(গল্পটি জনপ্রিয় আমেরিকান ছোট গল্পকার মিঃ ডেভিড এল্ডার এর গল্প “Keeping Score” অবলম্বনে রচিত)
মেয়েটি নিশ্চল পড়ে আছে, ঘরের এক কোণায়। আধবোঁজা ডান চোখ ঘিরে আছে কালো হয়ে আছে, বাঁ চোখে দিয়ে পানি পড়ছে আর চোখটি লাল। মেয়েটি ছোটখাটো, যে ভাবে মেঝেতে লুটিয়ে আছে, মেয়েটিকে দেখলে যে কেউই বুঝতে পারবে, মেয়েটিকে তুলে ঘরের কোণায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। বেকায়দায় বাড়ি খেয়ে মেয়েটির কপালে ভালোরকম কেটে গেছে, রক্ত ঝরছিলো একসময়, কিন্তু এখন রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে, মেয়েটির কপালের দিকের কিছু কালো-কুচকুচে চুল লেপটে আছে ওই শুকিয়ে যাওয়া রক্তে। হয় কান্নার তীব্রতায় নাহয় মেঝের ঠাণ্ডায় মেয়েটির ছোট শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
“কি হইলো?! তুই এখনও উঠস্ না ক্যান?! আমার কাজে যেতে দেরি হয়া যাব! নাকি ভোর রাতের মাইরের কথা ভুইলা গেছস এর মধ্যে!? উঠলি, না আরেকবার প্যাঁদানি খাবি?” এরপরে চলে বেশকিছু গালাগালি। লোকটি বেশ অধৈর্য্য, এটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। “আমি গোসলে গেলাম, বের হয়া এইসা নাস্তা না পাইলে তোরে ন্যাংটা কইরা সারা বিল্ডিং ঘুরামু, এইডা বুজিস!” এরপর বাথরুমের দরজা বন্ধ হবার শব্দ পাওয়া যায়।
মেয়েটি কোন তাড়াহুড়া করে না, আস্তে আস্তে উঠে বসে, একটু যেন ককিয়ে উঠে। কোথাও বেকায়দায় ব্যথা লেগেছে, কষ্ট হচ্ছে মেয়েটির। সবকষ্ট সহ্য করেই মেয়েটি অনেক কষ্টে দেয়াল ধরে উঠে দাঁড়ায়। দেয়াল ধরে ধরেই চুলার দিকে এগিয়ে যায়, লোকটিকে এতদিনে ভালোই চিনেছে মেয়েটি, সত্যি সত্যি বিল্ডিং এর সবার সামনে নেংটো করে ঘুরানো লোকটির জন্য কোন ব্যাপারই না।
“খারাপ ছেলেদের জন্য কেন ভালো মেয়েদের সবসময়ই একধরনের আকর্ষণ থাকে?! নাকি এটাকে বলা যায় অসুস্থ কৌতূহল?! খারাপ ছেলেরা কেন এইরকম আকর্ষক হয়?!” এইসব ভাবতে ভাবতে লোকটির জন্য নাস্তা তৈরি করতে থাকে মেয়েটি, মুখে মৃদু হাসি!
আবার সেই বাজখাই আওয়াজ শুনতে পেলো মেয়েটি, “কি হইলো?! রানসোস কিছু না শুধু ......” আবার কিছু গালি। মেয়েটি টেবিলে খাবার দেয় শান্ত মুখে। লোকটি কাজে যাওয়ার জন্য দ্রুত তৈরি হয়ে টেবিলে বসে। “কি হলো আজ একেবারে লজ্জাবতী হয়ে আছিস যে?! খুল জামা!” মেয়েটির পরনে তেমন কিছু ছিলো না, শুধু একটা ম্যাক্সি। তাও খুলে ফেলতে হলো। মেয়েটি পুরো উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ছেলেটির সামনে। ছেলেটি মুখ দিয়ে খাবার খেলো আর চোখ দিয়ে মেয়েটিকে খেতে লাগলো। মেয়েটির মুখ দেখে তার মনের ভিতর কি চলছে তা বুঝার উপায় নেই। ছেলেটির খাওয়া যখন শেষের দিকে, তখন মেয়েটি আস্তে করে ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে “চা দিবো?!” ছেলেটি কিছুটা খুশি হয়ে যায় মনেহয়, বলে উঠে, “দে, অল্প করে চা দে, আর তুই মেয়ে ভালোই শুধু মাঝে মাঝে আমার কথা শুনিস না দেখেই তোকে সাইজ করতে হয়!! কিছু চিন্তা করিস না রাতে সব পুষিয়ে দিবো!” মেয়েটি ছেলেটির চোখে স্পষ্ট কামনা দেখতে পায়। মেয়েটি পিছন ফিরে চা বানাতে থাকে, তার ভারি নিতম্ব ছেলেটিকে চুম্বকের মতোই টানতে থাকে। ছেলেটির আর নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। উঠে এসে, মেয়েটিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে, মেয়েটি কসরত করে ছেলেটির আলিঙ্গন থেকে ছুটে, ছেলেটির হাতে গরম চায়ের কাপ তুলে দেয়, মেয়েটির ঠোঁটে পশ্রয়ের হাসি। ছেলেটিও হেসে চায়ের কাপ নিয়ে আরাম করে চুমুক দেয়, “আহ্, আজ শুধু কাজে না যাইতে হইলেই তোর এখন খবর ছিলো! চায়ে কি দিয়েছিস?! কেমন যেন ইঁদুর মারা বিষের মতো খাইতে!”
মেয়েটি শুধু হাসে, নিঃসংকোচে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ছেলেটির সামনে। ছেলেটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, চিনামাটির কাপটা ছেলেটির আগেই মাটিতে পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আজ আর ছেলেটির কাজে যাওয়া হলো না...আজ কেন আর কখনই কাজে যেতে হবে না ছেলেটির।
শেষ বিকাল, সূর্যের লালিমা এখনও আকাশে রয়ে গেছে, আর ভুল করে একফালি চাঁদ ও উঁকি দিচ্ছে আকাশে। কিন্তু আকাশে একটিই তাঁরা দেখা যাচ্ছে...এটাই কি সন্ধ্যা তাঁরা, যেটা কিনা গভীর সমুদ্রের নাবিকদের দিক চিনাতো আর পথ দেখাতো?! মেয়েটি এখন একটি কবরের পাশে বসে আছে...কবরের ফলকে লেখা, “স্নিগ্ধা—তোমাকে আমরা ভালোবাসি, ভালোবেসে যাবো আজীবন, যেখানেই থাকো-ভালো থেকো”। মেয়েটি গভীর আত্মবিশ্বাসের সাথে কথোপকথন চালায় কবরের সাথে, যেন কেউ গভীর মনোযোগ দিয়ে মেয়েটির কথা শুনছে। “বুবু, আমাকে দেখে ভয় পেয়ো না, অল্প কিছু ব্যান্ডেজই তো শুধু, তোমার মতো আগুনে পুড়ে, যন্ত্রণায় কাতরিয়ে মরার থেকে এটা অনেক ভালো। তুমি কোন চিন্তা করো না, কারো কোন হিসাবই পাওনা থাকে না!”
১৪ অক্টোবর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪