ফেলে আসা দিনগুলো

কৈশোর (মার্চ ২০১৪)

এম. গোলাম মাহমুদ শিশির
  • ৩১
জীবনে অনেক লোক অনেক কিছুই হারায়। কিছু আছে যা ফিরে পাওয়া যায় আর কিছু আছে তা কখনোই ফিরে পাওয়া যায় না। ফিরে পাবারও নয়। কেউ কি ফিরে পেয়েছে তার ছেলেবেলার ফেলে আসা দিনগুলোকে? ছেলেবেলার অনেক স্মৃতি আছে যা কখনো ভূলার নয়। সময় অসময়ে সবার মনেই দোলা দিয়ে যায় ছেলেবেলার সেই ফেলে আসা দিনগুলো। তেমনি আমাকেও প্রতিনিয়তই তাড়া করে বেড়ায় ছেলেবেলার মধুর মধুর কিছু স্মৃতি। চোখের পাতা এক করলেই আমি দেখতে পাই কালো মেঘে ছেয়ে যাওয়া বিশাল আকাশ, ক্ষনিক পরে রাশি রাশি সাদা মেঘের ভেলা। তার উপরে আমার ছিপ ছিপে গড়নের ক্লান্ত শরীর ভেসে যাচ্ছে দূর হতে বহুদূর। কখনো বা পল্লী প্রকৃতির পরতে পরতে বর্ষা ঋতু ছড়িয়ে দিচ্ছে এক অপূর্ব সৌন্দর্যের লাবন্য। কখনো দেখি ঘোলাটে পাংশু মেঘের আঁড়ালে হারিয়ে গেছে সুখ। কখনো বৃষ্টির অবিরল জলধারা অপূর্ব ছন্দের সুরলহরী তুলছে চরাচরে। বর্ণীল যৌবনের প্রতিক হয়ে পাল তোলা নৌকার সারি ভেসে যাচ্ছে পদ্মার সেই শ্রোতে, চলে যাচ্ছে দূর-দূরান্তে। নদী তীরের নির্মল বাতাসে কাঁশবনে দোলছে সাদা সাদা মায়াময় কাঁশফুলগুলো। নদীর জলের আঘাতে ভেঙ্গে পড়ছে দু’তীরের মাটি। খুব করে মনে পড়ে লাল টকটকে রক্তিম সূর্যকে। চারিদিকে যেন লাল সিঁদুর দিয়ে রাঙ্গানো। যেন লাল শাড়ী পরে গ্রামের নববধূ দাঁড়িয়ে আছে মাথায় ঘোমটা দিয়ে। পশ্চিমাকাশের রুপম চাহনি থরে থরে দূর্বাঘাসের মত সাজানো গোছানো। যেন বারুদ মাখা পাট খঁড়ির মাথা তুষের তাওয়ায় টুকিয়ে গ্রাম্যবধূ জ্বালাচ্ছে সন্ধ্যার দীপালি। পাখিরা সব আপন নীড়ে ফিরছে। আকাশের হংশ বলাকা নেমে এসেছে নিচু দিগন্তে। আবছা আলোয় ধবল বকের উড়ন্ত মিছিল যেন ঘরে ফেরার এক অনাবিল প্রশান্তি। কখনো বা দেখতে পাই সোনাঝরা সোনালী আকাশ, এক চিলতে চাঁদের রজতশুভ্র স্নিগ্ধ আলো এসে বৃষ্টির মত মিষ্টি করে ছুঁয়ে দিচ্ছে আমার মনের উঠোন। রুপময় যৌবন আর প্রকৃতিকে ভরিয়ে দিচ্ছে স্বপ্ন সুখের সোনালী পরশ। খুব সকালে বেনারশি ঝিঁলের মিষ্টি পানিতে শাপলা তুলতাম, হিজল গাছের চূড়া থেকে লাফিয়ে পড়তাম দীঘির স্বচ্ছ পানিতে। বৃষ্টিতে ভিঁজে কাঁদা মাখা রাস্তা দিয়ে স্কুলে যেতাম। বাবার পকেট থেকে চুরি করা পাঁচ টাকার নোট দিয়ে বন্ধুদের সাথে ঝাঁল মুড়ি খেতাম। আজ বাবাকে খুব মিস করি। মিস করি বাবার মায়া মাখা মুখখানি আর উনার শরীরের ঘামের মিষ্টি গন্ধ। কখনো বা স্কুল ফাঁকি দিয়ে গাছের মগডালে চড়ে পেড়ে আনতাম সদ্য জন্ম নেয়া পাখির ছানা। সারা দুপুর জুড়ে হাটখোলা মাঠে ছুটোছুটি, হই-হুল্লোড়ে মাতিয়ে রাখতাম। সন্ধ্যাবেলা খঁড়ের গাঁদার মধ্যে ডানপিটে স্বভাবের কতিপয় বন্ধুদের সাথে লুকোচুরি খেলতাম। এগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। অনেক সময় পেরিয়ে গেছে জীবন থেকে। স্মৃতিমুখরিত ছেলেবেলাকেও অনেক পিছনে ফেলে এসেছি আমি। অনেক বড় হয়ে গেছি এখন। প্রয়োজনের তাগিদেই শহরের জীবনকে বেছে নিয়েছি আমি। এখন ছকে বাঁধা জীবন আমার। পায়ে লোহার শিকল। তবুও পল্লী প্রকৃতির রুপ, রস, মাধুর্য আর কাঁদা মাটির গন্ধ আমাকে এখনো প্রায়শঃই উদাসী করে তোলে। ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় বন্দী শহরে জীবন থেকে আমার বিগলিত চিত্ত বার বার ঘুরে ঘুরে বিচরণ করে নিভৃত পল্লীর মাঠ-ঘাট, পথে-প্রান্তরে। ইচ্ছে করলেও এখন আর হাটখোলা মাঠে ছুটোছুটি করতে পারিনা। পারিনা বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করতে। তবে এখন আরেকটা টাকা চোরের জন্ম হয়েছে। চোর বললে বোধয় খারাপ শোনা যায়। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস চুরি করার মাঝেও অনাবিল প্রশান্তি আছে। আছে সুখকর কিছু স্মৃতি। তাই আমি চোর শব্দটাই ব্যবহার করলাম। সে এখন আঠারো মাসে পা দিয়েছে। কেবল হাটি হাটি পা পা। আর কিছুদিন পরে হয়ত আমার সোনামনিই আমার জায়গাটা দখল করবে। হয়ত আমার পকেট থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুরা মিলে ঝাঁল মুড়ি খাবে। রাস্তার পাশে কোন এক চায়ের দোকানে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিবে। ভীষণ মিস করি আমি আমার ছেলেবেলাকে। মিস করি ছেলেবেলার সেই ফেলে আসা দিনগুলো। যেগুলো কখনো ভূলার নয়। ভূলতে পারবও না কখনো।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান খুব সুন্দর লিখেছেন। ছোট ছোট প্যারাকারে লিখলে দেখতে এবং পড়তে আরও ভাল লাগত বলে মনে করি। অনেক অনেক শুভ কামনা।
তানি হক হয়ত আমার পকেট থেকে টাকা নিয়ে বন্ধুরা মিলে ঝাঁল মুড়ি খাবে। রাস্তার পাশে কোন এক চায়ের দোকানে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিবে.........সুন্দর করে কৈশোরের অনুভূতি গুলো তুলে ধরেছেন । ভালো লাগেছে যে নিজের সেই বেলাকে সন্তানের মদ্ধে দেখার এই কামনা কে । অনেকেই সন্তানের কৈশোর চঞ্চলতা কে খুব একটা মূল্য দেন না ... অনেক ক্ষত্রে অপরাধ বা বারাবারি মনে করেন । আপনার লিখায় খুব সুন্দর একটা ভাবনা ফুটে উঠেছে ... ভালো লেগেছে অনেক অনেক । ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন ।
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) আপনার সুন্দর সৃতি মাখা সপ্ন পড়লাম । বেশ হয়েছে।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু কৈশোরের নানান কর্মের স্মৃতিতে দেশের মনোহর রূপটি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।

১৯ সেপ্টেম্বর - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪