অবুঝ হৃদয়ে অবিরল রক্তক্ষরণ...!

প্রিয়ার চাহনি (মে ২০১২)

সেলিনা ইসলাম
  • ৩০
  • ৩৩
এই প্রথম একটা বিদেশী ডেলিগেটের সাথে চুক্তি হয়েছে কোম্পানির । বেশ বড় ধরনের একটা ডিল ...। অর্ডারটা যদি সময় মত ডেলিভারি দেয়া যায় তাহলে বিদেশের এই কোম্পানির সাথে দীর্ঘমেয়াদী একটা ব্যবসার চুক্তিও হয়ে যাবে ।অন্ধকার ভেদ করে আকাশের চাঁদটা আজ বুঝি কিছুটা জ্যোৎস্নার আলো নিয়ে পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে ...অনাবিল আনন্দে ঘরে ফিরে বেডরুমের আলো জ্বালতেই ...
'সারাটা জীবন তুমি আমাকে ঠকিয়েছ ...! বিয়ের আগে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা - ছুটির দিনে বেড়াতে নিয়ে যাবে , প্রতি মাসে আমরা অন্তত একবার ট্যুরে যাব...আর এখন ! দেশের সবকিছুই এখনো দেখা হল না আর বিদেশ...!' এক নাগাড়ে এতোগুলো কথা বলে হাঁপিয়ে গেছে । মনে হল কিছুটা বাতাস ফুসফুসে ধারণ করে একটু বিরতি নিলো । তারপর আবার শুরু করে
"কথা বলছো না কেন ...? আমাদেরকে নিয়ে কি তোমার কোন ভাবনা নেই …?"
চড়া গলায় কথাগুলো বলে নাকি সুরে কান্না জুড়ে দেয় মিথিলা । সজীব কিছুই বলেনা ,বিস্মিতও হয়না । চুপচাপ জামাকাপড় ছাড়তে থাকে । ওকে কথা বলতে না দেখে আরো জোরে চেঁচিয়ে বলে

'এই জগতের সবার জন্য সময় আছে মি. সজীবের , শুধু তার পরিবারের জন্য একটুও সময় নেই…!'

'আস্তে কথা বল সবার ঘুম ভেঙ্গে যাবে...'! কথাটা আর না বলে পারল না সজীব । যদিও কোন লাভ নেই তবুও কথাটা বলা ।সুখবরটা আর দেবার ইচ্ছে হল না । এতো আনন্দের মাঝেও সারা রাত ক্লান্তি আর অবসন্ন দেহটা বিছানায় দিয়েও দুচোখে একফোঁটা ঘুম আসে না তার। সমুদ্রের নিঃশব্দ গর্জন আর নোনা স্রোত আছড়ে পড়ে হৃদয় পাড়ে ...
***************************************************************************************************************
সজীব হায়দার-
প্রতিদিন যেমন একই খাবার খেতে খেতে খাবারের প্রতি অরুচি এসে যায়, আমারও ঠিক এমনটাই হয়েছে । একই কথার রেকর্ড ...ঘ্যান ঘ্যান ঘ্যান ঘ্যান ...ভাল লাগে না আর। সেই সকালে বাসা থেকে বের হই আর ঘরে ফিরি রাত গভীরে । ভালোবাসার টানেই তো আমার ঘরে ফেরা , না হলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য কেন এই ঘরে আসা ? ইচ্ছে করলে নিজের অফিসেই রাত কাটিয়ে দিতে পারতাম । এতো সব কষ্ট কাদের জন্য করছি আমি ? কেনই বা করছি ? এই যে এতো এতো দামী দামী সব ফার্নিচার , অভিজাত এলাকায় ফ্লাট , দামী গাড়ী এ সব কি ভোগ করা হত ? একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে হয়ে; এতো অল্প সময়ে এতো সাফল্য কজনেই বা পায় ? আজ আমি যা কিছু পেয়েছি তা আমার নিজের চেষ্টাতেই । কেউ আমাকে সামান্যতম সাহায্য করেনি । যদিও কিছুটা কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ,এদিক সেদিক করতে হয়েছে ।

যখন অভাব ছিল- তখন একরকম চাওয়া ছিল মিথিলার । যখন সেই চাওয়াগুলো একটা একটা করে পূর্ণ হতে লাগল , তখন তো সে শুধু পেয়েই গেছে । আর এখন ...? তার চাহিদা সে সব কিছুতেই আমাকে চায় ! আমি নিজে তাকে নিয়ে সাথে করে সব কিছু কিনে দেব । সবাইকে নিয়ে ঘুরে ফিরে বেড়াব... যে আমি সারাদিনে খাওয়ার সময় পাইনা সেই আমি ওকে কি করে সময় দেব ? কতবার বলেছি আর মাত্র কিছুদিন । একটা পজিশনে যখন ব্যবসাটা দাড় করাতে পারব, তখন আর আমাকে বেশী সময় দিতে হবে না । এখন আমি ইয়াং- আমাকে খেঁটে এই ব্যবসা প্রসারিত করতে হবে ।তারপর আমার সন্তানরা একটু বড় হলে ওদের আর তেমন কষ্ট করতে হবে না । ওরাই এই প্রতিষ্ঠানকে আরো বাড়াতে পারবে । বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে পারবে । মিথিলার কথা:- তখন সে বুড়ী হয়ে যাবে , তখন সে আনন্দ করতে পারবে না । এইসব কথার কি কোন মানে হয় ? কোথায় আমাকে আমার এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সহযোগিতা করবে তা না করেই, বরং সারাদিন পর রাতে বাসায় এসে চাই একটু ভালভাবে খাব তাও হতে দেয় না... ।

অবশ্য মিথিলা চেয়েছিল দুজনে মিলে কষ্ট করি । কিন্তু আমি নিজেই চাইনি যে ও সাহায্য করতে এসে ব্যবসা দেখুক বা চাকুরী করুক। শিক্ষিতা হলেই কি মেয়েদের চাকুরী করতে হবে ? বরং একজন শিক্ষিত মা একটা সুন্দর ও শিক্ষিত সংসার সমাজকে উপহার দিতে পারে । দুজনে কষ্ট করে টাকা হয়তো পাব কিন্তু পরিপূর্ণ সুখ আসবে না । দুজনেই কাজ শেষে ক্লান্ত হয়ে যাব । কেউ কাউকেই ঠিকভাবে সময় দিতে পারব না । পরিবারের সবাই সমানভাবে দুজনের ভালোবাসা ও যত্ন থেকে বঞ্চিত হোক- এটা আমি কখনই চাইনি । আমি চেয়েছি ও আমার বাবা মা আর সন্তানদেরকে সময় দিক । বাসায় এসে যেন ওর হাসি মুখটা আমি দেখতে পাই । যা দেখে আমি আমার কষ্ট, ক্লান্তি ভুলে নতুন ভাবে উদ্দীপিত হব । চেয়েছি সন্তানদেরকে মানুষের মত মানুষ করুক । কিন্তু আমার এই চাওয়াটাই জীবনে কাল হয়ে গেল । মিথিলা ভাবল আমি চাইছি না ও সবসময় আমার সাথে থাকুক অথবা চাকুরী করুক । কেন যে সে এমন করে ভুল বুঝে ? আচ্ছা ঘরের মানুষ , প্রিয় মানুষ এমন করে ভুল বুঝলে কোন কাজ কি মন দিয়ে করা যায় ? কোন কিছুতে কি শান্তি পাওয়া যায় ?

চাওয়া পাওয়ার অংক মেলাতে গিয়ে শেষাবধী জীবনটাই বিষময় হয়ে গেছে । কোনকিছু আর ভাল লাগে না ...! আমি জানি বাবা মা সবাই এখনো না ঘুমিয়ে আমার অপেক্ষায় আছে । অথবা ঘুমালেও এই চেঁচামেচি শুনে নিশ্চয় জেগে গেছে ...! আজকাল তাঁদের মুখোমুখি হতেও আমার লজ্জা লাগে ;এক ধরনের জড়তা আমাকে গ্রাস করে । তাঁদের সাথে ফোনেই যেটুকু কথা হয় । তাঁরাও আমাকে বলে যেন এতো কষ্ট না করি কিন্তু যেভাবেই হোক ফ্যাক্টরিটা আমাকে দাড় করাতেই হবে । এই মুহূর্তে যদি একটু বেখেয়াল হই তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে ...! বাবার অজান্তেই আমি যে বাবার ভিটেমাটি সব ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত রেখে লোন নিয়েছি । একথা আমি কাউকেই বলিনি , এমন কি মিথিলাকেও বলতে সাহস পাইনি । দেখা গেল রাগে উত্তেজিত হয়ে কখনো হয়ত বাবা মায়ের সামনে কথাটা বলে ফেলেছে । তখন যে কি হবে সেই চিন্তা করলে শিউরে উঠি আমি । আর তাই যেভাবেই হোক ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করে -সবকিছু ঠিক জায়গা মত রাখতে হবে । নাহলে যে বাবার বিশ্বাস হারাতে হবে । আর যাই হোক বিশ্বাস ঘাতক সন্তান উপাধি নিয়ে বাঁচতে চাইনা । কিন্তু এই কথা কাকে বোঝাব আমি ? জন্মদাতার কাছে বিশ্বাস ঘাতক হব না বলে আজ প্রিয়তমার কাছে মিথ্যেবাদী হচ্ছি । আফসোস যাকে এতো ভালবাসলাম ,যার জন্য এতো কিছু করছি সে একবারও আমাকে বোঝার সামান্যতম চেষ্টা করছে না ...! একটা সময় ছিল মিথিলার ঘরের জানালা দরজা সবকিছুই যেন আমারই জন্য অপেক্ষায় থাকতো । আমি যেদিকেই চাইতাম ভালোবাসা আর শান্তির ছড়াছড়ি । তখন অভাব ছিল কিন্তু এই ঘর আমাকে প্রশান্তি দিয়েছে । আর মিথিলা সব সময় সাহস দিয়ে পাশে থেকেছে । আর আজ ভাবছে আমাদের কোন অভাব নেই _তাই এই আচরণ...! কিন্তু আমার মিথিলা কি একবারও জানার চেষ্টা করবে না যে , এখন আমাদের অভাবটা আসলে আগের চেয়েও অনেক বেশী ...!

মিথিলা কুরাইশি-
সজীবকে, অনেক দুরের মানুষ মনে হয় ।শত চেষ্টায়ও আজকাল আর ওকে বুঝতে পারিনা । ও যে এতো টাকার পিছনে ছুটবে কোনদিন ভাবিনী । কত স্বপ্ন দেখেছি দুজনে মিলে ...সব স্বপ্ন এখন ডানা ভেঙ্গে সংসার নামক শৃঙ্খলে বাঁধা পড়েছে । আমার পড়াশুনা ,শিক্ষা , সংস্কৃতি সবকিছুই মুখ থুবড়ে চার দেয়ালের মাঝে গুমরে কাঁদছে । আর তারই জ্বলন্ত আগুনে জ্বলে যাচ্ছি আমি -আজ নয়টা বছর । দুজনের হৃদয় দূরত্ব যোজন যোজন দূর ! আগে এমন ছিল না ...যদিও বিয়ের পরে চারটা বসন্ত অভাবের তাড়নায় কাটিয়েছি কিন্তু তবুও ছিল স্বপ্নে মোড়া সুখ ।আর সেই সুখে সোনালী আলো জ্বেলে এলো নিধি ...তারপর এই চাঁদকে নিয়েই আরো দুটো বছর কষ্টের সীমানা পাড়ি দিতে দিতে জীবন খাতায় ফোঁটে আরো দুটো ফুল। তখন সজীব একটা গার্মেন্টসে বেতনভুক্ত কর্মচারী । টাইম টু টাইম অফিস সে তখনও করত না ,কিন্তু এতো রাত সে কখনই করেনি । ছুটির দিনে সবাই মিলে সিএনজি-তে করে ঘুরতে যাওয়া ... মাঝে মাঝে ফোচকা খাওয়া কতইনা সুখের ছিল মুহূর্তগুলো । কিন্তু মাস্টার্স করা একটা ছেলে সে কিনা একজন সাধারণ কর্মচারী ? তার ঘরে কেন নুন আনতে পান্তা ফুরবে?কেন বাচ্চাদের একটা খেলনা কিনতে গেলেও দশবার ভাবতে হবে বা কারো কাছে হাত পাততে হবে ...! আর তাই সজীব সিদ্ধান্ত নিলো সে কেনইবা এমন একটা ব্যবসার মালিক হতে পারবে না ? সংসার বড় হল , বাবা মাকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা হল। সংসারে অভাবটা যেন জেঁকে বসলো ।স্বপ্নখেরো খাতার পাতাগুলো আস্তে আস্তে অন্ধকারে মিলিয়ে যেতে লাগল ...!

আমার কথা বাবা মা গ্রামে থাকলে কি তাঁদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা যেত না ? কখনো কখনো তাঁরাও আসতো শহরে আর আমরাও মাঝে মাঝে গ্রামে বেড়াতে যেতাম। যেহেতু অভাব তাই ভেবেছি হয় বাবা মায়ের কাছে আমরা স্থায়ী হই না হয় কষ্টটা আমরা একা ভোগ করি । এই বয়সে কেন এই ঝড় হাওয়ার ঝাপ্টা তাঁদের বুকে লাগতে দেব...! কিন্তু সজীব তা না করে একেবারেই স্থায়ী বাসিন্দা করে নিলো তাঁদেরকে । যদিও বাবা মা এখানে থাকতে চাননি , আর আমিও এই নিয়ে কিছুই বলিনি । কারণ ভাল কিছু বললেও বাবা মা এবং সজীব ভাবতো আমি চাইছিনা যে তাঁরা এখানে থাকুক । মাথা গুঁজার ঠাই আমি চাইলে তাতে কি দোষ ? তবে আমি চেয়েছি যেহেতু বাবা মা এখানে আছেন বাচ্চারা উনাদের সাথে থাকুক । আর আমি যেহেতু শিক্ষিতা , আমি একটা চাকুরী করি । দুজনে মিলে সংসারের হাল ধরি । কিন্তু সজীবের কথা -না তাতে ছেলে মেয়ে মানুষ হবে না...! স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগেঃ- তাহলে সে কিভাবে এই বাবা মায়ের কাছে থেকে মানুষ হল ? তবে কি সে মানুষ হয়নি বলেই এমন কথা বলছে ? আসলে আমার অবদান সে চায়না আমার সাফল্য সে কোনভাবেই সহ্য করতে পারে না ...! আর তাই আমাকে ঘরে বন্দী করে রেখে শান্তি পায় ।এটা আমাকে একধরণের মানসিক শাস্তি দেয়া ছাড়া আর কিছুই না ...! আমি কেন বন্দী পাখীর মত জীবন যাপন করব ? কেন আমি আকাশে উড়তে পারব না ? কেন সব কিছুতেই ওর কাছে হাত পাততে হবে ? দিনে দিনে নিজেকে আমার একরকম বোঝা মনে হয় ...!

যদিও চাকুরী করতে নিষেধ আছে আর কোন কিছুতে না । ঘরে বসেও কিছু করা যায় আর তাই ভাবছি ঘরে বসে কিছু করব । কিন্তু সজীবের যে পজিশন তাতেও সে বাঁধা দিলে আশ্চর্যের কিছু নেই ।আজকাল একবারের জন্য হলেও সজীব আমার মুখোমুখি হয়না । যদি হত তাহলে আমার অনুভূতিগুলো সে বুঝতে পারত । কেন আমি এমন করে চাই সজীবকে ? আর মুখোমুখি হবেই বা কি করে ...! অন্ধকারে এসে আবার ভোরের আলোতেই মিলিয়ে যায় সে...! দিনের আলো ফোঁটা অবধিও যদি সে থাকত তাহলেও দিনের আলোর রশ্নি প্রিয় মানুষটার অন্তরের চোখের দরজা খুলে দিতো...! খুব অভিমান হয় আমার । মাঝে মাঝে ভাবি সবকিছুই একসময়ে স্বাভাবিক হয়ে যাবে ... আবার ভাবি সবকিছুই ঠিক আছে । কিন্তু যখন একাকীত্ব ঘিরে ধরে তখন মনে হয়- এটাকে জীবন বলে না । দুজন মানুষ এমন করে বাঁচতে পারে না । জীবনে নেই কোন বেঁচে থাকার আনন্দ ...নেই কোন আলো । এই আলোহীন জীবন যদি টেনে নিতেই হয়; তাহলে কেন মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য একসাথে থাকা ? এর থেকে ভাল দুজন দুদিকে যাওয়া...!

***************************************************************************************************************
'কিরে তুই এখানে ... ! আর আমি সারা জায়গায় তোকে খুঁজে খুঁজে মরে যাচ্ছি ! '
নিধির সামনে কোমরে হাত দিয়ে বেশ মুরব্বির মত করে কথাগুলো বলে ফাহিম । জবাবে নিধি কোন কথা বলে না । মেয়েটা সারাক্ষণ ভীষণ চুপচাপ থাকে ,কারোর সাথেই মিশে না । সবাই বাচ্চারা যখন টিফিনের বাটি নিয়ে জমিয়ে আড্ডা মারে । অথবা ভাগাভাগি করে খেতে খেতে আনন্দে হাসে । নিধি তখন একাকী নির্জনের এই গাছের নীচে এসে বসে থাকে । সে সবার কাছ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারলেও ফাহিমকে শত চেষ্টায়ও এড়াতে পারেনা । ছেলেটা জোঁকের মত ওর পিছনে লেগে থাকতে ভালোবাসে ।
'কিরে কথা বলছিস না কেন?'
এবার তাকায় নিধি ফাহিমের দিকে । ভীষণ কান্না পায় । ফাহিমকে দেখে তার হিংসা হয় । ওর মা প্রতিদিন ওকে স্কুলে দিয়ে যায় আবার নিতেও আসে । মাঝে মাঝে ওর বাবাও দিয়ে যায় ...ফাহিমকে একটা প্রজাপতির মত মনে হয় নিধির । সব সময় হাসিখুশি । অবশ্য নিধির বাবা মা ও একসময় এই কাজটি করত । তারপর শুধু মা আর এখন করে ড্রাইভার মফিজ কাকা । ফাহিমের মা কত মমতা নিয়ে ওকে রেডি করে দেয় আর নিধিকে রেডি করে দেয় বুয়া ...! বুয়াই প্রতিদিন সকালে গাড়ীতে তুলে দিয়ে রাতে দেয়া মায়ের টাকাটা পকেটে দেয় বার্গার আর পিজার জন্য ...কিন্তু নিধি টাকা প্রথম প্রথম হাতে নিলেও এখন আর নেয় না । বুয়া বেশ খুশি হয় তাতে- হাত নেড়ে বাই বাই দেয় । নিধি চোখ বুজে মুখটা আকাশে তুলে স্নিগ্ধ সকালের বাতাস নেয় । আসলে সে ভীতর থেকে বের হয়ে আসা , ঠিক গলার কাছে আঁটকে যাওয়া কিছু একটা আড়াল করে ...যা সে কাউকেই দেখাতে চায় না । নিধি জানে ফাহিমকে সে নিজে থেকে কিছু না বললেও ঠিকই সে ওর দিকে তাকিয়ে মনের সব না বলা কথাগুলো বুঝে যাবে । ভালোবাসা,ভালোবাসা বুঝি এমনই হয় ? চোখের দিকে তাকালেই তাঁর মনের ভাষা পড়া যায় ! চোখ দেখে মানুষকে চেনা যায় !
"কিরে আবার ঝগড়া হয়েছে ?' চমকে উঠে নিধি ...মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দেয় ।
'আজও টিফিন আনিস নি" ? সেই একই ভাবে মাথা নেড়ে না বলে ।
'ভাবিস না সব ঠিক হয়ে যাবে ...আমি আছি তো ,বোকা কোথাকার...'
ফাহিম নিজের বাটিটা খুলে রুটি আর ভাঁজি তুলে দেয় নিধির মুখে ।
নিধির আকাশ জুড়ে বর্ষার দহন...! আর তারই ছিটা লাগে ফাহিমের ভালোবাসা ঘেরা আত্মার গভীরে । চোখ ! সেতো - "উইন্ডো টু দ্যা সোল "-এর সত্যতা নিধির মত করে আর কেউ বুঝি বোঝেনা ...!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আবু ওয়াফা মোঃ মুফতি ভালো লাগলো| তবে, সজীব ও মিথিলার কথাগুলো ওদের দিয়ে না বলিয়ে লেখক নিজে বললে বোধহয় আরো প্রানবন্ত হত|
মোঃ শামছুল আরেফিন অবিচ্ছেদ্দ অথচ ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গিতে তিনটি জীবনের গল্প। তিনটি জীবনের মনের কথা, অবিযোগ, সুখ-দুঃখ সব কিছু এত নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন যে আপু আমি চরম মুগ্ধ হলাম। ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতা মানুষকে তার প্রিয় জনের কাছ থেকে কিভাবে যে দূরে সরিয়ে দেয় তা বুঝিয়ে দিলেন। দুটো মানুষের (সজীব- মিথিলা) যে ভিন্নধর্মী অথচ পজিটিভ চিন্তাভাবনা, দুজনেই দুজনের পরিপূরক, পরিবারের প্রতি সম সহানুভূতি তবুও একে অপরকে ভুল বুঝার এই যে সংস্কৃতি এটা আপু এত সূক্ষ্মভাবে দেখিয়েছেন- কি বলব আর। অসাধারণের চেয়ে বেশি কিছু ছিল সেটা।গল্পের শেষে এসে নিধির মনোবেদনা আর কষ্ট গল্পকে ভিন্ন একমাত্রা দান করেছে। অসম্ভব ভাল লাগা রেখে গেলাম আপু। দেখা হবে আবার বাবা সংখ্যায়।
আধুনিকতা আর চাহিদার চাপে আমরাই আমাদের জীবনটাকে যান্ত্রিক করে ফেলেছি । মিথ্যে মরীচিকার পিছনে ছুটে নিজেদেরকেই ভুলতে বসেছি । খুব সুন্দর ও মূল্যবান মন্তব্য করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে । ইনশাল্লাহ আবারও পাব শুভেচ্ছা ও শুভকামনা
প্রজ্ঞা মৌসুমী "মিথিলা কুরাইশি' নামটা অনেক্ষণ চোখ জুড়ে ছিল এবং ভালো লাগলো। বরের নাম লেজুড়ে রাখার বিরোধী মেয়েটার মধ্যে আত্নসচেতনতা, ডিগনিটি ব্যাপারটা আছে। সজীব বউকে সত্যি কথা বলার মত আস্থাও রাখতে পারছে না-দেখে খারাপ লাগলো। দূরত্বগুলো এভাবেইতো তৈরি হয়। পৃথিবীতে এত ভাষা তাও সব কথা বলা হয়না, যায়না। এতবছর পাশাপাশি থেকেও এক আরেককে বুঝে না। হয়ত বুঝার চেষ্টা করে না...কেউ চেষ্টা করলেও আরেকজন বুঝতে দেয়না। "চোখ মনের কথা বলে" কে জানে চোখের দিকে তাকাতেও ভুলে যায় কিনা। সে থাক, ঐসব কাসুন্দি... গল্পে অনেককিছু তুলে এনেছেন। গল্পের প্লট গতানুগতিক মনে হলেও ভিন্নতা ছিল। 'বাচ্চারা যখন টিফিনের বাটি" পড়ে নিধি-ফাহিমকে অনেক ছোট মনে করছি। এজন্য "ভালোবাসা বুঝি এমনই হয়?" এই জায়গায় ভালোবাসার বলে বন্ধুত্ব দেখলে বোধয় স্বস্তি হতো। তারপর ভাবলাম বন্ধুত্বেওতো ভালোবাসা থাকে... সব মিলিয়ে সুন্দর গল্প।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর ও বস্তুনিষ্ঠ মন্তব্য করার জন্য ! নিধি-ফাহিম চরিত্রের মধ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি ছোট বাচ্চারা কত সহজেই একজন আরেকজনের চোখ দেখেই মনের কথা পড়তে পারে অথচ বড়রা সেখানে হয় ব্যর্থ । অসাধারণ মন্তব্যের জন্য প্রাণঠালা শুভেচ্ছা ও শুভকামনা পাশে থাকার প্রত্যাশা রইল ।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ...................সুন্দর একটা গল্প। শুভেচ্ছা রইল।
সেলিনা ইসলাম সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ও আন্তরিক শুভেচ্ছা । সবার জন্য শুভকামনা ...।
নাসির আহমেদ কাবুল এক কথায় অসাধারণ। খুব ভালো লেগেছে।
তানি হক অনেক সুন্দর একটি গল্প পড়লাম..মিথিলা ,সজীব দুজনের কষ্টই অন্তর ছুয়ে গেছে ..বুঝতে পারছিনা কিবোলব...দোয়া করি রব্বুল আলামিন আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার তৌফিক দিন ..আমিন
আপুকে ধন্যবাদ ও সুভেচ্ছা ..এই গল্পটির জন্য ..
আহমেদ সাবের "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস / ওপারেতে সর্ব সুখ, আমার বিশ্বাস"। আপনার গল্পটা পড়ে লাইনগুলো মনে পড়ে গেল। সম্পদ থাকলে সুখ নাই আবার সম্পদ না থাকলেও সুখ নাই। খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন একটা সমসাময়িক বাস্তবতা।

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪