।।এক।।
মর্তুজা,
কেমন আছো বল তো? মাত্র এক সপ্তাহও কাটেনি তোমার সাথে দেখা হলো অথচ তোমাকে না দেখার তৃষ্ণায় আমি ছটফট করছি। কিন্তু, আমি কাউকে বুঝতে দিচ্ছি না সে ব্যাপারটা। না তোমার মামণিকে, না আমার নিজের মা’কে। দু’জনের সাথেই আমি চোর পুলিশ খেলে বেড়াচ্ছি।
তোমার মামণি তোমাকে দূরে রেখে একেবারে অকুল পাথারে পরেছেন। কি আর করবেন বল? ওনার পাশে এই সময় দাঁড়াবার মত আর কে আছে? মাথার উপরে ছাদ নেই। নিজের আটটা দশটা ছেলেপুলে নেই। একমাত্র ছেলে, আদরের নয়নের মনি যদি হাসপাতালে পরে থাকে কোন মা নিজেকে সামলে চলতে পারেন! তার উপরে তিনি ছেলের পছন্দ করা মেয়েকে নিয়ে আরো বেশি চিন্তিত। তোমার যদি খারাপ কিছু ঘটে যায় তাহলে আমার কি হবে ভেবে ভেবে আরো বেশি অস্থির হয়ে যান। তিনি এতটা আমার জন্য ভাবেন তা আগে জানতাম না তো!
নিজের সন্তানের জন্য কষ্ট কোন মায়ের পক্ষেই ভুলে থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু, অপরের গর্ভের সন্তানের প্রতি সামান্য হলেও কষ্টের ভার কম থাকে, দুশ্চিন্তা কম থাকে। আমি তা জানি বলেই তোমার মামণিকে জানিয়েছি যে আমাকে নিয়ে বেশি চিন্তিত না হতে। আর তাছাড়া জন্ম মৃত্যু বিয়ে তো আল্লাহর হাতে তাই ওনার ছেলে সুস্থ হয়ে ফিরে এলে আমি যদি তাকে জীবনসংগী করে পাই তাতেও খুশি হবো; আল্লাহ যদি আমার ভাগ্যে ওনার ছেলে না রাখেন তাকেও আমি আল্লাহ রব্বুল আলামীন এর হুকুম বলে মেনে নেবো। আমার এইরকম শক্ত কথা শুনে তোমার মামণিকে অনেকটাই নির্ভার মনে হলো।
আমি মনে করি, আমি তোমাকে চাই কি চাই না সেটা এই মুহুর্তের বড় বিষয় নয়। বড় বিষয় একজন সন্তানের চিন্তায় অস্থির মা’কে সান্ত্বনা দেয়া যাতে তিনি সুস্থ ও সুস্থির থাকতে পারেন। তাঁকে তো সংসারের আরো হাজারটা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। সবগুলো বিষয় ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণ করতে না পারলে উনি যদি অসুস্থ হয়ে পরেন তাহলে কিভাবে চলবে? উনি যে তোমাদের সংসারের একমাত্র কর্তা বা কর্ত্রী যাই বলো।
আমার মা’ও তোমার বিষয়ে খুবই চিন্তিত। তোমার সুস্থতা কামনা করে তিনিও তাঁর মেয়ের মত নামাজে কান্নায় ভেঙ্গে পরছেন। হঠাত করে এত বড় একটা দূর্ঘটনায় তার মেয়ের হবু জামাই যে এতটা সংকটাপন্ন অবস্থায় পৌঁছে যাবে তা তিনি যে দু’চারদিন আগেও ভাবতে পারেন নি। তুমি যেদিন আমার মায়ের সাথে আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা বলেছিলে মা এত্ত খুশি হয়েছিলো তা আমি তোমাকে বুঝাতে পারবো না। তোমার মত অন্তর্মুখী লাজুক ছেলে যে কোনদিন আমার গার্ডিয়ানের সামনে আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে দাঁড়াতে পারবে তা আমার বিশ্বাসই ছিলো না। সেই তুমি কিনা এতটা সহজে সেটা বলে ফেলেছো? আমার এখনো স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে রে!
এত দ্রুত স্বপ্ন সত্যি হতে গিয়ে স্বপ্নটা কেমন যেন মিছে হয়ে আসছে! প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহুর্ত যে আমি কতটা কষ্টে কাটাই তা শুধু আমিই জানি। দুই বাসার দুটি নারী অভিভাবক আমারই কাঁধে তাদের সমস্ত কষ্ট দু’হাতে ঢেলে দেয় আর আমি আরেক অবলা নারী বুকে পাথর বেঁধে সব সহ্য করে যাচ্ছি। প্রতিদিন।
ইদানিং খুব ঘুম বেড়েছে। প্রায় সারাদিনই আমাকে বিছানায় গড়াগড়ি করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ জানো, আমি না একটুও ঘুমোতে পারছি না শান্তিমত। চোখ খুললে মনে হয় সারা রাত যেন তোমার সাথে কথা বলে গেছি। তোমার অনুভূতিতে আমি কতটা পূর্ণ তা কি তুমি জানো? জানতে? বিছানায় যখন আমি শুয়ে পরি মনে হয় আমি যেন তোমার বুকেই আশ্রয় নিয়েছি। যখন কারো সাথে কথা বলি সেখানেও যেন তোমার অবয়ব আমার আশেপাশে ঘুরতে থাকে। টিভি দেখে আমি তোমার যন্ত্রণাময় সময়গুলো হতে কিছুটা দূরে সরিয়ে রাখতে চাই নিজেকে। সেখানেও তুমি হানা দাও।
তুমি আমার কতটা তুমি জানো না। এবার ফিরে এলে তোমাকে সব বলে দেবো। এতটা আদরে জড়াবো তোমাকে, এতটা যে তোমার আর অভাব থাকবে না। চুমিয়ে চুমিয়ে তোমাকে পাগল করে ছাড়বো। আর দূরে সরে যেতে পারবে না তুমি।
আমার কলিজা, আমার হৃদয়ের প্রতিটি স্পন্দন তুমি।
এখন চাতক পাখির মতন অপেক্ষায় থাকি কখন তোমার মামণি আমাকে ফোন করবেন। আমি নিজে ফোন করি না। কারণ বয়স্ক মানুষ কখন নিজে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন, আমি হয়তো ফোন দেয়ায় তার অসুবিধা সৃষ্টি হবে। উনি নিজে থেকে ফোন না দিলে আমি ওনাকে জ্বালাতে যাই না। কোন কোন দিন তোমার মামণি আমাকে পর পর কয়েকবার ফোন করেন। ক্ষণে আমাকে ফোন করে ইচ্ছে মতন বকতে থাকেন। আবার ক্ষণে ফোন করে হাজার বার দুঃখপ্রকাশ করেন। আমি কোনটাই গায়ে মাখি না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, উনি আমার কাছে কথা বলে শান্তি পান এটা বেশ বোঝা যায়। এই শহরে তোমাদের এত আত্মীয় স্বজন থাকতে এত বড় বড় পরিচিত ডাক্তার থাকতে তিনি আমার সাথেই সমস্ত পরামর্শে এগিয়ে আসেন। আমি তো ডাক্তারও নই। নই তোমাদের কোন আত্মীয়াও। এমনকি তোমার সাথে আমার বিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ঠিকও হয়ে ছিলো না। তবুও তিনি এই চরম সময়ে আমাকেই সবচেয়ে কাছের মানুষ ভাবছেন এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। ওনাকে পাওয়া মানেই যেন আমি তোমাকে পাই প্রতিদিন ওনার প্রতিটি কথার উচ্চারণে, ওনার আবেগে এবং ওনার ভালোবাসায়।
বসে বসে মায়ের সাথে জলসা মুভি’তে ভারতীয় বাংলা সিনেমা ‘হান্ড্রেড পারসেন্ট লাভ’ দেখছিলাম, জানো? মনটা ভালো নেই তো। আমি যে মনকে বিষন্নতার সাগরে নিমজ্জিত হতে দেই না। তাই মনটাকে একটু ডাইভার্ট করতে চেয়েছিলাম। সিনেমাটা বেশ মজার। জিত আর কোয়েল মল্লিকের অভিনয়ের মধ্যে আমি বারে বারে আবেগে তোমার মধ্যে ভেসে যাচ্ছিলাম। সিনেমায় যা হয়, নায়কের ছুরিকাঘাতের মত বড় একসিডেন্টের পরেও শেষ মুহুর্তে সে বেঁচে গেলো। এমনকি নায়িকার আরেক জায়গায় বিয়ের আসরে বসে থাকার পরেও বিয়েটা সেই জায়গায় হলো না। হলো সেই ভালোবাসার মানুষ নায়কের সাথেই। সিনেমাটা দেখতে দেখতে নিজের ভেতরের আমার বিশ্বাসের শক্তিটা আরো বেড়ে গেলো, জানো? আমার বিশ্বাস তুমিও এভাবে ফিরে আসবে আমার জীবনে। বিয়ে যদি কারো সাথে আমার হবেই তবে সেই জীবনসংগীরূপে আমি পাবো তোমাকেই। নইলে গত এক মাসের আলগা হয়ে যাওয়া সম্পর্কের মধ্যে তুমি কেন পুনরায় আমার জীবনে ফিরে আসবে? তোমার ভালোবাসার পূর্ণতায় যেমন আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখছি তেমনি আমার ভালোবাসার পূর্ণতায় তুমিও আমার জীবনে ঠিক ফিরে আসবে আমি সেটা জানি। খুব ভালো করেই জানি।
তুমি তো জানো না আজ আমি তোমার হাসপাতালে ফোন করেছিলাম। ডাক্তার মঞ্জুরুল ইসলাম এতটা ভালো ব্যবহার করবেন তা আমি ভাবতেও পারিনি। ওনার কাছে তোমার অবস্থা সম্পর্কে যতটা জানতে পেরেছি তাতেই আমার আশি ভাগ শংকা কেটে গিয়ে সেখানে আস্থা জায়গা করে নিয়েছে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমার দিকে মুখ তুলে চেয়েছেন। আমার ভালোবাসার জন্য পাগল হয়ে প্রার্থনায় তাঁর পূর্ণ রহমত ঢেলে দিয়েছেন। তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে, আমার কলিজা, জানপাখি।
আর কোন ভয় নেই। আমি আর তোমাকে ছেড়ে যাবো না। যত বাঁধাই আসুক আমি তোমার পাশে সবসময় থাকবো। আমার হৃদয়ের হান্ড্রেড পারসেন্ট বিশুদ্ধ ভালোবাসার পূর্ণতা দিয়ে আমি তোমাকে বেঁধে রাখবো। ...’
... দীর্ঘ এই চিঠিটা সুখী বেশ ক’দিন ধরে লিখে চলেছে। ওর সারাদিনের কর্মকান্ডের মধ্যে কোন বিশেষ পার্থক্য সৃষ্টি হচ্ছে না তাতে। মনের পাতায় ওর ভাবনাগুলো বিধাতার কালি কলমে প্রতি মুহুর্তে ছাপা হয়ে যাচ্ছে।
।।দুই।।
ডিজাইনার হিসেবে সাইফুস মর্তুজা আউটসোর্সিং জগতে মোটামুটি ভালো পরিচিত একজন। সারা রাত কাজ করে ভোরের দিকে ঘুমানো প্রতিদিনের ছকে বাঁধা রুটিন। সেদিনও ভোরের দিকে শুয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পরার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ওর ঘরে আগুনের পোড়া গন্ধ বেরোয়। দরজা বন্ধ করে শুয়ে থাকার কারণে ওকে উদ্ধার করতে বেশ সময় লেগে যায়। আর ততক্ষণে শরীরের নিম্নাংশে বেশ গভীর পোড়া ক্ষতের সৃষ্টি হয়। যতটা দ্রুত সম্ভব গুলশানে নিজেদের এপার্টমেন্ট ছাড়িয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু, অবস্থা সত্যিই সংকটাপন্ন।
সংসারে বাবা নেই। নেই আর কোন ভাইবোনও। তাই একমাত্র বিধবা মাকেই সমস্ত সংসারের সব দায়িত্ব পালন করতে হয়। মুখচোরা লাজুক টাইপের ছেলে হলেও সাইফুস সাদাত আর্মিদের মতন পাঁচ ফুট এগারোর মেদহীন সুদর্শন এক যুবক। বছর খানেক হলো ডিজাইনার হিসেবে দেশে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। আউটসোর্সিং এর কাজে হাত পাকা হয়ে উঠেছে। সেই সাথে নিজের একটা প্রোডাকশন হাউজ করবে বলে একটু গুছিয়ে নেয়ার আশায় রাত জেগে খুব খাটাখাটুনি করছে। বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। চুলে সামান্য পাক ধরতে শুরু করেছে। একটা মেয়ের সাথে ভালোবাসাবাসিও চলছে। মেয়েটার নামটাও বেশ মিষ্টি। একেবারে সার্থক নাম রেখেছেন ওর বাবা মা। সুখী। সুখীর কাছ থেকে সাড়াও পাওয়া গেছে। কিন্তু নিজেকে আরেকটু গুছিয়ে না নিয়ে জীবনের এত বড় দায়িত্বটা নিতে মনে সায় দিচ্ছে না। সুখীর বিয়ের জন্যে তার পরিবার থেকে তাগাদা দিচ্ছে। ওরও সংসার একমাত্র বিধবা মাকে নিয়েই। তিন কূলে আর তেমন কেউ নেই। তাই সুখীর মা মেয়ের পছন্দ করা ছেলের হাতে মেয়েকে তুলে দিয়ে একটা ছেলে পেতে চাইছেন। ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলবে বলবে করেও নিজেকে গুছিয়ে নেয়ার ব্যস্ততায় ফোন করা হয়ে উঠছিলো না।
সেদিন সন্ধ্যায় হঠাত মনে হলো আজই কথা বলে ফেলি। সামনে একটা বড় কাজ আছে। আর প্রোডাকশন হাউজটাও খুলবো। গুরুজনের দোয়া প্রার্থনাও দরকার রয়েছে। এইরকম সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে সুখীর মাকে হঠাত ফোন করে বসলো মর্তুজা।
কথা বলার পরে মনে হলো এ যেন নিজের মায়ের চেয়েও মধুর এক রমনী। নিজের মায়ের সাথে মর্তুজা খুব আন্তরিক। মায়ের সাথে শেয়ার করে না এমন কোন কিছুই ওর জীবনে নেই। সুখীর মায়ের সাথে কথা বলে ওর মনে হলো, এই নতুন মা যেন তাঁর হৃদয়ের পূর্ণ বিশুদ্ধ ভালোবাসায় তাঁকে যাদু করে ফেলেছেন।
অন্যান্য রাতের চেয়ে সেদিন রাতে একটু বেশি সময়ই কাজ করলো মর্তুজা। কম্পিউটারেই তার কাজ সারাদিন। ল্যাপটপ আছে। ডেস্কটপও। সেদিন রাতে ল্যাপটপটা চার্জে দিয়ে ডেস্কটপে কাজ করছিলো। অনেক রাতে ঘুম পেলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। ল্যাপটপের চার্জ হতে হতে এক সময় চার্জার গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। ও ক্লান্ত থাকায় আগুনের প্রথম আঁচটা টের পায়নি। যখন টের পেয়েছে বা পেতে চলেছে তখন ঘরের মধ্যে ধুয়া আর গ্যাসে তখন ওর জান যায় যায়।
তারপর হতে পরের পাঁচটা দিন ও এখন একটা সাদা দেয়াল ঘেরা সাদা চাদরে মোড়া ওষুধ ওষুধ মিষ্টি সুবাসে ছড়িয়ে পরা ঘরের মধ্যে বন্দী। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। তিন দিন তিন রাত পুরা পেরিয়ে গেলে ওর সেন্স আসে। কিন্তু সেন্স আসার পরে ওর জীবনের নির্মম সত্যিটা যখন ও টের পেলো তখন মনে হলো এর চেয়ে মরে গেলেও ভালো হতো। ডাক্তাররা আশংকা করছেন ওর নিম্নাঙ্গের বেশ বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। স্বপ্নের হাতছানি দিয়ে যে সুখী এসেছিলো ওর জীবনে সে যদি জানতে পারে তাহলে কি আর সে মর্তুজাকে সুখী করার জন্য ওর জীবনে রয়ে যাবে? তাই কি হয়? নিজের জীবনের নির্মম সত্যকে জানার জন্য যতটা তার চেয়েও বেশি যন্ত্রণা ভালোবাসার মানুষকে নিজের অক্ষমতার দাসী বানানো। অন্যের সুখকে এভাবে ক্ষতবিক্ষত করবে এটা ক’জন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে সম্ভব? প্রতিদিন সুস্থ হবার অপেক্ষায় নয় বরং প্রতিটি দিন নিজের মৃত্যু কামনায় কাটতে লাগলো হাসপাতালের শুভ্র বিছানায় শুয়ে থাকা একজন হতভাগ্য যুবক মর্তুজার হঠাত এক পলকা ঝড়ে নুয়ে পরা ঠুনকো জীবন।
।।তিন।।
সুখী শুধু নামেই নয় কাজেও যেন সুখী। মেয়েটা অসম্ভব ত্যাঁড়া টাইপের মেয়ে। একবার যা চায় তা সে পেয়েই ছাড়ে। সেটা যত অসম্ভবই হোক না। মর্তুজাকে যখন ও পছন্দ করে তখন ছেলের মা ওকে তেমন আগ্রহী হয়ে পছন্দ করেন নি। পিতৃহারা মধ্যবিত্ত সংসারের মোটামুটি অনাথ এই মেয়েটিকে পুত্রবধু করার বিষয়ে ওনার যথেষ্ট আপত্তি ছিলো। আর সুখীর মধ্যে যেন তিনি দেখতে পেয়েছিলেন আধুনিকা মেয়ের ছায়া। তাতে তাঁর মনে হয়েছিলো এই মেয়ে শুধু আধুনিক বলেই বউ হয়ে এসে সংসারে লংকা কান্ড বাধিয়ে বসতে পারে। আধুনিক মেয়েদের এখন আবার পাখা গজায় কিনা। তাঁর ছেলেটা সহজ সরল। এই মেয়ে যে সংসারে ঢুকে কোন হেনস্থা করবে কে জানে। ছেলের জন্যে নিজে পছন্দ করে সহজ সরল একটা মেয়ে আনাকেই তিনি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেছিলেন।
কিন্তু, আল্লাহ রব্বুল আলামীন সব ছেলে মেয়েরই জুটি বেঁধে রেখেছেন। তাঁর বাঁধা ছকের বাইরে কে যেতে পারে! সময় মত কোন নাটকে কিভাবে কার আবির্ভাব ঘটবে সেটা ঐ উপর থেকেই নির্দেশ করা। আগে থেকেই সবকিছু সাজিয়ে রাখা। মানুষ তো উপলক্ষ্য মাত্র।
তিনি যেমন সুদর্শন ডিজাইনার মর্তুজাকে এক সময় রূপের বহরে সাজিয়েছিলেন আর অপরপক্ষে সুখীর মধ্যে তেমন সৌন্দর্য্যের হাট বসাননি। তিনিই নাটকের শেষ অংকে এসে সুখীর মধ্যে দিলেন অপরিসীম ধৈর্য্য আর ভালোবাসার সাগর। সেই ভালোবাসা আর ধৈর্য্য দিয়ে সে মর্তুজার কঠিন হৃদয়া মায়ের মনকে জয় করে নিলো। মর্তুজার শরীরের অক্ষমতা প্রকাশ পাওয়ার পরেও যখন সুখী ওর বিয়ের সিদ্ধান্তে পূর্বের জায়গাটিতেই বহাল রইলো তখন মর্তুজার মা বুঝতে পারলেন তাঁর ছেলের জন্য যোগ্য জুটিই তিনি পেয়েছেন। যেই আধুনিকা মেয়েটি শুধু তাঁর ছেলের নয় ওনার নিজেরও নির্ভরতার একটা শক্ত খুঁটি হয়ে পাশে থাকবে।
সুখী আধুনিকা শিক্ষিতা মেয়ে হলেও জীবনে সে চেয়েছিলো ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একটি পরিবারের আশ্রয়। আধুনিক যুগের সব ছেলেগুলোর চেয়ে আলাদা মর্তুজার মত একজন সৎ চরিত্রের পুরুষকে নিজের জীবনের ছায়া হিসেবে পেয়ে ও সবকিছু ভুলে গেছে।
ভবিষ্যত বংশধর তাদের জীবনে না আসুক, তাতে ক্ষতি কি! জীবনের শেষ বিন্দু পর্যন্ত যে রেখা চলে গিয়েছে সে পথে দু’জন একসাথে বেঁচে থাকবে, একসাথে পথ চলবে পরস্পরের প্রতি পূর্ণ ভালোবাসার আস্থায় এটাই জীবনের পরম পাওয়া। এরকম আস্থা কজন মানুষের ভাগ্যে জোটে!
১৭ অক্টোবর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪