লামিয়া ও লাবিবা পিঠাপিঠি দুই বোন অনেক দিন পরে মায়ের সাথে নানার বাড়ি বেড়াতে এসেছে। এই বাসাতে একমাত্র ওদের আম্মা বাদে নানুর সব ছেলে মেয়ে থাকে বলে এ বাসায় বেড়াতে আসলেই যেন উৎসব শুরু হয়ে যায়। প্রত্যেক রাতে প্রত্যেক খালা মামার বাসায় এমনকি মাঝেমাঝে নানার বাসাতেও ডিনার পার্টি হয়। নাচ গানের আয়োজন হয়। আজকে রাতে ছোট খালামনির বাসায় খাওয়ার আয়োজন। সন্ধ্যা থেকেই ওরা দু’বোন বাকী সব খালাতো-মামাতো ভাইবোনের সাথে নানার বাসায় দোতলায় আড্ডায় বসেছে। এখানে থাকার উদ্দেশ্য নানা ঘরে একলা আছে। সারাদিন নামাজ কালাম পড়েন। নিজের বিছানাটা ছেড়ে কোত্থাও নড়েন না। বাচ্চাগুলো সব পাশের ঘরে থাকলে ঘরে লোক আছে এই সুবিধাটাও দেয়া হলো। নানারও একলা একলা ভাব থাকলো না। সেই সাথে বাচ্চাদের আড্ডায় বড়দের কোন শাসনও ভর করতে পারবে না। বকা খাওয়ার ব্যাপারও নেই। এখন ওরা সব ভাই-বোন মিলে বারান্দায় এসেছে। বারান্দার দরজার পেছনে সামান্য একটু জায়গা। দরজার পেছনে বলে সেখানে বারান্দার লাইটের আলো সরাসরি আসেনা। তাই কিছুটা অন্ধকারই বলা চলে। ফারহানের হাতে একটা ছোট সাইজের বল। পুরান খাতা থেকে কয়েকটা পৃষ্ঠা ছিঁড়ে বাথরুমের বেসিনের কল থেকে ভিজিয়ে পোটলা করে চিপে চিপে বলের মতো বানিয়েছে। সেটা এখন হাতে ধরে নিশানা করছে। নওশীন চশমাটা ভালোভাবে নাকের উপরে সেট করে নিয়ে বারান্দার গ্রিল ধরে নিচে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে কোন লোক যাচ্ছে কিনা। ওরা আছে দোতলায়। ওদের এক হাত দূরত্ব পরেই পুরো বাড়ির সদর দরজাটা। তার পরেই মোটামুটি চওড়া মহল্লার পিচ ঢালা রাস্তা। রাস্তায় লাইট নেই। চার পাঁচ ফুট দূরত্বে মুদির দোকান আর আশেপাশের বিল্ডিং থেকে লাইটের আলোতে রাস্তাটা যতটা আলো। রাস্তাটা দিয়ে অনেক লোক উত্তর দক্ষিণ বরাবর আসছে যাচ্ছে। ফারহানের হাত থেকে ভেজা কাগজের বলটা নিয়ে লামিয়া ছুঁড়ে মারলো। ওটা উড়ে গিয়ে ঢুকে পরলো এক লোকের বুকপকেটে। ‘কে রে? মারলো কে রে?’ বলে লোকটা চিৎকার করে উঠেই এদিক সেদিকে আশেপাশের বিল্ডিং এর উপরের দিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো কোথা থেকে এটা ছুঁড়ে মারা হলো। লামিয়া তো বলটা ছুঁড়ে মেরেই বারান্দার মেঝেতে বসে পড়েছে। ওর সাথে সাথে হুড়োহুড়ি করে খালাতো ভাই-বোন নাঈম আর নওশীন, ওর নিজের বোন লাবিবাও বসে পড়েছে। সব বারান্দার মেঝেতে মুখ লুকিয়েছে। ফারহান ওদের সবার মধ্যে সবচেয়ে পাতলা এবং পিচ্চি সাইজের। বারান্দার রেলিং ছাড়িয়ে দেয়ালটা ওর প্রায় কপাল সমান উচ্চতার। তাই ও দাঁড়িয়ে লোকটার প্রতিক্রিয়া দেখছিলো। এর মধ্যে ধরা পরে যাওয়ার আশংকায় নওশীন ‘ফারহাইন্যা, নিচে বস’ বলে হাত ধরে দিল একটা হ্যাচকা টান। রাস্তার লোকটা কয়েক মিনিট পরে কোন বাসার শয়তান বাচ্চাকাচ্চার গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে নিজের পথে চলে গেলে বাচ্চাগুলো বসা থেকে আবার দাঁড়িয়ে তাদের পরবর্তী নিশানার প্রস্তুতি নিতে লাগলো। আবার কাগজ ভিজিয়ে নিয়ে এলো ফারহান। এবার আগের চেয়ে ছোট বল বানিয়েছে। সেটা ছুঁড়ে মারলো। গিয়ে পরলো এক লোকের টাকের উপরে। সেই লোক আবার জেরীনের বাবার বন্ধু। জেরীন লাবিবার মামাতো বোন। ওরা যদি ওদের আংকেলের মাথায় বল ছুঁড়ে মারার ঘটনাটা ওদের বাবাকে গিয়ে বলে দেয় তাহলেই হয়েছে। কিন্তু টেকো আংকেলটা সারাদিন রাস্তার মধ্যে লুংগীর কোনা ধরে হাঁটতে থাকে যেন মহল্লার মোড়ল হয়েছে কোথায় কি হলো দেখা ওনার কর্তব্য! এটা ওদের একেবারেই পছন্দ না। তাই জেরীন আপুর কারণে ভয় লাগলেও মনে মনে খুব মজাই পেলো। পাঁচ জনই এবার ঘরের ভেতরে ঢুকে গেলো। দুষ্টুমী অনেক হয়েছে। ঘরের ভেতরে গিয়ে সবাই নানাকে ঘিরে বসলো। নানার এশার নামাজ আদায় করা শেষ। আর এক ঘন্টা পরে নানা ভাত খাবেন। প্রতিদিন একই সময়ে ভাত খেতে বসেন। এখন নাতি-নাতনীদের সাথে বসে গল্প করবেন। ওনার পাঁচ মেয়ে আর দুই ছেলে। নিজের বয়স প্রায় শত বৎসর হতে চলেছে। কোন সন্তানের ঘরে কোন সন্তান তাদের নাম কি, থাকে কোথায় কিছুই মনে রাখতে পারেন না তিনি। এই নিয়ে বাচ্চারা মাঝেমাঝে দুষ্টামী করে। যেমন হলো আজকেও। নানা নাঈমকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তোমার নাম যেন কি?’ নাঈম দুষ্টু হাসি মুখে এনে জবাব দিলো- ‘নানু আমি আরমান।’ ওর মিথ্যে জবাব শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। আরমান ফারহানের মেজ ভাইয়ের নাম। নানা বুঝতে পারলেন কোন গোলমাল হয়েছে নইলে বাচ্চাগুলো এমন হিহি করে হাসছে কেন। তিনি আবার টেনে টেনে ধীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন- ‘তুমি কে? কার ছেলে তুমি?’ এইবার আর মিথ্যে বললো না নাঈম। বললো-‘নানুভাই আমি নাঈম।’ নানাও এবার চিনেছেন। বললেন- ‘হ্যাঁ, তুমিতো নাঈম। কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?’ নাঈমের হয়ে ওর বড় বোন নওশীন জবাব দিলো- ‘ও স্যাভেনে পড়ে, নানুভাই!’ ছেলেমেয়েগুলো কিছুক্ষণ নানার সাথে সময় কাটিয়ে দোতলা পূর্বপাশের ফ্লোরে বড় খালার বাসায় গিয়ে ঢুকলো। বড় খালামনির ছেলেরা অনেক বড়। বড় ভাইয়া আকিব বুয়েটে সিভিলে পড়ে। আর ছোট ভাইয়া আরিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালনারেবল ম্যানেজমেন্ট ও ডিজাস্টার সিস্টেমে অনার্স পড়ছে। দুই ভাইয়াই সারাদিন পড়াশুনা করে নাইলে কম্পিউটারে নাক ডুবিয়ে রাখে। তাই ওরা সবাই গিয়ে বড় খালার বসার ঘরে বসে আড্ডা জমালো। কিন্তু ফিসফিসিয়ে। এই বাসায় জোরে কথা বলা নিষেধ। ভাইয়াদের পড়াশুনার অসুবিধা হয়। লামিয়া আর লাবিবা ওদের আম্মার মোবাইল ফোন এনেছে। আর নওশীন এনেছে ওর আম্মুর মোবাইলটা। এদের মধ্যে ও লেভেলে পড়ুয়া জেমীন সবচেয়ে বড়। বড় খালামনির মেয়ে। সব বাচ্চাগুলোর মধ্যে মুরুব্বীও। নওশীন একটা ম্যাসেজ দেখালো ওর আম্মুর মোবাইল থেকে- ‘তুমি ছেলে না মেয়ে আমি জানি না। যদি ছেলে হতে আর যদি তুমি আমার বন্ধু হতে তাহলে অনেক ভালো হতো!’ ম্যাসেজটা দিয়েছে নিশা নওশীনের একটা মেসেজের জবাবে। নিশা লামিয়া লাবিবার সহপাঠী। লামিয়া লাবিবা আর নওশীনের ইচ্ছা ছেলের ছদ্মবেশে কিছুদিন এসএমএস দিয়ে দিয়ে নিশাকে দূর্বল করবে। তারপরে যখন নিশা প্রেমে পরে যাবে এটা নিয়ে ওরা হাসাহাসি করে মজা নিবে। জেমীন একটু দূরে বসে ছিলো। সে বাকী তিনজনের কান্ডকীর্তি কিছুটা অনুমান করে কাছে গিয়ে দেখতে চাইতেই বাকীরা সব হৈহৈ করে উঠলো-‘বলা যাবেনা! বলা যাবেনা!’ তারপরে একসময় বলতেই হলো। তখন জেমীন পরামর্শ দিলো-‘এরকম কাজ করিস না তোরা। ছোট মেয়ে তো। কচি মন। প্রেমে পরতে সময় লাগবে না। তারপরে সত্যিটা জানার পরে অথবা পছন্দের ছেলেটাকে না পেয়ে যদি মানসিক রোগী হয়ে যায় তখন? তারপরে তোরা ওর এত কাছের বান্ধবী। বান্ধবী হয়ে বান্ধবীর ক্ষতি করা কি ঠিক?’ ওর দীর্ঘ লেকচার শেষ হতেই লামিয়া বললো- ‘ঠিকই রে! আর দুষ্টুমী করা যাবে না! করলেও প্রেমে পরানো যাবে না!’ দার্শনিক ভঙ্গীতে কথাগুলো বলে হিহি করে হাসলো। ওর সাথে গলা মেলালো লাবিবা আর নওশীন। জেমীনও মৃদু হাসলো। ভাই-বোনের আড্ডায় সময়টা যেন উড়ে চলে গেলো। রাত দশটা বাজে। লামিয়া-লাবিবার আম্মুর মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। ছোট খালামনি ফোন দিয়েছে। রিসিভ করতেই শোনা গেলো- ‘লামি-লাবি উপরে চলে আয়। খাওয়ার সময় হয়েছে। আসার সময় বড় খালামনিদেরকেও বলে আসিস।’ সিড়ি কাঁপিয়ে হৈ হৈ রব তুলে সব দোতলা থেকে পাঁচ তলায় চলে গেলো। লামিয়া লাবিবা বেশ কয়েক মাস পরে পরে একবার সেই রাজারবাগ থেকে আজিমপুরে বেড়াতে আসে। ওদের বাবা তাবলীগ করে। ঘন ঘন চিল্লায় যান। ঘোর মুসুল্লী। এ বাসার সবাই টেলিভিশন দেখে, গান বাজনা পার্টি করে এসব ওদের বাবার পছন্দ নয় বলে ওদেরকে এই বাসায় আসতে দিতে চায় না। মেয়েরা নাকি বিগড়ে যাবে। নিজেদের বাসাতে টেলিভিশন নেই। বিনোদনের কোন মাধ্যমে নেই বলে এই বাসায় আসলে দুই বোন টেলিভিশনের সামনে থেকে একদম নড়তে চায় না। সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের নাটক, ভারতীয় বাংলা হিন্দি চ্যানেল কোনটাই কোন সিরিয়াল দেখা বাদ রাখে না। যদিও ওদের বাবার ধারণা ওরা এ বাসাতে এসেই এইসব করে। আসলে কিন্তু তা নয়। বরং ওরা আসলেই এই বাসার ছেলেমেয়েগুলো কোন সিনেমা কবে রিলিজ হয়েছে, কোন সিনেমায় নায়ক নায়িকা কে, কোন সিনেমা হিট হয়েছে বা ফ্লপ হয়েছে সব খবর জানতে পারে। এটা যদি ওদের হুজুর বাবাটা জানতো! আজিমপুর গার্লস স্কুলের নবম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী নওশীন। নিয়মিত পাঠে উপস্থিতি এবং ভালো ফলাফলের জন্য সারা বিদ্যালয়ে সুনাম আছে ওর। শিক্ষক শিক্ষিকা সহ বিদ্যালয়ের মাসি-দাদু সবার কাছে পরিচিত নাম। লামিয়া-লাবিবা বেড়াতে এসেছে অনেক দিন পরে। থাকবে মাত্র তিন দিন। আজকে কিছুতেই নওশীনের বিদ্যালয়ে যেতে মনে সায় দিচ্ছে না। আবার ওকে বিদ্যালয়ে আনা নেয়া করে ওর আম্মা। অনেক দিন পরে বোন বেড়াতে এসেছে। ওরা যেমন ছোটরা গল্পের আড্ডায় জমেছে তেমনি বসেছে বড়রাও। সব বোন মিলে আড্ডায় বসেছে নওশীন-নাঈমদের বাসাতেই। মেয়ে যখন বিদ্যালয়ে যেতে চাইছে না উনিও আর গা করলেন না। ওদিকে নওশীন ফোন করে ওর বান্ধবী রাইসাকে জানিয়েছে-‘দোস্ত, আজকে আমি যাচ্ছি না। তুই পড়াগুলো ভালোভাবে তুলে রাখিস।’ মিনিট পাঁচেক পরেই রাইসা সহ নওশীনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ পাঁচ বান্ধবী ফারিজা, মীম, তুলি, সেতু আর নিশাতের মেসেজ আসলো প্রায় এক সাথে নওশীনের আম্মুর সিটিসেল মোবাইলে। ঘটনা কি? যেহেতু ও বিদ্যালয়ে আজকে যাবে না ওর বান্ধবীরাও কেউ যাবে না। সবসময়েই এরকম হয়ে আসছে। একজন কোন কারণে বিদ্যালয়ে না গেলে ছয় বান্ধবীর কেউ আর বিদ্যালয়ে যায় না। মাঝেমাঝে শ্রেণিশিক্ষিকা এটা নিয়ে রাগ প্রকাশ করেন কিন্তু সবারই ফলাফল ভালো। মাঝেমাঝে ফাঁকি দিলেও পড়াশুনায় কোন ক্ষতি হয় না। সবাই পড়াশুনা ঠিকমতই করে। তাই এ নিয়ে বেশি উত্তেজনা প্রকাশ করেন না শিক্ষিকা। ফলাফল যখন ভালো হচ্ছে তখন মাঝেমধ্যে একটু বিরতি নিক না! এমনিতেই নাগরিক যান্ত্রিকতায় ছেলেমেয়েগুলোর বিশাল বইয়ের বস্তার টানাটানিতে নাভিশ্বাস অবস্থা। এছাড়া ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, গল্প লেখা প্রতিযোগিতা, ছবি আঁকাআঁকি সবকিছুতেই নওশীন সবসময়েই সেরা থাকে। প্রচুর বিজয়ী সনদ দিয়ে ওর শোকেসটা ভরা। এ বাসার সবগুলো ছেলেমেয়েই পড়াশুনাতেও যেমন ভালো। প্রত্যেক বছর স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। তেমনি বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে অনেক পুরস্কারও জিতে নিয়েছে। লামিয়া লাবিবাও এবার একটা প্রতিযোগিতার খবর নিয়ে এসেছে। ওদের স্কুলে হরলিক্স গল্প লেখা প্রতিযোগিতার জন্য লেখা চাওয়া হয়েছে। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে লেখা জমা দিতে হবে। নওশীনের মাথায় সবসময়েই সুন্দর সুন্দর আইডিয়া আসে। তাই ওরা দুই বোন নওশীনের সাথে আলোচনা করছে। ‘কি গল্প লিখা যায় বলতো? কাকে কল্পনা করে লিখবো?’ লামিয়া জিজ্ঞেস করলো। ‘আমি ভাবছি শীতের পোশাক বিতরণ কর্মসূচী নিয়ে একটা উদ্দ্যোগমূলক কাজের ফিরিস্তি বিষয়ক একটা গল্প লিখলে কেমন হয়?’ লাবিবা বলে উঠলো। ‘হ্যাঁ, এটা লিখতে পারো। মনে করো এটা তোমরা স্কুলের কয়েক বান্ধবী মিলেই করলা।’ বললো নওশীন। তারপরে পরদিন স্কুল থেকে এসে নওশীন জানালো ওদের স্কুলেও এই গল্প লেখা প্রতিযোগিতার জন্য লেখা পাঠানোর খবরটা ওদের শ্রেণিশিক্ষিকা জানিয়েছে। ওরা তিন জন মিলে বসে গেলো গল্প লেখা প্রতিযোগিতার জন্য গল্প লিখতে। সেগুলো ঠিকঠাক লিখে আবার জেমীন আপুকে দেখাতে গেলো ঠিক আছে কিনা। পুরস্কার জিততে পারবে কি না সেই জল্পনা কল্পনা চললো কিছুক্ষণ। রাতে ছোট খালামনির বাসায় সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে সবাই মিলে খালামনির বসার ঘরে নাচ-গানের আসর বসালো। ঘরটা অত বড় নয়। এক পাশে একটা সেমি ডাবল বিছানা। আরেক পাশে দুই সিটের দুটো সোফা। আর তার একপাশে শতরঞ্চি পাতা। সেখানে সবাই গোল হয়ে বসলো আর ঘরের মাঝখানে একজন করে নাচ দেখাবে। ছোট খালামনির মেজ ছেলে আরমান ভাইয়া খুব ভালো ‘গ্যাঞ্জা স্টাইল’ নাচতে পারে। হাই ভলিউমে গানটা মোবাইল এমপিথ্রি’তে বাজতে লাগলো। ও নাচতে শুরু করতেই বাকিরা এক এক করে ওর সাথে দাঁড়িয়ে নাচতে শুরু করলো। গ্যাঞ্জা স্টাইলের নাচটার এক পর্যায়ে ঘুরানী দিতে হয়। সেজন্যে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এমনিতেই বাসাটা ছোট। বসার ঘরটাও ছোট। তার উপরে আরমানকে ঘিরে রেখেছে আরও ছয়জন ভাই-বোন। ঘুরতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে দেয়ালের এক সাইডে তালপাতার সেপাই লামিয়াকে ধাক্কা দিয়ে বসলো। লামিয়া ছিলো সোফার পাশে একটা বড় মাটির ফুলদানীর কাছাকাছি। ও এমনিতেই পাতলা গড়নের। শরীরের আঁকার দেখলে মনে হয় খাওয়া দাওয়া করে না। ফুঁ দিলেই যেন উড়ে যাবে। ও গিয়ে ধুমুস করে পরলো মাটির সেই ফুলদানীর উপরে। বেকায়দায় পরে গিয়ে ডান হাতের কবজিটা মচকে গেলো। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো পাতলা মেয়েটা। মুহুর্তের মধ্যে ঘটে গেলো এই অঘটন। নাচ গানের আড্ডা পরিণত হলো বিষাদে। রাত তখন বারোটার ঘর ছাড়িয়েছে। ছোট খালু আর ছোট মামা সাথে সাথে লামিয়াকে নিয়ে ছুটলেন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। হাতে চিকিৎসা দিতে হবে অতি দ্রুত। বেড়াতে এসে এরকম অঘটন ঘটবে কে জানতো! হাত ভাঙার খবরটা পেলে কি আর লামিয়া লাবিবার বাবা ওদের আস্ত রাখবে? এমনিতেই ভদ্রলোক এই বাসায় আসা মোটেই পছন্দ করেন না!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অধিকাংশ পাঠকের কাছে গ্রামীণ শৈশব পছন্দ, তাই কারও কারও কাছে আমার এই গল্পটা নাকি ঠিক পূর্ণতা পায়নি। শহরে যারা থাকে, তাদের কি শৈশব থাকেনা, বলুন তো ভাইয়া? আপনার মন্তব্যটা আমাকে সান্তনা দিলো অন্তত একজন সেটাকে গুরুত্ব দিলো বলে। শুভেচ্ছা ।
তাপসকিরণ রায়
কৈশোরের গল্প বেশ ভাল লেগেছে-- বয়সের ধর্মে সেখানে সবাই ছিল উচ্ছল।নাচানাচি,কাগজের বল ছুঁড়ে মারা ইত্যাদি হরকতের মাঝ দিয়ে ঘটে গেল অঘটন--আর এভাবেই গল্প শেষ হল। ঘটনা পরম্পরায় বাস্তবতার ছোঁয়া ছিল।
সাদিয়া সুলতানা
অনেকেই খুব গঠনমূলক মন্তব্য করেছে। যা তোমার লেখনীকে আরও দৃঢ় করবে এবং ইচ্ছেশক্তি বাড়াবে। আমি এর আগে একবার মোবাইল থেকে পড়েছি। তুমি সবার লেখায় বেশ সময় দাও তাই আমাদেরও একটা দায়িত্ব এসে পড়ে। তাই এখন পিসিতে বসেছি। আমার বরাবরই তোমার সাবলীল ভাষা ভাল লাগে। আর কৈশোরের গল্পে বন্ধুরা আসবে, বন্ধুদের সংখ্যাও কম হয় না তখন। সেই প্রয়োজনেই আমি মনে করি গল্পে চরিত্রগুলো ঠিক মতো এসেছে। আর ফরমায়েসী লেখার একটা চাপ থাকে। নির্দিষ্ট শব্দসীমা না থাকলে হয়তো আরাম করে লিখতে পারতে এই গল্প। ভাল থেকো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।