মেদিনী'র বুকে সোনালী জলোচ্ছ্বাস

উচ্ছ্বাস (জুন ২০১৪)

সেলিনা ইসলাম
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৪৮
  • ১৫
আজ বহুদিন পর কেন যেন সবকিছুতে অন্যরকম আনন্দ খেলে যাচ্ছে! চৈত্রের কাঠফাটা রোদেও তেষ্টাভরা মন নিয়ে এই বয়সেও হাঁটতে খুব ভাল লাগছে। কড়া রোদের মধ্য দুপুরে ধোঁয়া উঠা পিচঢালা পথটাতে মেয়ের পাঠানো বিদেশি লাঠিটাও যেন কষ্টে ককিয়ে উঠছে। কিন্তু মিনহাজ সাহেবের কোন কষ্ট হচ্ছে না! সারা জীবন সৎ থাকার ইচ্ছে থাকলেও চাকুরীর সুবাদে থাকতে পারেননি। টেবিলে আসা ফাইল গুলোতে কাজ করতে গিয়ে অনেক অনিচ্ছাকৃত কাজ তাকে করতে হয়েছে। কাজটা না করলে সেই সময়ে দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে হয় চাকুরী ছেড়ে ভিক্ষে করতে হত;না হলে একটা বুলেটের কাছে নিজেকে খুব সহজভাবেই সপে দিতে হত। সেই সময়ের জন্য এই দুটোই ছিল মিনহাজ সাহেবের কাছে এভারেস্ট বিজয়ের চেয়েও অনেক কঠিন একটি কাজ। আর তাই তিনি তার চার পাশে থাকা অন্য দশজন মানুষের মতই সহজ কাজটি বেছে নিয়েছিলেন। যে অফিসে কাজ করতেন সেই অফিসের বড় বড় অফিসারেরা যে পথটি বেছে নিয়েছেন,ঠিক সেই পথটিই। তবে তাদের সাথে নিজের যে পার্থক্যটুকু ছিল তা হল-সবাই ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে দিতে টেবিলের নীচে থেকে হলুদ খাম নিতেন আর মিনহাজ সাহেব নিতেন সরাসরি টেবিলের উপর থেকে। প্রথম প্রথম বেশ জড়তা কাজ করলেও পরে আর সেই জঘন্য জড়তা থাকেনি!

দিনে দিনে হলুদ খামের বদৌলতে সংসারের অনেক অভাব বিলীন হয়ে গেলেও,বিলীন হয়ে যায়নি মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা বোবা কান্নারা! সামান্য প্রতিবাদ করার যে অক্ষরগুলো মনের পাতায় ছিল,ধীরে ধীরে তাতে মরচে পড়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে ছেলেমেয়ে যত বড় হতে থাকে মিনহাজ সাহেব তত সন্তানদেরকে দেশছেড়ে যাবার সব রকম ব্যবস্থা করতে থাকেন। তিনি চাননি তার সন্তানরা এই সিস্টেমের কার্তুজে তার মত সমাজের গোদের উপর বিষফোড়া হয়ে ধুকে ধুকে জ্বলে পুড়ে মরুক। চাননি বিবেকটাকে অন্যায়ের কাছে বন্ধক রেখে মরা অনুভুতি নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে থাকুক! তিনি চেয়েছিলেন সন্তানরা বিদেশ থেকে ডিগ্রি নিয়ে এসে সবকিছু বদলে দিক! কারন তাদের তো কোন অভাব থাকবে না! থাকবে না মনের ভীতে অন্ধ উইপোকার বসবাস!
সেই ছোট বেলা থেকে অভাবকে সঙ্গী করে মিনহাজ সাহেব বেড়ে উঠেছিলেন। অনেক কষ্টে,অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে পড়াশুনা করে একটা চাকুরি পেয়েছিলেন। কিন্তু তার সন্তানদের তো কোন অভাব তিনি রাখেন নি! আশা দুরাশার ভেলা ভাসিয়ে দিন পার করেছেন। নিজের সঞ্চয় বলতে মাথাগুজার একটা বাড়ি আর দুই বিঘার একটা খাস জমি ছাড়া কিছুই রাখেননি। জীবনের সবটুকু সঞ্চয় দিয়ে দুই ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে লেখাপড়া করিয়েছেন। ছেলেরা যখন বেশ দায়িত্ব নিয়ে বোনটাকেও বিয়ে দিয়ে নিজেদের ওখানে নিয়ে গেল তখন মিনহাজ সাহেব ধরেই নিয়েছিলেন ছেলেরা তার অনেক দায়িত্বশীল হয়েছেন!

তিনি যখনই ছেলেদেরকে দেশে আসতে বলেন তখনই তারা সোজা বলে দেয়-"ওদেশে মানুষ থাকে নাকি? না বাবা নিজেদের জানটাকে দিতে চাইনা। এখানেই ভাল আছি।"
মিনহাজ সাহেব হাজারো যুক্তি তর্ক দিয়েও তাদেরকে কিছুই বোঝাতে পারেন না। ছেলেরা চায় বাবা মা যেন ওদের কাছে চলে যায়। কিন্তু দেশটাকে যে কতটা ভালবাসে ওরা দুজন তা কী কেউ জানে? মিনহাজ সাহেবের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম তো কোনভাবেই নিজের ঘরটা ছেড়ে থাকার কথা চিন্তা করতে পারেন না সেখানে দেশ! প্রশ্নই আসে না। ছেলে মেয়ে ছেড়ে বহুদিন থাকলেও এই বয়সটাতে এসে কেন জানি ছেলে মেয়েদের এবং ওদের সন্তানদের সঙ্গ পেতে হাহাকার করে কাঁদে মন। ভুলের প্রায়শ্চিত্ত যে এভাবে পেতে হবে তা মিনহাজ সাহেব ভাবেননি।
একদিন মনোয়ারা বেগম ছেলেদের সাথে কথা বলে ফোন রেখেই করে হু হু করে কেঁদে দেন। মিনহাজ সাহেব জানালায় বসে কৃষ্ণচুড়া গাছের দিকে তাকিয়ে বিষণ্ণতায় মৃদ্যু হেসে যায়। আর তা দেখে এই বুড়ো বয়সেও বাচ্চাদের মত হাউমাউ করে অনুযোগ করে মনোয়ারা
- আপনি হাসছেন! জানেন আপনার বড় ছেলে কী বলেছে?
সাদা ধবধবে ভ্রু আর ঝুলে পড়া চামড়ার মাঝে পিটপিট শান্ত দুটি চোখ তাকিয়ে থাকে আরো কিছু শোনার অপেক্ষায়।
-আপনার আদরের ছেলে বলছে তারা ভাইবোন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে হয় তাদের ওখানে আমাদের দুজনকে চলে যেতে হবে,না হলে ওল্ড হোমে গিয়ে আমাদেরকে থাকতে বলেছে। আমি বলেছি তোদের বাবা আর আমি এখানে মরে পড়ে থাকব তবু বিদেশে যাবনা! জানেন আপনার ছেলে কী বলেছে ? কান্নার বেগ নদীর কলকল শব্দের মত ধেয়ে যায়-
-বলেছে আমাদের নাকি এই ভ্যাজাল দেশে ভ্যাজাল খেতে খেতে অভ্যাস হয়ে গেছে;তাই ওদের ওখানে না যাওয়াই ভাল ওখানকার ভ্যাজালহীন খাদ্য নাকি আমাদের পেটে সইবে না! আরো কী বলে জানেন ?
থরথর করে শরীর কাঁপছে..! জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে আসা সামান্য বাতাসও মনে হচ্ছে ফেলে দেবে এই সাত ফিটের দেহটা! স্ত্রীকে কিছু বলার মত কথা এই মুহুর্তে মনে আসছে না। কেবল অন্ধকার দিয়ে আসছে চারিদিক।
-ও বলে এই বোমাবাজ খুনিদের দেশের নিঃশ্বাস ছাড়া আমরা নাকি অন্য কোথাও গিয়ে দু'দিনও বাঁচব না! আমিও রেগে গিয়ে বলে ফেলেছি- ঠিক আছে তবুও নিজের দেশেই থাকব তোদের মত উটের জকি হয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভাল। ছেলে এই কথা শুনে বলে- "তাহলে আর প্রতিদিন ফোন দিয়ে ঘ্যানর ঘ্যানর করবা না... ওল্ড হোমে গিয়ে থাক যদি তোমাদের টাকা লাগে বল সেই খরচটাও সময় মত পাঠিয়ে দেব।" বলেই ফোনটা কেটে দিল...আমার উত্তরেরও অপেক্ষা করল না! হাই আল্লাহ আমাকে এই দিনও দেখতে হল। সন্তান ছাড়া মায়ের বুক খরাপড়া ধানী জমি...খা খা ধু ধু বালিচর! সুখের আশায় আজ কতটা বছর তোদেরকে ছেড়ে থেকেছি। আশায় আশায় বুক বেধেছি। একদিন সবাই ফিরে আসবি,একী হল আজ...!
কান্নার গতিবেগ আঁচলের মাঝে চাপা পড়বার আগেই সারা ঘর কাঁপিয়ে ধপ করে একটা শব্দ সবকিছুই ওলট পালট করে দেয়। মিনহাজ সাহেবকে মজবুত ভ্যাজালহীন ইম্পোর্টেড লাঠিটাও ধরে রাখতে পারেনি। মনোয়ারা বেগম কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না। তার নিজেরই হাত পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কিছু তো একটা করতে হবে। দিশেহারা হয়ে তিনি জোরে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। ছুটে গেইটের কাছে গিয়েও আবার ঘরে ঢুকলেন। তার চিৎকার শুনে পাশের বাসার সবাই ছুটে এলো। এম্বু্্যালেন্স কল করে মিনহাজ সাহেবকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার বললেন হার্ট এট্যাক করেছেন। যেহেতু প্রথমবার তাই চিন্তার কিছু নেই। উনি খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ্য হয়ে যাবেন। তবে এখন থেকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে। নো টেনশান নো স্ট্রেস। হাসি আনন্দের মাঝে নিজেকে রাখতে হবে।
মিনহাজ সাহেব সন্তানদেরকে তার অসুস্থ্তার কথা কোনভাবেই জানাতে রাজি হলেন না। এই অসুস্থ্তা দুজনের জীবনে যেন অন্যরকম পরিবর্তন এনে দিল।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে একটু সুস্থ্ হতেই মিনহাজ সাহেব স্ত্রীকে সাথে নিয়ে প্রতিদিন হাঁটতে বের হন। পাশেই একটা শিশুপার্কে গিয়ে দুজনে বসে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা...। গল্প করে সময় কাটান আর পার্কে থাকা বিনোদনের বিভিন্ন সরঞ্জামগুলো নিয়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের উচ্ছ্বল আনন্দ আর ছুটে চলা দেখেন। মনোয়ারা বেগমের শরীর কাঁপিয়ে মাঝে মাঝেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে নিজের অজান্তেই। নিজেকে সুখী আনন্দময়ী করে দেখালেও স্বামী ঠিকই শুনে নেই মনের উত্তাল ঢেউয়ের শব্দ। স্বামীকে আনন্দ নিয়ে গল্প করতে দেখে কিছুটা আস্বস্ত হন তিনি। তবে মিনহাজ সাহেব অভিতপ্ত হয় স্ত্রীর লুকিয়ে লুকিয়ে নানা অজুহাতে আঁচল দিয়ে ভেজা চোখ মুছে নেয়া কোনভাবেই বন্ধ করতে পারলেন না ভেবে। আর তাই একদিন স্ত্রীকে ডেকে বললেন-
- চল আমরা বৃদ্ধাশ্রমে যাই। অনাথ আশ্রম শুনেছি দেখা হয়নি।ওখানে যাবার দায়িত্ববোধ বা প্রয়োজনীয়তা কোন দিন অনুভব করিনি! এখন মনে হয় ভুলই করেছি! আর তাই আজ এই নতুন আবিস্কারের জন্ম হয়েছে! যারা সন্তানের হাত ছেড়ে দিয়ে অনাথ করেছে তাদের কী অবস্থা হয়েছে আমি জানিনা। তবে যারা সন্তানের জন্য নিজের ভীতরের মানুষটাকে মনের মাঝে দাফন দিয়ে এই সন্তানদেরকেই কেবল মানুষের মত মানুষ করতে চেয়েছেন,সেই সন্তানেরা পিতামাতার হাত ছেড়ে দেবে আর ভীতরের মানুষটা জ্বলেপুড়ে জিন্দা লাশ হয়ে থাকবে তা কী করে হয়? চল দেখে আসি বৃদ্ধদের আশ্রমটাতে কী এমন মজা আছে। ওখানে হয়ত কিছু সঙ্গী পাওয়া যাবে। আর খাওয়া দাওয়া ডাক্তার কোন কিছুর জন্য মনে হয় চিন্তা করতে হবে না।
-কিন্তু এতোগুলো টাকা যে ওদেরকে দিতে হবে সে টাকা কোথায় পাবেন।
-ভাবছি এই বাড়িটা ভাড়া দিয়ে দিব আর জমিটাও বিক্রি করে দেব।
প্রতিবারের মত এবারও মনোয়ারা স্বামীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু না বললেও মনে মনে ভেবে রেখেছেন এবার সে স্বামীকে অন্যায় কিছুই করতে দেবেন না! যা সে এতোটা বছর সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে করেছেন তা আর কোনভাবেই হতে দিবেন না...!

পরের দিন দু'জনে মিলে বাসার পাশেই নতুন গড়ে উঠা একটা বৃদ্ধাশ্রমে গেলেন। সেখানে দশ বার জন বৃদ্ধ জুটির দেখা পেলেন তারা। তবে তাদের মাঝে দুটি জুটিকে দেখলেই বোঝা যায় তারা অন্যদের থেকে আলাদা! আলাদা পোশাকে,কথা বলার ভঙ্গীমায় এমন কী এখানে তারা যে খাপ খাওয়াতে পারছেন না তাও বেশ সুস্পষ্ট তাদের আচরণে। এখানেও বিভেদ? একটা দিকে সবার মিল আছে!
কারো মুখে এক ফোটা হাসি নেই! বিষণ্ণতার ছোয়া চোখের পাতায়, ঠোঁটের মাঝে, কপালের ভাঁজে ভাঁজে খুবই স্পষ্ট।
বৈষম্যের কারনটা জানতে বেশি সময় লাগল না। অফিস রূমে যেতেই একজন স্কুলে ভর্তি হবার সময়ে শিক্ষক যেভাবে কথা বলে ঠিক সেভাবে একটা লোক কথা বললেও কিছু কিছু প্রশ্ন ছিল একেবারেই অন্যরকম,অনাকাংখিত।লোকটি নানা রকম প্রশ্ন করে যাচ্ছেন।
-আপনাদের এখানে থাকা খাওয়া চিকিৎসা বাবদ যে খরচ তা কী বিদেশ থেকে আসবে না কী দেশ থেকে? আপনাদের সাথে যারা দেখা করতে আসবেন তারা কী ভি আই পি লেবেলের না কী সাধারন? আপনার ছেলেরা বা আত্মীয়দের মাঝে কেউ কী দাদাগিরি করে? মিনহাজ সাহেব কৌতুহলী হয়ে উঠলেন! নিজেই প্রশ্নদাতাকে প্রশ্ন করলেন-
-খরচ বিদেশ থেকে আসবে নাকী দেশ থেকে এটা কেন বলছেন?
-আসলে টাকাটা কোথা থেকে আসছে তার উপর ডিপেন্ড করে উন্নত মানের খাবার,চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় কিনা তাই ।
-আর দ্বিতীয় প্রশ্নটির কারন?
- না মানে ওটা সিক্রেট...
-সিক্রেট কেন? বিরক্তির ভাবটা কপালের ভাঁজে স্পষ্ট দেখা দিতেই লোকটি কীভাবে যেন বলে চললেন-
-আসলে এখানে যারা আসে বেশিরভাগই দেখা যায় মধ্যবিত্ত ঘরের। তারা ঠিকমত মাসিক ফি জমা দেয় না... আবার দু একজন আছে টাকা ঠিক মত না দিয়ে ঐসব ভিআইপি দের দোহায় দিয়ে ভয় দেখায়। তখন আমাদের অনেক সমস্যা হয় বুঝতেই পারছেন।
মিনহাজ সাহেব বুঝতে পারলেন সব কিছুই। এই পরিস্থিতির শিকার তিনি নিজেও হয়েছিলেন কোন এক কালে। তিন নম্বর প্রশ্নের উত্তরটা আর জানতে চাইলেন না কারণ তিনি জানেন কেন এই প্রশ্ন।তিনি একটা বিষয়ে বেশ খুশি হলেন এই লোক কোন গুন্ডা পালন করছেন না! শুনেছেন অনেক আশ্রমে গুন্ডা রাখা হয় কেউ একটু অন্যভাবে কথা বললেই তাদেরকে শায়েস্তা করতে। এই লোক নতুন বলেই হয়ত এই বিষয়টি এখনো মাথায় আনেননি!
-আচ্ছা আমাকে একটা কথা বলেন তো আপনাদের এই বৃদ্ধাশ্রম কেন বানালেন? - -কী যে বলেন স্যার! এইটা বানিয়েছি বলেই তো এই বুড়ো বয়সে একটু আশ্রয়, সেবা-শুশ্রূষা পাবেন। না হলে বিনা চিকিৎসায় না খেয়ে ঘরে পড়ে মরে পচে থাকতে হত। আশে পাশের বাতাসে গন্ধ শুকে এসে মানুষ গলাপচা দেহটা বের করত।
লোকটা পান খাওয়া রক্ত লাল ঠোঁট উল্টিয়ে নাক কুচকে এমন করে কথাটা বলল যেন সে এখনই লাশ পচা গন্ধ পাচ্ছে! টপ টপ করে খানিকটা লাল কস বের হয়ে ঠোঁটে আসতেই সুরুৎ করে আবার মুখের ভীতরে নিয়ে নিল! মিনহাজ সাহেবের ফর্সা মুখটাতে রাগ জমে রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। লোকটা তার মুখের দিকে তাকিয়ে পান চাবানোই ভুলে গেলেন! বুঝতে পারলেন ভুল জায়গায় বেশ কঠিন ব্যবহার করে ফেলেছেন। মিনহাজ সাহেব নকল দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞাসা করলেন-
-বুড়ো নয় বৃদ্ধ বলেন। আর অন্যভাবে ওতো এই বৃদ্ধদেরকে আপনারা সহযোগিতা করতে পারতেন? পারতেন না ?
-মানে স্যার? লোকটা ঘামতে শুরু করেছে দেখে মিনহাজ সাহেবের বেশ ভাল লাগছে। একধরনের আনন্দ মনের মাঝে টগবগ করে ফুটছে! চোখের সামনে ভাসছে তিনি ফাইল দেখছেন টেবিলের ওপাশে বসে আর এপাশে বসে একজন লোডেড পিস্তল ধরে রেখেছেন। আর তিনি সব কিছুকে উপেক্ষা করেই কথা বলে যাচ্ছেন।
- এই বৃদ্ধাশ্রম না বানিয়ে আপনারা তো যারা তাদের জ্ন্মদাতা পিতা মাতাকে বৃদ্ধ হলে বোঝা মনে করে সেইসব সন্তানদের প্রতি লিগ্যাল একশান নেয়া যায় এমন কাজ করতে পারতেন! কী পারতেন না?
- ঠিক বুঝতে পারলাম না স্যার? লোকটা আমতা আমতা করা শুরু করেছে।
-এই যে,যে সব পিতামাতাকে এখানে টাকার বিনিময়ে রেখেছেন ওদের সন্তানকে এই টাকার চারগুন ফাইন করতেন;যদি তারা তাদের পিতামাতাকে না দেখে। এক একটাকে ধরে জেলে ভরে রাখতেন আর এই বৃদ্ধ মানুষদের থাকা খাওয়ার খরচা নিয়ে নিতেন। এতে করে ওরা বাবা মা-কে দেখতে বাধ্য হত। এই আপনি এখন কত কষ্ট করে ছেলে মেয়ে মানুষ করছেন বাড়ি করছেন আর এই ছেলেমেয়ে বড় হয়ে অমানুষের মত আপনাকে আপনার বাড়িটা দখলে নিয়ে বিক্রি করে বা রিয়েলষ্টেটকে দিয়ে দিয়ে নিজেদের মত করে থাকবে। ওরা একবারও ভাব্বে না কত কষ্টে তিলে তিলে গাঁথা এক একটা ইটের গাঁথুনি দিয়ে বাড়িটি করেছে বাবা মা। আরে আপনারা তো ঐ মানুষ নামের অমানুষদের বোঝা টেনে ওদেরকে শান্তি দিচ্ছেন,এই অসহায় মানুষদেরকে কান্নার সাগরে ভাসিয়ে!
-কিন্তু স্যার এতে আমি কী করব? তা ছাড়া অনেক জনবল আর টাকার দরকা..
এবার বেশ জোরে টেবিল চাপড়ে দাঁড়িয়ে পড়েন মিনহাজ সাহেব।
- আরে রাখেন মিয়া মিউ মিউ... কে বোঝে এই দুঃখি অসহায় বাবা মায়ের কষ্ট? কে আছে এদের পাশে? এই আপনি নিজের সুবিধার জন্য ব্যবসা খুলে বসেছেন। আচ্ছা এতে টাকা লাগেনি? যতদুর জানি এটা তো ভাড়া নিয়েছেন তাই না ?
-হ্যাঁ লেগেছে । জ্বী ভাড়া বাড়ি কিন্তু স্যার এভাবেও যে মানুষের উপকার করা যায় এটা ভাবিনি।
-মানুষের উপকার করছেন না কী অমানুষের? এখানে যাদেরকে রেখেছেন তাদের কোন আনন্দ নেই তা কী দেখেছেন ? এরা তো সবাই জ্যান্ত মরা মানুষ!
-জ্যান্ত মরা মানুষ...! আসলে আমি নতুন খুলেছি এই অল্ডহোমটা বুড়ো বুড়িদের উপকারের কথা ভেবেই।
লোকটা বেশ ভয় পেয়েছে প্রায় কেঁদে ফেলে।
-বৃদ্ধা বলুন..!
-জ্বী স্যার। কথাটা বলে আঙ্গুল দিয়ে উপরের দিকে নির্দেশ করে বলে
- স্যার কী অনেক উপরের লোক? না মানে স্যার আপনি বলেন কী করলে সত্যিই আমি এই বুড়ো বুড়িদের না মানে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের উপকার করতে পারব? আমার বাবা মৃত্যুর সময় আমাকে বলেছেন জীবনে যেন আমি অন্তত এই ভাল কাজটা করি।
মিনহাজ সাহেব কিছুটা শান্ত হলেন তিনি বুঝতে পারলেন লোকটি যতটা খারাপ ভেবেছিলেন ততটা খারাপ নন। তারপর উকিল বন্ধুকে ফোন করলেন। তিনি আসতেই তিনজনে মিলে পরামর্শ করলেন। ধীরে ধীরে সাথে এসে যোগ দিলেন ওখানে থাকা বৃদ্ধ যুগলেরা। সবার মাঝে বেশ উৎসাহ দেখা গেল এই নিয়ে।
মিনহাজ সাহেব বললেন-
-আমি আমার দুইবিঘা জমিতে একটা পার্ক করব। সেখানে বৃদ্ধদের দোলনা থাকবে, আড্ডা দেবার চেয়ার টেবিল থাকবে, ছায়া ঘেরা ছাউনি থাকবে। ইবাদতের জন্য ছোট্ট করে হলেও জায়গা থাকবে। এই জমির সাথে আরো খানিকটা জমি বাড়িয়ে দিতে হবে। তারপর ইচ্ছে মত আমরা এখানে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে থাকব এবং বাগানের কাজ এবং সংগঠনের কাজ করব। মাঝে মাঝে নাতি নাত্নি নিয়ে এখানে সবাই আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠব আর রাতে যার যার বাসায় ছেলে ও তাদের পরিবারের সাথে ঘুমাবো। যে সব ছেলে রাজি না হবে তাদেরকে বাড়ি ছাড়া করে নিজেরা থাকব।
-কিন্তু স্যার যাদের বাড়ি নেই তারা? এবার আবারো ভাবলেন সবাই। মিনহাজ সাহেব বললেন-
-আমি আমার বাড়িটিতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করছি। তবু কোন বৃদ্ধাশ্রম হবে না। আমার আত্মীয় হয়ে আমরা সবাই একটা পরিবারের মত থাকব। কিন্তু ঐ ছেলেদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে না বলে দিলাম।ওদেরকে শাস্তি দিতেই হবে...। আর যেসব ছেলে তার বাবা মাকে অনেক কষ্টের মাঝে থেকেও সাথে রাখে প্রয়োজনে তাদেরকে ঋণ হিসাবে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে। দেশে অধিকার আদায়ের হাজারও রকম ট্রেড ইউনিয়ন আছে এবার বৃদ্ধদেরও অধিকার আদায়ে থাকবে সামাজিক সংগঠন আর তা আমরাই প্রথম চালু করব! অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়ে দিয়ে আমরা আমাদের অস্তিত্বকেই শেষ করে দিচ্ছি !
- সহজ সরল মানুষের এদেশে জায়গা নেই...! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথাটা বলে উঠে একজন। এবার মিনহাজ সাহেবও ধীরে ধীরে বুকের মাঝ থেকে বন্দী থাকা নিঃশ্বাসটুকু বের করে শান্ত অথচ দৃঢ়তার সাথে বলে-
- খাঁটি সোনা পুড়িয়েই গয়না হয়- আর মাটিকে পুড়িয়ে শক্ত ইট..! সহজ সরল মানুষগুলো কষ্ট ও অত্যাচারের আগুনে
পুড়ে পুড়ে পাথর হয়ে গেছি আমরা। এই আমাদের ভুলের জন্য আজ সমাজের দৈন্যতা বেড়ে গেছে! কারণ আমরা শান্তি রক্ষা করতে নিজেকে আড়াল করেছি এতোদিন! কিন্তু একবারও ভাবিনি আমাদের এই সাময়ীক শান্তি রক্ষার দরজা কী ভয়াবহ অন্ধকারের পথ খুলে দেবে! আর তাই এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বাধঁা আসবে কিন্তু আমরা সবাই মিলে যুব সমাজকে সাথে নিয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে জয়ী হবই! মনে রাখতে হবে অন্যায় যারা করে তাদের মনে ভয় থাকে যতগুণ যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে তাদের সাহস থাকে তার থেকেও বেশী! অন্যায়কারী নিজেদের ভয় সাহসীদের মাঝে ঢুকিয়ে নিজেদের ভয়কে সাহসে পরিনত করে...! সুতরং জয়ী আমাদের হতেই হবে...নাহলে সেদিন দূরে নয় ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবার জন্য একজন কাউকেও খুঁজে পাওয়া যাবে। অতএব,শুরুটা এখান থেকেই হোক। এই বৃদ্ধাশ্রম-এর বিরুদ্ধে আগে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে তারপর ধীরে ধীরে অন্য কাজ। আমাদের মনে রাখতে হবে বটের ছায়ার প্রয়োজনেই বটগাছের যত্ন নিতে হবে...!

সহমত জানিয়ে সবাই মিলে শপথ নেই এই কাজে সবাই মিনহাজ সাহেবের সাথে আছেন! এই বৃদ্ধাশ্রম করতে দেয়া হবে না আর। আর এটা বন্ধ করতে হবে যুব সমাজকে সাথে নিয়েই...তাদেরকে সাহস দিয়ে! সবাই বুঝল মিনহাজ সাহেব মানুষটা আসলে যতটা না সন্তানদের বিপক্ষে তার থেকে বেশী এই বৃদ্ধাশ্রমের বিপক্ষে। তার কাছে কেন যেন মনে হচ্ছে এই বৃদ্ধাশ্রমের জন্ম হয়েছে বলেই পিতা মাতার প্রতি সন্তানের অবহেলা আগের চেয়ে ভয়ঙ্করভাবে অনেক বেশি বেড়ে গেছে। ঠিক যেমন ভাবে শিশু আশ্রমের সুবিধা থাকায় অবৈধ সম্পর্কে সন্তান জন্ম দেয়া বেড়ে গেছে! বাবা মাকে আশ্রমে রাখাটা এখন সন্তানদের কাছে আয়েশপূর্ণ আধুনিকতার নামে স্বার্থপরতা ছাড়া আর কিছুই না। যা সামাজিকভাবে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরীতে বৈরীতার সৃষ্টি করছে। মিনহাজ সাহেব চোখ দুটো বুঁজে একনাগাড়ে বলতে লাগলেন
- এই বৃদ্ধ বয়সে মানুষ সন্তানদের কাছে কী চায়? একটু নিরাপদ আশ্রয় আর তাদের সুখের জীবন দেখে নিজেদের সফল কর্মের উল্লাসে বেঁচে থাকার সামান্য আনন্দ। তোদের জন্য কী বাবা মায়ের কোন অবদান নেই? হ্যাঁ প্রতিদানের কথা ভেবে বাবা মা সন্তানকে লালন পালন করেন না কিন্তু তাই বলে কী এই বৃদ্ধ বয়সে তাদের হাত ছেড়ে দিতে হবে? তোদের সন্তানের পাশাপাশি বাবা মাকেও কী তোরা সন্তান ভাবতে পারিস না? যে বয়সে মৃত্যুকে খুব সামনে থেকে দেখে ইবাদতে সৃষ্টি কর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থণায় গভীরভাবে ধ্যানমগ্ন হবার কথা! সেই বয়সে এসে কেন শেষ আশ্রয়ের চিন্তায় বার বার ধ্যান ভেঙ্গে যাবে? কেন এই বয়সে এসে নিরাপত্তাহীনতায় কাটাতে হবে? কেন রাতের ঘুম কেড়ে নেবে নিজের বিগত ভুল যেখানে সে ভুল শুধরে নেবার কোন উপায় নেই? কেন সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে রাখার খরচ বহন করার সামর্থ্য রাখলে নিজের কাছে রাখতে পারবে না? কেন...?

এবার কেউ কিছু বলল না। সবার চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। মনোয়ারা বেগম স্বামীর কথায় বুঝতে পারলেন ছাই চাপাপড়া আগুন গড়গড় করে বের হচ্ছে। এবার সব জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। বহু বছর আগে স্বামীর এই রূপটা দেখতে চেয়েছিলেন কিন্তু দুর্ভাগ্য তার,সেভাবে তিনি দেখতে পাননি। দেরিতে হলেও স্বামী যে তার আসল রূপে ফিরে এসেছে তাও এতো বড় একটা মহান কাজের জন্য! এই আনন্দোচ্ছ্বাস সে মনের মাঝে দমিয়ে রাখতে পারলেন না! রাস্তায় বের হয়ে খরস্রোতা রোদের তীব্রতাকে উপেক্ষা করে স্বামীর হাত থেকে লাঠিটা ফেলে দিয়ে নিজের হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন প্রিয়তমের হাত। বহুদিন পর আনন্দে হু হু করে ভেসে বেড়ায় হৃদয়ের শুকনো নদীতে স্বর্গীয় খুশির জলোচ্ছ্বাস।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তোজাম্মেল হক খোকন সুন্দর লেখা
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
রোদের ছায়া অভিনন্দন শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো আপুর জন্য।
আখতারুজ্জামান সোহাগ অভিনন্দন সুলেখিকা সেলিনা আপা। ভালো থাকবেন, শুভকামনা রইল।
মিজানুর রহমান রানা কনগ্রেচুলেশন! শুভ কামনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সতত শুভকামনা
সকাল রয় অনেক অনেক শুভকামনা
অনেক অনেক ধন্যবাদ প্রিয় অনন্ত শুভকামনা
সাদিয়া সুলতানা আপা আপনার পরিশ্রম সার্থক হয়েছে দেখে ভাল লাগল। আপনি অনেক লেখাতেই বিজয় ডিজারভ করেন কিন্তু কেন যেন অনেক ভাল লেখাই আসে না, আসলে এই পেইজে অনেকেই ভাল লেখে। শুভকামনা আপা।
"কেন যেন অনেক ভাল লেখাই আসে না, আসলে এই পেইজে অনেকেই ভাল লেখে। " -সহমত আপনার কথায়। আপনিও অনেক ভাল লেখেন সাদিয়া সুলতানা আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাল থাকুন সেই শুভকামনা
প্রজ্ঞা মৌসুমী এ সংখ্যায় দেখেছি- পাঠকদের পড়ার এবং ভোট দেয়ার আগ্রহ কম ছিল; বিশেষ করে গল্পের ক্ষেত্রে। যাক, সোনালী জলোচ্ছ্বাসকে বিজয়ীর সারিতে দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। অনেক শুভ কামনা এবং অভিনন্দন
অনেক ধন্যবাদ আপনাকেও বিজয়ী অভিনন্দন অনন্ত শুভকামনা
আপেল মাহমুদ অনেক অনেক অভিনন্দন আপু।
ধন্যবাদ সতত শুভকামনা
ওয়াহিদ মামুন লাভলু অনেক অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানবেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ সতত শুভকামনা

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৪৮

বিচারক স্কোরঃ ২.৬৮ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ১.৮ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী