দোকানদার বিরক্ত মুখে তারেকের দিকে তাকাচ্ছে। মনে মনে ভাবছে এই রকম কাস্টমার আর দুয়েকটা আসলে দোকানদারী বাদ দিতে হবে। তারেক এসব না দেখার ভাব করে বলল ভাই ঐ নীল শাড়িটা দেখি। দোকানদার চোখ বন্ধ করে বলল ভাই ওইটার দাম দুই হাজার টাকা । দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছে যারা বেশি বাছার চেষ্টা করে তারা সাধারণত কেনে না। তাদের কাজই হলও দোকানীকে বিরক্ত করা। সব দেখা শেষে হয়তো দুই হাজার টাকার জিনিস তিনশো টাকা বলবে। এবং চোখ মুখ কালো করে বলবে দামে পোষাল না, আরেক দোকান দেখি। একটা ছেলে বিরক্ত মুখে নীল শাড়িটা তারেকের হাতে দিল। শাড়িটা হাতে নিয়ে সে বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। এমন ভাব করতে লাগলো যে কাপড় সম্পর্কে তার জ্ঞানের শেষ নেই। এই কাজটা অবশ্য সাথে শিউলি থাকলে করতে পারত না। শিউলিকে নিয়ে এর আগেও সে মার্কেটে এসেছে কিন্তু পছন্দের কাজটা শিউলিই করেছে। শিউলির ধারণা কালার বিষয়ে তারেকের বিবেচনা একেবারেই নিন্ম মানের। তারেক শুধু মাঝে মাঝে বলে এইটার রং খারাপ না। তোমাকে পড়লে পরীর মত লাগবে। শিউলি শুধু চোখ কটমট করে তাকিয়েছে। সামনে দোকানদার থাকায় কিছু বলার চান্স পায় নাই। যদি দোকানে না বসে পার্কে বা অন্য কোথাও এই কথা বলত তাহলে নির্ঘাত বলত গাধার মত কথা বলবে না। মানুষ কিভাবে পরি হয়? দোকানদারের সামনে নিজের প্রেমিককে গাধা বলার মত বোকা মেয়ে শিউলি না। নীল শাড়িটা দেখতে দেখতে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলো ভাই রং উঠবে না তো? “ রঙের কথা আমি কেমনে বলবো ? রং তো আর আমি লাগাই না, হ্যাঁরে জিজ্ঞেস করেন ? তারেক ভেবে পেলনা ঠিক কাকে জিজ্ঞেস করার কথা তিনি বললেন। তাই সে মনোযোগ দিয়ে শাড়িটা দেখতে লাগলো। আজকের উপহারটা শিউলির যেন মনমত হয়। এর আগে যা কিছুই দিয়েছে কোথাও না কোথাও খুঁত থেকে গেছে। মাস কয়েক আগে একটা হাতঘড়ি কিনে শিউলিকে দিতে গেল।সেটা দেখে শিউলি এত অবাক হলও যেন তারেক কোন মহাঅপরাধি। এইমাত্র জেল থেকে ছাড়া পেল। ঘড়িটা হাতে নিয়ে বলল “ এখন কেউ ঘড়ি পরে? তুমি না সেই ব্যাক ডেটেড রয়ে গেলে।“ তারেক তখন ঘড়িটা নিয়ে আর কি করে। দোকানদারকে বলল ভাই আমার ছোট ভাই হাঁসপাতালে টাকার দরকার। অর্ধেক দাম হলেও দেন। অর্ধেক টাকা গচ্ছা দিয়ে তারেকের মনের মধ্য খচ খচ করতে লাগলো। কেন যে শালা প্রেম করতে গিয়েছিলাম ? বিরাট ভুল হয়েছে। ঢাকা শহরে প্রাইভেট টিউশনি করে প্রেম করা যে কি কষ্টের সেটা যদি একবার শিউলিকে বোঝানো যেত তাহলে বুঝত কত ধানে কত চাল। ধান চালের হিসেব শিউলিকে বোঝানো সম্বভ না তাই রাগ করে তারেক সাত দিন শিউলির সাথে কোন যোগাযোগ করলো না। সাতদিন পরে সোজা শিউলির বাড়ি গিয়ে উপস্থিত। শিউলি বেশ শান্ত স্বরে বলল এই সাতদিন কোন স্বর্গে গিয়েছিলে? এখন চা খেলে খাও খেয়ে বিদেয় হও। মা বাবা বাড়িতে নেই বলে তোমাকে ঢুকতে দিয়েছি। তারা আসার আগেই তুমি চলে যাও। বাবা তোমাকে দেখলে হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধিয়ে দেবেন। তারেক জানে কথাটা মিথ্যে না। তারেক যখন প্রথম এই বাড়িতে আসে তখন শিউলির বাবাই দরজা খুলে দিয়েছিলেন। ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করলেন কাকে চান? তারেক এত নার্ভাস হয়ে গিয়েছিল যে বলল “ কাউকে না” তাহলে বেল বাজাচ্ছিলে কেন? তারেক আমতা আমতা করে বলল ইয়ে মানে শিউলি কি এই বাড়িতে । তারেক কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই শিউলির বাবা বলে উঠলো শিউলি এই বাড়িতে থাকবে না কি অন্য বাড়িতে থাকবে? গাধা কোথাকার। তুমি শিউলিকে কিভাবে চেনো? এসব বলতে বলতেই শিউলি নিচে নেমে এলো। তাকে দেখে সে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। শিউলি নিচে নেমেই বলল তুমি বাড়িতে কেন নোটটা তো কলেজেই দিতে পারতে? শিউলির বাবা তারেক কে শুনিয়ে বলল মারে এই ধরনের গাধা টাইপ ছেলের সাথে পরিচয় রাখবি না। এদের ফিউচার ডার্ক। তারেককে এক কাপ চা দেয়া হলো । চা খাওয়ার এক ফাঁকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন “ নেশা টেশা কিছু কর নাকি?” তারেক অত্যন্ত বিব্রত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলো।
কোন কথা না বলে পকেট থেকে দুটা এক হাজার টাকার নোট বের করে দিলো। আজ দামাদামি করতে ভাল লাগছে না তারেকের । দোকানদারের চোখ মুখ বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সে তারেককে চা খাওয়ার জন্য বললে তারেক উঠে বাইরে আসলো। আকাশটা বেশ নীল। ঠিক যেন শাড়ীর রং। মোবাইলে সময় দেখল । সাড়ে চারটা বাজে । শিউলির কফি শপে আসার সময় চারটা। তারেককে বেশ চিন্তিত মনে হলো । সে একটা সিএনজিতে চড়ে বসলো । ভাড়া একটু বেশি নেবে। কিন্তু কি আর করার। মেয়েটা সময়ের ব্যাপারে অত্যন্ত সেনসেটিভ । হয়তো রাগ করে চলে যাবে । কফি শপে পৌঁছে দেখল শিউলি বসে আছে। একটা পিংক কালারের শাড়ী পড়েছে আজ। কপালে টিপ। রংটা ঠিক ধরতে পারল না। সামনের চেয়ারে বসেই বলল কখন এসেছ? আমার কখন আসার কথা ছিল? চারটার সময়। আমি কখনো লেট করেছি? কথাগুলো বলল তারেকের দিকে না তাকিয়ে। বোঝাই যাচ্ছে রেগে আছে। তারেক আস্তে করে বলল সরি। তুমি কখনো সময়মত এসেছ যে আজ সরি বলছ? তারেক বুঝতে পারলো সম্ভবত কেঁদেছে। গলাটা কেমন ধরা। আর চোখ দুটোর কোনে এখনো জল চিকচিক করছে। দেরি করা মোটেই উচিত হয়নি। মোটেই না। শিউলি খুব সুন্দরী না কিন্তু পারসোনালিটি সম্পূর্ণ একটা মেয়ে । প্রথম দর্শনেই প্রেমে পরার মতও না কিন্তু ওর সাথে কথা বললে এক ধরনের ভাল লাগে যা প্রেমে পরার জন্য যথেষ্ট। শিউলির সাথে তারেকের প্রথম দেখা বসুন্ধরা শপিং মলে। কয়েক বান্ধবি মিলে শপিং করতে এসেছিলো। চলন্ত সিঁড়িতে উঠতে গিয়ে অসাবধানতাবসত পা ফসকে যায় । পাসেই তারেক বন্ধুদের সাথে বেড়াচ্ছিল । ওর এক বান্ধবী এসে বলল ভাই একটা ট্যাক্সি ডেকে দেন ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। তারেক দৌড়াদৌড়ি করে একটা ট্যাক্সি ডেকে দিলো। এর পর কিভাবে যেন আর অনেকবার ওদের দেখা হলো এবং প্রতিবারই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটতে লাগলো। দুজনের প্রেমের শুরু এখানেই। কিছু খাবে না এভাবে বসে থাকবে? শিউলির ডাকে হুঁশ ফেরে তারেকের। বেয়াড়াকে ডেকে হালকা কিছু অর্ডার দেয় । শুভ জন্মদিন শিউলি। একথা বলে শাড়ীর প্যাকেটটা ওর দিকে এগিয়ে দেয় । শাড়িটা হাতে নিয়ে শিউলি ভাল করে দেখে। তারপর বলে চলো উঠি। কোথায় যাবে? তোমার মেসে আমার মেসে কেন? শাড়ী পরব । এখানে তো কোথাও জায়গা নেই শাড়ী চেঞ্জ করার কফি শপ থেকে বেরিয়ে ওরা একটা রিকশা নেয়। পাশাপাশি বসে দুজন। শিউলি একটা হাত তারেকের হাতের উপর রাখে। গভীর ভালবাসার সে হাত । তারেক ভাবে জীবন গেলেও এ হাত সে ছাড়বে না । গভীর আনন্দে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হুম,! ভাইয়া। সিগারেটে কি টেস্ট আছি জানিনা। কিন্তু সিগারেট সেবনের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দেবেন। কারণ- সিগারেটের ধুঁয়ায় আপনি নিজের ক্ষতি করেন ৪০% আর পরিবেশের তথা আশেপাশে থাকা নিকটতম মানুষটার জীবনের ক্ষতি করেন ৬০%। আপনি নিজে নিজেকে খুন করতে চান্ সেটা আপনার নিজের অধিকার। কিন্তু, অন্যের জীবন নাশের কোন অধিকার নেই আপনার। তাইনা?
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন
.................................চমতকার গল্প, চমতকার বর্ণনা। ভাল লাগল। শেষ টুকু মনে হচ্ছে বাদ পড়ে গেছে। তবুও ভাল। শুভেচ্ছা রইল।
Lutful Bari Panna
আপনার হাতটা মিষ্টি আছে। তবে আরো একটু সচেতন হতে হবে। যেমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন-কে আপনি লিখেছেন ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ। গল্পের ফিনিশিং বোধ হয় একটু আকর্ষণীয় করা যেত। তারপরও চমৎকার একটা গল্প সন্দেহ নেই।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।