দেয়ালে ঝুলানো ফ্রেমে বাঁধা বাবার ছবিটা

বাবা (জুন ২০১২)

এস.কে.দোয়েল
  • ২৮
  • ৬৫
দেখতে দেখতেই ১৯টি বছর কেটে গেছে কেমন করে যেন,
চোখের পাতা ফেলতে ফেলতেই;
৬ বছরের শিশুটি আজ ২৫ বছরের যুবক,বিয়ে সংসার,
বাবা হতে চলেছে সেও প্রকৃতির চিরাচরিত নিয়ম ধারাতেই
অদ্ভুত কালের চক্র ঘূর্ণ্যমান সময়ের পাক পরিবর্তন
অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ ঘুরে ফিরে দেখায় সময়ের রুপালী পর্দায়
যাপিত জীবনের রঙিন-বেরঙিন ঘটনাগুলো।

১৯টি বছর ধরেই দেয়ালে ঝুলছে ফ্রেমে বাঁধা বাবার হাসিঝঁরা ছবিটা
চোখের পাতা পড়ে না এক মুহূর্তের জন্য,নির্বাক চাহুনি
সারাটা সময়ই নিষ্পলক দৃষ্টি নিয়ে জেগে থাকেন
ফ্রেমের ভিতর থেকে ছবির ভাষায় কথা বলে যান বাবা
বুঝিনা সেই নি:শব্দ বাক্যচারণ,শুধু দেখি বাবা অপলক চেয়ে আছে
১৯ বছর ধরেই।

পৃথিবীর বুকে রাত্রি নেমে আসলেই এখন বাবার বিছানাতেই ঘুমাই
কিন্তু বাবার সান্নিধ্য নেই,কয়েক বছর একেবারে পরিত্যক্ত ছিল ঘরটি
ঘর জুড়ে বাবাহীন এক শব্দহীন শূন্যস্থানের আর্তনাত
ঘরের দেয়ালে শেষ পর্যন্ত জায়গা হয়েছে ফ্রেমের ভিতর,
বিয়ের পূর্বে তোলা চাকরি জীবনের টাই পরা ছবিটা।

বাবা মাঝে মাঝেই আমার ঘুম স্বপ্নে এসে আকস্মিক হাজির হয়েই বলেন-
খোকা,এই খোকা কিরে এভাবে ঘুমালে চলবে
ওই দেখ ফজরের আযান হচ্ছে উঠে নামায পড়,কুরআন তেলোওয়াত কর
আমাকে দেখছি একেবারেই ভুলেই গেছিস,
চোখ মেলে দেখ আমি তোর বাবা,তোর শিয়রে দাঁড়িয়ে আছি
এই দেখো, ছেলে আমার কত বড় হয়ে গেছে,
কিন্তু ঘুম কাতুরের অভ্যাসটা ছাড়েনি।

ঘুমের ঘোরেই আরেকটা চমৎকার জগত আছে-স্বপ্ন জগত
বাবার মুখটি অনেক দিন পর হাসি টানা ঠোঁটে বিবর্ণ চেহারায় দেখলাম
চোখ দুটো দেবে গেছে নিচের দিকে,চোখের কোঁতরে ছোপ ছোপ কালো দাগ
মুখে ব্রণ ছিলনা,এখন আছে খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে বাবাকে
কোথা হতে যেন দু'দুটি আপেল আর কমলা নিয়ে এসেছেন,
মৃত্যুপুরীতে যে এসব আবাদ হয় তা আমার জানা ছিল না।


বাবা আপেল কাটেন,কাটার শব্দ শুনি খচকচ খচকচ...
ছোট ছোট টুকুরো করে একটি করে মুখে তুলে দেন সেই ৬বছরের,
কল্পনা করা শিশুকে এই ২৫ বছরের যুবকের মুখে,
আনন্দে খাই,ফের চোখের ভিতর ১৯ বছরের বাবা হারা জমিয়ে রাখা
শিলা খণ্ডের মত জমাটবাধা কান্নার প্রস্তর,
হঠাৎ করেই তুষার পাতের মত গলতে গলতে ঝর্ণায় উথলিত হতে থাকে
চোখের কিনার দিয়ে নদী হয়ে স্রোতের মত বইতে থাকে আনন্দ-বেদনার জল।

বাবা বিস্মিত হোন আমার চোখের কিনার দিয়ে কান্নার প্লবন দেখে
পকেটে রাখা ময়লাযুক্ত সাদা রুমালটা বের করে শুষে নেন কান্নার সমস্ত জল
কাঁদছিস কেন,পাগল কোথাকার;
আমি তোর মাঝেই জেগে আছি,জেগে থাকব
বাবা!
হ্যাঁ খোকা,মাঝে মাঝেই ছুটে আসি তোকে দেখতে,দেখে চলে যাই
নি:সঙ্গ কবরে অন্ধকার সাড়ে তিন হাত মাটির ঘরে শুয়ে থাকতে ভাল লাগেনা
তাই ছুটে আসি পৃথিবীর বুকে খানিক মুক্ত বাতাস উপভোগ করতে..।

আমি অবাক হই,মরলেও মুক্ত বিহঙ্গের মত পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ানো যায়!
বাবা তুমি চলে এসো তো; কবরে শুয়ে থেকে কোন কাজও পাওনা তুমি?
এই বিছানাতে ফের ১৯ বছর আগের মত ঘুমাতে শুরু করো,
আমার এক বছরে ছেলে নিশাত,তোমার নাতি,ওকে নিয়েই খেলাধুলা করবে
দেখ পাগল ছেলে কি বলে?
যে পৃথিবী থেকে একবার বিদায় নিয়েছে সে কি কখনো ফিরে?
যাই রে খোকা সময় হয়ে এলো,ফিরে যেতে হবে যেখান থেকে এসেছি
সময় হয়ে গেল মানে বলো কি বাবা! তোমার তো বাবা অফুরন্ত সময়
না-পাগল,জগতের প্রত্যেকটি সৃষ্টিতেই এক একটি ধারা রয়েছে।

বাবা চলে যেতে থাকেন,পরনে তার সাদা কাফনের ঢিলেঢালা গাউন
পিছন থেকে ডাকতে থাকি বাবা বাবা.........বাবা
বধির বাবা,আমার এ আর্তচিৎকার ডাক শুনে না সে,
হঠাৎ চোখের পাতা পরতেই দেখি বাবা নেই,সাদা আলোয় অদৃশ্য
চিৎকার করে কাঁদতে থাকি বাবা দাঁড়াও আমি আসছি
বাবার হদিস নেই,ঘর জুড়ে রাতের অন্ধকার
ঘুম ভাঙতেই দেখি সুবহে সাদিক ভোর
আবছা অন্ধকারে ড্রিম লাইটের নীল আলোয় দেখা যাচ্ছে
দেয়ালে ঝুলছে প্রতিদিনকার মত বাবার হাসিমাখা ফ্রেমে বাঁধা জীবন্ত ছবিটা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিলাঞ্জনা নীল অসাধারণ কবিতা বড় হলেও অপূর্ব..
বর্ষার ফোটা কদমের শুভেচ্ছা রইলো।
Lutful Bari Panna দীর্ঘ কিন্তু সুন্দর..
অসংখ্য ফুলের ঘ্রাণের শুভেচ্ছা জানবেন পান্না ভাই। ভালো থাকুন।
স্বাধীন এক জীবনে বাবা একেকটি শেষ না হওয়া উপন্যাস। সুন্দর হয়েছে।
ধন্যবাদ স্বাধীন ভাইয়া।
মোঃ আক্তারুজ্জামান আবেগী কথামালার কবিতা- খুব সুন্দর|
ধন্যবাদ ভাইজান। শুভেচ্ছা জানবেন।
মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস চমৎকার ভাবে কবিতায় বাবার রুপ ফুটিয়ে তুলেছেন। শুভ কামনা
সালাম জানবেন প্রিয় ফেরদৌস ভাই। অভিনন্দন।
সাইফ সাইমুম খুব ভালো লিখেছেন দোয়েল ভাই। শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ প্রিয় সাইফ ভাই।
মিলন বনিক দেয়ালে ঝুলছে প্রতিদিনকার মত বাবার হাসিমাখা ফ্রেমে বাঁধা জীবন্ত ছবিটা। অর্তিজরানো আবেগ..খুব সুন্দর হয়েছে..ভালো লাগলো...
সেলিনা ইসলাম আবেগ আর অনুভূতিতে ভরা কবিতা পড়ে জাগ্রত হল অনেক স্মৃতি ---সকল বাবার জন্য শান্তি কামনা করি ... ধন্যবাদ শুভকামনা
তানি হক চিৎকার করে কাঁদতে থাকি বাবা দাঁড়াও আমি আসছি বাবার হদিস নেই,ঘর জুড়ে রাতের অন্ধকার ঘুম ভাঙতেই দেখি সুবহে সাদিক ভোর আবছা অন্ধকারে ড্রিম লাইটের নীল আলোয় দেখা যাচ্ছে দেয়ালে ঝুলছে প্রতিদিনকার মত বাবার হাসিমাখা ফ্রেমে বাঁধা জীবন্ত ছবিটা।........অনেক অনেক সুন্দর একটি কবিতা ..ভাইয়াকে ধন্যবাদ ও সুভেচ্ছা ...
অসংখ্য ধন্যবাদ। তার সাথে বিনীত ভালোবাসা।

১০ মে - ২০১২ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪