এ ধরনের একটা লেখা লিখবার ইচ্ছা আমার অনেক দিনের। গল্প-কবিতায় শত শত কবি প্রতি মাসে দুর্দান্ত সব কবিতা লিখে যাচ্ছেন। তাদের বেশীর ভাগেরই লক্ষ্য, একটা পুরষ্কার পাওয়া। মাসের শেষে তাদের বেশীর ভাগের আশার গুড়ে বালি মিশিয়ে অন্য কেউ পুরষ্কার জিতে যাচ্ছেন। পুরষ্কার না পেয়ে অনেকেই হয়তো ভাবেন, অসদুপায় উপায় অবলম্বন করে (তার নিজের কবিতার চেয়ে) নিম্ন মানের কবিতা তার প্রাপ্য পুরষ্কারটা ছিনিয়ে নিলো। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ সিন্ডিকেট বা ফেক ভোটের আওয়াজ তোলেন।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, ফেক ভোট কাকে বলবেন? কেউ একজন ( ধরুন বসুন্ধরা ) একটা কবিতা লিখলেন। তার দশ/পনেরো জন বন্ধু বা আত্মীয়কে অনুরোধ করলেন, কবিতাটা দেখবার জন্যে। সেই বন্ধু বা আত্মীয়রা গল্প-কবিতায় যোগ দিয়ে বসুন্ধরার কবিতায় মন্তব্য করে ভোট দিয়ে গেলেন এবং সাথে সাথে যখন পারলেন, অন্য কারো লেখায়ও মন্তব্য বা ভোট করে গেলেন। অনেকের লেখায় ব্যাপারটা আমি লক্ষ্য করেছি এবং দু'এক যায়গায় মন্তব্যও করেছি। এটাকে কি ফেক ভোট বলা যায়? আমার মতে নয়।
এ গ্রুপের সদস্যদের পেছনে লোক আছে বলে তারা প্রোফাইলে ছবি দিতে পারেন এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে দিয়েও থাকেন।
আরেক ধরনের লেখক আছেন, যারা নিজেই দশ/পনেরোটা আইডি খোলেন। আইডিগুলোর যথার্থতা প্রমাণের জন্য সব আইডি থেকে লেখা জমা দেন; নিজেই বিভিন্ন নামে লগইন করে কমেন্ট করেন। তবে, ভোটের ক্ষেত্রে নিজের আইডি গুলো থেকে জমা দেওয়া লেখাগুলোকে ৫ করে ভোট দিয়ে অন্যের (ধরুন দিনলিপির) অসাধারণ লেখায় ১ করে ভোট দেন। এর ফল দেখুন -
ফেক ভোট জমার আগে (১০ জন ভোট দিয়েছেন) -
দিনলিপির ভোট - ২,৫,৫,৩,৪,৩,৫,৫,৩,৪ ( গড় = ৩৯/১০ = ৩.৯, পাঠক স্কোর = ২.৩৪ )
বসুন্ধরার ভোট - ২,৪,৩,৩,৪,৩,৪,৪,৩,৪ ( গড় = ৩৪/১০ = ৩.৪, পাঠক স্কোর = ২.০৪ )
এখন দিনলিপি আর বসুন্ধরার ভোটের সাথে ১০ জন ফেক ভোটারের ভোট যোগ হলো। এখন মোট ভোটার ২০ জন।
দিনলিপির ভোট - ৩৯ + ১০ ( গড় = ৪৯/২০ = ২.৪৫, পাঠক স্কোর = ১.৪৭ )
বসুন্ধরার ভোট - ৩৪ + ৫০ ( গড় = ৮৪/২০ = ৪.২, পাঠক স্কোর = ২.৫২ )
আশা করি অনেক অসাধারণ লেখায় কেন পাঠক স্কোর ২ এর নীচে সেটা বুঝাতে পেরেছি। এর ফলে অনেক অসাধারণ লেখা সেরা ২৫শে আসতে পারে না আর আসলেও নিম্ন পাঠক স্কোরের কারণে পুরষ্কার পায় না।
এ গ্রুপের সদস্যদের পেছনে কোন রক্ত-মাংসের লোক নেই বলে তারা প্রোফাইলে ছবি দিতে পারে না এবং এজন্য বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অন্য লোকের বা বস্তুর ছবি দিয়ে থাকে। তবে তার মানে এ নয় যে, প্রোফাইলে যাদের নিজের ছবি নেই, তারা সবাই ফেক। ছবি-বিহীন অনেকের সাথে গল্প-কবিতার অন্য সদস্যের ব্যাক্তিগত, ই-মেইল বা ফোন যোগাযোগ আছে। যারা পারিবারিক বা সামাজিক কারণে প্রোফাইলে নিজের ছবি দিতে চান না, তারা হয়তো অন্য সদস্যের সাথে অন্য কোন ভাবে যোগাযোগ রেখে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পারেন। তাতে দোষের কিছু দেখি না।
ফেক ভোটের কথা বলা হলো। এবার সিণ্ডিকেটের কথায় আসি। গল্প-কবিতায় দীর্ঘ দিনের পরিচিতির কারণে কিছু সদস্যের মধ্যে সত্যিকার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। এ ধরনের ৩/৪টা গ্রুপের অস্তিত্ব আমি লক্ষ্য করেছি। বিভিন্ন সাহিত্য বিষয়ক কর্মকাণ্ডে এরা একে অপরকে সাহায্য করেন। এই পরিচিতির সামান্য কিছুটা প্রভাব ব্যক্তিগত ভোটের ক্ষেত্রে পড়া অস্বাভাবিক নয়। অন্যদের লেখায় ভোট দেবার আগে, তারা প্রথমেই নিজেদের পরিচিত বন্ধুদের লেখায় ভোট দেন। এই পরিচিতির গণ্ডীকে অনেকে সিন্ডিকেট বলে ভুল করে থাকেন। তবে এসব গ্রুপ কারো পুরষ্কার পাবার ব্যাপারে কোন প্রভাব ফেলতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
চোখ রাখুন ব্লগের পাতায়। পরের লেখায় আসছে, আমার দৃষ্টিতে গত দু সংখ্যার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখাগুলোর মূল্যায়ন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।