দহন

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

সাইফুল্লাহ্
  • ৭৯
  • 0
দহন
সাইফুল্লাহ্


‘অই ছ্যাড়া, কি নাম তোর?’ বাসের ভিতরে পা রাখতেই এরকম একটা প্রশ্ন ভেষে আসলো অর্ণবের দিকে। অর্ণব প্রথমে কিছুটা বিব্রত হলেও পরক্ষণে বুঝতে পারলো যে, ওই মিষ্টি প্রশ্নটা তাকে করা হয়নি। প্রশ্নটা করা হয়েছে বাসের ভিতরে যাত্রীদের সামনে নীরবে হাত পেতে থাকা ছোট্র ছেলেটাকে। ছেলেটার বর্ণনা দিতে গেলে এক কথায় বলা যায়, পাটকাঠি। রুক্ষ হলেও চুল গুলো কিছুটা আচড়ানো। বুকের হাড্ডি গুলো অনেক দুর থেকেই গোনা যায়। পেট থেকে পিঠের দূরত্ব তিন ইঞ্চি হবে হয়তো। প্যান্ট খুলে পড়ছে প্রায়। বেল্ট হিসেবে আছে একটা চিকন পাটের দড়ি। যা হোক, ছেলেটা কোন কথা বলছে না। নীরবে প্রত্যেকের সামনে হাত পেতে যাচ্ছে। হঠাৎ একজন বললো
–‘এই, ভাই তোর নাম জানতে চাইলো না?’ আর একজন বললো
–‘এই ভিক্ষা করো ক্যা? মা-বাপ আছে, না নাই?’ ছেলেটা নির্বাক। আরো কিছু প্রশ্ন এবং উপদেশ ছুড়ে দেয়া হচ্ছিল ছেলেটার দিকে। তখন, পেছনে ছয় ছিটে বসে থাকা একজন বললো
–‘আপনারা অকারনে ছেলেটাকে কেন বিভ্রান্ত করছেন? পারলে দু’চার টাকা দেন, না পারলে ও ওর মতো চলে যাক।’ ভদ্র লোকের দলটি হো হো করে হেসে বললো
–‘আহা আমার দরদীরে! যান, যান বাড়ী নিয়ে জামাই আদর করে খাওয়ান ওকে।’ লোকটা আর কোন কথা বললো না। ছেলেটা এসবে অভ্যস্ত। ও বুঝতে পারলো যে, এখান থেকে অনেক কিছুই পাওয়া যাবে, কিন্তু তাতে পেট ভরবে না। তাই আর দাড়িয়ে না থেকে বাস থেকে নেমে গেল। অর্ণবও নামলো। ছেলেটি রাস্তার পাশ দিয়ে সোজা হাঁঠছে।
-‘এই ছেলে, এই ছেলে শোন’ বলে অর্ণব কয়েক বার ডাকলো। ছেলেটা হেঁটেই চলছে। হয়তো দ্বিতীয় কোন প্রশ্নত্তর পর্বকে এড়ানোর জন্য। অর্ণব আরো জোরে ডাকলো-‘শোন তোমার কোন ভয় নেই। আমি কিছু বলবো না।’ ছেলেটা দাড়াল। অর্ণব পাশের দোকান থেকে বড় আকারের দুটি রুটি কিনলো। কিন্তু ছেলেটাকে আর দাড়ানো পেল না। ও আবার হাঁটছে। অর্ণব আবার জোরে ডাক দিলো
–‘এই শোন তোমার জন্য খাবার এনেছি।’ কথাটি শুনে ছেলেটার পা যেন মাটির সাথে চুম্বকের মতো আটকে গেলো। এ যেন আনাকাঙ্খিত এবং জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কিছু পাওয়া। ছেলেটা পেছনে ফিরে দেখলো অর্ণব খাবার নিয়ে তার দিকে আসছে। এ যে মহা আনন্দের ক্ষণ ওর। ওর এই আনন্দের ক্ষণটাকে উপভোগ করছে রাস্তার দু’পাশে দাড়িয়ে থাকা নিরীহ গাছপালা গুলো। ওর হাতে খাবার দিতেই চোখ থেকে গড়াতে লাগলো নীরব অশ্রু। সমাজের লোক দেখানো thank you বা ধন্যবাদ হয়তো ও জানে না। কিন্তু, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের যত ভাষাই থাকুক না কেন, ওর এই নির্ভেজাল নীরব অশ্রুর কাছে কৃতজ্ঞতার সকল ভাষাই আজ মাথা নত করতে বাধ্য। পরক্ষণে ভালো লাগার এক অকৃতিম হাসি। যেন অনেক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ওই হাসিটা। অর্ণব ছেলেটার হাতে খাবারটা দিয়ে রুক্ষ চুলগুলোয় হাত বুলিয়ে চলে গেল। কোন প্রশ্ন করলো না। বললো না অন্য কোন কথাও। শুধু যাবার সময় বললো –‘ভালো থেকো।’ বাস চলে গেল। অর্ণব কিছুক্ষন বাসের অপেক্ষা করে একটা রিক্সায় উঠলো। হঠাৎ দেখলো সেই ছেলেটা দৌড়াচ্ছে, যাকে সে খাবার কিনে দিয়েছিল। দু’টো কুকুর ওর সেই খাবার নিয়ে গেছে। সাথে কাকও আছে কয়েকটি। কুকুরে পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে পড়ে গেল ছেলেটা। হাটু কেটে গেছে কিছুটা। সে দিকে খেয়াল নেই। শুধু ওর অশ্রু সিক্ত চোখ দু’টি তাকিয়ে আছে সেই খাবারের দিকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আসলাম হোসেন বেশ হয়েছে দেখি.............।
ভালো লাগেনি ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
ম্যারিনা নাসরিন সীমা আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া নিত্য দিনের ঘটনা খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছ । খুব ভাল লাগলো ।
ভালো লাগেনি ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১
নিলাঞ্জনা নীল হৃদয়স্পর্শী গল্প প্রিয় তে নিলাম
Sujon গল্প ছোট হলেও খুব ভালো হয়েছে।
ভালো লাগেনি ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১১
M.A.HALIM অনেক অনেক অনেক সুন্দর। অল্প কথায় কত কিছুর ভাবাবেগ। বন্ধু সাইফুল্লাহ- আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১
Lutful Bari Panna গল্পটা পড়ে মনে হল- বিধাতার মত নির্দয়.. তবে লেখার হাত খুবই ভাল...
ভালো লাগেনি ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১১
মাহমুদা rahman সাইফুল্লাহ.অনুগল্প..কিন্তু অনেক কথা বলে দিল..
ভালো লাগেনি ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১
প্রজাপতি মন ওর হাতে খাবার দিতেই চোখ থেকে গড়াতে লাগলো নীরব অশ্রু। সমাজের লোক দেখানো thank you বা ধন্যবাদ হয়তো ও জানে না। কিন্তু, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের যত ভাষাই থাকুক না কেন, ওর এই নির্ভেজাল নীরব অশ্রুর কাছে কৃতজ্ঞতার সকল ভাষাই আজ মাথা নত করতে বাধ্য। খুবই ভালো লাগলো কিন্তু শেষের অংশটুকু খুব কষ্ট লাগলো খাবার পেয়েও খেতে না পারার কষ্টে।
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১
আলমগীর হোসাইন ভালো লাগলো।
ভালো লাগেনি ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১১

২৫ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪