মুদ্র-শহরের হোটেলের বারান্দায় বসে সে বৃষ্টি দেখছিল। গতকাল রাত্রি থেকেই প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে এখানে। এখন যদিও বৃষ্টির প্রাবলতা খনিক কম। কিন্তু তাদের হোটেলের চত্বর আর তার ভেতরের নুড়ি-পাথর ফেলা পথে জায়গায় জায়গায় জল দাঁড়িয়ে গেছে। বারান্দা থেকে ক্ষণে ক্ষণে থেকে তার দৃষ্টি চলে যাচ্ছে সমুদ্রের দিকে।

হঠাৎ খুব গান শুনতে মন চাইলো অনিকের। ‘যদি মন কাঁদে তু‌মি চলে এসো এক বরষায়’ গানের সাথে এক কাপ গরম চা হলে ভালই হয়। সাথে বৃষ্টিময় ভালবাসা। একবার বউকে ডাকবে ভেবেও ডাকলোনা।

তারা শুরুতে চমকে উঠলেও ব্যাপারটিকে ভূতের কান্ড বলে মানতে রাজি হলেন না। কে জানে...ছেলেছোকরারা তাদের ভয় দেখাতেই এসব করছে কী না কে বলতে পারে! দলের সবাই মিলে মজনুকে ঠেলে পাঠালো, একটু কড়কে দেওয়ার জন্য। মজনু বাইরে বের হয়ে বাঘের হুঙ্কার ছাড়লো,
‘কে ঢিল মারে রে? সাহস থাকে তো সামনে আয়। চুলের মুঠি ধরে শূণ্যে পাক খাওয়াবো!’

বৃষ্টি ভেজা কদম ফুলে
তোমার কথা ভাবি,
হয়তো তুমি কদম ফুলে
খেলছো লুকোচুরি।
কদম ফুলের মালা গেঁথে
দূর্বা ঘাসে বসে,
তোমার আশায় বসে থাকি
না থাকলেও দিশে।

আর্তিকে সঙ্গে আনলেও পার্কে এসে আর্তি ও মিথুনের মধ্যে যেন একটা বিকর্ষণ কাজ করছে, এটা আর্তির তীক্ষ্ণ মননে ধরা পরে। যেন কাছে থেকেও কাছে নেই,আর্তি ভাবে। ইতোমধ্যেই শিয়াল বৃষ্টিতে ভিজে লুতুপুতু। ‘তোমার কি হয়েছে বলো তো?’ আর্তি বলে। ‘কই’ মিথুনের তড়িঘড়ি উত্তর। তারপর দু’জনেই ভিজতে ভিজতে পার্ক থেকে বেরোয়।

দেখি রাস্তার ওপারে একটা মেয়ে একা দাঁড়িয়ে ভিজছে। ঠিক আমার মত একা। দুই হাত ছড়িয়ে দিয়ে, আকাশের দিকে মুখ করে, বন্ধ দুই চোখে নবধারা জলে স্নান করছে। সুমি’র মত লাগছে মেয়েটাকে। সুমি কি?

সারাদিন সারারাত ধরে ঝরা বৃষ্টিতে গ্রামের আনাচ কানাচ,বাড়িঘর গাছপালা সব ভিজে জবজবে । কখোনো ঝপঝপ আর কখনোবা ঝমঝম করে ঝরছে। ঝরছে তো ঝরছেই। আর সেইসাথে বৃষ্টি কে সংগ দিতেই বোধহয় রাজ্যের যত ব্যাঙ এক সাথে গান ধরেছে। নেশার মত করুন একটা সুরে সবকিছু বিভোর হয়ে আছে।

আমার স্ত্রী নগ্ন হ‌য়ে বৃ‌ষ্টি‌তে ভে‌জে । আমার তা‌তে কোন আপ‌ত্তি নেই । এই জন্য আমরা দুজন সারাক্ষণ একটা বৃ‌ষ্টি‌ভেজা রা‌তের অপেক্ষায় থা‌কি । ক‌বে রা‌তে বৃ‌ষ্টি হ‌বে ! দি‌নে হ‌লে আমা‌দের মন খারাপ হয় ।

বৃষ্টি ভেজা দিনে গরুর গোস্তের কালো ভুনা দিয়ে খিচুড়ি ভোজনে কেউ কেউ উল্লাসে মেতে উঠে। আবার কেউ বৃষ্টি থেকে রেহাই পেতে উঠে পড়ে সংগ্রামে। ঘাঘট নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বহু মানুষ তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেছে। নদীর গতিধারা ক্রমেই আরো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। ঘাঘট যেন পাগলা কুকুর হয়ে গেছে।

“বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলো বান।” না… এই গানটা এখন মানাচ্ছে না। কারণ বৃষ্টি টাপুরটুপুর করে পড়ছে না। ঝমঝম করে পড়ছে বৃষ্টি। এই অবস্থায় কি গান থাকতে পারে? রিমঝিম বারসাত পানি? না… এটাও তেমন মানাচ্ছে না। আচ্ছা যাই হোক শুধু বৃষ্টিতে ভিজলে হবে না। বৃষ্টির মধ্যেই একটু ঘোরাঘুরি করতে হবে। শুধুমাত্র বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজলাম এরকম একটা দৃশ্য গল্পে লিখলে তা নিতান্তই সাদামাটা হবে। তাই একটু ঘোরাঘুরি শুরু করলাম