যাক, তোমাকে মাফ করা যাক – গুন্টার গ্রাস
কফিনের ভেতর দু’পা কম্পমান, তবুও
শিরদাঁড়া করেছ ঋজু বিবেকের ত্রিশূলডগায়
করেছ ধরাগলায় সত্য উচ্চারণ
ক্ষমা করা যাক গুন্টার গ্রাস তোমাকে
তবে তোমার বন্ধুরা? এতদিনের
পরাক্রমি আর ফুলেল রথযাত্রায় যারা
তোমার রূপরসগন্ধস্পর্শের ভাগীদার – তোমার বন্ধুরা
ওরাইতো তারা –
অবোধ শিশুর শোণিতস্নানে দণ্ডধর ন্যায়পাল
বয়ে চলে ধ্বংসের পরোয়ানা জিভের লালায়
যেন ছালওঠা নেড়ির পাল –
কেমন অবলীলায় খুবলে খায় মনিবের দয়ার্দ্র শরীর
কেমন দ্বিধাহীন ভুলে যায় বাস্তুহীন আত্মপরিচয়
তোমাকে নাহয় করুণা করা যায়
গুন্টার গ্রাস –
তবে তোমার দীর্ঘ পথযাত্রার সাথিরা? নাড়িসূত্র জড়ায় যারা
তোমার খ্যাতির প্রদীপে, উত্থানের সিঁড়িতে, পুরুলেন্স ফুঁড়ে
বিচ্ছুরিত কালভেদী দৃষ্টিরেখায় –
তোমার ধমনির রক্ত খেলা করে তাদের ডান অলিন্দে-বাম অলিন্দে
তোমার গণ্ডদেশের ঔজ্জ্বল্য আলো ছড়ায় তাদের অবয়বে
তোমার মেধার বাস তাদের উল্লাসে
তোমাকে নাহয় জানালাম স্বাগত
গুন্টার গ্রাস –
তবে ঐযে, তোমার শকুনজ্ঞাতি যাদের কথা
বলছো তুমি কফিনের প্রকোষ্ঠ থেকে আজ?
দেখো, বিশাল ওদের ডানার কালোছায়া
প্রাণ আর প্রদীপ নিভিয়ে চলে মুলুকের পর মুলুক
দেখো, কেমন তোমার শিল্পিবন্ধুরা খুলি আর পাঁজর মেশায়
থকথকে উষ্ণরুধিরে – দেখো কেমন ভাস্কর্য রচে চূর্ণিত
বাস্তুভিটার পাটাতনে
গলির প্রতিটি দেয়াল উত্তরসভ্য শিল্পের ক্যানভাস আজ
তোমার বন্ধুরা আঁকে রাঙ্গা গোলাপের মতো তাজা রক্তহাতে
অবমুক্ত তুমি, গুন্টার, আমার কাছ থেকে
কোটিঅর্বুদ জীবনপিয়াসির অনুজ্ঞা তোমার দোয়াতের
কালির শেষ ফোঁটায় –
তবু কি মুক্ত তুমি গুন্টার, আমার সমূহ সংশয়
দেখতে কি পাও লহুলেপা সুচালো দাঁত, মাংসমাখা নখ –
তোমার জীবনলগ্ন বন্ধু –
হায়েনারা তুলেছে মাথা তেলবালুর মানচিত্র থেকে
ব্যাদান করেছে কুৎসিত লালামুখ
আসছে তেড়ে তোমার উচ্চারণের শুদ্ধভূমিতে
তুমি বেঁচে রও গুন্টার – যতদিন পারো
তোমাকে যে বলতে হবে আরোও, আরোও অনেক।
১৩ এপ্রিল ২০১২
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী নয়।।