অপ্রাপ্তি

আঁধার (অক্টোবর ২০১৭)

রওনক নূর
  • ১০
  • ১৪
ধবধবে ধোয়া উঠা এক থালা গরম ভাত , সাথে আছে পোড়া বেগুন ভর্তা আর ছোট মাছের চচ্চড়ি। মালেক মিয়ার চোখটা আজ চকচক করছে, অনেক দিন এমন ধোয়া উঠা গরম ভাত খায়নি সে। নিজের অজান্তে চোখে অশ্রু চলে এলো তার খুশি দেখে। ভাতের থালাটা নিয়েই গোগ্রাসে গিলছিলো সে। তার কাছে অনেক কিছু জানতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না আমি। খাওয়া শেষের দিকে উনি কেন যেনো আমার দিকে তাকালেন। কিছু না বলেই দুচোখ বেয়ে তার না বলা অনেক কথা অশ্রু হয়ে ঝরলো।

মালেক মিয়া একজন রিক্সাচালক। বউ আর একটি কন্যা নিয়ে তার সংসার। গরীবের মেয়ে হলেও লেখাপড়াতে খুব ভালো মেয়েটি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর মেডিকেলে চান্স পেলো মেয়েটি। কিন্তু গরিব বাবার পক্ষে মেয়ের লেখাপড়া চালানো কঠিন হয়ে যায়। তবুও সংগ্রাম থেমে থাকেনি মালেক মিয়ার। নিজের দুটি পা দিয়ে সারাটাদিন রিক্সার পেডেল মেরে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগাড়ে ব্যস্ত থাকে। স্বপ্ন একটাই, মেয়ে মানুষের মত মানুষ হবে। তার জীবনের এই সংগ্রাম দেখে অনেকেই তাকে খুব শ্রদ্ধা করে। একদিন দুদিন করে মালেক মিয়ার স্বপ্ন পুরনের কাছাকাছি চলে যায়।

মেয়েটির মেডিকেল পড়া প্রায় শেষ, ইন্টার্নি চলছে। আর মাত্র কিছুদিন পর গরিবের ঘরে ডাক্তার মেয়ে আসবে। এর মধ্যে মালেক মিয়া এক লোভনীয় প্রস্তাব পায় তার গ্রামের প্রভাবশালী সুলতান মাতবরের কাছ থেকে। যেখানে মালেক মিয়ার পরিবারের অনেক দিনের খাবার জোগাতে হয়েছে সুলতান মাতবরের ক্ষেতে কাজ করে, আর আজ সুলতান মাতবর তার ছেলের সাথে মালেক মিয়ার মত গরীবের মেয়ের বিয়ে দিতে চায়। দুচোখ খুশিতে জ্বলজ্বল করছে তার। তার ভাগ্য যে এতো ভালো ছিলো সেটা আগে কখনও ভাবতে পারেনি সে।

এত বড় ঘর, রাজপূত্রের মত জামাই, তারপরও মালেক মিয়ার মেয়ে কোন অশিক্ষিত ছেলের সাথে বিয়ে করতে রাজী নয়। বাবা মা খুব ক্ষীপ্ত হয়ে গেলো মেয়ের উপর। দু কলম লেখাপড়া শিখে মেয়ের বড় গলা হয়ে গেছে। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে চায়। এত বড় ঘরে যে ওকে দয়াকরে নিতে চাচ্ছে এটা তার সৌভাগ্য । তার উপর এত বড় বড় কথা। যেভাবেই হোক মেয়েকে এই ঘরেই বিয়ে দিতে হবে।

বেশ জোরাজুরি করে মেয়ের বিয়ে দিলো মালেক মিয়া। এত বড় ঘরে বিয়ে হওয়াতে খুব খুশি তারা। আশেপাশে মানুষের কাছে তাদের সম্মান অনেকখানি বেড়ে গেছে। কিন্তু মেয়েটি কেঁদেই চলেছে কারন সে কোন অশিক্ষিত বড়লোক ছেলেকে বিয়ে করতে চাইনি। তবুও সবকিছু মেনে নেবার চেষ্টা করছে মেয়েটা।

অসম দুই পরিবারের আত্মীয়তা হওয়াতে বেশ সমস্যায় পড়ে যায় দুই পরিবার। কারো সাথে কারো বোঝাপড়া ঠিকমত হয়না। সুলতান মাতবর তার অন্য সকল আত্মীয়দের মাঝে গরীব মালেক মিয়ার পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। এদিকে গরীবের মেয়ের টাকায় চলে বড়লোকের ছেলের সংসার। স্বামী বেকার হওয়াতে সংসারের সব খরচ বহন করে মেয়েটি। কিন্তু নিজের গরীব বাবা মাকে সাহায্য করার কোন অধিকার থাকেনা তার।

মালেক মিয়ার মেয়ের কোলজুড়ে আছে সন্তান। মালেক মিয়া আর তার স্ত্রী নিজেদের একমাত্র নাতীনকে দেখতে ছুটে যায় মেয়ের বাড়ী। বুকে জড়িয়ে আদর করতে থাকে কলিজার টুকরাকে। কিন্তু তাদের এ ভালোবাসা আদিক্ষেতা মনে হয় তাদের মেয়ের শ্বশুরবাড়ীর কাছে। কারন কোন প্রকার উপহার দেবার সামার্থ্য তাদের নেই। মেয়ের শ্বশুর সুলতান মাতবর তাদেরকে পরিষ্কার করে জানিয়ে দেই যে যখন তখন তাদের বাড়ী না আসতে। এতে তাদের পারিবারিক সম্মান নষ্ট হয়।

আজ ছয় মাস মেয়ের সাথে কোন যোগাযোগ নেই মালেক মিয়ার। তারাও মেয়ের থেকে অনেক দুরে চলে এসেছে। কারন যোগাযোগ হলে মেয়েটার কষ্ট আরও বেড়ে যাবে। গরীব বাবা মা মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। সব কথা আমাকে বলতে যেয়ে গলা ধরে আসছিলো মালেক মিয়ার। শরীরটা এখন আর তেমন চলেনা। তাই কাজ করে খাওয়া খুব কঠিন হয়ে গেছে। অনেকদিন হলো ঠিকমত ভাত খেতে পায়না। তাই খাবার পেয়ে খুব খুশিতে কেঁদে ফেলেছে।

খুব কষ্ট করে সন্তান মানুষ করেও এখন নিজেদের খাবার জোটাতে অপারগ গরীব বাবা মা। আর অন্যদিকে বড়লোক বাবার অকর্মা ছেলের সংসার চালাতে গরীব বাবার মেয়ে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। যে পরিবারের পরিচয় দিতে লজ্জা, সে পরিবারের শিক্ষিত চাকুরিজীবী মেয়ের আয় খাওয়াটা লজ্জার নয়। গরীবের শিক্ষিত চাকুরিজীবী মেয়েকে বিয়ে করা বড়লোকের অশিক্ষিত অকর্মা ছেলের বিনা বিনিয়োগে ব্যবসা করার মত।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
প্রজ্ঞা মৌসুমী শেষ কথাটা ভীষণ জোড়ালো। দুটো চরিত্র ছাড়া আর কোন চরিত্রেরই নাম ছিল না- এটা অন্যরকম ছিল। মালেক মিয়ার কান্নায় কষ্টের থেকে বিরক্ত হয়েছি। বিরক্ত হয়েছি ওর মেয়ের সবকিছু মেনে নেয়ায়। এই কী যুদ্ধ করা? নাকি দাসত্ব করা? সে যাক, গল্পটা ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ অাপু
এশরার লতিফ সম্পর্ক আর শ্রেনীবিভেদের সমন্বয় আর সংঘাত সুন্দর ফুটিয়েছেন। অনেক শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
মোঃ আক্তারুজ্জামান এরকমটা খুব কাছে থেকে দেখেছি। একটা ভালো বিষয়ের অবতারণা করেছেন। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
আরিফুল ইসলাম সংলাপগুলো বেশ হয়েছে। শুভ কামনা রইলো।
নুরুন নাহার লিলিয়ান ভাল লাগা এবং ভোট রইল । শুভ কামনা ।
জসিম উদ্দিন আহমেদ ভাল লাগল গল্প পড়ে।
মনজুরুল ইসলাম Pure reality.Many people like malek miah are still helpless in the societ, That is the reason i think.congratulations for your meanigful story.
সেজান খন্দকার কাহিনি খুব ভাল, বর্ণনাও সাবলীল। খুব ভাল হয়েছে।
কাজী জাহাঙ্গীর ঠিকই আছে গল্পটা ,অনেক সময় সন্তানের মঙ্গল ভেবে পিতামাতার সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও শেষটা সুখকর হয় না। যদিও সমাজে অনুপাতটা অন্যরকম। সাবলিল বর্ননায় ভাল লিখেছেন। অনেক শুভকামনা, ভোট আর আমার পাতায় আমন্ত্রণ।

১৩ নভেম্বর - ২০১৬ গল্প/কবিতা: ৩৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪