জ্ঞান হবার পরে অনেকবার ট্রেন ভ্রমণ করেছি। কিন্তু সেই স্কুলের প্রাইমারী স্তরে থাকবার সময়। কলেজে উঠার পরে এই প্রথম।
বাবার সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় ট্রেন ছাড়বে বলে তড়িঘড়ি ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে ছুটলাম রেল স্টেশনে। যথাসময়ে ট্রেনের কামরায় উঠে সিট খুঁজতে লাগলাম আমাদের। অবশেষে পেয়েও গেলাম। কিন্তু গোলযোগ বাঁধালো অপর দু’জন যাত্রী। তারা টিকিট কেটেছেন ঠিকই কিন্তু নাম্বার লিখে নেননি। অবশেষে সিট না পেয়ে যার তার সিটে বসবার যোগাড়। ওনারা আমাদের সিটেই আরামসে বসে আছেন। কোনরকমে তাদেরকে সাইড করে বাবা আর আমি বসলাম। চোখের কোণ দিয়ে দেখলাম অপরপাশের সিটে দু’জন ভদ্রলোকের সাথে আমারই বয়সী এক তরুণ বসেছে। সেও আমাকে তার চোখের কোন দিয়ে আমাকে চোরা চোখে দেখছে।
আমাদের আশেপাশে তিন চারটে সিট। তবলিগ পার্টি বসেছেন। আমার পাশের টিকিট ছাড়া মহিলা যাত্রী কিছুক্ষণ পরে চলে গেলে আমি জানালার ধারে এসে আরাম করে বসলাম। এতক্ষণে বাবাও ঠিকমত বসলেন।
এইবার ভালো করে সেই তরুণকে ভালো করে দেখতে পেলাম। খুব সুন্দর চেহারা। যেন খোদা নিজ হাতে ঐ মুখের গড়ন তৈরী করেছেন। সবচেয়ে ভালো লাগলো তার ফেস কাটিং। চোখ দুটো খুব সুন্দর। অপরূপ মায়াবী। গালে খোচা খোচা দাঁড়ি। নাকটা খাড়া। থুতনি, ঠোঁট, মুখ সব মিলিয়ে একটা অত্যন্ত ইনোসেন্ট চেহারা তার। মনে তো হচ্ছে ট্যারা চোখেও তাকে সুন্দর দেখাতো। নামটা খুবই জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পৃথিবীর বিধি বাম! শুধু নাম জানতে চাইবো দেখা যাবে প্রেম নিবেদন করে বসবে।
কাউনিয়া স্টেশনে ট্রেন থামলো। ছেলেটা বাইরে বেরিয়ে গিয়ে সিগারেট টানছিলো। দেখেই খুব রাগ লাগলো-‘বদ কোথাকার!’ স্মোকিং আমার একেবারেই অসহ্য! ছেলেটার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে ভীষণ ইচ্ছে করছে।
ট্রেন চলতে শুরু করলো আবার। সেও উঠে বসলো আগের জায়গায়। আমার গন্তব্য চলে এসেছে। রংপুর স্টেশন। ট্রেন থেকে নামার সময় হারিয়ে ফেললাম তাকে। বাবা রিটার্ন টিকিট কাটবেন তাই ওনার সাথে টিকেট কাউন্টারে গেলাম। হঠাত দেখি সেই ছেলেটি। আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলো।
এর পরে আর দেখা হলো না। হারালাম চিরতরে।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
৪ ডিসেম্বর ১৯৯৭ ইং
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।