ইউসুফ ছদ্মবেশে গেলেন ইমাম সাহেবের বাড়িতে। ছোটবেলায় ইমাম সাহেবের অনেক ওয়াজ শুনেছেন। তারই দেখানো পথে চলেছেন এ যাবত। সাফল্যের সবের্াচ্চ চূড়ায় উঠেছেন। তবু তিনি তৃপ্ত নন। জীবনের পরতে পরতে দেখেছেন এ জাতির দুর্দশার কারণ। এসব নিয়ে ভেবেছেন আজীবন। দেশকে নিয়ে ভাবলে বুকে কষ্টই জমা হতে থাকে। তবু ভাবতে হয় আগামী দিনের পূর্বপুরুষদের জন্য। এত কষ্ট নিয়ে এক সময় তিনি রিটায়ার করেছেন।
ধীরে ধীরে সেদেশে চরম সংকট দেখা দেয়। এ সংকট কালে অলৌকিকভাবে তাকে বসানো হয় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে। ফলে তার কাঁধে চেপে যায় জাতীয় দায়িত্ব। এখন থেকে তার একটাই চিন্তা, কিভাবে এ হতভাগ্য জাতিকে এগিয়ে নেয়া যায় ? এত কাল দেশের কথা ভেবে যে কষ্ট পেয়েছেন আজ সে কষ্ট লাঘবের সুযোগ এসেছে। এগিয়ে যেতে বাঁধা কোথায় ? কিভাবে এসব বাধা অতিক্রম করা যায়? রাতদিন এতসব চিন্তার সমাধান খুঁজতে খুঁজতে মনে পড়ে যায় ছোট বেলার কথা। মনে হল, যে ইমাম সাহেবকে অনুকরণ করে তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন এজীবন, যে জীবনে ছিল না কোন ভয়। বুক ফুলে চলেছেন। মাথা বিক্রি করেন নি কোন লোভ লালসার কাছে। নিশ্চয়ই তার কাছে, পাওয়া যাবে কোন অলৌকিক সমাধান। এ জাতিকে কেবল কোন অলৌকিক ঘটনাই দিতে পারে সহজ সরল সমাধান। এতসব সমস্যা সমাধানের জন্য অলৌকিক শক্তিরই দরকার।
সেই শক্তির সন্ধানে এক দিন ইউসুফ ইমাম সাহেবের বাড়ি গিয়ে পেঁৗছলেন বিকেল বেলায়। ইমাম সাহেবের ছোট্র বাড়িতে ইউসুফ বসলেন। একটু পরে ইমাম সাহেব ছেঁড়া গেঞ্জি গায়ে বাড়ির ভিতর থেকে বৈঠকখানায় ঠুকতে ঠুকতে সালাম দিলেন। ইউসুফ অয়াআলাইকুম সালাম না বলে বললেন,
আচ্ছালামুআলাইকুম হুজুর।
ওয়ালাইকুম সালাম।
হুজুর আমি এক গুনাহ্গার বান্দা। ছোটবেলায় আপনার ওয়াজ শুনতাম।
কোথায় আপনার বাড়ি।
এখন রাজধানীতে থাকি।
হুজুর বললেন, আপনি একটু অপেক্ষা করেন, আমি চোখে কম দেখি। সামসুল হুদা...
জ্বী আব্বা।
আমার পাগড়ীটা দাওতো বাবা।
হুজুরের ছেলে,সামসুল হুদা ঘরের বেড়া মেরামত করছিলেন। তিনিও বিরাট পাঁকা দাঁড়িওয়ালা। আবার একজন বিখ্যাত আলেম। তার বয়স পঞ্চান্ন হবে। তিনি ঘরে ঠুকে মেহমানকে সালাম দিয়ে ভিতরে গেলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে একটি পাঁগড়ী এনে হুজুরের মাথায় পড়িয়ে দিলেন।
ইউসুফ ভাবছেন, হুজুর বলেছেন চোখে কম দেখেন, অথচ তার ছেলে এনে দিলেন পাঁগড়ী। তখন তার ছোট বেলার কথা তাঁর মনে পড়ে যায়, হুজুর যখন ওয়াজ করতেন তখন পাঁগড়ীটা টেবিলের উপরে রেখে দিতেন। সে সময়ে তিনি পাঁগড়ী পড়তেন না। এর কারণও কেউ জানতেন না। আজও কেন জানি তিনি পাঁগড়ী পড়েছেন!
সামসুল হুদা একটু হালকা হাসি হেসে আবার কাজে চলে গেলেন। পাঁগড়ী পড়ার পর হুজুর ইউসুফের দিকে তাকিয়ে আলহামদুলিল্লাহ্ পড়লেন।
সামসুল হুদা...
জ্বী আব্বা।
নাস্তা দিয়ে যাও। অনেক দিন পর একজন মানুষ এসেছেন আমার কাছে।
হুজুর ইউসুফকে লক্ষ্য করে বললেন, হে মানুষ, এবার বলেন কেন আমার কাছে এসেছেন?
হুজুর আমি খুব বিপদে আছি। তাই আপনার সাহায্যের জন্য এসেছি।
আমি অতি বৃদ্ধ। কোন ক্ষমতা নেই। ধন দৌলত নেই। আপনাকে কি দিয়ে সাহায্য করব ?
পথহারা মানুষকে পথের সন্ধান দিয়ে।
আমি গুনাহগার বান্দা, নিজেই পথ হারা। পথের সন্ধানে ঘুরছি এ যাবত।
এমন সময় সামসুল হুদা কিছু নাস্তা এনে দিলেন। এরপর তিঁনি হুজুরের মাথা থেকে পাগড়ীটা খুলে ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলেন।
আপনি বাবা নাস্তা খান। তারপর কথা বলেন। অনেক দূর থেকে এসেছেন।
ইউসুফ দেখলেন নাস্তার পরিমাণ এত কম যে, একজনের জন্যও যথেষ্ঠ নয়। এবার তিনি বললেন, হুজুর আমি অনেক দূর থেকে আপনার জন্য কিছু ফল নিয়ে এসেছি। দয়া করে যদি গ্রহণ করেন।
হে মানুষ আপনার উপহার আমি নেব।
ইউসুফ খুশী হয়ে তাড়াতাড়ি ব্যাগ থেকে হুজুরের জন্য আনা অনেক রকমের ফল বের করলেন। হুজুর আবার সামসুল হুদাকে ডেকে ফলগুলি নিতে বললেন।
ততক্ষণে সামসুল হুদার বুঝতে বাকি রইল না যে, নিশ্চয়ই লোকটি মানুষ।
ইউসুফ এবার হুজুরকে নাস্তা খেতে অনুরোধ করলেন।
হুজুর বললেন, আমি এখন খাব না, আপনি খান বাবা।
ইউসুফ এবার নাস্তা খেতে লাগলেন। মনে হলো এত স্বাধের নাস্তা তিনি জীবনেও খান নি। কি অসাধারণ মিষ্টি ঘ্রাণ। মোলায়েম খাবার। মুখে দেয়া মাত্রই গলে যাচ্ছে। ইউসুফ ক্ষুধার্ত ছিলেন। তাই তিনি খেতেই লাগলেন। কিছুক্ষণ পর মনে হলো পেট ভরে গেছে। আরো খেলেন। হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, নাস্তার পরিমাণ তেমন কিছুই কমে নি। যে পরিমাণের নাস্তা দেয়া হয়েছিল মনে হয় প্রায় সেই পরিমাণই রয়ে গেছে।
এবার পানি খেয়ে নিন বাবা। তার পর কথা বলেন। হুজুর বললেন।
ইউসুফ পানি খেতে লাগলেন। একি! এ কোন ধরণের পানি। এমন মজাদার পানি তিনি পৃথিবীর কোন দেশেও খান নি! ইউসুফের বুঝতে বাকি রইলনা হুজুর কোন সাধারণ মানুষ নন। তাঁর মনে একটি প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে,! কেননা- হুজুর বললেন চোখে কম দেখেন। কিন্তু হুজুরের ছেলে চশমা না দিয়ে দিলেন পাঁগড়ী। এর রহস্য কি?
ইউসুফ বললেন, হুজুর আমার কথা বলার আগে আমার একটি প্রশ্ন মনের মধ্যে আনচান করছে। দয়া করে যদি এ প্রশ্নের সমাধান যদি দেন।
হুজুর বলেন, বাবা কি জানতে চান?
হুজুর আপনি বললেন, চোখে কম দেখেন, কিন্তু আপনার ছেলে আপনাকে এনে দিলেন পাঁগড়ী। আবার কিছুক্ষণ পর পাঁগড়ীটা খুলে ফেললেন, এর রহস্য কি?
আপনার এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় হয় নি। সময় হলে আমি বলব। এবার আপনার সমস্যার কথা বলেন।
হুজুর আমি নাটকীয়ভাবে এখন এ- দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছি। আমি চাই জাতিকে নেশা মুক্ত করতে। দেশকে সচল করতে। কিন্তু কিভাবে একাজ করব। তাই আপনার পরামর্শ চাই।
হুজুর বললেন, এটাতো সহজ কাজ। আপনাকে প্রথমেই কিছু নেশামুক্ত এবং দক্ষ লোক নির্বাচন করতে হবে, যাদের দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন।
আমি কিভাবে চিনব কে নেশামুক্ত ?
হুজুর বললেন, এখন আপনাকে আমার সঙ্গে বাইরে যেতে হবে। হুজুর সামসুল হুদাকে ডাকলেন।
জ্বী আব্বা, সামসুল হুদা জবাব দিলেন।
আমার পাগড়ীটা দাও, আর পাঞ্জাবীটা দাও, আমি বাইরে যাব।
সামসুল হুদা হুজুরকে পাঞ্জাবী এবং পাঁগড়ীটা পড়িয়ে দিলেন। হাতে লাঠি ধরিয়ে দিলেন। তারপর কিছুদূর এগিয়ে দিলেন। হুজুর ইউসুফকে সাথে নিয়ে এগিয়ে চললেন। কিছুক্ষণ চলার পর পাকা রাস্তার পাশ্বর্ে উপজেলা সদরের বাজারে উঠলেন। পথি মধ্যে অনেক লোকের সাথে দেখা হলো। হুজুরকে দেখে লোকজন রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে চললেন। অনেকই আবার এড়িয়ে গেলেন। পথচারীদের দেখে হুজুরই আগে সালাম দিয়ে চললেন।
বাজারে উঠে হুজুর ইউসুফকে বললেন, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন। এখন আমি আপনাকে পাঁগড়ী পড়িয়ে দেব। পাঁগড়ী পড়াবস্থায় যা দেখবেন তা দেখে ভয় পাবেন না। আমি পাশে আছি। যখনই খারাপ লাগবে পাঁগড়ী খুলে ফেলবেন। আবার পড়বেন। আপনি যা দেখবেন, কাউকে কিছু বলতে পারবেন না। আমার কথায় আপনার সন্মতি আছে ?
হুজুর আমি কথা দিচ্ছি, যা দেখব কাউকে কিছু বলব না। তাছাড়া আমার বিশ্বাস আমি ভয় পাব না।
হুজুর খুশি হয়ে ইউসুফকে পাঁগড়ী পড়িয়ে দিলেন। পাঁগড়ী পরা মাত্রই ইউসুফ দেখেন বাজারের মধ্যে শিয়াল, বিড়াল, কুকুর, ইত্যাদি বিভিন্নজাতের পশুপক্ষী ঘুরছে, এদের মধ্যে কিছু মানুষও রয়েছে। ইউসুফ এসব দেখে চট করে পাঁগড়ীটা খুলে ফেললেন। পাঁগড়ীটা খুলে সামনে- পিছে- ডানে- বায়ে দেখলেন। একি এখনতো দেখা যায় চারিদিকে মানুষ আর মানুষ। আবার পাঁগড়ীটা পড়লেন, এবার দেখলেন চারিদিকে কিছু মানুষ রয়েছে। আর তাঁদের ঘিরে অসংখ্য বিভিন্নজাতের পশুপক্ষী ঘুরছে। আবার কিছু মানুষ দেখা যায় যাদের নিম্নাঙ্গ পশুরমতো।
হুজুর বললেন, এবার পাঁগড়ীটা আমাকে দিন। আমার সাথে ঘরে চলেন। ঘরে বসে বাকি কথা বলব।
ইউসুফ কোন কথা না বলে হুজুরের পিছু পিছেু চললেন। ঘরে এসে আবার দু'জনে পাশাপাশি বসলেন।
হুজুর বললেন, ইউসুফ আপনি পাঁগড়ী পরাবস্থায় যে সব পশুপক্ষী দেখেছিলে এরা আসলে মানুষ। আপনি পাঁগড়ী খুলে তাদের দেখেছিলেন। এরা দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ প্রাণী। তবে দুিনয়ার মোহে একেক জন একেক পরিমাপের পাপ করছে তাই এসব মানুষ একেক জন একক ধরণের পশুতে পরিণত হয়েছে। আপনি কিছু মানুষ দেখেছেন যাদের একাঙ্গ পশুরমতো, তারা ধীরে ধীরে পশুতে পরিণত হচ্ছে। নেশার আনুপাতিক হারে মানুষত্ব হারাচ্ছে। আবার যাদের মানুষ হিসেবে দেখেছেন তাঁরাই প্রকৃত মানুষ। তারাই শ্রেষ্ঠজীব। আপনার প্রয়োজন এই রকমের কিছু মানুষ বাঁছাই করা। যাদের দিয়ে কাজ করাবেন। তাঁদের কাজের জন্য আপনি যখনই নির্বাচন করবেন তখনই নেশাগ্রস্থরা বিরোধিতা করবে। এ ক্ষেত্রে যদি আপনি দৃঢ়তার সাথে, ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করতে পারেন, দেখবেন এক সময় লক্ষ্যে পেঁৗছে গেছেন। মৃতু্যর ভয় সমালোচনার ভয় পেলে চলবে না।
ইউসুফ বললেন, হুজুর আমি কি পারব ?
আমার দোয়া রইল। আর পাঁগড়ীর পরিবর্তে আপনার চশমাটাকে কাজে লাগাতে পারেন। দিন আপনার চশমাটা খুলে দিন, আমি দোয়া করে দি। এ চশমা কেবল প্রয়োজনের সময়ই ব্যবহৃার করবেন। কাজের সময় অন্য চশমা ব্যবহার করবেন।
ইউসুফ চশমাটা খুলে দিলেন, হুজুরের হাতে। হুজুর চশমাটা নিয়ে আসমানের দিকে দু'হাত তুলে দোয়া করে দিলেন।
এবার আপনি কাজে নেমে পড়েন। আপনার হাতে সময় কম।
ইউসুফ হুজুরকে সালম করে ফিরে চললেন।
ইউসুফ ছদ্মবেশে হুজুরের বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাই গাড়ি নেন নি। তিঁনি এখন রাজধানীতে ফিরবেন। তাই ডাইরেক্ট বাসে চড়ে বসলেন। রাজধানীতে সঠিক সময়ে পৌছে গেলেন। বাস থেকে নেমে আবার লোকাল বাসে চড়লেন। লোকাল বাসে আট কিলোমিটার পথ আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘন্টা। বাসে বসে বসে তিনি ভাবছিলেন, এত দিন দেশাটকে কি ক্ষতি করেছে তারা।
দেশে ইনভেষ্ট হচ্ছে না যা হবার কথা ছিল, এর অন্যতম কারণ জানজট। তাই বাসে বসেই নিয়ত করলেন, প্রথমেই আন্ডার/ওভারপাস পাথ করতে হবে। সহশ্র শ্রম ঘন্টা বেকার যেতে দেয়া যায় না। পথি মধ্যে তিনি চশমা ব্যবহার করেন নি।
ইউসুফ পরদিন অফিসে বসেই চশমাটি মাথায় রাখলেন। এটা তার অভ্যেস। কেবল পড়ার সময় চশমাটিকে মাথা থেকে টেনে চোখের উপর রাখেন্। একটু পরেই চশমাটি চোখের উপর টেনে অফিসের সকল ইউনিট পরির্দশনে বের হলেন। একি টেবিলে বসে আছে ভিন্নজাতের প্রাণী। মানুষ কোথায়! তিনি হতাশ হয়ে আরেক সেকশনে গেলেন, সেখানেও একই অবস্থা! আবার গেলেন আরেক সেকশনে সেখানে দেখলেন কিছু মানুষ আছেন, যাঁদেরকে তিনি এতকাল সটাং সটাং কথা বলার জন্য দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদেরকেই মানুষ দেখা যায়। ইউসুফ হতাশ হয়ে ফিরে এলেন নিজের টেবিলে।
কিন্তু ইউসুফকে জানতে হবে আসলে মানুষ কারা। চিনতে হবে কাদের দিয়ে লক্ষ্যে পোঁছা যাবে। ইউসুফ গত দ'ুদিন বিভিন্ন সভায় গেছেন, বিভিন্ন দপ্তরে গেছেন, ঘুরে দেখেছেন নামি দামী জায়গায়। এসব দেখে হুজুরের দেয়া চশমার বদৌলতে তিনি এতই হতাশ হলেন যে, তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন ইস্তেফা দিবেন। কেননা চশমা দিয়ে যাদেরকে তিনি মানুষ হিসেবে দেখেছেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু ওই মানুষদের দিয়ে দেশ চালালে নেশাগ্রস্থরা বিদ্রোহ করবে। সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইবে। আন্দোলন হবে। যেসব মানুষ দেখেছেন এদের অনেকের যোগ্যতা থাকলেও এরা বিতর্কিত। তাছাড়া এসব মানুষদের দিয়ে সব কাজ করা যায় না। আবার এসব মানুষ অনেক সময় বেশি কাজ করতেও চান না।
ইউসুফ ভাবলেন ইস্তেফা দেয়ার আগে হুজুরের সাথে পরামর্শ করা দরকার।
ইউসুফের মনে পড়ে যায় একটি ঘটনার কথা। কয়েক বছর আগে এক যুবতী অপমানিত হয়েছিল। যুবতী থানায় গেলো অভিযোগ করতে। গরীব লোকের মেয়ে, তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে থানাওয়ালা তাকে থানার হেফাজতে রাখল ক'দিন। এ ক'দিন থানাতেই কতর্ৃপক্ষ যুবতীকে একই কাজ করল। থানার হেফাজতে রয়েছে নিরীহ গরীব যুবতী এ সংবাদ শুনে এলাকার বিশিষ্ট সমাজ সেবী তাকে জামিনে এনে নিজের হেফাজতে রাখল। তার হেফাজতেও সুন্দরী যুবতী রক্ষা পেলো না। অথচ গরীব অসহায় মানুষকে রক্ষার জন্য থানাওয়ালা এবং সমাজসেবীকে পুরষ্কৃত করা হলো। ইউসুফের চারিদিকে এসব নেশাগ্রস্থদের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় তিঁনি কাদের দিয়ে কাজ করাবেন?
ইউসুফ পরের সপ্তাহে আবার চলে গেলেন হুজুরের বাড়িতে। হুজুরকে সব কথা বললেন। তিনি আরো জানালেন, একজন মসজিদের ইমাম এবং একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষককেও তিনি নেশাগ্রস্থদের চেহারায় দেখেছেন। এর কারণ কি?
হুজুর বললেন, ওই মসজিদের ইমাম হযতো তার চাকুরী হারানোর ভয়ে মুসলি্লদের সঠিক সময়ের সঠিক ওয়াজ না করে কেবল সুবিধাজনক ঝুঁকি বিহীন নিরাপদ ওয়াজ করতেন। এতে ঁিতনি দায়িত্ব কৌশলে এঁড়িয়ে যেতেন। এটা মারাত্মক অপরাধ।
আর স্কুলের নিরীহ গরীব মাষ্টার হয়তো নেশাকরার সুযোগ পায় নি তবে সব সময় সে চিন্তা করতো, যদি সে সুযোগ পেতো তবে অনেক কিছু করতো। অথর্াৎ সে চিন্তা চেতনায় নেশাগ্রস্থ ছিল।
ইউসুফ বললেন, হুজুর আমি কাকে দিয়ে সঠিক কাজটি করাবো। কি ভাবে করাবো। এটাতো সম্ভব নয়। তাই আমি ইস্তেফা দিতে চাই।
হুজুর বললেন, যখন নেশাখোরদের দাপট সারা দেশে ছড়িয়ে ছিল বাধাহীনভাবে, সেই দুঃসময়ে যারা নেশামুক্ত ছিলেন, তাঁরা যে, আদর্শের বলে স্রোতের বিপরীতে টিকে ছিলেন সেই মানুষদের আদর্শ অন্য সকলে ভিতর থেকে জাগিয়ে তুলতে আপনি কাজ করে যান। এটাই একমাত্র স্থায়ী ব্যবস্থা। এ কাজে যদি নিজেকে কোরবানী দিতে হয় তবে দিলেন। আপনার একজনের কোরবানীতে যদি একটি দেশের মানুষের চারিত্রিক উন্নতি ঘটে তার ফলাফল পাবেন অনন্ত কালের সময়ে, যখন কাউকে সাহায্যকারী হিসেবে পানেন না। দেখছেন না রোজাদাররা গোপনেও রোজা ভাঙ্গেন না ! কেননা তাঁদের ভিতর থেকে এ সতর্কবাণী জাগে যে, কেউ না দেখলেও স্রষ্টা দেখছেন।
বাঘের পিঠে চড়ে বাঘ শিকার করা যায় না। বাঘেরা বাঘ তাড়ালেও মানুষ খেয়ে ফেলে।