গল্পটা কাল্পনিক

আঁধার (অক্টোবর ২০১৭)

Salma Siddika
  • ১৫
কালিরঘাট থেকে ছনবাড়ি যাওয়ার রাস্তা খারাপ, খানাখন্দের অভাব নেই। বাসটা হেলেদুলে এগুচ্ছে কচ্ছপ গতিতে। সাদেকের মনে হচ্ছে বাসের ঝাঁকুনিতে নাড়িভুঁড়ি সব উল্টে যাবে।
"শালার গম্মেন্ট, রাস্তাডা ঠিক করতারেনা? জম্মের পর থেইকা এমুনি দেখতাছি।" ড্রাইভার জলিলের উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে সাদেক।
জলিল ভাবলেশহীন ভাবে এক নজর ঘুরে তাকায়। সাদেক প্রতিবার বাসে উঠে এরকম অভিযোগ করতে থাকে। তার অভিযোগেরই গুরুত্ব দেয়ার কোনো কারণ নেই।

সাদেক সপ্তাহে তিন চারদিন কালিরঘাটে মাদ্রাসায় আসে। মাদ্রাসার সাথেই এতিমখানায় খাবারের সাপ্লাই দেয়ার কাজটা করে গত দুই বছর হলো। এতিমখানা পরিচালনা করে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হারুন সাহেব, তার সাথে সাদেকের বিশেষ বন্দোবস্ত করা আছে। এতিমখানার রান্না ঘরের যাবতীয় কাঁচামাল কিনে দিয়ে সাদেকের পকেটে ভালোই কমিশন আসে।

কালিরঘাট থেকে ছনপাড়া যাওয়ার বাস মোটে দুইটা। এই দুই বাসেই যাতায়াত সাদেকের সেজন্য জলিলকে ভালো চেনে সে । জলিল এই লক্কর ঝক্কর বাস চালায় বহুদিন হলো।
সাদেকের চোখ লেগে আসছিলো। হটাৎ ঝাঁকুনি দিয়ে বাসটা থেমে গেলো। সাদেক বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখলো আরো দুজন যাত্রীর সাথে একটা মেয়ে উঠেছে বাসে।
"ওই মিয়া তোমার না নন স্টপ সার্ভিস , রাস্তায় রাস্তায় যাত্রী লও ক্যা?" খেঁকিয়ে ওঠে সাদেক।
জলিল আবার ভাবলেশহীন ভাবে ঘুরে তাকায় তারপর বাসে স্টার্ট দেয়।

আকাশের অবস্থা ভালো না, কেমন গুমোট গরম বাইরে। পুরো আকাশ জুড়ে থমকে যাওয়া ধূসর মেঘের আবরণ। যেকোনো সময় বৃষ্টি শুরু হবে মনে হয়।
বাসে খুব বেশি যাত্রী নেই। মেয়েটা সব সিট ছেড়ে সাদেকের ঠিক পাশের সারির খালি সিটটায় বসলো।
সাদেকের ঘুম হটাৎ করেই গায়েব হয়ে গেলো। সে নড়েচড়ে বসে মেয়েটার দিকে মনোযোগ দিলো।
"উঃ যে গরম"' নিচু গলায় নিজেকেই বলে মেয়েটা। তারপর মাথার ঘোমটা নামিয়ে ময়লা রুমাল দিয়ে ঘাড় মুখ মোছে ।

সাদেকের দৃষ্টি মেয়েটার গলায় আর সেখানে জমে থাকে কাঁচের টুকরোর মতো ঘামের বিন্দুতে। আঃ! কি সুন্দর কাঁচা হলুদ গায়ের রং! সাদেকের ভেতরে লকলক করে কেউ। তার সব ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে লক্ষ্য করে মেয়েটাকে।

মুখ মুছে মেয়েটা আবার মাথায় কাপড় দেয়। তার পরনে জংলা ছাপার সাধারণ কামিজ। কামিজের পাশটা বেশ অনেকটা কাটা, পেটের এক চিলতে বের হয়ে আছে। সাদেকের নজর এড়ায়না সেটা। কোমরে বাড়তি মেদ নেই, বেশ এক হাতেই কোমর জড়িয়ে ধরা যাবে।

ভাবতে ভাবতে পা বেয়ে তার দৃষ্টি নেমে যায় নিচে, সেখানে রং ওঠা সোনালী চিকন নূপুর জড়ানো। বাসের দুলুনিতে নুপুর দুলতে থাকে। অযত্নে থাকা পায়ের পাতায় কুঁড়ির মতো গোলাপি রঙে রাঙানো নখ। পাস্টিকের স্যান্ডেল পায়ে।

সাদেক দীর্ঘক্ষণ পায়ের নূপুর জোড়ায় দৃষ্টি রাখে। এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই। আরো অনেকক্ষন লাগবে ছনপাড়া যেতে। ততক্ষন মনের খায়েশ মিটিয়ে দেখে নিলে ক্ষতি নেই।
সাদেক এবার দৃষ্টি দেয় মেয়েটার বুকে। বোকা মেয়ে মানুষ ! এমন ভাবে ওড়না পেঁচিয়ে রেখেছে আসল জিনিসটাই দেখা যাচ্ছে না। মনে মনে গাল পাড়ে সাদেক। তারপর কল্পনায় দেখে নেয় মেয়েটার নগ্ন শরীর। ভেতরের লকলক জ্বালা ধরায়। কাঁকড়ার মতো দশ পায়ে খামচে ধরে মেয়েটাকে। মেয়েটার পাতলা ঠোঁট জোড়া গরম মোমের মতো গলতে থাকে সাদেকের ভেতরে।
সাদেকের অস্থির লাগে। আর ধৈর্য মানছেনা শরীর।

"আম্মাজী, কই যাইবেন?" সাদেক খুব সুন্দর ভাবে হেসে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে। তার বয়স পয়তাল্লশি। মাদ্রাসার কাজটা পাওয়ার পর থেকে দাঁড়িও রাখে, সাথে মাথায় টুপি। এতে বেশ লাভ হয়েছে। মানুষ হুজুর হুজুর ডাকে, সম্মান করে।

মেয়েটা সাদেকের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বলে," আর্যসুর যাইতেছি চাচা, এই বাস যাইবো না?"
"হ আম্মা, এই বাস যাইবো। আর্যসুর গেরাম তো অনেক দূরে আম্মা। আরো তিন চাইর ঘন্টা তো লাগবই।"
"কি কন চাচা! শুনছি দুই ঘন্টায় যাওন যায়। "
"রাস্তা খারাপ তার উপরে বিষ্টি , তার জন্য বেশি সময় লাগবো।"
মেয়েটা বষিণ্ণ হয়ে জানলার বাইরে তাকায়। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে এর মধ্যে।
সাদেক নিচু গলায় বলে, "এত চিন্তা কইরেন না আম্মা, পৌঁছায় যাইবেন । মুড়ির মোয়া খাইবেন?"

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। সাদেক কাপড়ের একটা ময়লা ব্যাগ খুলে মোয়া বের করে দিলো। মাদ্রাসায় মুড়ির মোয়া দেয়ার কথা, সেখান থেকে দুই প্যাকেট সরিয়ে রেখেছে সাদেক। তার ছোট মেয়ে মোয়া খেতে পছন্দ করে।

মোয়া দেয়ার ছুঁতোয় মেয়েটার হাত ছুঁয়ে দেয় সাদেক। তার রক্ত কণিকা গুলো তীব্র লালসায় টগবগ করে ফুটছে। এই টুকু ছোঁয়ায় তাদের মন ভরবে না। তারা আরো বেশি কিছু চায়।

মেয়েটা কুটকুট করে মোয়া খাচ্ছে। সাদেক অতি দ্রুত চিন্তা করে । ঘটনা প্রবাহ কোন দিকে মোড় নিলে কি হতে পারে সব কিছু ছক কেটে নেয়। সামনেই ছনপাড়া বাজারে বাস থামাবে জলিল। সেখানে কিছু যাত্রী নামবে। সাদেকেরও সেখানে নামার কথা। ছনপাড়া বাজারে জলিল কিছুক্ষন বিরতি নেয়। অন্যান্য গন্তব্যের যাত্রীরা নেমে হাত পা ঝেড়ে নেয়, চায়ে ডুবিয়ে বিস্কুট খায়।
ছনপাড়া আসতে আর মিনিট দশেক। সাদেক মনে মনে সব পরিকল্পনা গুছিয়ে নেয়।

প্রথম প্রথম দাঁড়ি গোফ উঠার সময় নটীপাড়ায় যাওয়া শুরু করেছিল সাদেক। কি নেশা ধরে গেলো রক্তে! নিয়মিত সে পাড়ায় না গেলে চলতো না। এসব থামাতে হলো যখন কি এক বাজে রোগ ধরলো।
সাদেকের মা সাদেককে ডেকে নিচু গলায় বলেছিলো, "জিনা করা কত বড় পাপ তুমি বুঝো বাবা? এর কোনো মাফ নাই। দোজখে জ্বালবা কিন্তু কোনো দিশা পাইবা না।"

বড় আদরের ছেলে ছিল সাদেক। এর চেয়ে বেশি কিছু বলেননি তার মা। এমনকি বিয়ের পরেও যখন সাদেকের নেশা কাটলোনা, তখনও তার স্ত্রী আলেয়াকে সাদেকের মা বলেছিলো, "পুরুষ মানুষ এইরকম একটু আকটু অভ্যাস থাকে, তার জন্য এত কান্নাকাটির কি আছে?"
আলেয়া সব মেনে নিয়েছিলো। সে নিজেই সাদেককে সদরের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়ে সরিয়ে তুললো।

বোকা মেয়ে মানুষ! মনে মনে হাসে সাদেক। চোখের সামনে এত কিছু ঘটে অথচ কেমন চোখ বুজে থাকে আলেয়া! এমন সিধা সরল কেঁচোর মতো মেয়ে মানুষ সাদেকের ভালো লাগে না। বললেই বাহুতে এলিয়ে পড়লে মজা কই ? জংলী বিদ্রোহী যুবতী মেয়ে মানুষ , যে কিনা কাছে গেলে ফণা তুলবে - এমনটাই চাই তার।

এই চাওয়াটাই জ্বালায় সাদেককে। নটীপাড়ায় মেয়েগুলোকে ইদানিং আর ভালোলাগে না। পয়সা দিলে যে কেউ পায় তাদের শরীর। ধ্যাৎ!

বাস ছনপাড়ার বাজারে থামলো। বাইরে বৃষ্টি নেই এখানটায়। সবাই একে একে নেমে গেলো।
"আম্মা, আসেন। এইখানে ড্রাইভার গাড়িতে তেল নিবো। "
"গাড়িতেই বইসা থাকি চাচা ?"
"এইখানে চায়ের দোকানে ভালো চা বানায়। চা খাইতে খাইতে বাস রেডী হইয়া যাইবো। "
মেয়েটা সাদেকের পেছন পেছন আসছে। সাদেক বাস থেকে নেমে দ্রুত চিন্তা করে নেয়। মেয়েটাকে নিয়ে চায়ের দোকানে গিয়ে বসে।
ছোটোখাটো চায়ের দোকান , সাথে সিঙ্গারা, পিয়াজু, পুরী। কয়েকটা ময়লা টেবিল চেয়ার রাখা। সাদেক মেয়েটাকে নিয়ে একটা টেবিলে বসলো।
"চাচা আপনি কই যান?" মেয়েটা সাদেকের সামনে বসতে বসতে বললো।
"আমি এইখানেই আসছি। আপনে আর্যসুর কেন যাইতেছেন?"
"নানীরে দেখতে যাই চাচা। তার শরীর ভালোনা।"
"আপনের নাম কি?"
"রোকেয়া।"
সাদেক মিথ্যা করে বলে, "আরে ! আমার বড় মেয়ের নামও রোকেয়া। তবে তার বয়স আপনার চেয়ে একটু বেশি হবে। তার বিয়া হইয়া গেছে।"
রোকেয়া আরেকটু বেশি আশ্বস্ত হয়ে হাসে। বাবার ছায়া বুঝি দেখতে পায় সাদেকের মধ্যে। দুইহাতে চায়ের কাপ ধরে গরম চেয়ে চুমুক দেয়।
সাদেক রোকেয়ার সাথে আলাপ জমায়। মেয়েটা গাজীপুরে একটা গার্মেন্টসে কাজ করে। ছুটি নিয়ে অসুস্থ নানীকে দেখতে যাচ্ছে। বাড়িতে তার মা আর ছোট বোন আছে। মায়ের সাথে রাগ করে একাই বেড়িয়েছে নানিতে দেখতে। এই প্রথম একা এতদূর এসেছে ও।
সাদেক কল্পিত মিথ্যা স্ত্রী পরিবারের গল্প শোনায়।
মনে মনে নিজের খুব তারিফ করে সাদেক। কি সুন্দর অভিনয় করছে সে ! মেয়েটা এর মধ্যেই কত সহজ হয়ে গেছে।
"চাচা, এতক্ষন বাস থামা। বাস ছাড়বো কখন?"
"আচ্ছা,আপনে এইখানে বসেন। আমি দেইখা আসি।"
সাদেক চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক দেখে। জলিল একটা কলের সামনে বসে হাত মুখ ধুচ্ছে। বাসটা একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে।
সাদেক একটু হাঁটাহাঁটি করে আবার দোকানে ঢোকে। রোকেয়া উদ্বিগ্ন হয়ে তাকিয়ে আছে।
"আম্মা, বাসে বলে কি ডিস্টাব। ঠিক করতেছে। কিছু সময় লাগবো। আপনে এইখানে অপেক্ষা করেন, কোনো সমস্যা নাই। আমার বাড়ি তো এইখানে, আমি এখন যাই।"
মেয়েটা অসহায় হয়ে তাকাচ্ছে। মাগরিবের আজান দিলো এই মাত্র। ঝুপ করে অন্ধকার হয়ে গেলো চারদিক।
"চাচা, এইখানে একলা বইসা থাকবো?"
"আপনে চাইলে আমার বাসায় কতক্ষন বসেন। বাস ঠিক হইলে জলিল আমারে ফোন করবো। "

রোকেয়া রাজি হয়েছে। সাদেক অবাক হয়ে যায়! এত সহজে মেয়েটা তার সাথে আসবে ভাবতেই পারেনি। বোকা মেয়ে মানুষ!
সাদেক আর দেরি করেনা। বাজারের পেছনে ধান ক্ষেতের আইল বেয়ে রোকেয়াকে নিয়ে এগুতে থাকে। এদিকটায় বৃষ্টি হয়নি একেবারে, জমির আইল শুকনো খটখটে।

আলেয়া ঘরের কাজের জন্য একটা মেয়েকে রেখেছিলো, বারো তেরোর বেশি বয়স হবে না। একদিন তাকে জোর করে গোয়াল ঘরে নিয়ে মুখচেপে ধরে ভোগ করেছিলো সাদেক। মেয়েটা দুর্বল শরীরে বাধা দিতে চেয়েছিলো। বাধা পেলে সাদেকের উত্তেজনা আরো বাড়ে। শেষে গলা টিপে ধরে বলেছিলো, "কাউরে বললে এক্কেরে মাটির তলে পুইত্তা ফেলবো।"

মেয়েটা ঠোঁট চেপে ব্যাথা লুকিয়েছিল কিন্তু কাউকে বলেনি। আলেয়ার আড়ালে গোপন খেলা ভালোই চলছিলো ,মুশকিল হলো যখন মেয়েটা পোয়াতি হয়ে গেলো। আশ্চর্য ব্যাপার, এই মুহূর্তে সাদেকের মনে হচ্ছে ওই মেয়ের চেহারা অবিকল রোকেয়ার মতোই ছিলো। সে কিছুতেই মেয়েটার চেহারা মনে করতে পারলো না।

ধান ক্ষেত পেরিয়ে উঁচু রাস্তায় উঠে একটু এগুতেই সমিতির পরিত্যক্ত অফিস। জঙ্গলে ছেয়ে আছে চারপাশ। এদিকটায় লোকসমাগম একেবারেই নেই। ইচ্ছা করেই এদিকটায় এসেছে সাদেক।

অফিসের সামনে পৌঁছেই এক থাবায় রোকেয়ার মুখ চেপে ধরলো সাদেক, আরেক হাতে কোমর। সত্যিই তো একহাতে জড়িয়ে ধরা যা মেয়েটাকে! আর কি হালকা শরীর!
সাদেক টানতে টানতে রোকেয়াকে নিয়ে অফিসের ভেতর ঢুকলো। জীর্ণ দরজা একধাক্কায় খুলতে কষ্ট হলো না। পা দিয়ে দরজাটা ধড়াম করে বন্ধ করে অতি দ্রুত মোয়ার প্যাকেট বের করে কাপড়ের ব্যাগটা গুঁজে মেয়েটার মুখ বন্ধ করলো। তারপর রোকেয়াকে সজোরে ছুঁড়ে মারলো পাকা মেঝের উপর। ব্যাথায় কেঁদে উঠলো মেয়েটা।

রোকেয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে! হাত পা ছুড়ে নিজেকে মুক্ত করতে চাইছে কিন্তু সাদেক এর মধ্যেই ঘাড়ের গামছা দিয়ে রোকেয়ার হাত দুটো পেছন দিকে বেঁধে ফেলেছে। রোকেয়া তার শীর্ণ শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে লাথি মারলো সাদেকের পেটে।

সাদেক উন্মাদের মতো হেসে উঠলো। নাহ, মেয়েটার জোশ আছে, এমন মেয়েকে নিয়ে খেলার মজাই আলাদা।

রোকেয়ার গায়ের জংলা ছাপার কামিজ সালোয়ার ছিড়ে ফেলতে সাদেকের বেশিক্ষন লাগলো না। সাদেক যে মুহূর্তে উপগত হতে চাইলো ঠিক সে মুহূর্তে অস্বাভাবিক একটা ব্যাপার ঘটলো।
সাদেকের মনে হলো পুরো অফিস ঘরটা হটাৎ তীব্র আলোর বন্যায় ভেসে গেলো। তার মনে হলো সে অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আলো ভেদ করে কিছুই দেখতে পারছে না।

চোখ একটু ধাতস্ত হলে সাদেক দেখলো তার সামনে মানুষ্য অবয়বের একজন দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক মানুষ বলা যাবে না তাকে , মানুষের চেয়ে অনেক লম্বা। তার পিঠে বিশাল আলোর ডানা। হাত পা মাথা আলাদা করে ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। সাদেক প্রবল ভয়ে আচ্ছন্ন হলো।
আলো-মানব এগিয়ে এসে ডানা দিয়ে সাদেককে জাপটে ধরলো। সাদেকের মনে হচ্ছে আলো-মানবের ডানার বেষ্টনী থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সে শারীরিক কোনো শক্তি প্রয়োগ করতে পারছে না। যেন এক মুহূর্তে তার সব শক্তি শোষণ করে নিয়েছে কেউ আর এক টুকরো কাঠ হয়ে গেছে সে।

সাদেকের হটাৎ মনে হলো সে কি মরে যাচ্ছে ? আলো-মানব আসলে কি আজরাইল ফেরেশতা? ফেরেশতা না হলে ডানা থাকবে কেন? মাদ্রাসায় শুনেছে, আজরাইল মানুষের জান নিয়ে সাত আসমান ফুঁড়ে আল্লাহর দরবারে নিয়ে যায়। সে কি সাত আসমানের উপর চলে যাচ্ছে?

ঠিক তাই হলো। আলো-মানব সাদেককে ডানায় জড়িয়ে বিদ্যুৎ গতিতে উপরের দিকে উড়ে গেলো। সাদেক বুঝতে পারছে তার চারপাশে বাতাস তীব্র গতিতে কেটে যাচ্ছে। আলো-মানব থামছে না। সাদেক চিৎকার করলো কিন্তু সে এত উঁচুতে পৌঁছে গেছে এবং এত বেশি গতিতে উপরে উড়ে যাচ্ছে যে তার চিৎকার শোনা যাচ্ছে না।

সাদেকের ভয় কিছুটা কমেছে। সে ভালো করে চারদিকে নজর দিয়ে বিস্মিত হয়ে দেখলো আকাশ জোড়া অগণিত আলো-মানবেরা উড়ে যাচ্ছে! পুরো আকাশ আলোয় আলোকিত। প্রতিটা আলো-মানব ডানায় আটকা পড়েছে একটা করে মানুষ। তারা ঠিক সাদেকের মতোই অবাক হয়ে চারপাশে তাকাচ্ছে।

সাদেকের মনে হলো এটা কোনো দুঃসপ্ন। এরকম অদ্ভুতুড়ে স্বপ্ন মাঝে মাঝে সে দেখে। স্বপ্নের মধ্যেই তার মনে হচ্ছে চিৎকার করে ঘুম ভেঙে দিতে হবে। তা না হলে মুক্তি নেই।

সাদেক চোখ বন্ধ করে বড় একটা দম নিয়ে চিৎকার করলো। তারপর হটাৎ আলো-মানব কি ভেবে ডানার বাঁধন থেকে মুক্ত করে দিলো সাদেককে। শাঁ শাঁ করে আসমান থেকে জমিতে পরতে লাগলো সে। সাদেক চোখ বন্ধ করলো। কিন্তু চোখ খুলে দেখলো সে সমিতির অফিস ঘরের পাকা মেঝেতে পরে আছে। ওইতো ছেড়া পোস্টার ঝোলানো টিনের দেয়াল, ওই যে ভেঙে পড়া টেবিল চেয়ার।

হটাৎ শরীরের নিচের দিকে তীব্র ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলো সাদেক। কেউ যেন গরম শিশা ঢেলে দিচ্ছে তার ভেতরে। হাতে ভর করে দাঁড়াতে চাইলো সাদেক কিন্তু অবাক কান্ড তার হাত বাঁধা!

এতক্ষন তীব্র আলোর পর সমিতি ঘরের অন্ধকারটা একটু সয়ে আসলে সাদেক বিস্ফোরিত চোখে দেখলো সে আসলে আটকে গেছে রোকেয়ার শরীরে! তার শরীরের উপরে নৃশংস ধর্ষণ করছে সে নিজেই! নিজের হিংস্র ক্ষুধার্ত পাশবিক চেহারা দেখে ঘৃনায় শিওরে উঠলো সাদেক।

ভয়াবহ যন্ত্রনা আর আতংকে সাদেক চিৎকার করতে চাইলো কিন্তু পারলো না। সে নিজেই যে নিজের মুখে কাপড়ের ব্যাগ গুঁজে রেখেছে!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মৌরি হক দোলা চমৎকার ভাবনা, চমৎকার গল্প.....অসাধারণ! খুব ভালো লাগল।
অনেক ধন্যবাদ
মোঃ মোখলেছুর রহমান বলার বেশ ছিল,তবে সময়............... উভয়ে ধর্মীয় শাসন মেনে চললে ,যেটা বৈদ্যুতিক তারে টেপ প্যাঁচানোর কাজ করে, । ভাল হয়েছে ।
অনেক ধন্যবাদ
সুস্মিতা সরকার মৈত্র গল্পটা পড়ে মন খারাপ হল। না না, আপনার গল্প খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু কী দিনকাল, ভেবে মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। বাস্তব আর কল্পনার দারুণ মেলবন্ধন, তবুও মনে হয় কেন এরকম গল্প লেখার মতো সমাজ আমাদের! আর হ্যাঁ, গল্পটা পড়ার আগে নামটা আলাদা কিছু মনে হয় নি, কিন্তু পড়ার পর মনে হচ্ছে অন্য কিছু নাম হতে পারতো। এটা একটু ঘোষণার মতো লাগছে যেন!
অনেক ধন্যবাদ দিদি , নামকরণের ব্যাপারে আরো যত্নবান হবো।
বিনায়ক চক্রবর্তী ব্রিলিয়ান্ট। আমার কাছে তো শুধু শেষটুকুর জন্যই গল্পটা সাধারনত্বের বাউন্ডারি টপকে গেল। বরং শিরোনামে গল্পটা কাল্পনিক--মর্মে ডিসক্লেইমার না দিলেই হয়তো খানিক বেশি ভালো লাগত। বিষয়নিষ্ঠ হিসেবে এটা বিজয়ী হবে কিনা জানি না, কিন্তু ম্যাজিক রিয়েলিজমের ওই প্রয়োগটুকুর জন্যই গল্পটা অনেকদিন মনে থাকবে। প্রিয় তে নিলাম।
অশেষ ধন্যবাদ। শুধু ভালো ভালো বললে নতুন লেখকদের কোনো উপকার হয়না। বরং সমালোচনা থেকেই নতুনরা শিখতে পারে। আমি অন্তত তা ই মনে করি। অনেকেই সমালোচনা নিতে পারেন না, খেপে যান। আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে, নিজেকে শোধরানোর সুযোগ পাই। যাই হোক,নামকরণটা করেছি দুঃখ থেকে। এমনটা সত্যি কেন হয়না, এই হতাশা থেকেই নাম দিয়েছি। খালি কল্পনায় দানবদের শাস্তি দিতে পারছি, সত্যি কেন পারছি না? আশা করছি ভবিষ্যতেও লেখা পড়ে মন্তব্য করবেন, আমার উপকার হবে।
কাজী জাহাঙ্গীর ভাবনায় নতুনত্ব আছে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সমিতি ঘরে ঢুকার পর থেকে ঘটনাটা দুবার পড়তে হল পরিস্কার হওয়ার জন্য। কিন্তু একটা বিষয় ক্লিক করল মাথায় ধর্ষকের লেবাসিক বর্ণনাটা কোন আইডলকে ইঙ্গিত করছে কিনা, যদিও সবকিছু কাল্পনিক। আর এটা না হলেও গল্পটা ভালই উৎরে গেছে নতুনত্ব থাকার কারনে। অনেক শুভকামনা রইল আপনার প্রতি।
না ভাই, আমি কোনো আইডলকে ইঙ্গিত করিনি। অনেকে লেবাসের খারাপ সুযোগ নেয়, এটা কিন্তু কমন ব্যাপার। পুলিশ, উকিল, হুজুর, ডাক্তার, মন্ত্রী --কে নিচ্ছে না লেবাসের সুযোগ? আপনার মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
মোঃ মোখলেছুর রহমান ভাষার টান ও আঙ্গিক দুটোই ভাল লেগেছে । শুভকামনা রইল ।
অনেক ধন্যবাদ
মোঃ আক্তারুজ্জামান গতানুগতিকতার গণ্ডি পেরিয়ে একটু বৈচিত্র দেয়ায় লেখাটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। খুব সুন্দর। শুভকামনা।
ভাইয়া, খালি ভালো বললে হবে না, আপনার কাছ থেকে সমালোচনা আশা করি। ধন্যবাদ
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী গল্পটা পড়ে যা বুঝলাম, তাতে ভৌতিক বিষয়ের বেলা পুরোপুরি টানে। আর আঁধার বিষয়ের ক্ষেত্রে শুধু মেয়েটাকে কুকর্ম করে আঁধারে টেলে দিতে চেয়েছে.... বিষয়টাকে শেষের দিকে আরও একটু নাড়াচাড়া করা যেত কি না??
অনেক ধন্যবাদ মূল্যবান মন্তব্ব্যের জন্য। আসলে আমি এভাবেই শেষ করতে চেয়েছি, অবশ্য পাঠকের ভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। আপনার মতামতকে স্বাগত জানাই। আর কিভাবে শেষ করলে ভালো হতো সেটা বিস্তারিত বললে আমার উপকার হতো।
বিশ্বরঞ্জন দত্তগুপ্ত গল্পটা পড়ে বেশ আনন্দ পেলাম । শুভকামনা । সময় পেলে আমার পাতায় আসবেন ।
অনেক ধন্যবাদ
মোহাম্মদ আশিকুর রহমান সময়োপযোগী লেখা. এইরকম ভালো লেখার প্রত্যাশা আপনার কাছ থেকে সবসময়.
প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা অবশ্যই করবো। ধন্যবাদ

২২ জানুয়ারী - ২০১৪ গল্প/কবিতা: ২৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪