রাতের শব্দ

রাত (মে ২০১৪)

দীপঙ্কর বেরা
  • ১১
  • ২৮
সে রাতটা খুব মনে পড়ে গোপলার। একটা রাত বদলে দিয়েছিল অনেক কিছু । মাধুরা বাসস্ট্যান্ড আর বাজার ছেড়ে নেমে ফিরছে তাদের বাড়ির রাস্তা ধরে । একটুও আলো নেই । সাড়ে আটটা বাজে । রাস্তার দু দিকে কিছুটা মাঠ আর কিছুটা খাল । এই মাটির রাস্তায় এক পা এক পা এগিয়ে চলছে । আবছা আলোর প্রভা । চোখ সয়ে গেছে । দূরে দূরে কোথাও কারেন্ট আর কেরোসিনের কুপী জ্বলছে । আন্দাজ করে চলতে হচ্ছে । পায়ে চটিটা তত শক্তপোক্ত নয় । তার উপর দিন তিনেক আগে কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে রাস্তা এবড়ো থেবড়ো । এখন শুকিয়ে পায় লাগছে ।
দূরে টর্চের আলো দেখে থমকে দাঁড়ায় । সঙ্গে যেতে পারবে । টিউশন করে টর্চের টাকা যোগাড় করতে পারে নি । টর্চ বাঁকা রাস্তায় চলে গেল । মাধুরা বাজার থেকে অনেকে বাড়ি ফিরে তারা সব আটটার আগেই ফেরে । আজ পঞ্চাদার সঙ্গে কথায় কথায় দেরি হয়ে গেল । তবে উনার ছেলেকে পড়াবে এ মাস থেকে । কিছু টাকা আসবে । হঠাৎ শব্দ । থমকে দাঁড়ায় ।
প্রায়ই মাঠ আর খাল থেকে গ্রীষ্মের সময় নানান পোকা মাকড় ওঠে আসে । পিছনে তাকাল না কেউ আসছে না । গ্রামের মানুষ কেন যে এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে কে জানে ? আর তারা করবেও বা কি ? যাদের টি ভি আছে তারাও ন’টার সিরিয়াল শেষ হলেই মস্ত ঘুম । রাস্তার ধারে বাড়ি আছে তা অনেকটা দূরে ।
দাঁড়ালে হবে না । পায়ের শব্দে শুনেছে পোকামাকড় সরে যায় । যদি ভূত হয় । মাস খানিক আগে মরে যাওয়া মহেশ দাদুর মুখটা মনে পড়তেই শিরদাঁড়া বরাবর কি যেন শির শির করে নেমে গেল ।
সবে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে গোপলা । তত ভয় কাটিয়ে ওঠার সাহস জন্মায় নি । রাত জেগে ঘরে বই পড়া এক ব্যাপার আর এই মাঝরাস্তায় অন্ধকারে লড়াই অন্য ব্যাপার ।
দু চার বার দুপ দাপ করেই এগিয়ে গেল । না ! আর শব্দটা পাওয়া যাচ্ছে না । জোরে দৌড় দিল । আন্দাজে যেন অলিম্পিক দৌড়চ্ছে । চেনা রাস্তা অচেনা হয়ে গেল । কয়েক পা গিয়ে লাগল ধাক্কা । সামনে আবছা অন্ধকারে চোখ সয়ে যাওয়া দৃষ্টিতে কাকে যেন দেখল কিন্তু নিজেকে দাঁড় করাতে পারল না । ভেসে এল আঁধার আওয়াজ – কে , কে রে ?
গলা শুনেই গোপলা বুঝে নিয়েছে পাড়ার রাশভারী বিমলকাকু । - কি তাড়া করছে , ভূতে প্রেতে না ......।
দাঁড়ালেই বিপদ । সারা গ্রামে হাসির পাত্র হবে । আর বিমলকাকুর যা দাপট তাতে গোপলার বারোটা বাজবে । চট করে তাই মনে হতে নিজেকে সামলে আরো কয়েক পা এগিয়ে গেল ।
পেছনে চিৎকার – কে রে ? ধর বেটাকে ধর ? আমাকে ধাক্কা । আমার সব ফেলে দিয়ে কে পালাল ।
অন্ধকার এই সুবিধা । চিনতেই পারে নি । আর এই চিৎকার শুনেই এক এক কোলাহলে সব ঘরের বাইরে চলে আসবে । তাই আর দাঁড়ানো ঠিক নয় । গোপলা চলতে লাগল । একটা ঘোরের মধ্যে ঘরে পৌঁছল ।
মা বলল – গোপলা এত হাঁপাছিস কেন ? পড়ানো তো কখন শেষ এত দেরী হল ।
গোপলা উত্তর দিল - মা অন্য কাজে , ওই সময় লাগল । দাও খেত দাও তো ।
খেয়ে দেয়ে শোয়ার সময় একটা গণ্ডগোল লেগেই ছিল । দূরে দূরে ওই ওরে মার ধর এ সব আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল । রাস্তায় যেতে যেতে কেউ বলছিল দুষ্কৃতি এ দিকেই এসেছিল । এ সব শব্দ কথা । আজ কাল প্রায়ই শোনা যায় । কেউ পাত্তা দেয় না । গোপলার মা বাবা দাদা দিদি কেউ পাত্তা দিল না । কিন্তু বিমলকাকু চিনতে পেরে নাম বলে দেয় নি তো । তাহলে ......। ভাবতে ভাবতে গোপলার ঘুম কেটে যাচ্ছিল । মাটিতেই বিছানা । মশারী টাঙানো । তাও কিসের যেন শব্দে গোপলা উঠে পড়ে । অন্ধকারে বসে থাকে । কাছে বইয়ের তাক । পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার জন্য অগোছালো । তাছাড়া চেয়ে চিনতে পাওয়া স্পেসিমেন কপি । অনেক ছিঁড়েও গেছে । আবার বেশ স্পষ্ট শব্দ হল । কমিয়ে দেওয়া কুপীর শিখা বাড়াতেই দেখে একটা কালো সাপ । কত রাত কে জানে ? বাইরের সেই সব পাটি গত মারামারি দখল ঘর জ্বালানো নানান শব্দ আরো জোরালো হচ্ছে ।
গোপলা সবাইকে ডাকল । তার মধ্যে মা আর দাদা শুধু দেখেছে । আর কেউ দেখে নি । যার ভয়ে রাস্তা থেকে দৌড়ে এল সেই কি আবার ঘরে চলে এল । ভয়ে বুক কাঁপতে লাগল । বিমলকাকু আবার পাটি আনবে না তো ।
অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ভাল করে আশপাশে গর্তও পাওয়া গেল না । সাপটা কোথায় কে জানে । গ্রামে এ রকম হয় তাই কেউ অত গুরুত্ব না দিয়ে আরামে ঘুমিয়ে পড়ল । কেন না সাপের লেখা আর বাঘের দেখা হলেই মৃত্যু । আর মানুষের সাথে কি ? গোপলা জনে না ।
ভিতরের শব্দ বন্ধ কিন্তু বাইরের শব্দ বেড়েই চলল । দিন দিন দেশের হল কি ? মানুষ আর গরু ছাগলে কোন তফাৎ নেই । রাত হলেই শুরু একের উপর অনেকের আঘাত । সে আবার পরের দিন আঘাত পায় । এ ভাবে চক্রাকরে ক্ষমতা দখলের লড়াই । বলি সাধারণ । যেন চারিদিকের সেই কালো মত চোখ গোপলাকে জড়িয়ে ধরছে । কিছুতেই নিশ্বাস নিতে পারছে না । গোঁ গোঁ করে ঘুম ভেঙে দেখে সকাল ।
চারিদিকে জটলা গত রাতে বিমলকাকুকে ‘যুবমন’ ক্লাবের সামনে খাল পাড়ে ঠেলে দুষ্কৃতিরা মেরে ফেলে গেছে । গ্রামে বিমলকাকুর বেশ দাপট । অন্যায় দেখতে পারেন না । গ্রামের নানান কাজের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত । পুলিশ কাজ করছে । ধরা পড়বে দুষ্কৃতি।
শুনেই গোপলার হাত পা ঠাণ্ডা । অন্ধকারে সাপের ভয় আর দিনের আলোয় রাতের ভয় । এর মাঝে শুধু মাকে বলে গোপলা শহরতলীতে সেদিন বিকেলে ঘর ছেড়ে চলে গেল । লেগে গেল কারখানার লেবারের কাজে ।
ওখানকার খবর নেয় । গণ্ডগোল আরো বেড়ে গেছে । বিমলকাকুর কিছুই কিনারা হয় নি । আর হবেও না ।
তবুও সেই রাতের ভয়ে গোপলা গ্রামে ফিরেছিল বছর তিন চার পরে । বাবা মা পড়াতে চাইলেও এত বুদ্ধিমান হয়েও পড়াশুনা বন্ধই থাকে ।
আজও গোপলা সেই সব রাতের শব্দ কারখানার মধ্যেও বেশ শুনতে পায় । নির্জন বিশ্রামের রাতও কেমন বেহায়া হয়ে উঠছে ।
তাই এখন আর গোপলার ঘুমাতে কোন অসুবিধা হয় না ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফেরদৌসী বেগম (শিল্পী ) বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে দীপঙ্কর ভাই। অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
Gazi Nishad খুব খুব ভালোলাগা। আমার কবিতায় আমন্ত্রণ রইলো ভাই।
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
মিলন বনিক গল্পের গঠন প্রকৃতি আর বিন্যাস অপূর্ব সুন্দর এবং নান্দনিক....খুব ভালো লাগলো....
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু চমৎকার লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
হাবিব রহমান গল্পটার শুরুটা আর শেষটা একভাবে হয়নি, সুন্দর করে শুরু করে তাড়াহুড়া করে শেষ করলেন? কেন দূর্বৃত্ত্ব বা করা দূর্বৃত্ত্ব বিষয়টা ঘোলাই থেকে গেল। তথাপি সুন্দর গল্প.........
আরো কথা লিখতে গেলে হয়তো রাজনীতি এসে যাবে । বির্তক । খুব ভয়ে ভয়ে এ সব লেখা । রাত বড় ভয়ংকর , ।খুব ভাল থাকবেন । ধন্যবাদ ।
আপেল মাহমুদ ভালো লাগলো বেশ। ধন্যবাদ কবিকে।
খুব ভাল থাকবেন । ধন্যবাদ ,
ক্যায়স N/A UNION ALL SELECT NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL,NULL# বেশ উপভোগ্য ছিল গল্পটি দাদা। এত চমৎকার করে কিভাবে গুছিয়ে লিখেন! অনেক ভালোলাগা এবং শ্রদ্ধা রইল।
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
dilipkumar bandyopadhyay বিম কাকুর মৃত্যু আর গপ্লার ধাক্কা ঠিক মিলল না। কিন্তু উপভোগ্য
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
ছন্দদীপ বেরা Khub Sundar vabna . Asadharan.
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন চমতকার ভগ্য !! চমতকার লিখেছেন। শুভেচ্ছা রইল।
অনেক ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।

১৫ জুন - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৬৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪