আমাদের বাড়ির একটা টিনের ঘরে কাঠের সিলিং ছিল। সেখানে অনেক কবুতর বাস করতো। ঘরে অবস্থানকালে তাদের মৃদু ডাক কানে আসতো।
শৈশবে একবার আমার পাশের বাড়ির বন্ধু রাজীব আর আমি বুদ্ধি এঁটেছিলাম যে কবুতরের বাচ্চা জবাই করে আমরা পিকনিক করবো।
সিলিং-এ উঠার জন্য এককোণে জায়গা ছিল। ঘরের পিছনে রাজীব দাঁড়িয়ে ছিল আর আমি চুপি চুপি সিলিং-এ উঠেছিলাম। যে কবুতরগুলি ভিতরে ছিল আমাকে দেখে সেগুলো ভয় পেয়ে এককোণে জড়ো হয়েছিল। কিছু কবুতর ডানা ঝাপটিয়ে বাইরে উড়ে গিয়েছিল। কয়েক জোড়া ডিম ছিল। বাচ্চা ছিল চারটা। কিন্তু সেগুলো বেশি বড় ছিল না। আমি চারটা বাচ্চাই ধরে নিয়ে ঘরের চালা ও সিলিং এর মাঝের ফাঁক দিয়ে ঘরের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাজীব এর কাছে বের করে দিয়েছিলাম।
আমি সিলিং থেকে নেমে আসার পর দুজন মিলে বাচ্চাগুলো একটা কাপড়ের ব্যাগে ভরে চুপি চুপি বাড়ি থেকে বের হয়েছিলাম। আমাদের বাড়ির দুই বাড়ি পরই মাঠ। মাঠের মধ্যে একটা আখ ক্ষেতের ভিতরে প্রবেশ করেছিলাম যাতে কেউ দেখতে না পায়। বাচ্চাগুলিকে এক জায়গায় রেখে আমরা বাড়িতে চলে এসেছিলাম অন্যান্য জিনিসপত্র নেওয়ার জন্য।
বাড়ি আসার পর নেমেছিল বৃষ্টি। বুকটা আমাদের ধুক পুক করছিল! মনের মধ্যে ছিল তাড়া। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বাড়ি থেকে বের হতে পারছিলাম না। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর উঠোনের উপর দিয়ে তড়িঘড়ি করে দৌড়ে রান্না ঘরে যাওয়ার সময় পা পিছলে আছাড় খেয়েছিলাম তবুও হাল ছেড়েছিলাম না।
ছোট পাতিল, চাল, ডাল, তেল, ম্যাচ, বাচ্চাগুলো জবাই করার জন্য একটা ব্লেড ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে আফিয়াদের বাড়ি গিয়েছিলাম।
আমার এক বছরের ছোট আফিয়াদের বাড়ি আমাদের বাড়ির কাছাকাছিই। যখন বিয়ে বিয়ে খেলতাম তখন ও আমার বউ হতো আর আমি হতাম ওর বর।
আমি ঘোড়া হতাম আর ও হতো ঘোড়ার সওয়ার। আমার পিঠে ও উঠে বসতো। আমি হাঁটুতে আর হাতে ভর দিয়ে এগিয়ে যেতাম। কিন্তু ও আমার চেয়ে ছোট হওয়ায় ওর পিঠে আমি কখনও উঠতাম না।
আফিয়াকে বাড়ির বাইরে ডেকে এনে বলেছিলাম, আমরা আজকে পিকনিক করবো। তুই রান্না করতে পারবি?
ও বলেছিল, হ্যাঁ, পারবো। আমার মা যখন রান্না করে তখন আমি দেখেছি কিভাবে রান্না করতে হয়।
এরপর আমরা তিনজন আখ ক্ষেতের দিকে রওনা হয়েছিলাম। মাঠে গিয়ে চিকন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় সবার সামনে রাজীব, এরপর আফিয়া এবং শেষে ছিলাম আমি। আফিয়ার পরনে ছিল ফ্রক আর হাফ প্যান্ট। ঐ বয়সেই আফিয়ার চুলগুলো বেশ বড় ছিল। ঘাড় পার হয়ে পিঠের দিকে নামতে শুরু করেছিল। ও যখন হাঁটছিল তখন ওর চুলগুলি আমার মনে এক অজানা অনুভুতি জাগিয়েছিল।
আখ ক্ষেতের কাছে যেতেই সদ্য বৃষ্টি হওয়ার কারণে নাকে এক প্রকার গন্ধ এসেছিল। হাত দিয়ে আখের পাতাগুলো সরিয়ে যেখানটায় কবুতরের বাচ্চাগুলো রেখেছিলাম সেখানে গিয়ে বাচ্চাগুলোর উপর চোখ পড়তেই চমকে উঠেছিলাম। কারণ বৃষ্টিতে বাচ্চাগুলো ভিজে পশম চামড়ার সাথে লেপ্টে গিয়েছিল। চামড়া স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিলো। তাই বৃদ্ধ মানুষের চামড়ার মত লাগছিল। বাচ্চাগুলো হাই তোলার মত করে কচি ঠোঁট ফাঁক করে বারবার হা করে উঠছিল। তাই দেখে আফিয়া বলেছিল, ইস তোরা কি-রে, বাচ্চাগুলি এভাবে রেখেছিস কেন? ঠান্ডায় মরে যাবে তো!
আমি বলেছিলাম, তারাতারি জবাই করে ফেলি।
ব্লেড বের করে রাজীবকে বলেছিলাম, তুই ভাল করে ধর যেন ছোটাছুটি না করে।
এই সময় আফিয়া বসে বাচ্চাগুলির গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলেছিল, বাচ্চাগুলোর মা বাচ্চাগুলোকে খুঁজে না পেলে অভিশাপ দেবে। আর এই অভিশাপের কারণে কিন্তু অমঙ্গল হয়।
আমি ওর কথা কানে না তুলে জবাই করতে উদ্যত হয়েছিলাম। তখন আফিয়া একটু রেগে বলেছিল, আমি রান্না করতে পারবো না। যদি বাচ্চাগুলোকে জবাই করিস তাহলে আমি তোর সাথে আর কোনদিনও বিয়ে বিয়ে খেলবো না।
আমি বলেছিলাম, খেলবি না কেন?
আফিয়া বলেছিল, বাচ্চাগুলোর মায়ের কোল খালি করে বাচ্চাগুলোকে এখানে নিয়ে এসেছিস। তোর বুকে মায়া নাই। যার মায়া নাই তার সাথে আমি বিয়ে বিয়ে খেলবো না। তোরা বাচ্চাগুলোকে যেখান থেকে এনেছিস সেখানে ছেড়ে দিয়ে আয়।
আমি তখন আফিয়ার ভরাট গালের দিকে তাকিয়েছিলাম। আমার খুব রাগ হচ্ছিলো। শৈশবে আমি যখন কারো প্রতি রেগে যেতাম তখন তার গালে কামর বসিয়ে দিতাম। কিন্তু আফিয়ার ফর্শা মুখটা থমথমে হয়ে ছিল। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সেদিন মনে হয়েছিল, ও যদি আমার সাথে আর বিয়ে বিয়ে না খেলে তবে খুব মজার একটা খেলা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবো। তাই আমি বলেছিলাম, চল রাজীব, ও যখন বলছে তখন বাড়ি চলে যাই। পিকনিক করবো না।
রাজীব একটু চিন্তা করে বলেছিল, আমাকে বাচ্চাগুলো দিয়ে দে। আমি আমাদের বাড়ি নিয়ে যাই। বাচ্চাগুলো আমি পুষবো।
আফিয়া বলেছিল, তুই চালাকি করছিস। তোদের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তুই তোর মাকে রান্না করে দিতে বলবি।
রাজীব বলেছিল, ঠিক আছে, তোরা জিনিসপত্রগুলো নিয়ে চলে যা। আমি কিছুক্ষণ পর বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আসছি। একসাথে গেলে সবাই ধরা পড়ে যেতে পারি।
আফিয়া বলেছিল, তাহলে আমরা বাচ্চাগুলো নিয়ে যাই। তুই জিনিসপত্রগুলো নিয়ে পরে আসিস। শোন, তুই যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস তাহলে বিয়ে বিয়ে খেলার সময় তোকে কিন্তু বরযাত্রী হতে দেব না। তখন তুই দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের বিয়ে বিয়ে খেলা দেখিস।
রাজীব কোন উপায়ান্তর না পেয়ে আমাদের সাথেই বাড়ি যেতে রাজী হয়েছিল।
বাচ্চাগুলোর গা মুছে দিয়ে আবার ব্যাগে ভরে বাড়ি গিয়ে চুপি চুপি ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে সিলিং এ উঠে জায়গামতো রেখে দিয়েছিলাম।
এর কিছুদিন পরই আফিয়ার নিউমোনিয়া হয়েছিল। বাচ্চাগুলোকে আমার শৈশবের খেলার সাথী আফিয়া বাঁচাতে চাইলেও নিজে বাঁচতে পেরেছিল না। অনেক চেষ্টার পরও সবাইকে কাঁদিয়ে ও স্তম্ভিত করে দিয়ে সে চলে গিয়েছিল সেখানে যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায় না।
তাকে চিরশায়িত করার জন্য নিয়ে যাওয়ার পূর্বে শেষবারের জন্য তার মুখটি দেখার মুহূর্তে আমিও সেখানে ছিলাম। ভরাট মুখে ছিল না একটুও প্রাণ, পান্ডুর মুখখানা নিথর হয়ে ছিল। মুখের রং একটু কালো হয়ে গিয়েছিল।
আমাদের চেয়ে বয়সে বড়রা গাব গাছে উঠে পাকা গাব খেত। আমরা খেতে চাইলে দু একটা দিত। সেই গাব খাওয়ার সময় আমি একবার একটা গাবের বিচি গিলে ফেলেছিলাম। দুষ্টামি করে একজন আমাকে বলেছিল যে আমার পেটের ভিতরে ঐ বিচি থেকে গাব গাছ জন্মাবে। গাছটা যখন বড় হবে তখন পেট ছিদ্র করে বাইরে বের হয়ে আসবে। এ কথা শুনে আমি খুব দুর্ভাবনার মধ্যে নিমজ্জিত হয়েছিলাম। কয়েকদিন ধরে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করেছিলাম। আফিয়াকে বিষয়টা জানালে সে খিল খিল করে বাঁধভাঙ্গা হাসি দিয়ে বলেছিল, তুই এত বোকা! বিচি তো পেটের ভিতরে গিয়ে হজম হয়ে গেছে। ওর কথা শুনে আমার ভাবনা দূর হয়ে গিয়েছিল।
বর্ষাকালে আমাদের এলাকায় নদীর পানি চলে আসতো। বাড়ির পাশে, গ্রামের অদূরের মাঠ পানিতে থৈ থৈ করতো। আমার স্কুল শিক্ষক বাবা দূপুরের পর নৌকা নিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় আফিয়াকে ডেকে এনে নৌকায় চড়তাম। মাচালের উপর বসে আমন ধানের ক্ষেতের ভিতর দিয়ে নৌকা চলার সময় ধান গাছের পাতা ছিঁড়তাম।
নৌকার সাথে সাথে ফড়িং উড়ে চলতো। আমরা সুযোগ বুঝে আঙ্গুল দিয়ে দু একটা ধরেও ফেলতাম। দূর থেকে যখন দেখতাম সামনে শাপলা ফুল ফুটে আছে তখন নৌকার কিনারে গিয়ে ওঁত পেতে থাকতাম। নৌকা কাছাকাছি যেতেই চলন্ত নৌকায় বসে খপ করে ধরে টান দিতাম। নৌকা দুলে উঠতো আর আমার বাবা ধমক দিত। শাপলা ফুল গোঁড়া থেকে উপড়ে উঠে আসতো। আবার দু একটা মাঝখান থেকেই ছিঁড়ে যেত। এসব করে খুব আনন্দ পেতাম।
বর্ষার পানি যখন কমতে কমতে বাড়ির পাশের হালটে হাঁটু পানি অবশিষ্ট থাকত তখন মাছ ধরার জন্য একটা পদ্ধতি ফলানো হত। হালটের এক জায়গায় চার/পাঁচ হাত দূরত্বে দুইটা বাঁধাল দিয়ে পানি আটকে দেওয়া হত। আর বাঁধালের মাঝখানের পানি সেঁচে ফেলা হত। মাছ চলাচল করার সময় বাঁধালের কাছে এসে বাধাপ্রাপ্ত হত। তখন লাফ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো। আর তখনই দুই বাঁধালের মাঝখানের শুকনো জায়গায় গিয়ে আটকে পড়তো। এভাবে কিছু মাছ জমা হলে সেগুলো ধরে আনা হত।
আমার বাবা একবার বাঁধাল দিচ্ছিলেন। আমি আর আফিয়া সেখানে ছিলাম। এটা ওটা করছিলাম। আফিয়া হেসে মজা করার জন্য আমার গায়ে পানি ছিটিয়ে দিয়েছিল। হঠাৎ করে গায়ে পানি এসে পড়ায় আমি ওর মজাটা বুঝতে না পেরে রেগে গিয়ে ওকে থাপ্পড় মেরেছিলাম। ও তখন ব্যথা পেয়ে জোরে কান্না শুরু করে দিয়েছিল। আঙ্গুল দিয়ে চোখ ডলছিল। আমার বাবা তার কাজের মাঝে এ রকম অনাকাংখিত ঘটনায় রেগে গিয়ে আমার কান ধরে প্রায় শুন্যে তুলে অনেক উঁচুতে বাড়ির উপরে নিয়ে রেখে এসেছিলেন। আর আফিয়াকে হাত দিয়ে আদর করে বলেছিলেন, কাঁদিস না, কাঁদিস না।
ওর কারণে আমাকে কান ধরা খেতে হয়েছিল বলে আমি ওর উপর প্রচন্ড ক্ষেপে ফোঁস ফোঁস করছিলাম।
ওর সাথে কয়েকদিন কথাবার্তা বন্ধ ছিল। আমি ওকে খেলার জন্য ডাকতে যাচ্ছিলাম না, সেও আসছিল না।
অবশেষে একদিন আমাদের বাড়ির নারিকেল গাছ পরিষ্কার করার সময় ডাগুর কাটা হলে আমি নারিকেল গাছের পাতা দিয়ে বাঁশি বানাচ্ছিলাম। আফিয়া আমার কাছাকাছি এসে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি ওর সাথে কথা বলছিলাম না। বড় একটা বাঁশি বানানো শেষ করে বাঁশির জোড়া যাতে খুলে না যায় সেজন্যে শলাকা দিয়ে বাঁশির গোড়ায় দুইপাশ ছিদ্র করে আটকে দেওয়ার জন্য আমি এ দিক ও দিক তাকিয়ে শলাকা খুঁজছিলাম। আফিয়া সেটা খেয়াল করে দ্রুত সামান্য দূর থেকে একটা শলাকা এনে আমার সামনে ধরেছিল। কিন্তু মুখে কিছু বলছিল না। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে খুব মায়া জন্মেছিল। তাই আমি শলাকাটা নিয়েছিলাম। ওর উপর থেকে কয়েকদিনের পুষে রাখা রাগ এক নিমেষে দূর হয়ে গিয়েছিল। ওকেও একটা বাঁশি বানিয়ে দিয়েছিলাম। তারপর বাঁশি বাঁকিয়ে গরুর শিং এর মত করে বাড়ির পাশের রাস্তায়, রৌদ্রতপ্ত দিনে গাছতলায় মুক্ত বাতাসে বসে আমরা বাঁশি বাজিয়েছিলাম। আফিয়া বাঁশিতে একটা করে ফুঁ দিয়েই হেসে আমার দিকে তাকিয়ে তার মজা পাওয়া জানান দিয়েছিল।
আফিয়ার চিরবিদায়ের কিছুদিন পূর্বেও আমি আর সে আমাদের বাড়ির উঠোনের এক কোনে ঘর বানিয়েছিলাম। ঘরের খাম ছিল বাঁশের কঞ্চি। আর ছাউনি দিয়েছিলাম কলাগাছের পাতা দিয়ে। বদনায় করে পানি এনে আফিয়ার হাতে দিয়ে আমি ঘরের ভিতরে চট বিছিয়ে শুয়েছিলাম। সে একটা টুলের উপর দাঁড়িয়ে ঘরের ছাউনির উপর পানি ঢেলে দিয়েছিল। কিছুটা পানি ভিতরে প্রবেশ করায় প্রমাণ হয়েছিল ঘর বানানো নির্ভুল হয়নি। তাই পুনরায় ভালো করে কলার পাতাগুলো বিছিয়ে দিয়েছিলাম।
আফিয়া আবার পানি ঢাললে তা প্রবেশ না করায় গৃহ নির্মাণের পারদর্শিতায় গর্বিত আমি ভিতর থেকে বাইরে এসে বলেছিলাম, হুররে, পানি পড়েনি, পানি পড়েনি।
আফিয়াও খুশী হয়ে বলেছিল, আমি একটু শুই? তুই পানি ঢাল?
আমি ওর পিঠে আলতো ধাক্কা দিয়ে বলেছিলাম, যা।
সে শুয়ে পড়লে আমি পানি ঢেলে দিয়েছিলাম। সে ভিতর থেকে বলেছিল, সত্যি সত্যি ঘর হয়েছে একটা, একটুও পানি পড়ছে না।
তারপর সে বাইরে বের হয়ে এসেছিল।
সেদিন সে ঘর থেকে বের হয়ে এলেও তার কিছুদিন পর তাকে এমন ঘরে রেখে আসা হয়েছিল যে ঐ দিন গালে হাত দিয়ে বসে আমি ভেবেছিলাম আফিয়া বের হয়ে বলবে না, এ ঘরটা ভালো হয়নি, একেবারে অন্ধকার।
আফিয়াকে কবর দেওয়া হয়েছিল তাদের বাড়ির একাংশে। সেখানে ধুলা পতিত হয়। কুকুর, বিড়াল, মুরগী সেখানে হাঁটাহাঁটি করে। কদাচিৎ দু একজন মানুষের পাও জায়গাটাকে হয়তো স্পর্শ করে।
তার বাবা-মা, ভাইবোনদের মুখে আফিয়ার নাম আমার না শুনতে পারা এবং মৃত্যু দিবসে আফিয়ার ব্যাপারে তাদের নির্লিপ্ততা আমাকে বুঝিয়ে দেয় যে আফিয়ার শারীরিক অনুপস্থিতির কারণে তাদের মন থেকে সে বোধহয় চিরতরে মুছে গেছে।
কিন্তু মানুষের মনে একজন মানুষের বিরাজমানতা তথা অম্লানতা কি তার শারীরিক উপস্থিতি বা বেঁচে থাকার উপর নির্ভর করে?
আমি তো চোখ বুঁজে যখন শৈশবে অবগাহন করি তখন ঠিকই ঘুমের ঘোরে স্বপ্নের বাস্তবতার মতো আফিয়াকে দেখতে পাই। হাফ প্যান্ট পরা আফিয়ার কোমড়ে গোঁজা কাঁচা আম বের করে কামড় দিতেই আমের কষ মুখে লেগে যেত। উৎফুল্ল মুখে দৌড়ে আসার সময় তার চুল ঝাপটা মারতো তার কানে, ঘাড়ে। গোল্লাছুট খেলার সময় সে দৌড়ে ছুঁতে আসতো আমায়।
ঐ তো, ঐ তো সে! আমার হৃৎপিন্ড থেকে ধমনী দিয়ে প্রবাহিত রক্ত কনিকার স্রোতে সে তো সাঁতার কাটছে। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারবো তাকে। মুদিত পাতার নীচে আটকানো চোখ কিন্তু কল্পনার দৌরাত্মে আমার সৃষ্ট ভুবনে সেই আটকানো চোখ থেকেই তো আমার অনুভবের দৃষ্টির আলো বের হয়ে তাকে দেখছে।
মস্তিষ্কের এক কোষ থেকে লাফ দিয়ে আরেক কোষে সে যেন যাচ্ছে, খেলছে আর পৃথিবীর সবচেয়ে দামী পারফিউমের চাইতেও মূল্যবান ও মানসম্পন্ন তার পরিশ্রান্ত শরীরের সুগন্ধি ঘাম যা পৃথিবীর কোন উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ও কোন প্রযুক্তিই তৈরী করতে পারবে না সেই ঘামের গন্ধ আফিয়ার কবরের পাশে দন্ডায়মান আমার নাকে ঢুকে চোখে বইয়ে দিচ্ছে অশ্রুর বন্যা যে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে যে মাটির গৃহে সে ঘুমিয়ে আছে সেই মাটিরই কোলে।
১৮ আগষ্ট - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
২৭ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.৫৫
বিচারক স্কোরঃ ৩.১৫ / ৭.০
পাঠক স্কোরঃ ২.৪ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪