স্কুল ছুটি হয়েছে আধা ঘন্টাখানেক হয়ে গেলো। কামাল আর তার বন্ধু রফিক বাড়ি ফেরার পথে মেঠো পথে পা বিছিয়ে সামনের বিস্তৃত সবুজ ধান ক্ষেতের দিকে চেয়ে গল্প করছে। রফিকই বক বক করছে বেশি আর কামাল কেবল মাথা নেড়ে কিংবা হু হাঁ করে উত্তর দিচ্ছে আর অবারিত সবুজের সৌন্দর্য দেখছে। এক সময় রফিকই বলে উঠলো
- কি রে মেলা সময় অইছে। ল, বাড়ি চল।
কামালের কিছুতেই এই সৌন্দর্য ফেলে রেখে বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে না। সে জবাব দিলো
- তুই যা, আমি আইতাছি।
আইতাছি বলেও ও অনেকক্ষণ সেখানেই বসে থাকে। তারপরে একা একা সারা পথ ঘুরতে ঘুরতে বাড়ি ফিরে। শৈশবে এরকম প্রায়ই হতো বন্ধুরা যখন খেলা বা আড্ডা নিয়ে মেতে থাকতো ও তখন প্রকৃতির সৌন্দর্য অবলোকনে তন্ময় হয়ে পরে রয়েছে। ওকে খুঁজতে খুঁজতে পাওয়া যেত তাল গাছের নিচে বসে রয়েছে। কখনো খুব মনযোগে বাবুই পাখির বাসা বানানো দেখছে। গ্রামে দেখার কিছুর অভাব নেই। জমিতে কৃষকের লাঙ্গল নিয়ে খেলা, ধানের ক্ষেতের সবুজ রঙের ঘাস নিড়িয়ে দেয়া। এখানে বন জঙ্গল, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় আর প্রবাহমান নদী। এইসব ছেড়ে ও কখনও কোথাও যাবে না।
বইয়ের পাতায় কবিতা আর গল্পের মধ্যে ও মিশে যায় গভীর মুগ্ধতায়। ঝড়ের তান্ডবে গাছগুলো যখন ঘাড় বেকিয়ে কোমর দুলিয়ে নাচ শুরু করে তখনো ওর ভালো লাগে, তেমনি ঝমঝমাঝম বৃষ্টিতে ও ভাবুক হয়ে যায়। শরতের মেঘমুক্ত আকাশে ওর ইচ্ছে করে দূরের সাদা পেজা তুলোর মতো মেঘদের সাথে উড়ে উড়ে চলে যায় দিগন্ত ছাড়িয়ে। বাংলার মাঠ ঘাট ওকে যেন শুধু ডাক দিয়ে যায় ওদের সাথে সাথে দূর অজানায় চলে যাওয়ার।
দিনে দিনে সেই প্রকৃতি প্রেমে ভাবুক ছেলেটা স্কুলের গণ্ডি পেরুলো। মেধাবী ছাত্র বলে গ্রামের স্কুল থেকে মেট্রিক শেষ করে শহরে ভালো কলেজে পড়ার ডাক এলো। ঢাকায় বড় ভাইয়ের কাপড়ের ব্যবসা। সেখানে থেকে পড়াশুনা করবে। মাঝে মাঝে ছুটি-ছাটায় দোকানে গিয়ে বসবে। কিন্তু গ্রাম ছেড়ে যে যেতে কিছুতেই মনে সায় দেয় না। এদিকে বাবা আর বড় ভাইয়ের আদেশ অমান্য করারও উপায় নেই।
তাকে রাজধানী শহরে পাড়ি জমাতে হলো ঠিকই কিন্তু ইট কাঠ পাথুরে শহর ওর আর আপন হয়ে উঠে না। নটরড্যাম কলেজের দুটো বছর যেন কিছুতেই যেতে চায় না। গ্রীষ্মের ছুটি অথবা অন্য কোন বড় ছুটিতে আর সব ছাত্ররা যখন পড়া কিছুটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বইতে মুখ ডুবিয়ে রাখে তখন কামাল ছুটে যায় বাংলার আনাচে কানাচে কোন জায়গাটা তার দেখা হয়নি। তার একটা ছোট্ট জীবন দিয়ে দেশের সমস্ত কোনাকাঞ্চি দেখে নেবার সাধ পুরো করতে পারবে তো!
বাংলার রুপ ওকে শহরে বেঁধে রাখতে পারে না। বার বার মেঠো পথ, ক্ষেতের আইল, কাশ বনের ঝোপ, নদীর কিনারে ওকে ডেকে নিয়ে যায়। চোখ বুজলেই ওর মনে ভেসে ওঠে গ্রামের সৌন্দর্য। চোখের সামনে ঋতুর পালাবদল এত সুন্দর করে আর কোথাও সেরকম চোখে পরে না। শিশিরে ঘাসে ভেজা পথ, গাছে গাছে অবিরাম ঝরা পাতার খেলা, পাখিদের সশব্দে উড়ে যাওয়া। চোখের সামনে আরও ভেসে ওঠে মাঠে মাঠে নানা জাতের ধান কাটার দৃশ্য এবং আলু, সর্ষে, মুগ, মসুর, ফুলকপি, বাধাকপি, শিম, পেয়াজ, রসুন ইত্যাদি সবজিতে বাড়ির আঙ্গিনা, শুকনো ডোবা ও বিলের শাপলা ভরা সৌন্দর্য, পুকুরের হাঁটু ময়লা পানিতে ছোট বাচ্চাদের ছোট ছোট মাছ, ব্যাঙ্গাচি ধরার খেলা। গায়ের বধুয়ার কলসি কাখে নদীর ঘাটে যাওয়া। কুয়াশার ভোরে গাছির কাঁধ থেকে নামানো খেজুরের রসের হাড়ি থেকে টাটকা রস খাওয়া। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা ওকে গেয়ে গেয়ে ডেকে নিয়ে চলে...
‘তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়।
এই ডাকেই কখনো দলবেঁধে বন্ধুদের সাথে করে চলে যায় মাওয়াতে। পদ্মার পারে বসে দেখে সারি সারি নৌকা পাল তুলে এক পাড় থেকে আরেক পাড়ে দিগন্তে গিয়ে মিশে যাচ্ছে। ইস ও যদি মানুষ না হয়ে নদীর জল হতে পারতো! তাহলে নদীর পানি থেকে প্রভাতের, দিনের, রাতের আকাশের পরিবর্তন সারাদিন দেখে চোখ জুড়াতো! এক মোহনা থেকে আরেক মোহনায় মিশে যায়।
প্রকৃতির সৌন্দর্যের সাথে তার এই প্রেম তাকে খুব ছোটবেলা থেকেই করে তুলেছে প্রকৃতি প্রেমিক। কলেজের পরীক্ষার পর যখন প্রথম বিভাগে পাশ করলো তখন বড় ভাই ওর হাতে তুলে দিলো ডিজিটাল ক্যামেরা। ওর প্রকৃতি প্রেমের কথা কে না জানতো। ক্যামেরা পেয়ে কামালের এই প্রকৃতির প্রতি প্রেম আরও এক প্রস্থ বেড়ে গেলো। ও তখন গ্রাম বাংলা চষে বেড়ায়। ছুটে যায় বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। আর সে সব জায়গার ছবি তুলে রাখে।
শীতের সময় জাহাংগীর নগরে অনেক প্রবাসী পাখি উড়ে আসে। দল বেঁধে বন্ধুদের নিয়ে সেই শীতের পাখি দেখতে ও ঢাকা থেকে রওয়ানা হলো। কতরকম নাম জানা না জানা পাখির দল লেকের পাড়ে শুয়ে বসে আছে। হাসের ঝাঁক লেকের পানিতে গোসল সারছে। দেশী বিদেশী বকের সারি শাপলা ফুলের পাতার ফাঁকে ফাঁকে বসে রয়েছে মাছ শিকারের জন্য। দিনভর পাখি দেখে দেখেও কামালের কিছু ক্লান্তি নেই। একটা ডাহুক পাখিকে দেখে বাসা ছেড়ে চুপচাপ ঘাসের উপরে বসে আছে।
কখনো কামাল শুধু ঝোপঝাড়ে ঘুরে বেড়ায়। নাম না জানা ফুলের ছবি তুলে।
আবার কখনো কখনো বেরিয়ে পরে বিভিন্ন ট্যুরিস্ট দলের সাথে। এক একবার দশ পনেরো দিনের যাত্রায় বেরিয়ে পরে। কখনো যায় দেশের উত্তরে। কখনো দক্ষিণে। কখনো বা পশ্চিমে। দেখতে দেখতে দেশের অনেক সুন্দর আর বিখ্যাত জায়গাই দেখা হয়ে গেছে।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার সাংগু নদীর উজানে মারমা বসতি। রোমাক্রি থেকে হেঁটে হেঁটে ঘন্টা তিনেক পেরুলে আশ্চর্য সুন্দর এক জলপ্রপাত, নাম তার নাফাখুম। পানি প্রবাহের ধারার দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। সূর্যের আলোয় যেখানে খেলা করে বর্ণিল রংধনু। ভরা বর্ষায় তার রূপ আরও অপরূপা হয়ে ওঠে। শীতকালে পানির প্রবাহ কম থাকে বলে অত সুন্দর লাগে না। মূল সৌন্দর্য বর্ষাকালেই।
একবার দেখা হলো বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত রাতারগুল বন। সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সি এন জি নিলো। কিছুদূর গিয়ে আর যেতে না পেরে মেঠো পথে হাঁটা ধরলো। যেতে যেতে ওদের সাথে কয়েকটা গরুও হাঁটা ধরলো। গরু আর মানুষে এক সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হেঁটে চলা। পাশের জলাভূমিতে একটা দুটা ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় মাঝিরা দাড় বাইছে। কিছুক্ষণ হেঁটে পৌঁছে গেলো ওরা রাতারগুল বনে যাওয়ার জন্য যে নৌকা নিতে হয় সেই ঘাটে। দর দাম করে তিনশ টাকায় ঠিক হলো। আটজনে দুটি নৌকায় চেপে বসলো। জিজ্ঞেস করে করে জানতে থাকলো কামাল এক একটা খালের নাম। ক্রমে চেংগীর খাল পার হয়ে যখন মূল বনের দিকে ঢুকে গেলো চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে মুগ্ধতা জড়ালো। চারিদিকে সবুজ গাছ পানি থেকে উঠে গিয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে। আর মাঝখানে সবুজ জলের অপরূপ সৃষ্টি। বাংলার গভীরে গভীরে এত সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে বুঝাই যায় না। নানা বৈশিষ্ট্যমন্ডিত এই মিঠাপানির জলাবনটির অধিকাংশ জায়গাই উদ্ভিদ দিয়ে ঘেরা। হিজল, অর্জুন, ছাতিয়ান, গুটিজাম, পিঠালী গাছ এমনকি বটগাছ ও রয়েছে এই বনে। ঘুরতে ঘুরতে কামাল দেখলো গাছের ফোকড়ের ভেতরে সবুজ রঙা কি যেন পেঁচিয়ে রয়েছে। ছবিটা তুলে নিলো। পরে জানতে পারলো এটা একটা সাপ। কি অদ্ভূত সুন্দর সবুজ তার গায়ের রঙ। জলে ভরা এই বনে সাপের আবাস বেশি। এছাড়া আরও দেখলো সাদা বক, মাছরাঙ্গা, টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ি আর বাজপাখি আরও কত নাম না জানা পাখি।
এর পরে ডিগ্রি পাশও করা হয়ে গেলে ওকে ভাইয়া ব্যবসায়ের কাজে পাকাপোক্তভাবে বসতে বললো। কিন্তু অতদিনে ও আরো লাগামছাড়া হয়ে গেছে। এখন ও নিয়ম করে সারা বছর এক একটা অভিযাত্রী দলের সাথে দেশের একেক দিকে ছড়িয়ে পরে। ঘর-বাড়ি ওর জন্য নয়। দোকানের কাজে মন বসাতে পারেনা বেশিদিন। তিন চার দিন দোকানে বসে তো সপ্তাহখানেক পাত্তাই পাওয়া যায় না। কোথায় কোথায় হারিয়ে যায়।
ফেরে আবারও কিছুদিন পরে। এভাবেই ছন্নছাড়া চলতে থাকলে বাড়ি থেকে বিয়ে করিয়ে দেয়। বিয়ে থা হলে বুঝি ছেলের এবার মনটা ঘরেই থিতু হবে। কিন্তু সারা দেশটাই যেখানে রূপের আসর বসিয়ে ওকে ডাকছে সেখানে এক পল্লী রমণী কি ওকে বেঁধে রাখতে পারে! ক্যামেরাটা সাথে নিয়ে নতুন নতুন জায়গায় পাড়ি জমায়। আর বাড়ি ফেরে অপরিসীম আনন্দ নিয়ে। বাড়ি ফিরে বউকে ছবিগুলো দেখায়। দিনে দিনে বউয়েরও গা সওয়া হয়ে যায়। প্রথম দিকে বউ আর সবার মতই বিরক্ত হতো। ঘরের বউকে রেখে কোথায় কোথায় চলে যায়। এ আবার কি রকম? কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বুঝে ফেলে, মানুষটা এরকমই। বরং যখন ওকে বিভিন্ন জায়গার ছবি দেখায় তখন ও বলে, “বাহ, আমাদের দেশটা এত সুন্দর!” এই শুনে তখন কামাল গেয়ে ওঠে...
‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না কো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি!’
এবার বাড়ি ফিরে বউকে ছবি দেখাচ্ছে। আর মাঝেমাঝে কাহিনী শুনাচ্ছে। পাশে বসে বউ মুগ্ধ হয়ে শুনছে। “বুঝলা বউ, এইবার আমি গেছিলাম একটা অনেক বড় গ্রাম দেখতে। নাম কি জানো তার?” বউয়ের উৎসুক জিজ্ঞাসা নজর চোখে পরতেই কামাল বলে উঠে পুনরায়-“হবিগঞ্জের বানিয়াচং হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্রাম। অপরূপ সুন্দর এই গ্রামটিতে কত যে সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। কমলারানীর সাগর দীঘি, রাজবাড়ি, দাড়া-গুটি এমন সব দর্শনীয় স্থান। বুঝলা বউ, একটা নদীর নাম শুনে তুমি হাসতে হাসতে পেট ফুইটা মরবা। নদীটার নাম কি জানো? শুটকী!”
তারপরে একটা ছবির দিকে দেখিয়ে বলে- “দেখো বউ, এই ছবিটা। শুটকি নদীর ধারে ছোট ছোট মেয়েরা শাক তুলতেছে। এরপরে দেখো, কতগুলো ছেলে পাশে দাঁড়িয়ে ঘুটে কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। টুকরি বেঁধে ঘুঁটে কুড়িয়ে নিয়ে যেতে এই প্রথম দেখলাম। তাদেরকে দাড় করায়ে ছবি তুলিছি।”
ক্যামেরাতে কত কত ছবি। এক একটা করে ছবি দেখায় আর বক বক করতে থাকে কামাল। সারা রাত্রি ধরে বউকে তার প্রকৃতি প্রেমের দোসর বানিয়ে গল্প শুনিয়ে চলে। “এই দেখো বউ, এটা দেখছো? চিনছো? এটার নাম হইলো জোড়া ঝর্ণা। কিওক্রাডং পাহাড় আছে না, তার চুড়া পেরিয়ে সামনে পরবে পাসিং পাড়া। পাসিং পাড়া থেকে আকাবাঁকা বিপজ্জনক খাড়া পাহাড় বেয়ে প্রায় দুই ঘন্টার পথ হাঁটলে পাহাড়ীদের গ্রাম সুংসাং পাড়া । সুংসাং পাড়া থেকে জোড়া ঝর্ণা আরো ঘন্টা খানেকের দূর্গম পথ। এই দূর্গম পথকে আরো দূর্গম করে তুলেছে বৃষ্টি আর পাহাড়ি জোঁক।”
বউ এখানে আঁতকে ওঠে-“তোমারে জোঁক কামড়াইছে?”
“আরে নারে বউ! শুনোই না, সুংসাং পাড়ার লোকারণ্যহীন গহীন সবুজ পাহাড়ের কোল বাইয়া চোখ ধাঁধাঁনো সৌন্দর্য্য নিয়া পাশাপাশি নাইমা গেছে দুইটা ঝর্ণা। বর্ষাকালে বইলা ওরা এখন পুরা যৌবনবতী! পাহাড়, সবুজ আর ঝর্ণার অপূর্ব মিলন মেলা, এক কথায় অপরূপ নৈসর্গ। এখানে এসে পথ কষ্ট, জোঁকের কামড় আর শারীরিক অবসাদ মূহুর্তেই ভুইলা গিয়া যে কেউ হারায়া যাবে অন্য ভুবনে”।
একটা ছবি দেখিয়ে বলে উঠলো- “দেখো বউ, এটা সুংসাং পাড়া, এখানেই আমরা একটা রাত্রী থাকছিলাম। সকালে ঘুম থেকা উইঠাই সুংসাং পাড়া পাস হইয়া আমরা ছুটলাম জোড়া ঝর্ণার উদ্দেশ্যে।”
“এই যে দেখছো, একপাশে খাড়া ঢাল বাইয়া বিপজ্জনক সুড়ঙ্গ পথের মতো। আমার সামনে যারা ছিল তারা সুড়ঙ্গ পথে হারায় গেছে, এর একটু পরে আমিও হারায় গেছিলাম।”
“তারপরে দেখো, এই যে এই ছবিটায় এখানে আবারো ঝোপ-ঝাড়ের সুরঙ্গ ধরে খাড়াভাবে নাইমা গেলাম শেষ পথ পর্যন্ত। এইটুক পার হইতে পারলেই আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে যাব। এখান থেকাই ঝর্ণার মধুর শব্দ শিহরণ ধরাইতেছিলো। ওহ বউ, তোমারে যদি সেইটা দেখাইতে পারতাম!”
“একবার কি হইছে জানো, তখনো তোমার সাতে বিয়া হয় নাই। কলেজে পড়ি। জাফলং যাওয়ার জইন্য বন্ধুদের সাথে সিলেট গেছি। খাওয়া-দাওয়ার পর জাফলং যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বন্ধুদের কথায় চইলা গেলাম লালা খাল। সময় স্বল্পতায় খুব ভালোভাবে লালা খাল দেখা হয় নাই। কিন্তু সুযোগ আসলে আবার যাবো। দেইখা আসবো খালটা। শীত কালে নাকি এই খালের পানি পুরোপুরি সবুজ রঙ হইয়া যায়। একটা চা বাগান দেখলাম, সম্ভবত চা বাগানের কর্মীদের কারণেই এখানে জায়গাটা অনেকটা মানব সমাগম। আকাশে মেঘ। নীচে টলটলে সবুজ স্বচ্ছ পানি আর সবুজ পাহাড়ের মিতালী যেন নিয়ে যেতে চায় স্বপ্নের কোন দেশে.........” বলতে বলতে কামাল মুগ্ধ হয়ে বিভোর হয়ে যায়। যেন সে এখন কাহিনী বলছে না। সেই জায়গাটিতেই রয়েছে।
বউ তার এই বাংলার রূপের মুগ্ধ পাগলা স্বামীকে যথেষ্ট প্রশ্রয়ই দেয়। জগতের সবাই তো আর এক রকম হয় না। কত মানুষের কত খারাপ খারাপ নেশা থাকে। সেখানে সারা বাংলাদেশ ঘুরে দেখার নেশা তো খারাপ কিছু না। এ নিয়ে মানুষটা যদি মজে থাকতে চায় সে কখনো বাঁধা দিবে না।