একটি শীতকাল

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

SM Mishkat
  • ৩৬
  • 0
  • ৯৮
আশিক ক্লাস সিক্স-এ পড়ে।কিছুদিন পর তার বার্ষিক পরীক্ষা। পড়াশুনার অনেক চাপ, তারপর আবার আশিকের বাবার ইচ্ছা তার ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াবে কারন আশিক তাদের এক মাত্র সন্তান কিন্তু আশিকে মা চাননা তার সন্তান তাকে ছেড়ে দূরে থাকুক। আশিকের বাবা জামান চৌধুরী একজন সরকারী কর্মকর্তা।চাকুরী পাশাপাশি তিনি আর কিছু করেন না।যা বেতন পান তাতে তার পরিবার ভালোভাবে চলে যায়।জামান চৌধুরী তার ছেলেকে বলেছিলেন এবার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে সবাই মিলে কক্সবাজারে ঘুরতে যাবে।পরীক্ষা শেষ হতে হতে তখন পুরো শীতকাল চলে আসবে।আশিকের বাবা শীতকাল আগমন উপলক্ষে তার এবং তার পরিবারের জন্য শীতের কাপড় কিনতে শুরু করেছেন এবং আশিকের মা পুরাতন কাপড়গুলো ধুয়ে পরিস্কার করে রাখছেন।
আশিক এখন পড়াশুনায় খুব মনযোগী কারন দুদিন পর তার বার্ষিক পরীক্ষা শুরু।এদিকে শীতের আগমন শুরু হয়ে গিয়েছে। পরীক্ষা শেষ হলে এক সপ্তাহ পর ক্যাডেটের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা নিয়ে বাবা মা দুজনে খুব দু:শ্চিন্তায় আছেন। ছেলের কোন অভাব তারা অপূর্ণ রাখেননি। যখন যা চেয়েছে তাই তাকে দেওয়া হয়েছে।সব সময় চেয়েছেন তার সন্তান যেন কোন কষ্ট না পায়।
আশিকের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ।আজ প্রচুর শীত পড়েছে টেলিভিশনের সংবাদ অনুযায়ী দেশে শৈতপ্রবাহ চলছে। আশিককে সব সময় গরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয় যেন একটু্ ও শীত যেন তাকে স্পর্শ করতে না পারে। আজ আশিকের ক্যডেটের ভর্তি পরীক্ষা। বাবা খুব টেনশনে আছেন ছেলে চান্স পাবে কি না।পরীক্ষা শেষ। আশিকের ভাষ্য মতে পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে।পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে এলেন।
জামান সাহেব অগ্রিম ছুটি নিয়ে রেখেছিলেন ছেলের পরীক্ষা শেষ হলে কক্সবাজারে যাবেন। এত ঠান্ডার মধ্যে কিভাবে যাবেন বলছিলেন আশিকের মা। কিন্তু করার কিছু নেই ছুটি আগে থেকে নেওয়া।আগামিকাল কক্সবজারে যাবেন। সব কিছু প্রস্তুত করে রেখেছেন আশিকের মা।ঢাকা গাবতলি থেকে রওনা দিবেন।

বাংলাদেশে বহু পেশাজীবি মানুষ বসবাস করে। সমাজে এক শ্রেণী মানুষ আছে যারা অনেক সম্পদের মালিক। তাদের ঠিক কত সম্পদ আছে তা তারা নিজেরা ও জানেন না। জামান সাহেবের এই শ্রেণী মানুষের সম্পর্কে তার একটু বিদ্বেষ রয়েছে।কারন জামান সাহেব নিজেকে একজন সৎ লোক মনে করেন। সবাই এটাই জানেন।তিনি সব সময় নীতি কথা বলতে পছন্দ করেন।এদেশের কল্যান চান তিনি।তিনি সব সময় বলেন এসব লোক যদি সমাজে সকলের পাশে এসে দাড়াত তাহলে দেশের অনেক উন্নতি হত। আফিসেও তিনি সময় পেলে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।দেশের উন্নতি নিয়ে তিনি ভাবেন।এই তো সে দিন বলছিলেন যে দিন থেকে দেশে শৈত প্রবাহ চলছে। টিভিতে নিউজ দেখছিলেন, দেশের শত শত মানুষ শীত নিবারনের এত টুকু বস্ত্র ও পাচ্ছেনা।জামান সাহেব আপসোস করছিলেন আর বলছিলেন দেশে যারা ধনী আছে তারা যদি একটু এগিয়ে আসত!তাহলে এই দরিদ্র মানুষদের কে এত কষ্ট করতে হতোনা।সবাই তার কথায় একমত হন।

জামান সাহেব তার পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে পৌছাতে পৌছাতে বিকাল হয়ে গেল। তারা একটি হোটেলে উঠলেন।হোটেল টি সমুদ্র সৈকত থেকে কিছুটা দূরে।সেদিন আর বের হলেন না।পরদিন সূর্য উদয় দেখার জন্য একটু ভোরে উঠলেন। কুয়াশার কারনে সূর্য দেখা যাবে কিনা এটা ভাবছেন। তারপর ও তিনি বের হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।বাইরে অনেক ঠান্ডা আজ মনে হয় তারা সূর্যের মুখ দেখতে পাবেন কি না এটা নিশ্চিত নন। বের হবার জন্যা সবাই শীতের কাপড় পরে নিলেন।
বাইরে বের হয়ে বুঝতে পারলেন অনেক ঠান্ডা।আশিক সোয়েটার, কানটুপি, কেডস্ পরেছে তার কাছে খুব বেশি শীত মনে হচ্ছেনা।হেটে তারা সমুদ্র সৈকতের দিকে যাচ্ছেন।রাস্তার পাশে কিছু মানুষ শুয়ে আছে সামান্য ছেড়া কাঁথা গায়ে দিয়ে গুটিশুটি হয়ে তারা শুয়ে আছে।আশিকে মত ছোট একটি ছেলে কিছু কাগজ জোগাড় করছে মনে হয় আগুন ধরাবে তার পরনে মাত্র একটি ছেড়া গেঞ্জি। শীতে থরথর করে কাপছে আর কাগজে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছে।আশিকের খুব খারাপ লাগল। আশিক তার বাবা হাত টেনে ধরে বলল বাবা দেখ ঐ ছেলেটা শীতে কাপছে।আমাতো অনেকগুলো সোয়েটার আছে, ওকে আমার একটা শীতের কাপড় দেই ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।বাবা ছেলেকে সুন্দর ভাবে কোলে তুলে নিলেন। হা্টতে হাটতে ছেলেকে বললেন শোন বাবা আশিক আমি তো মাত্র একজন সামান্যসরকারি চাকরি করি। এদেশে অনেক বড়লোক আছে যাদের টাকার শেষ নেই তারা তাই সাহায্য করেনা।সেখানে আমি কি করব বল।
আশিকে নিরব জবাব কিন্তু আমারতো অনেক আছে। তুমি কি এদের সবাইকে শীতের কাপড় দিতে পারবে বাবার্ এমন জবাবে আশিক চুপ হয়ে গেল।আশিক বাবার কোলে বসে পেছনের দিকে তাকালো দেখতে পেল সেই ছেলেটি আগুন জালাতে পেরেছে। ওর মত আরো দুই তিন জন একসাথে আগুন পোহাচ্ছে। কুয়াশার কারনে কিছু দূর যাবার পর আর তাদের আশিক দেখতে পেলনা।
আনেক ক্ষন অপেক্ষা করার পরও তারা সূর্যের দেখা পেলনা।কিছুক্ষন পর তারা ফিরে এল হোটেলে। নাস্তা করার সময় আশিকে তার বাবা বলছিল দেখ বাবা আশিক বাংলাদেশ একটা গরিব দেশ। এদেশ দু:নীতিতে ছেয়ে গেছে।এদেশে আর ভালো মানুষ নেই।আমি বা তুমি একা কি করতে পারি বল।ছেলে বাবার কথা সঠিক বলে ধরে নিল।কারন তার বাবা সব সময় সত্য কথা বলেন।
আশিকের মা্ত্র ১২ বছর বয়স। সে জীবন সম্পর্কে কতটুকু বুঝতে শিখেছে? হয়তো তেমন কিছু না। এই বয়স হয়তো তার শেখার সময়।তাকে যা শেখানো হবে, সে তাই শিখবে। আশিকের মনে একটু মমতা বোধ জেগেছিল।মনে জেগে ছিলমানুষের প্রতি ভালোবাসা। সে অনুভব করেছিল শীতের কষ্ট। জামান সাহেবের মত এমন অনেক মানুষ আছেন যারা শুধু সমাজের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন।সমাধান করার চেষ্টা করেন না।সবাই নিজের কাছে অনেক মহৎ।আজ জামান সাহেবের মত মানুষের মুখে এই কথা।যে সব সময় সত্য এবং আদর্শের কথা বলে। যদি জামান সাহেব তার ছেলেকে এই কাজাটি করার জন্য উৎসাহ দিত বা আশিকের এই মানুষের প্রতি মমতাবোধকে প্রসংশা করত তাহলে আজ আশিক হয়ত শিখত মানুষকে ভালবাসতে। এই সব শীতার্থ মানুষের পাশে দাড়াতে। হতে পারত একজন মহৎ মানুষ।তবে কেন আমরা একটি জীবনকে অংকুরে বিনষ্ট করে দেয়।আজ আশিক যা শিখতে পারলো না ও হয়তো ওর ভবিষ্যৎকে ও তেমন ভালো কিছু উপহার দিতে পারবেনা।আশিকের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সন্তানদের সে কি শিক্ষা দেবে?এমন ও হতে পারে জামান সাহেব ও এই শিক্ষা পায়নি তার পরিবার বা পরিবেশ থেকে।এভাবে আর কত দিন?কবে সবাই সত্যিকার মানুষ হবে।আর কারোর জন্য অপেক্ষা নয় কে ধণী কে মধ্যবিত্ত, এটা দেখার জন্য নয়, আমারা সবাই পারি বদলে দিতে লক্ষ মানুষের স্বপ্ন।

এভাবে প্রতি বছর এদেশে শীত আসবে, আবার শীত চলে যাবে।মানুষে মৌলিক চাহিদা ৫টি -খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা।এখনো অনেক মানুষ আছে যেখানে তারা ঠিক মত তিন বেলা খেতে পারেনা।সসেখানে শীতবস্ত্র তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ!! এই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নাই, কার কাছে আছে তাও জানা নায়। এভাবে প্রতি বছর শীতকালে আশিকে দেখা সেই শিশুটি মত শত শত শিশু রাস্তার পাশে থেকে কেটে যায় তাদের শৈশব, কৈশোর।শীতের সকালে যখন কুয়াশায় কাঁথা ভিজে, তথন তাদের ঘুম ভাঙ্গে।শুরু হয় বেচে থাকার লড়াই। এভাবেশীতের সাথে তাদের নীবিড় সম্পর্ক যেন হাজার বছরের পরম আত্মীয়।তারপরও তারা কেন যেন সুখি।কি আনন্দ আছে তাদের মাঝে জানিনা। এভাবে কেটে যায়্ একটি শীতকাল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Lutful Bari Panna ঠিক গল্প বলে মনে হয়নি। তবে মেসেজটা সত্যি খুব প্রয়োজনীয়। গল্পকারকে প্রচুর লিখতে হবে।
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১২
SM Mishkat মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান স্যারকে ধন্যবাদ। আমি চেষ্টা করব আরো ভালো কিছু লেখার।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
SM Mishkat প্রজ্ঞা মৌসুমী ম্যামকে ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য।"বাবার ইচ্ছা তার ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াবে কারন আশিক তাদের এক মাত্র সন্তান" এটা আসলে যুক্তি না।এটা দেওয়া কারন সব বাবা মা চায় তার সন্তান যেন ভাল একটি স্কুলে পড়তে পারে।আপনি খুব মনযোগ দিয়ে পড়েছেন এটা আমার ভালো লেগেছে।আমি আসলে চাচ্ছিলাম আমার লেখার ভূলগুলো কেউ যেন ধরিয়ে দেয়।আবার ও ধন্যবাদ।
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
SM Mishkat আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি স্যারকে ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১২
মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান প্রথম লেখা হিসেবে বেশ ভালো হয়েছে বলতে হবে......তবে চর্চায় আরও ভালো হবে সে আশা রাখি.......
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১২
প্রজ্ঞা মৌসুমী শুরুতে " বাবার ইচ্ছা তার ছেলেকে ক্যাডেট স্কুলে পড়াবে কারন আশিক তাদের এক মাত্র সন্তান..."ক্যাডেট কলেজে পড়ানোর জন্য এটা কেমন যুক্তি হলো...পাঠকের খটকা লাগতে পারে। জামান সাহেবের উপর বিরক্ত হচ্ছিলাম। কেন সেই কারণগুলো সুন্দর করে ব্যাখা দিলেন লেখক নিজেই। মনে পড়লো একটা মূল্যবান টুকরো কথা 'যার যা কিছু আছে, তাই নিয়েই মোকাবেলা করতে হবে।" লেখকের ভাবনার প্রশংসা করতে হয়। এটা ঠিক পাঠক হিসেবে ভাবছি,শিখছি। কিন্তু শেষে এসে গল্প পড়ার আমেজটা পাচ্ছিলাম না, যেন পাচ্ছিলাম গল্পের/ চরিত্রের এনালাইসিস কারণ লেখকের ব্যক্তিগত ব্যাখা চলে আসায়। এমনিতে গল্প আমার ভালো লেগেছে। লেখকের সফলতা কামনা করছি।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১২
SM Mishkat মারুফ মুস্তাফা আযাদ স্যার কে ধন্যবাদ।'''''নীতি কথা বলে বা অন্যের সাহায্যের জন্য বসে না থেকে সবাই যদি যার যতটুকু আছে তাই নিয়ে যদি এগিয়ে আসত, দেশে কোনো বৃদ্ধ বা শিশু শীতে মারা যেত না।'''''' এমন কমেন্ট করার জন্য।
মারুফ মুস্তাফা আযাদ ভালো লিখেছ, ভাইয়া। চালিয়ে যাও।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২
মারুফ মুস্তাফা আযাদ নীতি কথা বলে বা অন্যের সাহায্যের জন্য বসে না থেকে সবাই যদি যার যতটুকু আছে তাই নিয়ে যদি এগিয়ে আসত, দেশে কোনো বৃদ্ধ বা শিশু শীতে মারা যেত না।
ভালো লাগেনি ২২ জানুয়ারী, ২০১২

০৩ অক্টোবর - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪