মীমের স্বপ্নপূরণ

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

মিজানুর রহমান রানা
  • ২২
এটা কোনো গাল-গল্প নয়, বাস্তব ঘটনা। মেয়েটি গত দশ-পনেরো দিন আগে আমাকে ফোন করে বললো, ‘স্যার আমাকে বাঁচান, আমি একটি কিডনী বিক্রি করবো।’

আমি মেয়েটির মুখে এ কথা শুনে কিছুক্ষণ থ’ বনে গেলাম। উত্তর দিতে পারলাম না। তারপর তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘আপনার বাড়ি কোথায়?’

সে বললো, ‘আমার বাড়ি রংপুর।’

‘কী করেন?’

‘কলেজে পড়াশোনা করি স্যার।’

‘কোন্ কলেজে, কোন শ্রেণীতে?’

‘অমুক কলেজে, অনার্সে।’ মেয়েটি উত্তর দিলো।

আমি বললাম, ‘কেনো কিডনী বিক্রি করবেন?’

সে উত্তর দিলো, ‘আমার গার্ডিয়ান নেই, টিউশনী করে পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ চালাই। কিন্তু এখন আর তা পারছি না। আমার মা খুব অসুস্থ, তাছাড়া ছোট ভাইবোন আছে। তাদের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ চালানোর জন্য কিডনী বিক্রি করতে চাই।’

আমি অনেকক্ষণ ভেবেচিন্তে উত্তর দিলাম, ‘কিডনী তো বিক্রি করা বেআইনী। বাংলাদেশ সরকার কিডনী বিক্রি করা নিষিদ্ধ করেছেন। তাই কিডনী বিক্রি করা যাবে না। একটি কথা চিন্তা করুন, আপনি যাদের জন্য কিডনী বিক্রি করার কথা ভাবছেন, আপনার প্রয়োজনে আপনি কিন্তু কিডনী পাবেন ন। তখন কী করবেন?’

সে নিরাশ হয়ে বললো, জানি না। আমার টাকার খুব প্রয়োজন।’

আমি তাকে সে মুহূর্তে আর কিছু বললাম না। শুধু বললাম, ‘টাকার প্রয়োজন সবারই থাকে। সেজন্য কিডনী বিক্রি করার চিন্তা আপনার মাথায় এলো কেনো? আপনি মনে হয় খুব বেশি ছায়াছবি দেখেন। কারণ ছায়াছবিতেই এমন ধারণা দেয়া হয়ে থাকে। ছায়াছবিতে দেখানো হয় একজন মানুষ কিডনী বিক্রি করে তার ভাইবোনদেরকে লেখাপড়া করায়, কোনো কোনো ভাইবোন তার সে ত্যাগের কথা স্মরণ রাখে আর কেউ বেঈমানী করে।’

সে কথাটা বুঝতে পারলো না। সে আবারও বললো, ‘আমার কিডনী বিক্রি করা খুব প্রয়োজন।’

আমি বললাম, ‘আইনতঃ কিডনী বিক্রি নিষিদ্ধ।’

সে বললো, ‘তাহলে আমাকে একটা চাকুরি দিন। আমার ভাই-বোনদেরকে সঠিকভাবে মানুষের মতো গড়ে তোলা আমার বাবার একটি অপূরণীয় স্বপ্ন; আমি বাবার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে চাই। ’

আমি বললাম, ‘তা চেষ্টা করা যেতে পারে। আচ্ছা আমি ভেবেচিন্তে আপনাকে জানাবো।’

পরদিন অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম। যেভাবেই হোক, মেয়েটাকে সহায়তা করতে হবে। তাই তার বায়োডাটা আমার কাছে পাঠানোর জন্য তাকে ফোন দিলাম, কিন্তু কেউ রিসিভ করলো না।

এক ঘণ্টা পর আবারও ফোন দিলাম। একজন মেয়ে লোক কাঁদতে কাঁদতে ফোন রিসিভ করলো, সে বললো, ‘মীম আর নেই।’

হ্যাঁ, ঘটনাটা এমনই হয়তো হতে পারতো। আবেগপ্রবণ মানুষদের অনেক সময় কিছু না পাওয়ার হতাশায় আত্মহত্যার প্রবণতা জেগে ওঠে। তারা ভাবে, আমার জীবন রেখে আর কী হবে? মানুষ স্বার্থপর, কেউ সহায়তা করতে চায় না, এ সমাজে ভালো মানুষ নেই, সব স্বার্থপর।

তবে না, সেরকম হয়নি। আসলে কিডনী বিক্রি করার জন্যে যে মেয়েটা আমার কাছে ফোন করেছিলো, সে কাছে ছিলো না। বাড়ির কাউকে না বলে কোথাও চলে গিয়েছিলো। যে মহিলা ফোন রিসিভ করেছিলেন, তিনি তার মা। তিনি বললেন, মীম গতকালই কাউকে না বলে সবার অগোচরে কোথায় যেন চলে গেছে।’

মেয়েটার জন্য কিছুটা সময় মনটা বিষন্ন হয়ে রইলো। এ সমস্ত বিষন্নতা কেটে গেলো যখন ভাবলাম, মহান আল্লাহ আমাদের এই শরীরটা তৈরি করেছেন। এই শরীরের কিডনী, রক্ত, চোখ, মুখ, নাক, হাত-পা, লিভার (যকৃত), রূহ ও অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গসহ পুরো শরীর কতটা মূল্যবান। এই রূহ ও শরীর মানুষকে আল্লাহ বিনে পয়সায় দান করেছেন। অথচ বেশিরভাগ মানুষ তার শোকরিয়া করা তো দূরের কথা, মানুষ সৃষ্টিকর্তার কথাই বেমালুম হয়ে যায়। এমনকি আল্লাহর বিধানেরও বিরোধিতা করে। শিরক করে। আল্লাহকে অস্বীকার করে।

বেশিরভাগ মানুষই জানে না তার শরীরটা কত মূল্যবান, তার শরীরটা আল্লাহ কী কী দিয়ে, কোন প্রকারে কতকিছু দিয়ে তৈরি করেছেন। মহাবিজ্ঞ এই আল্লাহর সৃষ্টি শরীরটাকে মানুষ যদি ব্যবচ্ছেদ করে তাহলেই আল্লাহর স্বরূপ দেখতে পাবে। কিন্তু মানুষ এসব চিন্তা-ভাবনা করে না। শুধু খায়-দায় আর ফুর্তি করে। পৃথিবীতে এসে তার কর্তব্য কাজ কী? বেশিরভাগ মানুষ তা থেকে গাফেল (বিমুখ) থাকে।

বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না। মেয়েটি একদিন রাত প্রায় বারোটায় আমাকে ফোন দিলো। আমি তার ফোন পেয়ে খুশি হলাম।

রিসিভ করতেই সে বললো, ‘স্যার, আম্মা জানালো আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি কাউকে না বলে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলাম। পরে বুঝতে পারলাম কাজটা ঠিক হয়নি। পরদিনই বাড়ি ফিরে আসি। মোবাইল থেকে নেটে আপনার একটা লেখা পড়লাম। লেখাটির শিরোনাম ছিলো : ‘মেয়েটি বললো একটি কিডনী বিক্রি করবো’। লেখাটি পড়ে আমার বেশ ভালো লেগেছে। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা এই জন্যে যে, আপনি আমার মতোন গরিব মানুষদের স্মরণ করেছেন।’
‘পৃথিবীতে সব মানুষই গরিব অবস্থায় আসে। ঠিক নয়? প্রতিটি শিশু যখন ভূমিষ্ট হয় তখন তার কিছুই থাকে না। একদম গরিবভাবেই আসে। তবে বড় হয়ে তার শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মগুণে সে সমাজে তার আসনে নিজকে প্রতিষ্ঠিত করে নেয়। তেমনিভাবে তুমিও হতাশায় না ভুগে, সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। দেখবে তোমার মন থেকে সব হতাশা, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা চলে যাবে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাই বুদ্ধিমানে কাজ। আশা করছি তুমিও তাই করবে।’

সে কিছুটা সময় নিরুত্তাপ থেকে বললো, ‘আল্লাহ আসলে আপনার মতো সঠিক মানুষের সাথেই যোগাযোগ করার তৌফিক আমাকে দিয়েছেন। সেজন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা অশেষ।’

আমি বললাম, ‘ধন্যবাদ। তোমার বায়োডাটা পাঠিয়ে দাও। দেখি তোমার কোনো উপকার করা যায় কি-না।’

এই মেয়েটি প্রায় পাঁচ বছর পর তার কর্মগুণে তাকে সমাজের একজন যোগ্য মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করে। নিজেরও স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করে। তার আর কিডনী বিক্রির প্রয়োজন হয়নি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ওয়াহিদ মামুন লাভলু অনেক মূল্যবান শিক্ষা গ্রহণ করার মত একটি অসাধারণ গল্প। একটি মেয়ে টাকার সমস্যার কারণে কি মারাত্মক দুঃখজনক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং কারো সঠিক দিক নির্দেশনায় ও সহায়তায় তার সেই সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসে আত্মবিশ্বাসী হয়ে সমাজে একজন যোগ্য মানুষ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এই গল্পটি তারই একটি চমৎকার উদাহরণ। অনেক মানসম্পন্ন একটি গল্প। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আমার জন্য দোয়া করবেন প্লিজ। সবসময় ভাল থাকবেন।
ধন্যবাদ ওয়াহিদ ভাই। দীর্ঘদিন পর একজন সমস্যাগ্রস্ত মানুষের কাহিনী লিখলাম। আপনাদের মূল্যবান মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। জাজাকাল্লাহ খায়ের।
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুণ একটা বিষয়।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি কিডনী বিক্রি করার চিন্তা আপনার মাথায় এলো কেনো? আপনি মনে হয় খুব বেশি ছায়াছবি দেখেন। কারণ ছায়াছবিতেই এমন ধারণা দেয়া হয়ে থাকে।....// অসম্ভব সুন্দর একটি গল্প ....অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা বাস্তব ঘটনা.....শুভ কামনা রইলো...মূল্যায়ন করে গেলাম....আসবেন আমার কবিতার পাতায়....
সেলিনা ইসলাম ওয়েল কাম ব্যাক রানা ভাই। অনেক শিক্ষণীয় গল্প। যেখানে বর্তমান সময়ে মানুষ অনেক বেশি স্বার্থপর হয়ে গেছে। সেখানে চমৎকার মনের একজন মানুষের দেখা পেলাম গল্পে। ভালো লাগলো একজন লেখকের লেখা পড়েই কারো মনের পরিবর্তন হয়েছে দেখে। একজন লেখকের লেখার সার্থকতা এখানেই। অনেক অনেক ধন্যবাদ গল্প শেয়ার করার জন্য। এমন গল্প আরও যেন পড়তে পারি সেই প্রত্যাশায় অনেক অনেক শুভকামনা।
লেখালেখি প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম নানা কারণে। কিন্তু এই মেয়েটাই আমার মনে গল্পের বুনন তৈরি করে দিলো। আপনার গঠনমূলক আলোচনা আমাকে অনুপ্রাণিত করলো। আপনাকে ধন্যবাদ।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী মাঝ থেকে অবধি শেষ পর্যন্ত ইচ্ছে ছিল, গল্পের নায়েকে নায়িকার বায়োডাটা দেখে হয় তো কিছু একটা সাহায্য করে নায়িকাকে তার কিডনি বিক্রি থেকে বাঁচাতে সমর্থন হবে, কিন্তু নায়েকের কাছে বায়োডাটা জমা দিলে লেখক পাঁচ বছর পরের কথা নায়িকার সফলতার জাগরণ তুলেছেন, কিন্তু লেখক কি পারতেন না এই পাঁচটি বছরের কর্ম কাহিনী গুলো কিংবা এ সফলতার পিছনে কি ছিল এমন সেগুলোর জোগান দিতে..... বিশেষ করে লেখককে সমাপ্তির দৃশ্যটা আরও জোগান দিতে হবে, শুভকামনা রইল কবি।
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ, সুন্দর আলোচনার জন্য। মূলত পাঁচ বছরের সংগ্রারমের কাহিনী তুলে ধরা যেতো। কিন্তু সেটা আমি চাইনি। সেটা পাঠকের মনেই অপূরণীয় আকাঙ্ক্ষা থাকুক, পাঠই কল্পনা করুক, মেয়েটি কত পরিশ্রম করে তার ধ্যান-ধারনা বদলিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করেছে। শুভ কামনা।
মোস্তফা হাসান অনুভূতিকে নাড়া দেয়। ধন্যবাদ আপনাকে। অামার লেখা গল্পটি অাশা করি পড়ে দেখবেন।
ভালো লাগেনি ২ জানুয়ারী, ২০১৮
ধন্যবাদ, আপনার জন্য শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ৩ জানুয়ারী, ২০১৮
Farhana Shormin আসলেই কী এটি বাস্তব ঘটনা? ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৮
লেখালেখি ছেড়ে দিয়েছিলাম সাংবাদিকতার কারণে। কিন্তু এ ঘটনাটি আমাকে কোনো যেনো বার বার আন্দোলিত করেছে, তাই লিখলাম।
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৮
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া গল্প উপস্থাপনায় বৈচিত্র রয়েছে। ধন্যবাদ। আমার গল্পের পাতায় আমন্ত্রন।

০৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্বাধীনতা”
কবিতার বিষয় "স্বাধীনতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারী,২০২৫