পুরনো একটা কৌতুকঃ
বাংলাদেশের এক লোকের নরক ভ্রমনের অনুমতি মিলল। সিপাহসালার এর সাথে সে নরক ঘুরে দেখতে লাগল। সব জায়গায়ই প্রায় একই চিত্র। বড় বড় কড়াইয়ে পাপী-তাপীদের রেখে নিচে আগুন দেয়া হয়েছে। আর সে কড়াইগুলোকে ঘিরে রেখেছে অনেক পাহারাদার। শুধু একটা কড়াইয়ের সামনেই কোন পাহারাদার নেই। প্রতিটি কড়াইয়ের সামনে পাহারাদার দেখে এসে একটায় নেই বলে হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগল “ব্যাপার কি?”
জানতে চাইলে সিপাহসালার মুচকী হাসলেন এবং পাহারাদারওয়ালা কড়াইগুলো দেখাতে নিয়ে গেলেন। সেখানে একজন অন্যজনের ঘারে, মাথায় পা রেখে কড়াই থেকে পালাবার চেষ্টা করছে। আর যাদের ঘারে, মাথায় পা রাখছে তারা বলছে, “যা ভাই অন্তত তুইতো বাঁচতে পারবি”। কড়াইয়ের উপর থেকে পাহারাদাররা তাদের ঠেলে আবার কড়াইয়ে ফেলছে।
এবার তাকে নিয়ে আসা হলো পাহারাদারহীন কড়াইয়ের সামনে। সেখানে একজন কড়াই থেকে নেমে যাওয়ার প্রয়াস নিতেই অন্যজন তাকে পা ধরে টেনে হিচড়ে নামাচ্ছে আর বলছে, “হউরের পুত আমগরে থুইয়া তুই বাঁচতে চাস! নাম, আয় আমগো লগে”। এদের ভাষাটা পর্যটকের ভিষণ পরিচিত মনে হলো। কিন্তু লজ্জায় কিছু বলতে পারলো না।
গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। গল্পকবিতা.কম নামে একটা ওয়েব সাইট খুলতে যাচ্ছে এমন একটা বিজ্ঞাপন দেখলাম প্রথম আলোর কম্পিউটার বিভাগে। খুব আগ্রহ নিয়ে একটা একাউন্ট খুলে ফেললাম। কিছুই বুঝতাম না, তবুও অনেক ভাল লাগল এর ইন্টারফেস বাংলায় হওয়াতে। অনেকটা গর্ব নিয়েই বলতাম এটা আমাদের “বাংলা সাহিত্যের ফেসবুক”। প্রথম সংখ্যায় বিজয়ী নির্ধারনের পর থেকেই একটা কথা খুব জোড়ে-শোরেই শুনলাম “ফেক ভোট”। খুব আশ্চর্য হলাম ফেক ভোট মানে কি? বেশ কজন অনলাইন বন্ধুর সাথে আলাপ করে আমার চোখ খুলে যেতে লাগল। ফাঁক ফোকরগুলো বেশ ভালভাবেই বুঝতে লাগলাম। ইত্যোবসরে গল্পকবিতার এডমিনের নিবেদিত প্রাণ অনেকের সাথে আলাপ হলো। তাদের বেশ ভালই লাগল (কোন মেয়েকে যতটা ভাল লাগলে ভালবাসা যায় এমন)। তাদের চিন্তা-চেতনায় আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম। তাদের মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে আর কোন ধোয়াশা রইল না।
একেকটা মাস যায় আর জয়-পরাজয় নিয়ে হট্টগোল (যদিও এর অনেকটাই ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব পর্যায়েই আলোচিত হতো) বাড়তে লাগলো। গল্পকবিতাও অনেক নিয়ম-কানুন পাল্টে যুগোপযোগী করতে লাগলেন। আমাদের দাবীর কারনেই তারা বিচারক প্যানেল নিয়োগ করলেন (যা আজো বিদ্যমান)। আস্তে আস্তে নতুন সদস্য যোগ দিতে দিতে আজ প্রায় ৮৫০০ লেখক-কবি/পাঠকের একটা সাইট গল্প-কবিতা।
সময়ের সাথে সাথে আগে বাড়তে থাকলেও কিছু জিনিস পিছু ছাড়ছেই না। তার মধ্যে একটা হলো জয়ী হওয়া। আমার একটা লেখা আমার কাছে অনেক ভাল লাগতে পারে, সেটা জয়ী না হলে কষ্টও স্বাভাবিক লাগবেই। তবে ঐ যে আমরা পা টেনে নিচে নামানোর দলের লোক!
আমরা যা করেছিঃ
*) শুরু হলো ফেক আইডি খুলে গালাগালি, আর অশোভন আচরণ।
*) সে সব ফেক আইডি থেকে নিজের লেখায় ভোট দেয়া।
*) ফেক আইডি গুলো থেকে কাউকে খাটো করার ফলে নিজেকে ডিফেন্ড করা।
*) কারো লেখায় অযাচিত জ্ঞান দেয়া।
একজন লেখক কবি মাত্রই তার লেখায় স্বাধিন। সে কোন ফরম্যাটে কি লিখবেন তা তারই সিদ্ধান্ত। আমরা শুধু জানাব তার লেখাটা পড়ে আমার কেমন লাগলো। আর কেমন লাগলো তার আলোকে ভোট দেব। খুব সহজ কিন্তু কাজ গুলো। না এতেও আমরা ন্যয্য আচরণ করিনি। মন্তব্য করেছি অসাধারণ লেগেছে, কিন্তু ভোট দেইনি হা হা হা। সবচেয়ে মজা লাগতো যখন ভোটের ক্যাটাগরী কর্তৃপক্ষ দেখিয়ে দিত। সহজেই বুঝা যেত কে কেমন মন্তব্য করেছে আর সেই অনুপাতে ভোট দিয়েছে কি না।
বর্তমান অবস্থায় একাধিক আইডির ব্যবহারঃ
গল্প কবিতার একটা অটো ফিল্টারিং ব্যবস্থা আছে। তারপরও তারা ম্যানুয়াল ফিল্টার করে ভোটিং এর ক্ষেত্রে। তাই এখন কেউ নিজের লেখায় নিজে ভোট দিয়ে বিজয়ী হতে পারবে না। তাহলে একাধিক আইডি কেন? আমার একাধিক আইডি আছে। প্রায় দুবছর একটানা এখানে থাকার ফলে আমি সহ আমার সমসাময়িক অনেকেই পরিচিত হয়ে গেছি। তার একটা সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা যাই লিখি, যেমনই লিখি আমাদের লেখাগুলো সেরা ২৫শে চলে আসছে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগত ভাবে এতে সন্তুষ্ট নই। আমি চাই পাঠক সত্যি করেই বলুক লেখাটা কেমন লাগলো আর সে অনুযায়ী ভোট দিক। তাই “একাধিক আইডি থেকে লেখা দেই শুধু লেখার মান যাচাইয়ের জন্য”। তবে হলফ করে বলছি “আমি আমার এক আইডির লেখায় অন্য আইডি থেকে ভোট দেই না”।
আর এক শ্রেণীর লেখক আছেন যারা ভাবেন এরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবেন। মানে সেরা ২৫শে কারা আসবেন না আসবেন তা তারা ভোট দিয়ে ঠিক করে দিবেন। ত্বাত্ত্বিক ভাবে এটা সম্ভব। গত সংখ্যায় প্রথম হওয়া গল্পটাকে যদি মান ধরি ভোট ১৪১(এই ভোট প্রাপ্ত লেখার সাথে আমার এই প্রয়াসের কোন সম্পর্ক নেই শুধু মান হিসাবে নেয়া) তাহলে কয়টা আইডি লাগে? ৩০টা হলেই তো হয়ে যায় তাই না! ৩০গুন ৫=১৫০। একজন ৩০টা আইডি খুলে সেগুলো থেকে লেখা দিয়ে নিজের পছন্দ মতো লেখাগুলোকে ভোট দিয়ে সেরা ২৫শে নিয়ে আসা। তখন বিচারকদের আর কি করার থাকবে। জয়তো হাতের মুঠোয়।
হা হা হা এই যে চেষ্টা তা না করে যদি নিজের একটা লেখার পিছনে ৩০গুন সময় দেয়া হয় সেটা কি নিজের লেখাটাকে মান সম্মত করবে না! আর নিজের লেখায় নিজে ভোট দিয়ে জয়ী করতে পারলেও কেউ না জানুক আপনিতো নিজেই জানবেন আপনি কিভাবে জয়ী হয়েছেন। এতে কি আপনি অনেক বেশি সন্তুষ্ট হবেন? এ ক্ষেত্রেও একটা বাংলিশ প্রবাদ আছে “মেড হ্যাপিনেস মাইন্ড মাইন্ড”।
সার কথা হলো যারা নিজেকে নিজে ভোট দিয়ে জয়ী করার, ফেক আইডি থেকে অন্যকে ছোট করবার মানষিকতা নিয়ে লেখা লেখি করে যাচ্ছেন তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তারা বুঝতে শিখুক “ভাল অল্প হলেও ভাল”। আর তারা জানুক তাদের কুট বুদ্ধি ধরার মতো গল্পকবিতার যথেষ্ট ভাল মাথা রয়েছে।
“সাহিত্য এমন একটা জিনিস যা জোর করে কাউকে ভাল লাগানো যায় না”। সত্যিকার পাঠকের উপর বিশ্বাস রাখুন, ভাল লিখার চেষ্টটা অব্যাহত রাখুন জয়ী না হতে পারেন। আপনার ভান্ডারে ভাল কিছু লেখা জমা হবে। পা টেনে নিচে নামানোর অপচেষ্টা বন্ধ হোক। ঘারটায় কাউকে দাড়াতে দিন যাতে সে তার যোগ্যতায় একজন পূর্ণাঙ্গ লেখক/কবি হয়ে উঠতে পারেন। একাধিক আইডি থেকে লেখা দিন যত খুশি তত। তবে সেগুলো থেকে নিজের লেখায় নিজেই ভোট নয়। নিজেকে নিজে বদলাতে না পারলে পৃথিবীর কারো শক্তি নেই আপনাকে বদলাবার।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।