তাড়া খেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে একটি ঝোপের ভেতর আশ্রয় নিলাম। লক্ষ্য করলাম ঝোপের ভেতরে আমার মতো আরও অনেকে রয়েছেন। তাদের কেউ বসে আছেন আবার কেউ দাড়িয়ে আছেন। আমি মনস্থির করতে পারছিলাম না এখানেই অবস্থান করব নাকি আরও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করব। আশেপাশে তাকিয়ে আশ্রয় নেওয়ার মত নিরাপদ জায়গা দেখতে না পেয়ে এখানেই থাকার ব্যাপারে মনস্থির করলাম। এখানে আগে থেকেই যারা অবস্থান করছিলেন তাদের চেহারা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম উনারা আমার মিত্রপক্ষ নাকি আমি শত্রুপক্ষের কোন আস্তানায় এসে ঠায় নিয়েছি।
চেহারা মনের আয়না হিসেবে কাজ করে কিন্তু সেই আয়নার প্রতিবিম্ব সবাই ধরতে পারেনা তবে আমি পারি। কারো চেহারায় একটু ঘোলাটে ভাব দেখলেই আমি বলে দিতে পারি কোন কারণে উনি বিরক্ত হয়ে আছেন। আবার কারো চেহারায় উজ্জ্বল ভাব থাকলে বুঝতে পারি উনি ফুরফুরে মেজাজে আছেন উনার সাথে আলাপ জমানো যাবে। যাহোক সবার চেহারা পরখ করে যতটুকু ধারনা পেলাম তার সারমর্ম করলে দাড়ায় আমি মিত্রপক্ষের সাথেই আছি। আর মিত্রপক্ষের কেউ কেউ চাকরিজীবী, কেউ কোথাও লেখাপড়া করছেন আবার কেউ এসেছেন আত্মীয়ের খুঁজে কিন্তু এখানে এসে সবাই আটকা পরেছেন।
বাহিরের অবস্থা বোঝার জন্য মাথা বের করার চেষ্টা করেছিলাম, অল্প বের করার সাথে সাথেই বোঝতে পারলাম ভুল হচ্ছে তাই তাড়াতাড়ি আবার ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে গেলাম। বাহিরের গতিবিধি শুভ মনে হলও না। পরিস্থিতি ঘনঘন রং পাল্টাচ্ছে। সু সু শব্দ করে আমাদের পাশ দিয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে যেন তীরের সুচালো ফণা। হঠাৎ কি যেন প্রচণ্ড জোরে শব্দ করে কাঁপিয়ে দিল চারপাশ। পাশ থেকে একজন বলে উঠল বোমারু বিমান এসেছে মনে হয়।
ঝোপের আড়ালে আমাদের উপস্থিতি হয়ত ওরা টের পেয়ে যায়। তাই তারা তাদের এবারের টার্গেট হিসেবে বেছে নেই ঝোপটিকে। একবার ঝোপের এপাশ, একবার ঝোপের ওপাশ যেন ছুরি চালিয়ে ঝাঁঝরা করে ফেলতে চায়। আমাদের মাঝে যিনি সবচেয়ে বয়স্ক তিনি আল্লার নাম জপতে থাকেন। আমাদেরও তাগাদা দিতে থাকেন আল্লার নাম নেওয়ার জন্য, “আরে মিয়ারা আল্লার নাম নেও, গজব নাজিল হইতে মনে হয় বেশী দেরী নাই।” ঝোপের উপর ওদের ছুরি চালানো তখনো চলতেই থাকে। আমাদের হাত পা আঘাতে আহত হতে থাকে তবুও আমরা চুপ করে থাকি। আবারো প্রচণ্ড শব্দে চারপাশের পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেল। এবারের শব্দটি ছিল আগেরটির চেয়ে অনেক বেশী জোরালো। লাফ দিয়ে কোনদিকে পরব কিনা চিন্তা করতে করতে শব্দটি থেকে গেল।
ঝোপের সবাই নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিতে থাকে একমাত্র আমি ব্যতীত। আমি ভাবি সব দোষ অযথা ভাগ্যকে দিয়ে লাভ কি। এমনিতেই ভাগ্য বেচারাকে সবাই দোষা-ক্রান্ত করতে করতে দোষের অপর নাম দিয়ে দিয়েছে ভাগ্য। যেন যত দোষ ভাগ্য ঘোষ। তাই আমি দোষ দেই নিজেকেই। এবার স স শব্দ আমাদের কানের ভিতরে ঢুকে আলোড়ন সৃষ্টি করল। আমাদের আশ্রয়স্থল ঝোপটিকে ঐ সো সো শব্দ উড়িয়ে নিতে চাইল কিন্তু আমরা হাত দিয়ে শক্ত করে তাকে ধরে রাখলাম। আমরা এখনই মারা যাব নাকি আরও কিছুটা আয়ু আমাদের এখনো অবশিষ্ট আছে তা অনুভব করতে লাগলাম। আমাদের পরিবারের কথা মনে পরে গেল। এই দুর্যোগের মুহুর্ত্বে তারা কোথায় আছে, কি করছে তা জানতে মন বারবার বক্ষপিঞ্জরে এসে আঘাত করতে লাগল। আস্তে আস্তে শব্দ কমে গেল, বোঝতে পারলাম ওরা রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তারপর অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম ঐভাবেই। কিছুক্ষণ পর মাথা বের করে বাহিরের পরিস্থিতি উপলব্ধি করার চেষ্টা করলাম। একজন জিজ্ঞেস করে উঠল বাহিরে দেখে কি বুঝলেন, বের হওয়া যাবে? আমি বললাম “ওদের আগের মত জোর নেই তবুও যতটুকু আছে তাই একজনকে মেরে মেলার জন্য যথেষ্ট।” আমার কথায় প্রকৃতপক্ষেই সে খুশী হতে পারল না। আরও কিছুটা সময় এভাবেই পার করলাম।
না আর এভাবে থাকা যায়না ভেবে জীবন মুঠোবন্ধি করে ঝোপের আড়াল থেকে বেড়িয়ে দিলাম দৌড়। আমি নিশ্চিত উসাইন বোল্ড যদি আমার সাথে এই মুহুর্ত্বে দৌড় প্রতিযোগিতায় নামত তাহলে সে হেরে লজ্জায় কাদা জলে হাবুডুবু খেত। সবার চোখে ধুলো দিয়ে সব পথ ঘাট মারিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাসায় এসে উপস্থিত হলাম। বাসার সবাই সুস্থ আছে দেখে মনে আনন্দ ফিরে এলো। বাসার গৃহিণী একটি তোয়ালে নিয়ে আমার সামনে এসে বলল “এই রাতে ভেজা কাক হয়ে না ফিরলেই হতো, এখন জ্বর বাধালে কে সেবা করবে শুনি?” আমি বললাম “তুমি এই মৃত্যুঞ্জয়ী সৈনিককে ভেজা কাক বলছ! তুমি জানো কোটি কোটি বৃষ্টি কণার যুদ্ধের মাঝে এই জীবন আজ বিপন্ন হতে পারত। জীবন নিয়ে ফিরতে পেরেছি ভেবে শুকরিয়া জানাও।” মাথা মুছতে মুছতে বললাম “নিজের সেবা যত্ন নিজেকেই নিতে হবে, অন্যের দিকে তাকিয়ে থাকলে সময়টুকুই নষ্ট হবে।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সালেহ মাহমুদ
হা হা হা, এটা ছোট গল্প না কি গল্প ছোট, বুঝছি না। কারণ গল্পের পরিণতিতে বাঁক আছে, আছে হঠাৎ আবিষ্কারের মতো ব্যাপার। কিন্তু উল্টোভাবে। ছোটগল্পে যেখানে শেষে একটা চমক থাকে চমকে দেওয়ার জন্য, সেখানে এই গল্পে একটা চমক আছে বটে, তবে তা চমক ভাঙ্গার জন্য। পুরো গল্পে যে একটা টানটান উত্তেজনা ছিল, শেষে এসে সেই উত্তেজনা প্রশমিত হলো সহজিয়া ঢঙে। ভালো লাগলো বিষয়টি। ধন্যবাদ হাসান ফেরদৌস।
Lutful Bari Panna
আমার কিন্তু শুরু থেকেই শত্রুপক্ষ নিয়ে সন্দেহ হচ্ছিল। পরে সেটাই সত্য হল। তবে সত্যি বলছি এটা যদি বৃষ্টি সংখ্যা না হত, ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারতাম না। বিষয় সেটা না আমার ভাল রেগেছে আপনার চমৎকার সেন্স অব হিউমার। বর্ণনায় যত দোষ ভাগ্য ঘোষ জাতীয় ডায়লগগুলো দারুণ টেনেছে...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।