আকাশ যেন আকাশ নয়! দুই দিকে সাদা মেঘের তীর আর মাঝখানে নীলের নদী।ওই নীল কি প্রশান্ত নীল! দূরে কোথাও ওই নীল যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে সাগরের ঢেউ খেলা জলের সাথে| তেজোদীপ্ত রোদ ম্লান হয়ে আসছে।বৈরিতা বেড়েছে সাগর জলের।সাগর মেতে উঠেছে তরঙ্গ খেলায়।বিকেলটা যেন বিষন্ন হতে চললো অজানা দুঃখবোধে কাতর হয়ে।ঝড়ো বাতাস বইছে।
সিল্কের নীল শাড়ী পড়া হেরন নিঃসঙ্গ চিত্তে অপলক চোখে চেয়ে আছে ঐ দূরে কোথাও যেখানে আকাশ পৃথিবীকে ছুঁয়েছে অপার মায়ায়। সাগর পাড়ের উদ্দাম বাতাস এলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে হেরনের খোলা চুলগুলো । মাঝে মাঝে ঢেউগুলো সাগর পাড়ে এসে আছড়ে পড়ে ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছিলো তার কোমল দুটি পা।
ধীর পায়ে নিঃশব্দে পাশে এসে দাড়ালো অরিন।
তখনো ঘোর কাটেনি হেরনের। নিষ্পলক চেয়ে আছে সাগর জলে। কি উচ্ছ্বাসে যে জলের ধারা নেচে যাচ্ছিলো শাব্দিক গর্জনে,সেই উচ্ছ্বাস নেই যেন তার।জীবন কি এমনই অচেনা ছন্দের কবিতার মতো ?
মিনিট দুই পর অরিন যখন জিজ্ঞেস করলো , হঠাৎ কি মনে করে ডাকলে ? ঠিক তখনই চমকে উঠলো হেরন।সম্বিত ফিরে পেয়ে বললো, ও আপনি ? কখন এলেন ?
উত্তর দেবার ইচ্ছেটা একেবারেই ছিলনা অরিনের। তবুও সৌজন্যবোধের খাতিরে উত্তর দিতেই হয়।“ এইতো এখনই” একটু থেমে আবার বললো “কেন ডেকেছো বলো ?
হেরন বললো “কিছু কথা ছিল আপনার সাথে”
আমার সাথে ?
হ্যা আপনার সাথে।
বলো কি বলবে?
হেরন ঘুরে দাঁড়িয়ে অরিনের মুখোমুখি হয়ে সিক্ত গলায় বললো ,আচ্ছা আপনি অসময়ে আমাকে এমন করে ডেকেছিলেন কেন? আমি যে তখন তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলাম। আমি যে তখন মেঘাচ্ছন্ন আকাশের মতো মেঘলা ছিলাম।
এখন কি মেঘ কেটেছে?
ভাঁজ হয়ে এলো হেরনের কন্ঠ।সে বললো, কেটেছে বৈকি! কিন্তু আমি যে ঐ দিগন্তের মতোই রিক্ত,চারিদিককার পৃথিবী সবটাই হাহাকারে মুখর।নৈঃশব্দের জল্ধারা আমাকে সিক্ত করে তুলেছে।রিক্ততার বিষন্ন সুরে আমি যে অস্থির ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
খানিক ক্ষোভ মিশ্রিত কন্ঠে অরিন বললো, এখনি জাগলে কেন? এখনো তো বসন্ত আসেনি, ফুলেরাও সুপ্ত সঙিন । তুমি জাগলে কেন? চারিদিক কেমন করে ছেয়ে আছে ঘন কুয়াশায়। দেখোনা মেঘের বলয় সূর্যকে আড়াল করে রেখেছে । এখনি কেন জাগলে তুমি?
বোঝাতে না পারার বেদনা প্রকট হয়ে উঠেছে হেরনের মনে । চেহারায় বিষন্নতার ছাপ। তারপর সে বললো,আমি কেমন করে বোঝাবো আপনাকে , এই হিমেলাভ কুয়াশার পর্দা ভেদ করেই আমার জীবনে বসন্ত ছুঁয়ে গেছে আলতো হাতে। এই বিষন্নতার মাঝেও অস্পৃশ্য সুর ছন্দ বেজেই চলছে।আমার এ বিরাগ আমাকে বিরহিনী করে তুলেছে।এ বিরহ অঙ্গারে আমাকে আর পোড়াবেন না প্লিজ।
অরিন বললো, সময় আমাকে হাসিমুখে উপেক্ষা করে ম্লান করেছিল আমার হাসিকে ।জীবন কি একই রেখায় বয়ে চলে ? নাকি জীবনের গতিপথ বিস্তৃত? এর সীমা মিশে গেছে অসীমে। ডানা ভাঙা পাখিটি আর্তনাদ করলেই কি, জীবন তো আর থেমে থাকেনা।
তা থাকেনা বৈকি !কিন্তু এর পরিধি এত গভীর যদি হবেই ,এর সীমা যদি নিঃ সীম হবেই তবে এত সহজেই কেন ঝড় উঠে? এত সহজেই কেন একের পর এক বজ্রাঘাত জীবন কে বিষের পেয়ালায় নিঃক্ষেপ করে বলতে পারেন?
অরিন খানিক উত্তেজিত হয়ে বললো, ডানা আছে বলেই পাখি উড়ে বেড়ায় , দূরের পথের হাতছানিতে অজানায় হারিয়েও যায়।তারপর হয়তো শিকারীর বাঁকা দৃষ্টিতে পড়তে হয়,এইতো।হেরন , কুয়াশা প্রাচীর হয়ে দাড়ালে কুয়াশাই দিগন্ত,কুয়াশার ওপার অদৃশ্যই থেকে যায় ।তাই বলে ওপার বলেও যে একটা পাড় আছে,সেটি ভুললে তো চলবে না।
হেরন বললো , বিশ্বাস করুন এ আপনার ভুল ধারণা।
একটু কাছে সরে এসে অরিনের চোখে চেয়ে সে আবার বললো , বিশ্বাস করুন আমি বুঝতে পারিনি প্রেম যে পাথরে ছাওয়া আকাশ নয়।আমি বুঝতে পারিনি প্রেম যে উন্মুক্ত আকাশের মতো এতটা স্বচ্ছ।ওই আকাশে মেঘ থাকা অনাকাঙ্ক্ষাই বটে! কিন্তু সে তো বিপর্যয় চায় না।
অরিন বললো , কিন্তু হেরন তবুও তো ফুল ঝরে যায়, তবুও তো বিষন্ন গোধুলি বেলায় পাখি কাঁদতে কাঁদতে নীড়ে ফিরে যায় । কেন এই অনাকাঙ্ক্ষিত যন্ত্রণা বলতে পারো? হেরন চমকে উঠে বললো , অরিন আপনি ! আপনি বিশ্বাস করুন আমি শত সহস্রবার নিজেকে এই প্রশ্ন করেছি কিন্তু কোন উত্তর আমি পাইনি। হয়তো জীবনের দুর্ভেদ্য সত্যকে আজো উপলব্দি করতে পারিনি । তাইতো ডেকেছি আপনাকে।
ম্লান সূর্যের আলোয় চারিদিকে সোনালী হলুদ আভা ছড়িয়ে পড়তে লাগলো ।
অরিন বললো, উপেক্ষার জ্বালায় আমি যে পুড়ে ছাই হয়েছি , কিন্তু আমি তো তা পারিনি । আমি তো স্মৃতিগুলোকে পদদলিত করিনি। সেই ফুলটি এখনো তেমনি আছে। হয়তো লাবণ্যতা হারিয়ে গেছে, হয়তোবা সজীবতা ম্লান হয়ে গেছে!
চমকে উঠলো হেরন! বললো, অরিন , ডাইরীর পাতায় লেখা আপনার সেই লাইন তিনটি আমার মনটা জুড়েই আছে।আমি এর প্রতিদান দিতে চাই অরিন । আপনি নেবেন না?
একটু সময় নিয়ে অরিন বললো , সে তো তুমি কবেই দিয়েছো?
অনুনয়ের স্বরে হেরন বললো , সে যে আমার অবুঝ মনের অবজ্ঞা ।
অবজ্ঞা মনের নিছক অবস্থাকে তুলে ধরে না, অবজ্ঞা সেতো অবজ্ঞাই।
এবার হেরনের দুচোখ ছেয়ে গেলো অশ্রুজলে । আর ঐ দিগন্তে চেয়ে দেখলে মনে হয় সূর্যের এক চিলতে লাল ভেসে আছে সাগরের শেষ সীমায় , যেখানে গিয়ে দৃষ্টি থেমে যায়। ঐ দিগন্ত থেকে চোখ ফিরিয়ে এনে অরিনের দিকে তাকাতেই তার চোখে পড়ে যায়, হেরনের কপোল গড়িয়ে অঝোরে ঝরছে অশ্রুধারা । হেরন বললো, প্লিজ আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না , প্লিজ।
ফুপিয়ে কাঁদার মতো কান্না ভেজা কন্ঠ হেরনের । অরিন হেরনের ডানহাত আলতোভাবে মুঠোয় নিয়ে মৃদুভাবে চপে ধরে বললো , হেরন তুমি বড্ড দেরি করে ফেলেছো ।
তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে অরিন হাঁটতে শুরু করলো। ততক্ষণে সূর্য ডুবে গেছে।
অরিনের যাবার পথে নিঃশব্দে চেয়ে আছে হেরন। ।
তারপর সেই দিগন্তে চেয়ে রইলো অবাক অপলক, যেখানে ডুবেছে সূর্য।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রিয় মানুষটি তাকে গ্রহণ করবে কি করবে না একথা নিশ্চিত না হয়েও যে প্রেয়সী লাজের আগল ভেঙ্গে ছুটে যায় তার ভালবাসার প্রাচুর্য্যের কথা না বললেও সহজেই বুঝা যায়। কিন্তু "বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না" প্রবাদ যে নারীদের ক্ষেত্রে খাটে সে নারী যেভাবে লাজের আগল ভেঙ্গে প্রিয় মানুষের কাছে ছুটে গেছেন সেটাই আমার গল্পের সাথে বিষয় সামঞ্জস্যতার প্রথম প্রমান।
আবার প্রিয় মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাখান হওয়া যেমনি অপমানের তেমনি লাজ লজ্জারও।
তাই বলবো, বিষয় সামঞ্জস্যতা বিবেচনার জন্য উপরোক্ত আলোচনা কাজে আসবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
২৪ জানুয়ারী - ২০১২
গল্প/কবিতা:
৩৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪