সকাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে শখানেক বার মোবাইলে চোখ বুলানো হয়ে গেছে রাফিনের। আসেনি সেই প্রতিক্ষিত ফোনটি । এমনকি কোন এসএমএস ও না। অবশ্য অস্থ‌িরতা বা ধৈর্য্যর অভাব রাফিনের স্বভাবের সাথে একদমই যায় না। অন্তত সে‌ নি‌জে তাই মনে করে।

হৃদ্য! অ হৃদ্য! কোথায় লুকিয়ে আছিস রে হারামি? শুনতে কি পাস না? হারামজাদাটার কাণ্ড দেখো ত--শুনেও শুনে না! হে আল্লাহ্‌, এমন অপদার্থ সন্তান যেন কারও কপালে না জুটে। রাগে আগুনজ্বলা জ্বলছে আর গজগজ করে পালাক্রমে কথাগুলো বলে যাচ্ছে গৃহিণী নিনা জোয়াদ্দার। এমুহূর্তে হৃদ্যকে পেলে বোধহয় সিদ্ধ ছাড়া আলুভর্তা বানিয়ে তবেই দম নিত বুঝা যায়।

বারান্দা ছাড়িয়ে আকাশ দেখে মনে হচ্ছে হাত বাড়িয়ে মেঘ ছোঁয়া যাবে। একটু পরেই ঝড় আসবে মনে হচ্ছে, আকাশে ঘন ধূসর মেঘ জমে অনেকটা নেমে এসেছে হাতের নাগালের মধ্যে। ঊনিশ তলার ফ্ল্যাটে থাকার এই আনন্দটা রেশমার একান্ত নিজস্ব।

শেষ বিকেলের সূর্য অস্ত গেছে সে অনেকক্ষণ হলো...পশ্চিম আকাশের বুকে এখনো লালচে আভায় রক্তসন্ধ্যা...দূরে কোথাও বউ কথা কও পাখি ডাকছে!সন্ধ্যা তারাটা বড় নিঃসঙ্গ ভাবে আকাশের বুকে জ্বলজ্বল করছে!

সময় হয়েছে দরজা খোলার
জন্মের পর জন্ম ধরে জমিয়ে তোলা জালের আড়ালে তুমি কেবল গুটিয়ে সরে জালের মধ্যে জাল হয়ে মিশে থাকবে আর কত জন্মের পর জন্ম আমি কেবল জালের জটিল দরজায় ধাক্কা.........

একটু নিজেকে দেখ’’ – নিজের দিকে খেয়াল দেয়ার এ ন্যুনতম উপদেশ টুকুও আজ বিমল বাবুর জীবনে যেন অনেক কাম্য। কিন্তু নিজেই যে নিজের উপদেশ দাতা। সুতরাং মেনে চলা এবং না চলার মাঝে কোন তফাৎ নেই।

আজ পহেলা বৈশাখ। সকাল হতেই চারদিকে উৎসবের ছড়াছড়ি। চারদিক থেকে ভেসে আসে "এসো হে বৈশাখ এসো এসো..." গান। সকালেই বৈশাখী ঝড়ের আলামত নিয়ে আসে ঘন কালো মেঘ।

লোহার গেটের কাছে দাঁড়াতেই ভেতর থেকে ভেসে এলো এক বয়ষ্ক মানুষের ভৎর্সনা। কি যেন বলে ধমকালেন! শিকগুলোর ফাকা দিয়ে যতটুকু চোখ গেলো, বিস্তর ফাকা মাঠ। শেষ প্রান্তে একটি দ্বিতল ভবন। এল প্যাটানের.......

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের ‘সেইফ হোম’ থেকে অনন্ত আজ ছাড়া পেয়েছে। সাত বছর পর আজ তার মুক্তি মিলল। বহু প্রতিক্ষীত মুক্তি। যে-বয়সটা তার বয়সী ছেলেরা মিষ্টি-মধুর দুষ্টুমি আর নিয়ম ভাঙ্গার আনন্দে কাটায়, সে-বয়সটা অনন্ত পার করেছে সেইফ হোমের চার দেওয়ালের মধ্যে।

ক্রিং...ক্রিং...ক্রিং...
ফোনটা বেজেই চলেছে অবিরাম। ওপাশ থেকে কারো হাতের স্পর্শ না পেয়ে যেন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। প্রায় দশমিনিট ধরে একটানা বাজার পরে ফোনটি রিসিভ হলো। দৌঁড়ে এসে ফোনটা ধরে লোপা হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো,

সেদিন স্কুল থেকে ফেরার পথে তুমি, আমি দাঁড়িয়ে আছি দিগন্ত রেখার শেষ প্রান্তে বড় আমগাছটার নীচে। তখন হঠাৎ ঝুপঝাপ বৃষ্টি।
আমার কাছে কোন ছাতা ছিলনা।

সে তো আমাকে অনেক ভালবাসে, তাকে যতো'ই অবহেলা করি সে আমাকে ছেড়ে যাবে না!
এ ভাবে আপনি যেনে না যেনে অবহেলা করতে থাকলেন আর ভাববেন আমি যাই করি সে আমাকে ছেড়ে যাবে না..../

আমি আর আগের মতো অবাক হই না।অবাক হতে পারি না।হয়তো অবাক হওয়ার ক্ষমতা টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।মানুষ কারনে অকারনে অবাক হয়।মানুষ হওয়ার সুবাধে আমার অবাক হওয়ার প্রয়োজন ছিলো।

বাড়ছে যত দিন কমছে তত আয়ু।
বাড়ছে যত দিন দুর্বল হচ্ছে স্নায়ু।

পুড়িয়ে দেয়া স্মৃতির চিতায় অট্টহাসি হাসে মেঘাচ্ছন্ন প্রিয়া,প্রেয়সী অদ্বিতীয়া,অনুপমা ঐশী,সোনালী,নিশীর মতো হাজারো কাল্পনিক প্রেমিকার নাম...
অবশেষে আজন্ম খরায় মরুভূমিময় এই পৃথিবীর বুকে গোপনে আসে সবুজপত্র,তাতে লেখা