আতঙ্কের অবসান

আতঙ্ক (নভেম্বর ২০২৫)

বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত
  • 0
  • ১৯
২০২০ সালের মার্চ মাসের শেষের দিক। ভয়াবহ সংক্রামক করোনা রোগ আবহে দেশব্যাপী এক অস্থির অবস্থা। এরই মধ্যে "নীলাচল ভবন" এপার্টমেন্টে সকাল থেকে একেবারে হুলুস্থুল কান্ড। খবরটা দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়েছে এপার্টমেন্টের প্রত্যেক ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের কাছে। এমনকি আশেপাশের লোকজনেরা খবরটা জানতে পেরে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

"নীলাচল ভবনের" বাসিন্দা নির্মল বাবু ভীষণ ভাবে আতঙ্কগ্রস্ত আর বেশ দিশেহারা হয়ে ছলছল চোখে সবার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলছেন- হায় ভগবান !! এই বৃদ্ধ বয়সে আমি এখন কি করব ? আপনারাই বলুন আমার এখন কি করা উচিত ? স্ত্রী মারা যাবার পর থেকে আমি আমার ফ্ল্যাটে একাই থাকি। আমার একমাত্র ছেলে চাকুরিসূত্রে বিদেশে থাকে। আমার পাশের ফ্ল্যাটের সোমনাথ আমার যে এতবড় ক্ষতি করবে, সেটা আমি কল্পনাই করতে পারিনি। অথচ আমি এই সোমনাথকে আমার ছেলের মতই ভালবাসি।

আজ সকালে সোমনাথ খুবই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আমাকে বললো- কাকু, আমার গাড়িটা স্টার্ট নিচ্ছে না। আপনার গাড়ির চাবিটা আমাকে দিন। আমি আধ ঘন্টার মধ্যেই একটা জরুরী কাজ সেরে ফিরে এসে আপনার গাড়ি আবার গ্যারেজে রেখে দিচ্ছি। ভাবলাম, হয়ত কোন বিপদে পড়েছে তাই সরল মনে আমার গাড়ির চাবিটা ওকে দিলাম। আধ ঘন্টার মধ্যে ফিরে এসে আমাকে একেবারে জড়িয়ে ধরে বললো-- কাকু, আপনি আমার খুবই উপকার করলেন। আপনার গাড়িটা এই মুহুর্তে না পেলে আমি খবরটা জানতেই পারতাম না। এই কথা বলে হনহন করে নিজের ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।

ভাবলাম, হয়ত ওদের কোন বিপদ ঘটেছে। তাই প্রতিবেশী হিসেবে মানবিকতার কর্তব্যে জিগ্যেস করতে ওদের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেলটা বাজাতে যাব, হঠাৎ শুনতে পেলাম ঘরের ভেতর সোমনাথ তার স্ত্রীকে বলছে- "রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে"। এই কথা শুনে আমি ভয়ে থরথর করে কাঁপছি। যে হারে আমাদের কলকাতা শহরে সংক্রামক করোনা রোগের রিপোর্ট পজিটিভ হচ্ছে তাতে শঙ্কিত হয়ে দৌড়ে গিয়ে প্রথমেই বাথরুমে প্রায় এক বোতল ডেটল, জলের সঙ্গে মিশিয়ে অনেকক্ষণ ধরে স্নান করলাম কারন কিছুক্ষণ আগেই এই সোমনাথ আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। বড় এক বোতল স্যানিটাইজার দিয়ে সোমনাথের ব্যবরিত আমার গাড়িটাকে জীবাণুমুক্ত করবার চেষ্টা করলাম। আমার খুবই ভয় হচ্ছে। একেই আমাদের এলাকাটি "কন্টেনমেন্ট জোন" হিসেবে চিহ্নিত। তারউপর সোমনাথদের মত করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমার রিপোর্টও যদি পজিটিভ হয় !!!

খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই ফ্লাট ওনার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক রাখাল বাবু আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তড়িঘড়ি জরুরী মিটিং তলব করে সবাইকে বাড়ির ছাদে জড়ো হতে বলেছেন পরবর্তী পদক্ষেপের আলোচনার জন্য। সব কিছু জানতে পেরে বিমল বাবু বললেন- আমি আর এক মুহূর্ত এই এপার্টমেন্টে থাকছি না। এখুনি পরিবার নিয়ে বেশ কিছুদিনের জন্য অন্যত্র চলে যাচ্ছি। অবিনাশ বাবু বেশ চিন্তিত হয়ে বললেন- এই রোগ এত বেশি সংক্রামক, এখানে আর এক মুহূর্তের জন্য থাকা যাবে না। মনে হচ্ছে, এই খবর জানার পর কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়ত পুলিশ, প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদের এই এপার্টমেন্টকে সিল করে দেবে। তিনতলার বৃদ্ধা মহামায়া দেবী তাঁর বৃদ্ধ অসুস্থ স্বামীকে ধরে নিয়ে উচ্চস্বরে ঠাকুরের নাম জপতে জপতে হাতে একটা ছোট সুটকেস আর বড় একটা স্যানিটাইজারের বোতল নিয়ে এপার্টমেন্ট থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন।

এপার্টমেন্টের টপ ফ্লোরে থাকেন সরকারি হাসপাতালের একজন ডাক্তার। সবাই মিলে পরামর্শ করে তাঁর কাছে গিয়ে বললেন- ডাঃ ব্যানার্জী, আপনিতো সবই শুনেছেন। এখুনি একটা ব্যবস্থা করুন আপনাদের হাসপাতালে "কোভিড ওয়ার্ডে" করোনা রোগীদের বেডে সোমনাথদের ভর্তি করবার জন্য। একান্তই যদি হাসপাতালে ভর্তি করা না যায় তবে অন্তত কোন "কোয়রান্টিন সেন্টারে" এদের পাঠাবার ব্যবস্থা করুন। ডাঃ ব্যানার্জী গম্ভীর ভাবে বললেন- আমাদের এই এপার্টমেন্টে কোন লোকের করোনার রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে, তবেতো ভয়ঙ্কর চিন্তারই বিষয়। দেখি আমি কি করতে পারি, এই বলে সব কাজ ফেলে রেখে তিঁনি তার মোবাইল থেকে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করা শুরু করলেন।

করোনা রোগের আতঙ্কে, সোমনাথদের পজেটিভ রিপোর্ট হওয়াতে এপার্টমেন্টের প্রায় সব বাসিন্দারা পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য ছাদে জরুরী আলোচনায় ব্যস্ত। হটাৎ করে এরমধ্যে সবাই ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন। সোমনাথ ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাকে দেখে সবাইমিলে দৌড়ে দূরে সরে গিয়ে ভীষণ ভয়ে ভীত হয়ে চিৎকার করে বললেন- তুমি এখানে ??? তোমাদের রিপোর্টতো "পজিটিভ"। সোমনাথ বললো- হ্যাঁ, রিপোর্টতো পজিটিভ এসেছে। এই পজিটিভ রিপোর্ট আসার জন্য আমরা ভগবানের কাছে অনেক প্রার্থনা করেছিলাম। আজ আমাদের খুব খুশির এবং আনন্দের দিন।

রিপোর্ট পজিটিভ হবার জন্য আমি আজ সবাইকে পেট ভরে মিষ্টি খাওয়াবো। মিষ্টির দোকানে অর্ডারও দেয়া হয়ে গেছে। বৃদ্ধ অমল বাবু নাকে-মুখে মাস্কটাকে ভাল করে লাগিয়ে নিয়ে, দুহাতে অনেকখানি স্যানিটাইজার মেখে নিয়ে দূর থেকেই বেশ আতঙ্কিত হয়ে বললেন- তোমাদের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়ত পুলিশ এবং প্রশাসনের তরফ থেকে আমাদের এই এপার্টমেন্ট সিল করে দেবে। এই সাংঘাতিক বিপদের সময়ে তুমি আমাদের সঙ্গে মশকরা করছ ?

সোমনাথ একটু চিন্তা করে পুরো ব্যাপারটি বুঝে নিয়ে হাসতে হাসতে বললো- পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে আমার নয়, আমার স্ত্রীর। আমাদের দশ বছর বিয়ে হয়েছে। এতদিন পর আমার স্ত্রীর প্রেগনেন্সি রিপোর্ট "পজিটিভ" এসেছে। এই পজিটিভ রিপোর্ট আমার কাছে খুবই আনন্দের খবর। সেই জন্যই আমি সবাইকে পেট ভরে মিষ্টি খায়াবো।

এই সুখবর শুনে নিমেষের মধ্যে "করোনার" ভয় দূর হয়ে সবাই মিলে এক আনন্দ উৎসবে মেতে উঠলেন। রোগা ছিপছিপে চেহারার বয়স্ক রঘুনাথ বাবু ফোকলা দাঁতে এক অট্টহাসি দিয়ে বললেন, তবে আর দেরি কেন ? মিষ্টির হাঁড়িগুলি তাড়াতাড়ি আনবার ব্যবস্থা করো। দশাসই চেহারার রঘুনাথ বাবুর স্ত্রী লাজুক ভাবে ধমকের সুরে বললেন- তোমারতো হাই ডায়বেটিস, মিষ্টির প্রতি এত লোভ কেন ? সবার প্রবল হাসিতে এই করোনা রোগ সংক্রামক পরিবেশে খুশির এই খবরে একটা আনন্দের জোয়ার বইতে লাগলো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি করোনা রোগের আতঙ্ক নিয়ে লেখা গল্প কিন্তু শেষাংশে কৌতুকের হাস্যরসে ভরপুর একটি আনন্দের সংবাদ দিয়ে গল্পটি শেষ হয়। খুব ভালো লাগলো বিশ্বরঞ্জন বাবু। আপনার জন্য শুভকামনা ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

অযথা কোন ব্যাপার প্রকৃত অনুসন্ধান না করে প্রথমেই আতঙ্কিত না হয়ে, সবকিছু খোঁজখবর করে প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

১২ আগষ্ট - ২০১৭ গল্প/কবিতা: ৫১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
কবিতার বিষয় "মুক্তিযুদ্ধ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৫