়ে নিবে কবিরা—কথাটা শুনে সাধারণ, অ-সধারন, আমলা, রাজনীতিবিদদের হাসি পাচ্ছে এই তো? ভাবছেন কিংবা মুখ বাকিয়ে বলছেন "কবি সম্প্রদয়" নিবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব!
হ্যাঁ, কবিরাই নিবে এ দায়িত্ব। কেননা কবিতা অলরেডি ঢুকে বসে আছে রাজনৈতিক ভারসাম্যে। একজন ব্যক্তিমানুষ যখন সবার সম্মুখে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিতে চান পোস্টারের মাধ্যমে, তখন সেখানে লেখা থাকে "অমুক ভায়ের দু'নয়ন, এলাকার উন্নয়ন"—এটা একরকম কবিতা। যখন সে মহল্লায় নিজেকে জাহির করতে চেয়ে মিছিল বের করে তখন মিছিল থেকে রব ওঠে "অমুক ভায়ের আগমণ, শুভেচ্ছা স্বাগতম!" কিংবা "অমুক ভায়ের চরিত্র ফুলের মত পবিত্র"—এগুলো কবিতা। যখন আপনি ভোটের রাজনীতিতে সক্রিয় তখন মিছিলের ব্যানারে লেখা থাকে, মিছিলের মধ্য থেকে ধ্বনি ছড়িয়ে যায় "অমুক তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে" আবার "অমুক ভায়ের সালাম নিন, তমুক মার্কায় ভোট দিন" কিংবা "তমুক মার্কায় দিলে ভোট, শান্তি পাবে দেশের লোক"—এগুলোও কবিতা। আপনি যখন আপনার বিপক্ষকে নামিয়ে ফেলতে চান, হটিয়ে দিতে চান তখন শ্লোগান তোলেন "জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, অমুকের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে" কিংবা "এক দফা এক দাবী, অমুক তুই কবে যাবি!"—এসবও কবিতা। তারপর এসব শ্লোগান দিয়ে যখন আপনি আটক হন তখন আপনার অনুসারীরা আপনার জন্য স্লোগান ধরে "অমুকের কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে" কিংবা "অমুক তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই" এমনকি "জেলের তালা ভাঙবো, অমুককে আনবো"—এগুলোও কবিতা। এখন রাজনৈতিক কর্মযজ্ঞ থেকে যদি এগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাহলে আপনাদের আর থাকে কী বলেন তো? এখন তো রাস্তার শ্লোগানে, দেওয়ালের পোস্টারে, শূন্যের ব্যানারে, হাতের প্ল্যাকার্ডে কবিতা এসে বসে আছে, আশাকরি কবিতা একদিন 'ঐ যায়গাটাও' দখল করে নিবে—কোন জায়গাটা বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই?
আমি মনেকরি, দেশকে ও দেশের সম্পদগুলোকে যদি শব্দ হিসেবে বিবেচনা করা যায় এবং দেশের মানুষকে উপমায়, তাহলে শব্দের পরে শব্দ বুনে বুনে সেই বুননের মাঝে যথার্থ উপমা বসিয়ে কবিতার মতো সুন্দর একটা রাষ্ট্র কেবলমাত্র কবিরাই উপহার দিতে পারে এই বিশ্বকে।
- সিপাহী রেজা
 
                                     
                                     
                                    এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।
 
                 
                 
                