প্রিয় সুনন্দা,
তোমার পত্র পেয়েছি। আশা করি ভালই আছ তুমি। আমারও চলে যাচ্ছে দিব্যি। ব্যাস্ততার মাঝে উত্তর দিতে পারিনি সময়মত, নতুন চাকুরী, নতুন জায়গা এসব নিয়ে একটু ঝামেলায় ছিলাম তাই লেখা হয়নি। আশা করছি রাগ করোনি তুমি। হ্যাঁ, তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছে করে- কিন্তু কি! কয়েকবার যাব যাব করেও যাওয়া হলনা সময়ের অভাবে। জানো, আমার নতুন কোয়ার্টারের পেছনেই একটি খরস্রোতা নদী বয়ে গেছে। বেশ চমৎকার নাম নদীটার, “চাঁদকন্যা”। ঠিক তোমার মত! চাঁদের আলোয় অভুত সুন্দর লাগে তার অরিরাম বয়ে চলা। নদীটার সাথে তোমার অনেক মিল খুঁজে পাই, সেও তোমার মত ক্লান্তিহীন, অভিযোগহীন, শুধু আপনমনে ছুটে চলে। নদীর পাড়ে ছোট্ট একটা পাকা বেঞ্চি মতন আছে। কখনো গভীর রাতে একা- একা, শুন্য মনে হলে মাঝে- মাঝে চলে যাই সেখানে, ভোররাত পর্যন্ত বসে থাকি। ভাবি নদীটার নাম যেই “চাঁদকন্যা” রাখুক না কেন, তাঁর হৃদয়ের চোখ ছিল অসীম গভীর। এর থেকে ভালো নিশ্চয়ই আর কিছু হতে পারতোনা। নদীর পাড়ে বসে পূর্ণিমা দেখতে তোমার এখনও ভালো লাগে নিশ্চয়ই। তবে পরিবার সহ চলে এসনা,সবাই মিলে একসাথে বেশ আনন্দে কাটানো যাবে কয়েকটা দিন। আর হ্যাঁ, যদি আসই তবে পায়েস রেঁধে আনতে ভুলনা যেন- অনেক দিন সেই অমৃতের স্বাদ নেয়া হয়না।
এইত গত সপ্তাহেই কলেজের রিইউনিয়ন হয়ে গেল। জানিনা তুমি গিয়েছিলে কিনা, আমি যাইনি। জানই তো, ওই কলেজ থেকেই যত সব নষ্টের শুরু। তাই মনটা কেন জানি সায় দিলনা । সুনন্দা, তোমায় বলব বলব করে একটি কথা বলাই হয়নি কোনদিন। জানিনা তুমি কি ভাববে, তবুও আজ এত কাল পরে বলেই ফেলি, তোমায় লেখা আমার প্রথম চিরকুটটা আসলে আমি লিখিনি, ওই কাজ করেছিল রাহাত। তাই বলেযে আমার ওতে সায় ছিলনা ঠিক তা নয়, কেন যেন সাহস করে উঠতে পারছিলাম না । জানই তো তখন মেয়েদের সাথে কথা বলতে গেলেই কেমন যেন হাত- পা শুকিয়ে জেত আমার, ভীষণ লজ্জা করত! সেটা নিয়ে তোমার বান্ধবীদের হাসি- ঠাট্টা এখনও বেশ মনে আছে আমার। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখন নিজেরি কেমন হাসি পায়। সত্যিই তখন বেশ অদ্ভুত ছিল আমার আচার- আচরন! অবশ্য এখনও যে অদ্ভুত নয় তাও খুব একটা জোর দিয়ে বলতে পারিনা। জানই তো নিজেকে খুব একটা বুঝতে আমি কখনও পিরিনি, আজও পারিনা।
ভাবছি আজ- কালের মাঝেই ডাক্তার দেখাব। তোমার জেনে থাকা দরকার, আমি ইন্সম্নিয়া রোগে আক্রান্ত। হয়ত ভাবছ ভালইতো, যে রাত ভালোবাসে, রাতের প্রখরতা- নিস্তব্ধতা ভালোবাসে তার আবার ইন্সম্নিয়া অসুখ কি ! কিন্তু কি জানো সুনন্দা, রাত- আঁধারের রহস্য ইদানিং বড়ই অসহ্য লাগে । রাত হলেই হৃদয় কপাটে সেই মুখ- ঘড়ি! নিয়ত অ্যালার্ম বেজে যায় টিকটিক... টিকটিক... টিকটিক...। উফফ... অসহ্য যন্ত্রণা! ঘুমন্ত চোখে জেগে থাকি প্রতি মধ্যরাতে। সাথে থাকে মুষ্টিবদ্ধ সব ক্যাফেইন, নিকোটিন; মুক্তির অপেক্ষায়! খারাপ অভ্যাস গুলো বাদ দিতে পারলামনা আর! বরং বেড়ে গেছে আরও বহুগুণে। কি করব বল? প্রিয় একটি মুখ উঁকি দিয়ে যায় বারবার এই ব্যাথার প্রাচীরে! থেমে যায় সব নিঃশেষিত ব্যাটারির মতন। দিনের শত ব্যস্ততায় যখন হারিয়ে যাই একবারেও জন্যেও খুঁজতে ইচ্ছে হয়না নিজেকে, সেই ছবি একবারের জন্যও উঁকি দেয়না হৃদয়ে। তাই এখন ঘাতক রাতগুলোকে প্রচণ্ড ভয় হয়, ঘৃণা হয় আমার।
তুমিও বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলে, এদিকে বড়দা- ভাবীও বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু হৃদয়ে একজনের ছবি রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করতে চাওয়াটা কি ঠিক হবে বল? তাইতো জ্বলন্ত কার্বন প্রলেপ দিয়ে হৃদয় ক্যানভাস ঢাকবার চেষ্টা চলছে প্রতি রাতে। আশা করি খুব শিগ্রই সফল হব।
জানোতো আমি অলীক কল্পনা করিনা- তবুও একটি কথা কেন যেন মনে আসে বারবার, হয়ত তুমি আর কিছুদিন অপেক্ষা করলেই পারতে। হয়ত এখন সব যেমন চলছে তেমনটা না চললেও পারত! তোমার স্বামীতো ব্যবসায়ী মানুষ, তার মত অত টাকা- পয়সা, ঐশ্বর্য না থাকলেও নতুন চাকুরীটা কিন্তু মন্দ নয় আমার। স্বপ্ন দেখা কি পাপ বল, মানুষ তো স্বপ্নের মাঝেই বাঁচে তাইনা? আমিও স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু ঈশ্বরের আশীর্বাদে আমার স্বপ্নগুলো স্বপ্নই রয়ে গেছে , পূরণ হয়নি এই যা! থাক ছাড় এসব কথা, তুমি কিছু মনে করোনা আবার- রাত হলেই কেন যেন আমার মাথার ঠিক থাকেনা! তোমাকে দোষ দেই ভেবে ভুল করোনা আবার। তোমার বাবা হঠাৎ মারা যাবার পর তোমরা কেমন অসহায় হয়ে পড়েছিলে, তাছাড়া বিয়ের জন্য তোমার ভাই-ভাবীর চাপ কোনকিছুই আমার অজানা নয়। ওমা এদিকে মধ্যরাত গড়িয়ে ভোর হল বলে! থাক আজ আর পত্র দীর্ঘ করছিনা- সকালে আবার অফিস যেতে হবে। ভালো থেক। পত্রের উত্তর দিয়। আপাতত দুচোখের পাতা ভারি হয়ে একটুখানি ঘুম চাই, অফুরন্ত- অশেষ ঘুম।
ইতি,
তোমার বন্ধু।
২০ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪