এক.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগর হতে পারেননি। স্বর্গগত বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে পারেননি বলে ঈশ্বরচন্দ্রের মনের ভেতর একটা দুঃখ বোধ রয়েছে। বাবার কথা মনে হলেই তার দুঃখ বোধটা জাগ্রত হয়। তার বাবার খুব ইচ্ছা ছিল তার ছেলে অনেক বিদ্বান হবে, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতই। তাই তার নামেই নাম। বাবা গত হওয়ায় মেট্রিকুলেশন পর্যন্ত কোন রকমে পড়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল তাকে। পড়ালেখায় খুবই ভাল ছিল ঈশ্বরচন্দ্র। ফিজিক্স এবং কসমোলজি (সৃষ্টিতত্ত্ব) ছিল তার পছন্দের বিষয়। কিন্তু পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারলেন না, সেই জন্য তার শিক্ষকদেরও মনখারাপ হয়েছিল খুব। দুই বোনের বিয়ে, আর ছোট ভাইটার পড়াশোনার খরচ যোগাতে গিয়ে নিজের জীবনের দিকে আর ফিরে তাকাতে পারেননি। তবে মৃত্যুর সময় বাবাকে দেয়া এই প্রতিজ্ঞাটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।
মফস্বলের একটা স্কুল। ঈশ্বরচন্দ্র তার অতি চেনা টেবিলটাতে বসে। এখানে সকলের কাছে কেরানী স্যর বলে তার পরিচয় । চাকুরী জীবনের শুরু থেকে এই স্কুলের এই কামরাতেই কেটে গেছে এতগুলো দিন। বড় বোন দ্বিতীয় বাচ্চাটা প্রসবের সময় মারা গেল। অন্য দুই ভাই বোন বিদেশ বিভুয়ে, বহুদিন দেশে আসা যাওয়া নেই। অধিকাংশ আত্মীয় স্বজন স্থায়ী ভাবে চলে গেছে ভারতে। এখন এই দেশে আপন বলতে তার এই স্কুল, তার নিজের কামরা আর তার আসবাব গুলো। তার মত এদেরও বয়স হয়েছে, বয়সের ভারে ক্লান্ত এরাও।
বাতেন স্যর উঁকি দিলেন। উনি এখানকার বিজ্ঞানের শিক্ষক। ফিজিক্স, কসমোলজিতে আগ্রহ আছে বলে ঈশ্বরচন্দ্রের পছন্দের শিক্ষক উনি। কিন্তু বাতেন সাহেবের এই বিষয়ে মোটেও আগ্রহ নেই। ছাত্র ছাত্রীদের কোন একটা বিষয় মুখস্থ করে আসতে বলেন। পড়া ধরেন, মাঝে মাঝে বেত্রাঘাত করেন। বেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাল শিক্ষক হিসাবে খুব সুনাম তার, প্রাইভেট টিউশনি করে আয় রুজিও বেশ ভাল। তিনি তার স্বভাব জাত উচ্চ স্বরেই বললেন, “আরে কেরানী স্যর আপনি এখনো এখানে? হেড স্যর আপনাকে খুঁজছে। সবাই আপনার বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য রেডি। আপনারই পাত্তা নেই। চলেন, চলেন।” হাতে কোন কাজ না থাকলেও ঈশ্বরচন্দ্র ইতস্তত হয়ে বললেন, “না মানে হাতের কয়টা কাজ...।” “আরে রাখেন আপনার কাজ, চলেন তো” বাতেন স্যর তার কথাটা শেষ করতে দিলেন না।
ঈশ্বরচন্দ্র চেয়ার ছেড়ে উঠলেন। মানুষ পুত্র সন্তানদের দিকে যেমন করে তাকায়, কামরা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে তেমন করেই ঈশ্চর চন্দ্র তার আসবাবপত্র গুলোর দিকে তাকালেন। আসলে তিনি তো মাসিক বেতনের জন্য আর এখানে কাজ করেন না। তার আর খরচ কি! ইতোমধ্যে যে পরিমাণ টাকা জমেছে তাতে তার বাকি জীবনের খোরপোষ হয়ে যাবে। অনেক বার ভেবেছেন হেড স্যরকে বলবেন কথাটা। বেতন দরকার নাই তাকে যাতে কাজ করতে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বলতে পারেনি। তিনি জানেন হেড স্যর তার পছন্দের একজনকে এই পদে বসাতে চান। এই জন্য যথেষ্ট দেন দরবার উনি করে রেখেছেন। কাজ বাকী শুধু কেরানী স্যরের বিদায় অনুষ্ঠান।
বিদায় অনুষ্ঠান শেষে বাড়ীতে ফিরতে দেরি হয়ে গেল। তার বাড়ীটার আশে পাশে কোন বাড়ী, ঘর নেই। নিকটতম বাড়ীটাও তার বাড়ীর থেকে অনেক দূরে। সেখানে বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকলেও তার বাড়ীতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তিনি অনেক ঘুরাঘুরি করেছেন। কিন্তু তার বাড়ীটা একটু বিচ্ছিন্ন হওয়ার করণে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি।
আজ অমাবস্যার রাত, অসংখ্য গাছগাছালি আর ঝোপঝাড়ে ঘেরা বাড়ী। ঘরে আলো দেয়ার মত কেউ নেই ফলে ঘুট ঘুটে অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল চারদিক। বিজ্ঞান মনষ্ক ঈশ্বরচন্দ্রের অবশ্য এতে কোন সমস্যা নেই। ভূতপ্রেতে তার কোন বিশ্বাস নেই বলে এরাও তাকে তেমন ঘাটায় না। ঘরে ঢুকে প্রথমে সলতেটাতে আগুন দিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। রাতের জন্য কোন খাবার নেই। রান্না করতেও মন করছে না। হাতমুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লেন।
শুয়ে শুয়ে ভাবলেন বিদায় অনুষ্ঠানটা কিন্তু বেশ হল, মনে হতেই তার চোখটা আবার ভিজে উঠল। দুই একজন শিক্ষক আর্দ্র স্বরে স্মৃতিচারণ করল। খুবই ভাল লাগল ঈশ্বর চন্দ্রের। শিক্ষকদের কাছ থেকে ধুতি, আর ছাতা টা নিতে গিয়ে চোখের পানি আটকে রাখতে কষ্ট হল।
দুই.
ইউ.এস.এ থেকে আজকে একটা পার্সেল এসেছে। পাঠিয়েছে তার ভাই সতিশ চন্দ্র। পার্সেলটা খুলে যেন আত্মায় পানি পেলেন ঈশ্বরচন্দ্র। সতিশ বেশ কয়েকটা জার্নাল আর কেন ক্রসওয়েলস্ এর লেখা একটা বই “লাইভস্ অব স্টার্স” পাঠিয়েছে। সতিশটা বেশ কাজের হয়েছে। ঠিক বুঝেছে তার কি প্রয়োজন, ভাইটার উপর ভীষণ খুশি হল। বিদেশে থাকলেও বেশ খোঁজ খবর রাখে সতিশ, অনেকবার সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেদাজেদি করেছে কিন্তু কিছুতেই রাজি হননি ঈশ্বর চন্দ্র। মাঝে মাঝেই সতিশ তার জন্য এস্ট্রোলজি, কসমোলজির উপর জার্নাল, নাসার জার্নাল বা এস্ট্রোলজির বা কসমোলজির উপর ভাল ভাল লেখকের বই পাঠায়। এখন থেকে নিয়মিত তার জন্য বই পাঠাতে বলতে হবে। বই আর জার্নাল গুলো নিয়ে বেশ কয়েকটা দিন পার করে দেয়া যাবে।
গত কয়টা দিন যে কি কষ্টে গেল তা আর বলার নয়। অবসর সময়টা যেন কাটতেই চায় না। সময় কাটে না বলে, স্কুলে গিয়ে বসে থেকেছেন কয়েক দিন। সব শিক্ষকরাই ব্যস্ত কেউ তার সাথে ঠিকমত কথাই বলেনি। হেড মাস্টার সাহেব তাকে ডেকে পাঠিয়ে স্কুলে আসতে নিষেধ করে দিলেন। বললেন স্কুল আড্ডার জায়গা না। তিনি আসলে নাকি স্কুলের কাজের ক্ষতি হয়। তারপরও তিনি স্কুলে গেলেন, তবে স্কুলের কম্পাউন্ডে না গিয়ে স্কুলের আস পাশ দিয়ে হেটে চলে আসলেন। দিনের এই সময় টুকু পার করাই কঠিন। কিন্তু রাতে সময়টা ভালই কাটে তার। আকাশের দিকে তাকিয়ে অসংখ্য তারার মাঝে হারিয়ে যান তিনি। ভালই হয়েছে, বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়া যায়নি, ঈশ্বরচন্দ্র ভাবেন বিদ্যুৎ থাকলে হয়তো আলোর বিভ্রমে পড়ে যেতেন। উজ্জ্বল আলোর প্রতি সহজাত দুর্বলতা আছে মানুষের। কুপির নিভো নিভো আলোর মোহকে সহজেই জলাঞ্জলি দেয়া যায়। উঠোনে মাদুর বিছিয়ে অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে তারা দেখেন। একটা টেলিস্কোপ থাকলে, খুব ভাল হতো। তার জমানো কিছু টাকা পয়সা আছে। স্কুল থেকেও কিছু টাকা পেয়েছেন। একটা টেলিস্কোপ কেনা যেতে পারে। কিন্তু টেলিস্কোপের দাম কত, কোথায়ই বা পাওয়া যায় এ বিষয়ে কোন ধারণা নেই তার। জার্নালে ছাপানো মেগা টেলিস্কোপি ক্র্যাব নেবুলা, ব্ল্যাক নেবুলা, ছাড়াও অন্যান্য নেবুলার ছবি গুলোকে কি ভয়ংকর সুন্দরই না লাগে। অসংখ্য রঙের শৈল্পিক বিন্যাস যেন নিপুণ তুলিতে আঁকা ছবি। কার আঁকা ছবি এগুলো? স্রষ্টার?
আজকে কেন ক্রসওয়েলস্ এর বইটাতে একেবারে ডুবেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। সৃষ্টি জগতের বিস্ময়কর উপস্থাপনে বরাবরের মতই অভিভূত হচ্ছিলেন। এই বিশালতার মাঝে খোঁজার চেষ্টা করছিলেন, ঈশ্বরের অস্তিত্ব। ফিজিক্সের উপর আর কসমোলজির উপর অনেক পড়াশোনা করেছে বলে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে মনে সংশয় আছে তার। কিছু মতান্তর থাকলেও বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায় বস্তুত ঈশ্বরের স্থান নেই। সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে শূন্য থেকে। এক সময় কিছুই ছিলনা। এডউইন হাবলের বিশ্বজগতের বিস্তার বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে হল লেমেৎরর্ এর বিগ ব্যাং থিউরি মতে এক মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এই সৃষ্টি জগত, আজ থেকে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে। তারপর ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হয়েছে, এখনও হচ্ছে ৭৪.২ কি.মি/সে./মেগাপারসেক হারে। শূন্য থেকে এই বিশাল জগত? আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের বিস্তার কতটুকু তাই চিন্তা করা যায় না। ৩০০-৪০০ বিলিয়ন তারকা রাজি আছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে, তার মধ্যে কত শত নক্ষত্রের সৌরজগতের মত নিজের এক একটা বিস্তার।
মিল্কিওয়ের মত আছে আর কত শত গ্যালাক্সি। এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির আয়তন মিল্কিওয়ের চাইতে অনেক বড়। কি বিশাল এই সৃষ্টি জগত। যদি সৃষ্টিকর্তা থেকেই থাকে, তবে কেন এই সৃষ্টি, কি তার উদ্দেশ্য? আকাশে অসংখ্য তারার দিকে চোখ বুলিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র ভাবলেন, কত অসংখ্য। এদের মাঝে কত গুলো আছে ২০০-৩০০ আলোক বর্ষ দূরে। অর্থাৎ যে আলোটা দেখা যাচ্ছে তা ২০০-৩০০ বছরের পুরানো বিকিরিত আলো। এই আলোটুকু বিকিরণের পরে ২০০-৩০০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। যেই সব তারা গুলোকে এখন দেখা যাচ্ছে হয়তো তার মধ্যে কারও কারও এখন আর অস্তিত্ব নেই। সবকিছুর মতই তারাও মৃত্যু হয়। আমাদের রেড জায়েন্ট, সূর্যও একদিন মরে যাবে। কি হবে তবে পৃথিবীর? এখন পর্যন্ত যে ব্যাখ্যা গুলো প্রচলিত, তা হচ্ছে মৃত্যুর আগে আকারে বাড়তে থাকবে সূর্য। বাড়তে বাড়তে বুধকে গ্রাস করে নিবে, তারপর পৃথিবীও হারিয়ে যাবে সূর্যের গহ্বরে, যদি তার আগেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে না যায়। তারপর থেমে যাবে বিশাল এই অগ্নিকুণ্ড। অন্ধকার জগতে সূর্যের অন্যান্য গ্রহ গুলো আগের চক্রে বাধা পরে থাকবে। একই ভাবে চলতে থাকবে অসীম সময়....।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন মনে করতে পারছেন না ঈশ্বরচন্দ্র। ঘুম ভাঙ্গল কিনা বুঝতে পারছেন না, নাকি এখনো স্বপ্ন দেখছেন? দেখতে পাচ্ছেন চারদিকে বর্ণালী আলোচ্ছ্বটা, ক্র্যাব নেবুলার মত....শুনেছেন স্বপ্ন নাকি সাদা-কাল হয়, কিন্তু তিনিতো রঙ গুলো সহজেই চিনতে পারছেন। তবে কি এটা স্বপ্ন নয়?
একটা কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠলেন ঈশ্বরচন্দ্র। কিন্তু শব্দের উৎস কোথায় তা আন্দাজ করতে পারলেন না। মনে হচ্ছে যেন তার মাথার ভেতরেই শব্দটা উচ্চারিত হয়েছে। নির্ভীক ঈশ্বর চন্দ্র একটু ঘাবড়ে গেলেন মনে হয়। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, কে, কে কথা বলে?”
- আমি ঈশ্বর।
- মানে কি? আমিই তো ঈশ্বর।
- তুমি ঠিকই বলেছ, যেহেতু তুমি আমারই অংশ সেহেতু তুমিও ঈশ্বর। তবে আমি হচ্ছি ঈশ্বর যাকে তোমরা স্রষ্টা বল।
- ভগবান!
- যে কোন নামেই ডাকতে পার।
- তবে তুমি আছ?
- না থাকার পেছনে তোমার কোন যুক্তি আছে?
- আমার জানা নাই। কিন্তু বিজ্ঞান তোমার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে। আমি সেই জ্ঞান থেকেই বললাম। তুমি নিশ্চয় আমাকে ক্ষমা করে দেবে?
- তোমাদের এই পর্যন্ত প্রাপ্ত এবং বিশ্লেষণযোগ্য জ্ঞানই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের যুক্তিও ভুল নয়। ক্ষমা করা বা না করার কোন বিষয় নেই।
- তুমি কি তবে নেই! তাহলে তুমি কি? তুমি কি বিভ্রম?
- বিভ্রম হচ্ছে জ্ঞানের অনুজীব্য।
- কোনটা ভুল, এই পর্যন্ত প্রাপ্ত বিশ্লেষণযোগ্য জ্ঞান না তুমি?
- কোনটাই ভুল নয়। শোন তুমি এই বিভ্রমে আঁটকে যেও না। যতক্ষণ এটা বিভ্রম এটাকে তুমি অসীম ধরে নিতে পার। অসীম মানে হল, ইনফিনিটি। এর কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। যার শেষ নেই কিন্তু পূর্ণাঙ্গ (something that has no end, but which is already fully formed)।
- ব্যাখ্যা নেই বলছ কেন, এটাইতো ব্যাখ্যা।
- হ্যাঁ ব্যাখ্যাটা তোমার প্রশ্নের আমি ভুল, না বিজ্ঞান ভুলের মতই।
- আমার মনে হচ্ছে তুমি আসলে কিছুই না, আমার মনের ভেতরের বিভ্রম।
- তোমার মনের ভেতরের বিভ্রম আর তুমি একই সত্ত্বা। আমি যে কথা বলছি সেটা তুমি নিজে বলছ না তবে তো আমি একটা আলাদা সত্ত্বা।
- যাই হোক, তুমি আমার কাছে কি চাও?
- তুমি কি মনে কর তোমার কাছে আমার চাইবার কিছু আছে?
- আমি দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা কর।
- ক্ষমা করা বা না করার কিছু নেই। তুমি প্রচলিত ধর্মগ্রন্থের পদ্ধতি অবলম্বন করছ।
- যেহেতু ধর্ম গ্রন্থে তোমার অস্তিত্ব সম্পর্কে বলা আছে সেহেতু সেই প্রেক্ষাপটেই ভাবছি।
- সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে তোমার অনেক জ্ঞান তৃষ্ণা আছে, তুমি কি আমার কাছে কিছু জানতে চাও?
- আমার জানার চাইতে পৃথিবীতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ আছে যারা এই জ্ঞানের অন্বেষণে রয়েছে, তাদের জানাই তো অধিক প্রয়োজনীয় হবে। আমি জানলেও সেই জ্ঞান তেমন ভাবে প্রকাশ করতে পারবো না। এটা মানব কল্যাণে লাগবে না। জ্ঞানটা তুমি তাদেরকেই দিতে পার।
- বিজ্ঞান একটা বিকশিত ধারা। জ্ঞান ক্রমান্বয়ে পুঞ্জীভূত হয়, বিশ্লেষিত হয় এবং সন্নিবিশিত হয়। জ্ঞান অর্জন করতে হয়।
- তবে তুমি কেন আমাকে সেই সুযোগ দিচ্ছ?
- কারণ তুমি এই জ্ঞান পৃথিবীর জ্ঞান ভাণ্ডারে সন্নিবিশিত করতে পারবে না।
- তাহলে কি আমি বেঁচে নেই?
ঈশ্বর চন্দ্র উত্তরের জন্য অপেক্ষা করলেন। কোন উত্তর না পেয়ে আবার একটু উচ্চ স্বরে জানতে চাইলেন, “তবে কি আমি বেঁচে নেই?” তথাপি কোন উত্তর পেলেন না ঈশ্বর চন্দ্র কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “তবে এই জ্ঞানের কোন প্রয়োজন নেই আমার।”