শূন্যে দিলাম চিঠি

বাংলার রূপ (এপ্রিল ২০১৪)

মোজাম্মেল কবির
  • ১৩
  • ২৩
বাবা, তুমি বলেছিলে -সোনা আমার, পুড়ে পুড়ে খাটি হও। রোদে পুড়ো বৃষ্টিতে ভিজো। সোনার অঙ্গ বেশী যত্নে পুষলে অন্তরাত্মার অপমৃত্যু ঘটে। আমি তোমার কথা শুনেছি বাবা। ভিটা বাড়ির জমি বিক্রির টাকায় আমাকে পবিত্র ভূমিতে পাঠালে রোজগার করতে। দেশে কাজের অভাব ছিলো না। তার পরও আমি রাজী হলাম। তুমি বলেছ বলে।
এই মরুভূমির মরিচিকায় আমি অন্তরাত্মার সন্ধান পেয়েছি। আরো কিছু শুধু খুজেছি, পাই নি- আমি মানুষ খুজেছি, শান্তি খুজেছি, মেঘ পানি ছায়া খুজেছি। পাই নি। বাবা আগে তুমি এই কথা গুলো শুনে খুব কষ্ট পেতে। এখন বলছি এই জন্য যে, এখন তোমার এই সব ঠুনকো বিষয় কষ্টের কারণ হবার নয় -এখন তোমার পৃথিবী অনন্ত অসীম।
জানো বাবা? মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমার সোনার বাংলাদেশে আল্লার সুদৃষ্টি, আল্লার রহমত অনেক বেশী। আমার দেশে -আল্লা মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই... বলে ডাকলে সাথে সাথে মেঘ বৃষ্টি ছায়া পাওয়া যায়। এখানে বুক ফাটিয়ে কাঁদলেও মেঘ বৃষ্টি ছায়া মিলে না।
এই পবিত্র ভূমির মানুষ গুলো বড় বেশী অহংকারী অথচ নির্বোধ। বেপরোয়া। ব্যবিচারী। মরু শহরের প্রাসাদ গুলো থেকে রাতের আধারে বাংলার হাজার হাজার নারীর আর্তনাদ ভেসে আসে। মধ্য রাতে পিতা পুত্রে মিলে যার সম্ভ্রম ভাগ করে খায়। আমার কথা কে শুনবে বাবা। বাংলার মেয়ে মানুষ গুলা বাসা বাড়িতে কাজ করতে কেন যে আসে এই দেশে! দেশে ফেলে আসা অবুঝ সন্তান সবুজ ধান ক্ষেতের দিগন্তে তাকিয়ে থাকে -মা এক দিন ফিরে আসবে। মা দেশে ফিরে যায়। কিন্তু এই পবিত্র মাটি তার শরীরের কতোটা পবিত্রতা কেড়ে নেয় কেউ জানে না।
বাবা, মা তো পড়তে জানে না। তোমার চিঠির খামে মার জন্য একটা চিঠি দিলাম। পড়ে শোনাবে মাকে। মাকে ছোট কালে তুই বলে ডাকতাম। বড় হয়ে যখন তুমি বলে ডাকার চেষ্টা করি কেমন যেনো পর পর লাগে। তুই বলেই লিখছি। মা খুশী হবে।
মায়ের কথা কিছুটা বলে নেই আগে। আমি সাত বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধের জন্য আঁচল ধরে ঘুর ঘুর করতাম। চাচি জ্যাঠিরা মাকে বলতো -তিতা মাখো, এতো ডাংগর ছেড়া বুকের দুধ চায়! মার বুকে দুধ নাই তবুও তিতা মাখে নাই। সন্তানের সাথে প্রতারণা হবে বলে। এই না হলে কি আমার বাংলার মা! বাংলার জমিন যেমন কোটি কোটি সন্তানের আহার যোগায় নিজের বুকের রস নিংড়ে। ফসলের জমি টুকরা টুকরা হয়। বছর বছর নতুন মুখ বাড়ে। বাড়ি ঘর উঠে, ইট কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে ফসলের মাঠ। বাংলা মায়ের বুকের দুধ শুকায় না।
মা, তুই কেমন আছস? বাড়ির উত্তরে খাল পাড়ে সাদা একটা বক ফুল গাছ আসিলো মনে আছে তোর? শীত কালে সকালের সোনা রোদ পড়তো! বক ফুল গাছের নীচে পাটিতে বসায়া আমার উদাম শইল্যে তুই সরিষার তেল মাইখ্যা দিতি! পশ্চিমে বাঁশ ঝাড়, খাল পাড়ে বিশাল বড় শিমুল গাছ। শিমুলের ডালে হাজার হাজার পাখি বসে কিচির মিচির করতো সকাল দুপুর সন্ধ্যা... মোয়াজ্জেমের ধানের ক্ষেতের উপর দিয়া শিমুল তুলা উইড়া যাইতো। ছোট কালে এক বার তোরে জিগাইছিলাম -মা, এই শিমুল তুলা কই উইড়া যায়? তুই আমারে কইছিলি -বিদেশ যায়। তখন আমার খুব ইচ্ছা হইতো -আমি যদি শিমুল তুলা হইতে পারতাম, তাইলে বিদেশ যাইতাম। মারে, শিমুল তুলা হওয়া খুব কষ্টের।
মরু ভূমির আকাশে ঝলমলা চাঁদ দেইখা ন্যাংটা ন্যাংটা লাগে। ফাল্গুন মাসে উঠানে পাটি বিছায়া কৃষ্ণচূড়া গাছের পাতার ফাঁক দিয়া তোর কোলে মাথা রাইখা চাঁদ দেখতে ইচ্ছা করে। তোর মুখে শুনতে ইচ্ছা করে -আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা... চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা... আচ্ছা মা, চাঁদ কি তোর মামা না কি আমার মামা?

মনে আছে তোর? বর্ষা কালে কলা গাছের ভেলায় ভাইস্যা বেড়াইতাম সারা দিন। খালই ভইরা পুটি মাছ নিয়া বাড়ি ফিরতাম সন্ধ্যা বেলা। পুকুর ঘাটে নিয়া আমার লেংটা পাছার মধ্যে দুই তিন টা থাপ্পড় দিতি। তার পর গায়ের কাদা ময়লা ধুইয়া দিতি।
তোর বুকে মুখ লুকাইয়া ঝিঝি পোকার ডাক শুনতে শুনতে আরেকটি বার ঘুমাইতে দে মা। আচ্ছা, তুই এখন যেই খানে আছস সেই খানে কি কোকিল ডাকে? বর্ষা কালে ব্যাঙ ডাকে? বাবা কি এখনো সন্ধ্যা বেলায় পাঞ্জাবীর পকেটে চকলেট নিয়া বাড়ি ফিরে?
আরেকটি বার জন্ম দে মা বাংলার জমিনে। জন্মের দেনা শোধ করতে বাংলার মাটি আকড়ায়া পইরা রইবো। কথা দিলাম আমি আর তোর আঁচল ছাইড়া কোথাও যাবো না মা।

........................


প্রেম যতটা সহজে প্রকাশ করা যায় বিরহ ততটা সহজ না। মোশাররফ প্রবাস জীবনে বাবা মা দুজনকেই হারায়। দেশ থেকে এক বার সংবাদ যায় বাবা নেই। আরেক বার মা। দিন চলে যায়। কবরের মাটি ছুঁতে না পারার কষ্টটাও এক সময় থাকে না। সে কষ্ট যে কতো গভীর তা ভাষায় প্রকাশ করে ভাগ করে দিতে পারে মানুষের মাঝে, এমন কবি লেখক পৃথিবীতে জন্মেনি আজো। বাবা মায়ের সাথে তার অনেক কথা বাকী ছিলো। কথা আছে বাংলার মাটি বাংলার জল আকাশ আর বাতাসের সাথে। সেই না বলা কথা গুলো প্রতি দিন এভাবেই চিঠির আকারে লিখে ভাসিয়ে দেয় আকাশের ঠিকানায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শামীম খান মন ছুঁয়ে গেল ভাই । ভাল থাকুন ।
এফ, আই , জুয়েল # অনেক সুন্দর একটি লেখা ।।
মোঃ মোজাহারুল ইসলাম শাওন কষ্ট না সুখ, কারণ গতব্য তো নির্দিষ্ট
মিলন বনিক মোজাম্মেল ভাই..সান্তনা নয়..সমবেদনা জানাচ্ছি...এমন কস্ট যেন কোনো সন্তানের না হয়...আপনার পাদটিকা দেখে মনে হলো এ নিছক গল্প নয়..এ যে বাস্তব কান্না...ভালো থাকবেন...প্রিয়তে রাখলাম...
আপনি সত্যি বলেছেন -এ নিছক গল্প নয়.... আপনার মন্তব্যের উত্তরে বেশী কিছু বলার নেই। ভালো থাকুন দাদা...
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) বেশ ভালো লাগলো গল্পটি । কাহিনী বিন্যাস চমৎকার ,শুভ কামনা রইলো লেখকের জন্য ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ রইলো আপনার জন্য...
Salma Siddika এত সুন্দর লেখা পড়লে চোখে পানি চলে আসে. আপনাকে ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা গল্পের জন্য, এটাকে গল্প বলা যাবে না, এটাই বাস্তব, প্রবাসীদের জন্য।
আপনার মন্তব্য পড়ে আমিও মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবো... ভালো থাকুন নিরাপদে থাকুন।
biplobi biplob Onak imotional golpoti. Ridoygrahi kotin basthobota.
নাফিসা রহমান বিরহের কথামালায় গাঁথা হৃদয়গ্রাহী একটি গল্প... এ যেন শত শত প্রবাসীদের নীরব আর্তনাদ ! ভালো লাগলো... শুভকামনা রইল...
ভালো লাগায় আনন্দিত আমি। ভালো থাকুন আপনি...
ওয়াহিদ মামুন লাভলু বর্ষা কালে কলা গাছের ভেলায় ভাইস্যা বেড়াইতাম সারা দিন। খালই ভইরা পুটি মাছ নিয়া বাড়ি ফিরতাম সন্ধ্যা বেলা। পুকুর ঘাটে নিয়া আমার লেংটা পাছার মধ্যে দুই তিন টা থাপ্পড় দিতি। তার পর গায়ের কাদা ময়লা ধুইয়া দিতি। চমৎকার লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
ওয়াহিদ ভাই ভালো থাকুন...
মোঃ আক্তারুজ্জামান বিরান বিভূঁই থেকে প্রবাসীর চিঠি বড় নিষ্ঠুর বাস্তবতা বহন করে এনেছে। হৃদয় ছোঁয়া শব্দমালা অনেক ভাল লেগেছে।
ভালো থাকুন আক্তার ভাই...

২৫ মে - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৪৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী