বন্ধু
২২ জন
“আমরা তখন কলম্বাস, হাত ছুঁয়ে দেখি আদিম আদ্র নির্জনতম দ্বীপের শিখর,আমরা তখন পানামের ইটে মাখামাখি জড়ানো শতবর্ষী বটের শিকড়। আমরা তখন পতাকা সাজি, সবুজ আমার বুকে গুটিসুটি মারা তুমি এক লাল,আমরা তখন ব্যাস্ত জীবন তুড়ি মেরে উড়ানো আলসে প্রেমের অবেলার কাকতাল”।
আমাকে ভাঙতে বলেছিলে বলে মাইকেল এঞ্জেলো গুড়িয়ে আবার আমি পাথর,গড়তে বলেছিলে তাই টাইটানিকের শরীর থেকে খুলে আমাজনের অশ্বত্থ নিথর,উড়তে বলেছিলে, এভারেস্টের চুড়ায় দাঁড়িয়ে আরেকবার প্রেমে পড়তে ঝাঁপ,মন ভাঙতে বলেছিলে, শুধু পারিনি তাই, প্রতিটি রাতে একাকী ব্যর্থ অনুতাপ।
আমাকে তখন নিশিতে পেয়েছে। অগ্রহায়ণের রাতটা কেমন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। এটা ঢাকা নয়, এটা তপ্ত কোন শহর নয়। আমি এখন উত্তরের একটা গ্রামে। হেমন্ত এখনও এখানে বাংলার সেই দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয়। বছরের এই সময়টায় সূর্য ক্লান্ত হতে থাকে। কমতে থাকে তেজ। আর আমরা যারা নাগরিক ‘ঘানি টানি’, ইচ্ছে করে গ্রামে যেতে, শিকড়ে ফিরে যেতে, উৎসব করতে, নবান্ন উৎসব পালন করতে।
তোমার সাথে মিলব অথচ আজ আমি দক্ষিণ আর তুমি উত্তরে, আমার মন থমকে আছে সতেরো আর তুমি পৌছে গেছসত্তুরে।তুমি কথা দিয়েছিলে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজবাক্যদান, মিলনের আশায় তবে কেন ফিকে মরে পড়ে এই হৃদয়ের কাব্য-গান।
দেখি রাস্তার ওপারে একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে ভিজছে। ঠিক আমার মত একা। দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে, বন্ধ দুই চোখে নবধারা জলে স্নান করছে। সুমি’র মত লাগছে মেয়েটাকে। সুমি কি?
‘কবর’ কবিতাটা কখনোই পুরোটা শেষ করতে পারেন না রেজা সাহেব। বিশেষ করে ‘গলাগলি ধরি কেঁদে যদি হয় সুখ’ লাইনটা আসলেই আমরা আর চোখের জল আটকে রাখতে পারি না। কান্নায় ভেঙে পড়ে এই বৃদ্ধাশ্রমের অধিবাসীরা। রেজা সাহেব ধীরে ধীরে বের হয়ে যান। পিছন থেকে দেখি, শক্ত লোকটা পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছছে।
‘তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা।তুমি কি আমি কি, বাঙালি বাঙালি। লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’।
আহত আর্তনাদ সুরে,রক্তাক্ত পিঞ্জর পুরে,বিদায় বাঁশরী বাজে বাঁশরীয়ার ঘরে।অমাবস্যা রাজ,জয় করে আজ চাঁদোয়া দূর্গ,লুন্ঠিত শশী তাই নিশিরাজে করে প্রেম রঙ্গ!সনাতনে আজ রক্তক্ষরণ,ব্যথা পিঞ্জর পুরে,
একদিন তুমি আর আমি পথ চিনে নিতেইহেঁটে যেতে শিখেছি, দুটি হাত জড়িয়ে থাকতোকত কত পিছুটান রেখে স্মৃতির নামেআমরা যেন মনে করে দেখতে পারিআমরা যেন ক্লান্ত হলে হাসতে পারি ভেবে ভেবে
আমি কবিতা ভালোবেসেছি তোমাকে ভালোবাসিনি,তুমি আমার কবিতার প্রেমে পড়েছিলে আমার প্রেমে আসনি!
‘মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় প্রবল ঘূর্ণাবর্ত, সাবধানে নৌযান চালান’-এই সতর্কবার্তা হোর্ডিং-এ বারবার পড়েছে রঞ্জন । মোহনা থেকে সরে এসে মেঘনার রূপ দেখছে । জলের উত্তাল রূপ দেখে হোর্ডিং-এর কথার সত্যতা অনুমান করতে পারছে । মেঘনার রূপ তার কাছে অবর্ণ্নীয় । সে আত্মহারা ।