পিছনের দিকে দূরে লক্ষ্য করল রাস্তায় পানি ছল ছল করছে। সামনে তাকিয়ে চোখ আটকে গেল। তার চিনতে কোন ভুল হবার কথা নয়। নিশ্চিত হলো লেভেল ক্রসিংয়ে সামনে বাইকের পিছনে বসা মেয়েটি অধরা ছাড়া কেউ নয়।

প্রায় প্রতিদিন রাতের এই ৭ - ২৫ এর বনগাঁ লোকালে এক মহিলাকে দেখতাম কোলে একটি ফুটফুটে সুন্দর ঘুমন্ত শিশুকে নিয়ে ভিক্ষে করতে । শিশুটিকে দেখে আমাদের বড় মায়া হতো । আমরা সবাই মহিলাটিকে আমাদের সাধ্যমত সাহায্য করতাম । প্রায় রোজই সাক্ষাৎতের ফলে আমাদের সঙ্গে মোটামুটি একটা পরিচয় হয়ে গিয়েছিল । মহিলাটির নাম জুঁই নস্কর ।

প্রতি রাতের মত মানিক আজও রাহিমাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে দিয়ে এল। কিছুটা দূরে সামনের ঘরে বসে রাহিমার চিৎকারের শব্দ শোনা যাচ্ছে।সে ক্রমাগত কেঁদে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে “ ‘আল্লাগো’, ‘আল্লাগো’ ”।

গতকাল রাতে ঘুমাতে অপ্রত্যাশিত ভাবেই একটু দেরি হয়ে গেল।বাড়ি ফেরার পথে মনে হলো! কে যেন আমার পিছু নিয়েছে,
হঠাৎ মনে হলো, আমার পায়ের কাছ দিয়ে ধবধবে একটি সাদা বিড়াল, মৃদু পায়ে আমার পিছনে–পিছনে এগিয়ে আসছে–আমার শরীরের ভিতর কেমন যেন একটা ঝাঁকিদিয়ে উঠলো,

আজ শাপলার বিয়ে, শাপলা অনেক সুন্দর করে সেজেছে, ফাহিম চিঠিতে যা যা বলেছে, ঠিক  তার কথামত সেজেছে, পায়ে আলতা দিছে, চোখে কাজল দিছে, আজকাল মেয়েরা চোখে কাজল দেয়না, কাজলের পরিবর্তে মাশকারা দেয়, কাজলের সাথে মশকরা করতে গিয়ে মনে হয় মাশকারার আবিষ্কার।

কালিরঘাট থেকে ছনবাড়ি যাওয়ার রাস্তা খারাপ, খানাখন্দের অভাব নেই। বাসটা হেলেদুলে এগুচ্ছে কচ্ছপ গতিতে। সাদেকের মনে হচ্ছে বাসের ঝাঁকুনিতে নাড়িভুঁড়ি সব উল্টে যাবে।
"শালার গম্মেন্ট, রাস্তাডা ঠিক করতারেনা? জম্মের পর থেইকা এমুনি দেখতাছি।" ড্রাইভার জলিলের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে সাদেক।

ছারাবিবি দেশলাই খুজে পাচ্ছেন না । মাগরিবের আজান হয়ে গেছে বেশ কিছুক্ষন আগে। দোতলা বাড়ীর চারিদিকে বেশ কয়েকটা নারিকেলের গাছ। নারিকেল পাতার প্রান্তে সূর্যাস্তের শেষ আলো লেগে আছে সামান্য।

দিনের ক্লান্তির শেষে তরল তিমির
ধীরে সুস্থে নেমে আসে। আমাদের গ্রামটাকে ঘিরে।
ঘরে ঘরে জলে উঠে মাটির প্রদীপ কিংবা কেরোছিনের শিখা।

রক্তাক্ত লাশগুলো উঠোনেই পড়ে ছিল।
মা-বাবা-দাদু...বাড়ির কাজের লোকগুলো...কাউকে ছাড়েনি ওরা। যেন প্রতিহিংসার আগুনে কুপিয়ে শেষ করেছে, এই রক্তাক্ত জমিদার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকুও।

বলা নেই কওয়া নেই রাত্রির এই দুই প্রহরে হঠাৎ আমার মেসে বিটলুর আবির্ভাব! কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাল লাল চোখে সমুদ্রের ঢেউ তুলে বিটলু বলল, মেয়েরা শরীর বিক্রি করতে পারে, ছেলেরা কেন পারে না? ছেলেদের শরীরের কি কোনো দাম নেই?

তখনো ঘনকালো মেঘে আকাশ ছেঁয়ে আছে।বাতাসের একটানা শোঁ শোঁ শব্দ শষ্য ক্ষেতে পাখি তাড়ানোর পলিথিনের ফিতার মত শব্দ করে কানের পর্দায় আঘাত করছে।ঘের থেকে পানি ছেড়ে দেওয়া জাল বসানো নালীটার পাশে থির থির করে কাঁপছিল করিম। করিমের ডাক শুনে দৌড়ে আসে আবু, বেশ উৎকন্ঠা নিয়ে জানতে চায়

নাজনীনের সাথে আমার বিয়েটা রাজকন্যার সাথে রাজ্য পাওয়ার মতোই একটা ঘটনা ছিলো! আমার মতো একজন নগণ্য ছেলের পক্ষে এরকমটা কীভাবে সম্ভব হলো এই ভাবনা আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বিস্ময়ের মাত্রাকে চরমে পৌঁছে দিয়েছিল।

আমি শর্মী,শর্মীলা সেন। আমি দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায়। এক জনের জন্য অপেক্ষা করছি। সে দেরি করছে। সেই ফাঁকে আপনাকে একটা গল্প বলব। আমার নিজের গল্প।

গল্পের শুরুতেই অর্পনা আর আবীরের মধ্যে বন্ধুত্বটা ঠিক কবে থেকে যে হয়েছিল সেটা হয়তো ওরা নিজেরাও জানে না। খুব আবছা আবছা মনে আছে অর্পনার ক্লাশ ওয়ানের বিস্কুট দৌড় প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে খুব কাঁদছিলো ও।আবীর বিস্কুট দৌড়ে ফার্স্ট হয়েছিল। তখন অর্পনার কান্না দেখে ছোট্ট আবীর নিজের প্রাইজের হলদে রঙের টিফিনবক্সটা অর্পনার
হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল ,কাঁদিস না ,এই নে ...তোর কাছে রাখ,আমার মানেই তো তোর।

মাঝরাতে খসখস শব্দে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। শীতের রাত। ভয়ানক নিস্তব্ধতা। ঠাণ্ডা যাতে না আসে সেজন্য দরজা-জানালা আগেই বন্ধ করা ছিল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিলাম না। ভুল শুনেছি বোধ হয়। চোখ বুজে ঘুমনোর চেষ্টা করলাম। আবার খসখস শব্দ পরিস্কার শুনতে পেলাম। ভয়ানক আতঙ্ক এসে গ্রাস করল আমাকে।