সেই শৈশব থেকেই কেউ না কেউ একান্ত কাছের হয়ে থাকতো। একান্ত কাছের ছাড়াও মহল্লা এবং ক্লাসের সবার সাথে ভালোই ভাব থাকতো। আশেপাশের সবারই ভালবাসা পেতাম। কতগুলো কারন ছিল এর পেছনে। মেধাগত ভাবে জেলা স্কুলে সব সময় প্রথম তিন এর মধ্যেই থাকতাম বলে ক্লাস ক্যাপটেইন এর দায়িত্ব থাকতই। স্কাউটিং করতাম এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সবধরনের কর্মকান্ডে অংশগ্রহন থাকতো। তাছাড়া কথা এবং বিবিধ কর্মকান্ড দিয়ে মোটামুটি সবারই মনে স্থান করে নিয়েছিলাম (যে অভ্যাস এখনও ধরে রেখেছি)।
কিণ্তু কোনো বন্ধুই আমার ‘আমি’টাকে তৃপ্ত করতে পারতনা বা পারেনি। তাই একান্ত কাছের হয়ে থাকা সংঙ্গীরা খুব ঘনঘন পরিবর্তন হতো। তবে পুরানো কারো সাথেই সম্পর্ক ছিন্ন হতোনা। ওগুলো সাবসিডিয়ারি বিষয় হয়ে থাকত। তারা আমার কাছে আসতো। আমিও সময় দিতাম। ওরা আসতো মজা নিতে। দিতাম উজাড় করে।
আমার কল্পনায় একজন সঙ্গী ছিল। তার সাথে যাদের কিছু মিল পেতাম তারাই বন্ধু হতো। কিণ্তু অল্প দিন যেতে না যেতেই ওদের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতাম। আমার কল্পনার সঙ্গীর সাথে বিস্তর তফাৎ ওদের। খুব ছোট বেলা থেকেই অন্যায়, মিথ্যা, কটুকথা, মৌলবাদিতা, পরনিণ্দা, পরচর্চা, হিংসা, দেশদ্রোহিতা, পাকিস্তান-প্রীতি এই সব বিষয়গুলো সহ্য করতে পারতাম না। সামান্য বাকবিতন্ডায় যখন প্রিয় বন্ধু দের মুখ থেকে (“মালাউন”, “নোমো”, “আকাটা”, “হিন্দু হিন্দু তুলশিপাতা, হিন্দুরা খায় গরুর মাথা”) – এসব শব্দ উচ্চারিত হতো, অসম্ভব কষ্ট পেতাম। হিনমন্যতায়ও ভূগতাম কখনও। নিভৃতে কতোযে কেঁদেছি!
আমার একটা নিজের জগৎ তৈরী হলো। ডাকটিকিট সংগ্রহ করতাম (এখনও বিশাল সংগ্রহ আছে, আধুনিক ভাবে সংরক্ষীত), ডিএক্সিং করতাম (বিদেশী বেতার/রেডিও শুনে রিপোর্টিং করা; ওরা অনেক উপহার পাঠাতো: ডাকটিকিট, ভিউকার্ড, ব্যাজ, স্টিকার, আরো অনেক মজার মজার জিনিস), কবিতা লিখতাম (তবে পরিবার বা বন্ধুদের উৎসাহ পেতাম না, বরং হিংসা বা অবিশ্বাসের শিকার হতাম)।
শৈশব-কৈশোর পেড়িয়ে যখন তরুন। মনে হল কয়েকজন সাথী হলে হয়তো চলার পথটা সাচ্ছন্দময় হেবে। আমি, শান্তনু, লেনিন, সাকিল, খসরু, মাহমুদ –এই ছয় জন মিলে একটা মজবুত টিম হল। ক্লাসের সেরা ছয়। বাঁদরামিতেও সেরা ছয়। সিক্স অলরাউডারস। এক সাথে খেলতাম, লাইব্রেরীতে যেতাম, একই ব্যাঁচে স্যারদের কাছে পড়তাম। গ্রুপটার একটা নাম ছিল ICF (International Click Federation)। পিরোজপুর শহরের সবাই চিনতো। স্কুল ও কলেজের এমন কোনো ভালো কাজ বা খারাপ কাজ নাই যা আমরা করিনি। আমার জীবনের বন্ধুত্বের শ্রেষ্ঠ সময় ওটা। কলেজ পেড়িয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। ওরা সবাই স্বস্বক্ষেত্রে সফল। আমিও গর্বিত ওদের সাফল্যে।
এরপর আমি একা। অনেকের মধ্যেই খূঁজেছি আমাকে। পাইনি। অতঃপর নিসঙ্গতাকেই সংগী করে অচেনা গন্তব্যের পথে অন্তহীন যাত্রা (After passing a long passage of friendship, I’ve discovered that I, myself is the one and only friend of mine!)।
৩১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৫৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪