পিছনের দিকে আমগাছে বেশ কয়েকদিন ধরে গোপলা লক্ষ্য করেছে টিয়া পাখি বাসা করেছে । আমগাছটা তাদের নয় । এখন প্রায় শীত কমে আসছে । আমে বকুলও আসে নি । বাসায় টিয়া ডিম পেড়েছে কি না ,না উঠলে জানা যাবে না । গোপলা এর আগে গাছে ওঠার চেষ্টা করেছে তাতে হাবু , পেলা , মৌ , তাপা এমন হেসেছিল যেন মনে হয় গোপলার গাছে রস পাড়া আঁকা ছবিটার মত । গাছে মানুষ না অন্য কেউ উঠছে না ঝুলছে বোঝার উপায় নেই । তাপসদা কি সুন্দর প্রায়ই গাছে উঠে যায় । তাই তাকে ধরেছিল - তাপসদা আমাকে গাছে ওঠা শেখাবে । তাপসদা খুব হেলাফেলা । গুরুত্ব দিল না । এমন ভাবে বলল - এইভাবে এখানে চেপে ধরে উপরে দেখে নীচে একেবারে না তাকিয়ে উঠবি । আর ভঙ্গি করে গোপলাকে কাতুকুতু দিতে লাগল । - কি ব্যাপার গাছে কেন ? আদিবাসীদের মত গাছে উঠে বিয়ে করবি নাকি ? আরও এমনসব বলতে লাগল যে গোপলার কান লাল হয়ে গেল । ওর মা প্রায়ই বলে - আমার সোনার গোপাল । আমরা এবার একটা পাখি পুষব । একেবারে সবুজ । আমাদের জীবনও হয়ে খুব সবুজ সবুজ । গোপলা ভাবল সবুজ মানে টিয়া । তা এনে মাকে একেবারে তাক লাগিয়ে দেবে । অন্য কাওকে বললে সে নিয়ে নিতে পারে । তাই কাওকে বলা চলবে না । প্রাইমারিতে মিড ডে মিল খেয়েই ছুটি । ফিরেই সে প্রায়ই গাছটার কাছে গিয়েছে । হ্যাঁ অনেক পাখির সাথে টিয়াটা প্রায়ই থাকে আর কিচমিচ করে । বাচ্চা আছে কি না কিছুতেই ঠাহর করতে পারল না । খুব একটা উঁচু নেই । ওঠা যাবে । তবে কবে ওঠা যায় । একা । ফাঁকা দেখে । ভাবতে ভাবতে সময় কাটছে । সামনের রবিবারের দুপুরে প্রায় অনেকে এই হাল্কা গরমে বিশ্রাম নেয় । চাষের কাজ কম থাকে । গোপলা মার পাশ থেকে আধো ঘুম থেকে উঠেই ছুটে পৌঁছে গেল । এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বুকটা ধড়াস ধড়াস করতে লাগল । না আজকে উঠতেই হবে । কিছু পাখি আছে । টিয়া দেখা যাচ্ছে না । গাছটা বেড় দিয়ে ধরা গেল । হাতে হাতে ঠেকে নি । তবে তাপসদার মত উঠতে লাগল । কয়েকবার পরেই একটা শক্ত ডাল হাতে পেল । ধরেই ফেলল । তাতে চাপ দিতেই আমগাছের বাকলে গেঞ্জিটা গেল ছিঁড়ে । বাবা এবার পুজোয় অনেক কষ্ট করে মার পছন্দ মত কিনে দিয়েছিল । দাম বেশি পড়েছিল বলে বাবা মা কিছু নেয় নি । তা হোক পাখির ছানা দেখলে মা কিছু বলবে না তাই গোপলা পা তুলে উপরে উঠে পড়ল । বুকের ধড়াস ধড়াস কমে গেছে । আর একটা ডাল পেরলেই সে যেন এভারেস্টে উঠতে পারবে এমন ভাব করে উপরে ডাল ধরে উঠে গেল । আরো দু বার উঠেই প্রায় পাখির বাসার কাছে পৌঁছে গেল । অন্য পাখিরা গাছের দোলায় খুব খুব কিচিরমিচির করছে । গোপলা ঝোপের মত আমগাছের অভীষ্ট বাসার পৌঁছে গেল । জয় সে জয় করে ফেলেছে । এবার পতাকা পুঁতবে । দেখে বাসায় কয়েকটা পালক আর কিছু ডিমের খোসা । নেড়ে ঘেঁটে দেখল যদি কোথাও পাখির বাচ্চা থাকে । না কোথাও নেই । মনটা বিষাদে ভরে গেল । মাকে কি দেখাবে ? এবার নীচে তাকিয়ে দেখে মাটি অনেক নীচে । কি করে নামবে ? তাপসদাকে জিজ্ঞেস করা হয় নি কিভাবে নামতে হয় । হাতের ডালটা আরো চেপে ধরল । মুখ দিয়ে একটা চিৎকার বেরিয়ে এল কিন্তু কেউ শুনতেই পেল না । যদি পড়ে যায় বিজন মাস্টার মশাইয়ের দেওয়া বুদ্ধির অঙ্ক সে ছাড়া ক্লাসে আর কে করব ? মার পাশে বসে রামায়ণের অন্যরকম ছড়ায় বলা গল্প কে শুনবে ? বাবার হাত ধরে বাজারে গিয়ে আলু সবজি কেনা দেখার মজা কে নেবে ? ভাবতে ভাবতে নীচে দেখা গেল তাপা । কেঁদে কেঁদে বলল – এই , আমাকে একটু নামিয়ে দে না আমি তোকে বড় মাঞ্চ দেব । সে ভূত দেখার মত করে খুব চিৎকার জুড়ে পালিয়ে গেল । ব্যাস । গড়িয়ে পড়া রোদ ভরা দুপুরে ধীরে ধীরে লোক জড় হল । মৌ , হাবু পেলা এমন কি মাও এসে গেল । সবাই গোপলার কান্নায় খুব মজা করছিল । মৌ-এর সামনে গোপলার প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে গেল । কিন্তু গোপলার মা বুঝে তাপসদাকে বলতে সে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মত উঠে গোপলাকে হাসতে হাসতে ধরে নামিয়ে আনতে সাহায্য করল । তাপসদা বলতে লাগল – কবে বড় হবে ? থর থর করে কাঁপছ কেন ? এইটুকু গাছে উঠতে পার না ? আর কেন উঠেছিলে ? গোপলা কোন উত্তর দেয় নি । এমন কি রাতে বাবার বকা সত্ত্বেও মার পাশে বসে চুপ করে নিজের কৈশোর পরখ করছিল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান
অনেক মিষ্টি গল্প। আমিও অনেকবার গাছ থেকে পড়েছি। আমাদের অনেক বড় একটা বরই গাছ ছিল ওটা থেকে মা আমাকে নিজে একবার নামিয়ে এনেছিলেন। গল্পটা পড়ে আমারও কিশোরবেলার কথা মনে করে দেয়ার জন্য লেখককে ধন্যবাদ।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।