দুপুর বাজার থেকে রঙ্গিন মাছ কিনে এনেছে । অ্যাকোরিয়াম এর ভেতেরে আরও কিছু আগে থেকেই আছে । রঙ্গিন মাছগুল সংখ্যায় দশ। এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মাছটা দুপুর নিজের নামে রেখেছে । দুপুরের মা দুপুর না থাকলে ছোট মাছটাকে ডাকে। দুপুর সাড়া দেয়...
দুপুরের আজ কাজ আছে।
রিপন সকাল সকাল তৈরি হচ্ছে, আজ রিপনেরও কাজ আছে । জয় ফোন করলে বাইরে বেরোবে । রিপন এর ছোট বোন তিতির । তিতির এখন বাড়িতে নেই ,তিতির বেশিরভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকে । রিপন খোঁজ পায়না।
জয় দুট ফলস ক্লিক করে দেখে নিল ক্যামেরা ঠিক আছে কিনা । রিপন আর দুপুরকে নিয়ে আজ মন্ত্রি সাহেবের সভায় যাবে । জয় পেশাদার ফটোগ্রাফার । নিজের পরিচয়ে ওদের কে নিয়ে ঢুকবে । সাধারণ কেউ হলে ঢোকার পারমিশন নেই ।
সভা শুরু হবে, সবার সিকিউরিটি চেক চলছে । জয়, দুপুর আর রিপনের চেক হবে না । জয়কে সবাই চেনে, পাঁচ বছর তিলে তিলে নিজেকে বিশ্বস্ত করে তুলেছে । সভার সামনের দিকে তিন জন গিয়ে বসল।
আশেপাশে প্রচুর রিপোর্টার । মন্ত্রী সাহেব এখন আসেননি । অভ্যাসবশত সবাই অপেক্ষা করছে। ভিভিয়াইপি দের ভাষণের জন্য আমারা সবাই অপেক্ষা করে থাকি।
রিপনের মোবাইলে তিতির এর ম্যাসেজ এসেছে-
কাজ হলে ফিরে আসিস... একসাথে সবাই মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরা দেখব। একসাথে...
দুপুরের মা ফোন করেছে-
তাড়াতাড়ি ফিরিস... সাবধানে থাকবি । দুপুর কে আমি খওয়ার দিয়েছি... বৃষ্টি আসলে ভিজিস না যেন...
জয় ওদের জানাল-
আসছে...
মিনিট দশেক আগে দেশ স্বাধীন হয়েছে এ বছরের মত । প্রত্যেক বছরে একবার করে হয়..
একদম সামনের দিকে বসে থাকা রিপোর্টারেরা খাতায় কলমে তৈরি , খানিকটা পিছিয়ে শ'তিনেক রঙ বেরঙের জমা কাপড় হাতে তাল ঠোকার জন্য তৈরি । ষ্টেজে সাদা উর্দি আর কালো চশমায় মন্ত্রী সাহেব উপস্থিত।
মন্ত্রী সাহেব আগে দুধের ব্যবসা করতেন । সবাই জানে, আজকে উনি কিছু বলবেন;খুব মূল্যবান কিছু দেশের কথা, দশের কথা...ভিড়ের মধ্যে উনিশ বছরের রিপন ঐ কথার টানে এসেছে । মন্ত্রী সাহেব কাগজে পারফিউম ছেটাচ্ছেন, ঐ কাগজ থেকে আজ কে রাশি রাশি সুগন্ধি কথা ফুটবে । জয় খুব দক্ষতার সঙ্গে মন্ত্রী সাহেবের ছবি তুলছে , একটা মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেল দিয়ে তুলে রাখার প্রচেষ্টা । মন্ত্রী সাহেবের সামনে মাইক এগিয়ে দেওয়ার জন্য বেশ একটা হুড়োহুড়ি উঠল । এনারাও সাদা পোশাক পরেছেন । জয় এদেরও ছবি তুলছে , হাজার হোক এনারা ভদ্রলোকের দুধের ব্যবসায় সমান অংশীদার!
মাইক কাছে টানার আগে নমস্কার করলেন। দুপুর মুখ ঘুরিয়ে জয় এর দিকে দেখল। জয়, দুপুর আর রিপন কে দেখল... ভদ্রলোক বলতে শুরু করলেন-
"আজ আমাদের দেশের..."
দুম করে একটা আওয়াজ...
আর একটা-দুম...
এর পর আরও...
এদিক ওদিকে লোক ছোটাছুটি শুরু করেছে, সাদা পোশাকগুলো বেশ লাল রঙ্গে টকটক করছে । আমি আপনি চেঁচিয়ে বললাম- "বোম!বোম! সন্ত্রাসবাদী... "
রিপোর্টারেরা দূরে সরে গিয়েও এক্সক্লুসিভ খবর ধরার চেষ্টা করছেন , ক্যামেরায় বন্দি করার চেষ্টা চলছে সম্পূর্ণ ঘটনা । যদিও সাদা পোশাকগুলো ছাড়া আর কারোর গায়েই লাল রঙের রেশ দেখা যাচ্ছে না, তবু লোক ছুটছে । মানুষগুলো বেশ ভীতু।
টিভি তে ব্রেকিং নিউজ এ দুপুর, রিপন আর জয় কে দেখা যাচ্ছে। ওরা কেউ কথা বলছে না, ওদের শুইয়ে রাখা হয়েছে মন্ত্রী সাহেবের পাশে। তিতির পল্লব এর ছবি বই এর ভাঁজ থেকে বের করে কাঁদতে শুরু করল । পল্লব এর এবার ভোটে দাঁড়ানোর কথা ছিল। সবাই জানত পল্লব এবার জিতবে । মন্ত্রী সাহেবও জানতেন... তিতির চারটে বিভিন্ন রঙের ট্যাবলেট গালে পুরে নিল । কাজ শেষ, আজকে সবাই এক সাথে মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরা দেখবে...
দুপুরে এর মা অ্যাকোরিয়াম এর সামনে দুপুর কে খাওয়ার খাওয়াচ্ছে... দুপুর সাড়া দিচ্ছে...
আমি আপনি দূর থেকে দেখছি, আর আফসোস করছি সাদা পোশাকে লাল দাগের জন্য।
- না হয় করত দুধের ব্যবসা, চোখে তো কালো চশমা লাগাত!
এই ভাবে প্রত্যেক বছর আমারা একবার করে স্বাধীনতা পাওয়ার চেষ্টা করছি , একবার করে দুপুর, রিপন, জয়'রা ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকছে মন্ত্রী সাহেবদের মূল্যবান কথা শোনার জন্য...
পল্লবরা ভোটে দাঁড়াচ্ছে...
তিতিররা একটু একটু করে সমুদ্রে মাছ ধরা দেখতে যাচ্ছে...
০৬ জুন - ২০১৩
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪