কেরানীগঞ্জ গণহত্যা

গণহত্যা (অক্টোবর ২০২৪)

মোঃ মাইদুল সরকার
  • 0
  • ২৬
-ভাই আজকে থাইকা যান। কাল সকাল বেলা যাইয়েন গা। কত দিন পর আইলেন আমার বাইত।
মালতি তার বড় ভাই সেলিম বেপারীকে বলছে আরও একদিন বোনের বাসায় বেড়াতে। সেলিম থাকবে নাকি চলে যাবে বুঝতে পারছেনা। ছোট ছোট ভাগ্নে দুটিও ধরেছে মামা তুমি কিন্তু আজকে যাইবার পারবনা।

-আচ্ছা যামুনা। এক কাজ কর, আজকে ইছা মাছের ভর্তা কর আর বাইলা মাছের ঝোল কর। কতদিন তোর হাতে এই দুই পদের খাওন খাই না।

মালতি খুশি হয়ে ভাইকে বলে, ভাই আপনি চাইলে একটু নদীর ঘাট থেকে ঘুইরা আহেন। আমি এই ফাঁকে ঘরের বেবাক কাজ কাম সাইরা রাখি। বুড়িগঙ্গা নদীর ধারে গিয়ে ভাগ্নে দুজনকে নিয়ে সেলিম বেপারী নৌকায় চড়ে তারপর নৌকা বুড়িগঙ্গার ওপারে গেলে সদরঘাট থেকে ভাগিনা দুটিকে নতুন জামা কিনে দেয়।

নতুন শার্ট পেয়ে পিচ্ছি দুটি খুশিতে আটকানা। নতুন জামা দেখে আর মুচকি মুচকি হাসে।

এদিকে দুপুরে মালতি নিজের পালা মুরগি জবাই করে মাংস রান্না করে। চিংড়ি মাছের ভর্তা আর বেলে মাছের ঝোল রান্না করে। পোলাও ও মোটা ভাত সাথে পাতলা ডাল।

অনেকদিন পর প্রিয় দুটি আইটেম পেয়ে মালতির ভাই সেলিম বেপারী গোগ্রাসে খেতে থাকে আর বলে বহুত মজা হইছে, বহুত মজা হইছে।

রাতে মালতির জামাই সাইদুল এলে সাইদুলের সাথে রাজনীতি নিয়ে আলাপ করে সেলিম।

-দেশের অবস্থা তো ভালো লাগতেছে না কখন কি হয় বলা যায় না।

-দেশে মনে হয় একটা আউল লাগতে পারে।

-আরে রাখ মিয়া তোমার আউল । যুদ্ধ হইতে পারে। যুদ্ধ ছাড়া বাঙালি আর কোন গতি নেই।


ঝিঝি পোকা ডাকতে থাকে রাত বাড়তে থাকে। মানুষজন আস্তে আস্তে তাদের কাজকর্ম খাওয়া দেওয়া শেষে গভীর ঘুমে তলিয়ে যেতে থাকে।

রাত গভীর হলে অনেকে ঘুম ভেঙ্গে অবাক হয় গোলাগুলির শব্দে। বুড়িগঙ্গার ওপার হতে শব্দ ভেগে আসছে।

কি হচ্ছে বুঝা যাচ্ছেনা। তবে কি......................................................

অনেকে যেটা ভাবতে চাইছে সেটাই ঘটে চলেছে। মার্চ মাসের এই অন্ধকার রাত্রিতেই পাকিস্থানীরা হামলা শুরু করেছে। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ। সেলিম বেপারীর আর মানিকগঞ্জ ফিরা হয়না।

সে আর জানতে পারেনা তার স্ত্রী সালেহা মেয়ে আকলিমার খবর। দেখতে দেখতে এপ্রিল মাস চলে আসে। শুরু হওয়া মুক্তি যুদ্ধ এগোতে থাকে, দলে দলে মানুষ যুদ্ধে যোগ দেয়।

এপ্রিল এর দুই তারিখ ভোরে পাকিস্তানি সেনাদের সশস্ত্র আক্রমণ মারা যায় হাজারো বাঙালি। কেরানীগঞ্জেও গণহত্যা চালায় পাক হানাদার বাহিনী।

সব আদমকো খতম কর দাও। এই নির্দেশ পাওয়া মাত্র হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে পাক সেনারা।

নারী,শিশু,বৃদ্ধ কত মানুষ যে ওদের গুলিতে প্রাণ দেয় তার হিসেব রাখা যায়না। কেউ পালাতে গিয়ে মরে, কেউ নিজেকে বাঁচাতে মরে, কেউ অন্যকে বাঁচাতে মরে। কেউ পাক সেনাদের মারতে গিয়ে মরে।

ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে মানুষকে নি:স্ব করে দেয় হানাদাররা। কদিন আগেও যেখানে মালতী, সেলিম বেপারীরা ছিল সেখানে এখন কেউ নাই।

তারা কি বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে ? এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। কেবল যারা প্রত্যক্ষদর্শী তারা আজও ভয়ে শিউরে উঠে। শুধু রক্ত আর লাশ চোখে ভেসে উঠে।

এরকম নাম জানা ও অজানা কত মানুষ প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছে একটি লাল সবুজ পতাকার জন্য।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এই বর্বর ঘটনা ‘কেরানীগঞ্জ গণহত্যা’ নামে পরিচিত হয়ে আছে। পরে একই কবরে দশ থেকে বারটি করে লাশ দাফন করা হয়। কেরানীগঞ্জে আশ্রয় নিতে আসা নাম না জানা চুয়ান্ন জনকে দাফন করা হয়। সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডে জিঞ্জিরা, মনু বেপারীর ঢাল, নজরগঞ্জ, গোলজারবাগ, মান্দাইল, কুশিয়ারবাগ, বড়িশুর, মাদারীপুর এলাকা লাশের স্তূপে পরিণত হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী চমৎকার লিখেছেন ভীষণ ভালো লাগলো

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কেরানীগঞ্জে যে গণহত্যা চালিয়েছিল পাক হানাদার বাহিনী তারই বয়ান তুলে ধরা হয়েছে গল্পে।

২৪ আগষ্ট - ২০২০ গল্প/কবিতা: ৯৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "যানজট”
কবিতার বিষয় "যানজট”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৮ অক্টোবর,২০২৪