বিকেলরঙা বেলুন

স্বপ্ন (জানুয়ারী ২০১৮)

প্রজ্ঞা মৌসুমী
  • ১১
  • ৩৮
কিছু মানুষ থাকে যারা খেলতে ভালবাসে। কিছু মানুষ ভালোবাসে জিততে। কেউ জয় অর্জনের জন্য থাকে অপেক্ষায়। আর কেউ জয়কে কেড়ে নিতে হয় বেপরোয়া। একজন প্রেমিক, দস্যু অন্যজন। ক্ষ্যাপা দুজনেই। এ গল্পের চরিত্র আল আহসানও ছিল এক ক্ষ্যাপাই। পরবাসে বাঙালি যেমন মিথের মতো স্মৃতিচারণ করে পদ্মার ইলিশের। আল আহসানও স্ত্রী জয়তুনের কাছে স্মৃতিচারণে কিংবা 'মাকাল ফল' কটাক্ষের প্রতিবাদে কখনো সখনো খ্যাপাটে দিনের কথা বলে। ব্যাডমিন্টন, হ্যাণ্ডবল, ফুটবল, টেবিল টেনিস, লম্বালাফ, উচ্চলাফ, মোরগের লড়াই, বউচি, হাডুডু, দৌড়-পলি মাটির ফসলের মতো কত না খেলায় ছুঁয়েছিল সফলতা। নিজে নিজেই প্র্যাকটিস করে শিখেছিল বাউন্সার, লেগ কাটার, রির্ভাজ সুইং, অফ কাটার, ইয়র্কার । ছয়টা বল ছয় রকমের ডেলিভারি দিয়ে, কখনোবা হ্যাটট্রিক করে চমকে দিয়েছিল উত্তরপাড়া থেকে কন্ঠনগর, কন্ঠনগর থেকে গোঁসাইপুর, গোঁসাইপুর থেকে নানুয়ারবাজার, নানুয়ারবাজার থেকে ধর্মসাগরের পাড়। একেকটা জয় উদ্বুদ্ধ করেছিল তাকে। স্বপ্ন দেখিয়েছিল এক প্রজাপতিরঙা ভবিষ্যতের। একদিন কাঁপিয়ে দেবে পৃথিবীর সকল কিংবদন্তি স্টেডিয়াম।

আচমকা ঝড়ে যেমন ঝরে যায় বাবুইয়ের ঘর। আল আহসানের স্বপ্নও ঝরে যায় চৌদ্দশত সাত বঙ্গাব্দের দগদগে বৈশাখে। সাতশ কুড়ি মার্কস পেয়েও ন'মাসের ছোট ভাই-বন্ধু-সহপাঠী আল ইমরানের মতো হাইস্কুল পেরুনো হলো না ওর। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের দুই আর শূন্য তাকে দিয়ে গেল ঘরহারা বাবুইয়ের শূন্যতা। এই পরাজয় যেন জাহাজের কোথাও ছোট এক কুহরের মতো, যেখানে ঐ দিঘল জাহাজেরই নিয়তি লেখা থাকে নিস্তব্ধ অন্ধকারে। 'ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে!'- এই স্বপ্নে বিলীন আব্বার লাথি, মারও যে মাঠ থেকে দূরে রাখতে পারেনি আল আহসানকে। কোন কোন দিন জানালার শিক গলেই পালিয়েছে মাঠের ঘোরে। সেই বিকেলের মাঠটাই হয়ে গেল রূপকথা এক কিংবা মরীচিকা।

এক, তিন, সতেরো বছরে প্রভূত সম্ভাবনাকে অতলে ডুবিয়ে আল আহসান অবশেষে থিতু হয় গড়পড়তা মানুষের জীবনে। ঢাকায় তার নতুন সাকিন। শুধু মীরপুর স্টেডিয়াম আর কাঁপিয়ে দেয়া হয় না তার। এনজিওতে কাজ করে। পোস্ট কেরানির হলেও মেজাজী ম্যানেজার নুরুননাহার হালদারের ডান-বাম দুটো হাতই ও। দুটো হাতে বাজে বলে ব্যস্ততাও যেমন, সুখের পায়রাও জুটেছে দু,এক-- মায়াবতী সংসারী বউ, এক শিশু মুখ। সম্পাদক মমিনুল ভাই প্রায়ই আমার লেখা নিয়ে অনুযোগ করেন- 'চরিত্রের বর্ণনা দিতে পারেন না!' ছবি আঁকায় বরাবরই ঘটিরাম আমি। নাক-মুখ বসাতে পারি কিন্তু চেহারার আদল দিতে পারিনি কোনদিনই। তবে এটুকু জানাতে পারি ঘটকালির দিনগুলোতে ম্যানেজার নুরুননাহার বলেছিলেন- 'তোমাকে দেখেই ওদের পছন্দ হবে।' ভালোলাগার অভাব ছিল না কোনকালেই আল আহসানের। শুধু এক সময় খেলা ভালোবাসত বলে আর কারো ভালোবাসা দখল নিতে পারেনি জমাট মাঠে। তারপর জীবনের টানাপোড়েনে বিরানই থেকে গেছে তার প্রেমের জমিন। তাই এতদিনে ওর সবটাই পেয়েছে স্ত্রী জয়তুন। তবু মাঝে মাঝে জয়তুনের মনে হয় কিছু একটা যেন নেই- সেই প্রথম প্রেমের স্বাদ। দুটো একটি দুঃখবিলাস ছাড়া সংসার পাগল আল আহসানকে পেয়ে সুখীই জয়তুন।

আল আহসান বিকেলে সুঢৌল ভুড়ি দুলিয়ে বাড়ি ফেরে। কদমতলীর পথে দুটো একটা ঝিঙে ফুল দেখে মুগ্ধ হয়, মুগ্ধ হয় পাটোয়ারী মিলসের পেছনের ঝিলে ফুটে থাকা লাল শাপলায়। ইহসান মিঞার দোকানে লোকেরা খেলা দেখে, গ্যাঞ্জাম করে। আল আহসান কোলাহল এড়িয়ে চলে যায় বিকেল ঢেকে রাখা বাড়ির পথে। ওর হাতে নীলরঙা বেলুন, অন্য হাতের ব্যাগ থেকে উকিঁ দেয় দুটো তিনটে সব্জি, মাছের মরা চোখ। আল আহসানের লাগাম পড়ানো চোখ তখন খুঁজে আজমানের তাজ। ছোটবেলায় বু'জীর মুখে শোনা সেই আজমান গাজী যে শিখেনি হেরে যেতে। প্রাসাদ তার ঘিরে ফেলেছে দস্যুবাহিনী। তিনশ দিনের যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজিত গাজী লুকিয়ে রাখে সাত কন্যা। যাদের কোনদিন আর খুঁজে পায়নি কেউ। অবশেষে শেষ পরিণতিতে পরাস্ত গাজী 'শির দেব, তবু তাজ দেব না' হুংকার তুলে রক্তাক্ত তলোয়ার চালায় নিজের গলায়। বু'জী বলতো গাজীর সাত মেয়ে আজও দূর্লভ ক্ষণে দেখা দেয় রঙধনু হয়ে আর পশ্চিমের আকাশে ঐ যে লাল ওটা গাজীর রক্ত। ঐখানে ঝিলিক দেয় অপরাজেয় আজমানের তাজ। কে জানে এসব সত্য কিনা। তবু প্রতিদিন আল আহসান খুঁজে বেড়ায় আজমানের তাজ।

কোন এক কবি লিখেছিল- স্বপ্নের নাম জেনো উঠোন। সত্যি, মহুয়া স্বপ্নের মতোই দোল খায় উঠোনের সবুজ মাচায় কুমড়োর ফুল। কুকুর নরম স্বরে চেঁচায়, বারান্দায় লিলুয়ার হাওয়ার মতো মেয়ে ডাকে- বা বা, বখাটে বাতাস তোলপাড় করে নীলরঙা বেলুন। মেয়ের হাতে দুপুরে ফেরিওয়ালা থেকে কেনা লালরঙা বল। বেলুন ধরবে বলে তুলতুলে হাত খসে একটু একটু করে গড়িয়ে যায় বল আল আহসানের পায়ের কাছে। আল হাসান থমকে যায়। এ যেন গাজী আজমানের কাটা মাথা। দূর বাঁশঝাড় থেকে হি হি করে হেসে উঠে কোন কালের স্বপ্নের প্রেতাত্না। সে হাসিতে চমকে উঠে আল আহসান। চমকে উঠি আল আহসানকে বয়ে বেড়ানো আমিও। আজকাল বিকেল গড়ালেই একই দৃশ্য দেখি- হি হি করে হেসে উঠা বাঁশবাগান, গাজী আজমানের কাটা মাথা, সবুজ মাচায় কুমড়োর ফুল, বখাটে বাতাস তোলপাড় করে কার যেন নীলরঙা বেলুন...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান আপনার গল্পগুলো পড়তে যেমন কষ্ট বুঝতে তেমনি মজা,কমেন্ট করতে ততোধিক ভয়,কি জানি কি হয়। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ২৮ জানুয়ারী, ২০১৮
রতন কুমার প্রসাদ গল্পটি ছোট হলেও অনেক সুন্দর। অজস্র শুভেচ্ছা জানবেন।
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮
মাইনুল ইসলাম আলিফ দারুণ।একরাশ মুগ্ধতা রেখে গেলাম।শুভ কামনা আর ভোট রইল।আমার পাতায় আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৮
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ গীতলধর্মী অসাধারণ গল্প কথা।। প্রতি শব্দে এবং বাক্যে মজা এবং শিহরণ লুটে নেওয়া যায়। বিমুগ্ধ পাঠ।। অফুরান শুভ কা ম না রইলো।।
ভালো লাগেনি ২০ জানুয়ারী, ২০১৮
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি আল আহসান কোলাহল এড়িয়ে চলে যায় বিকেল ঢেকে রাখা বাড়ির পথে। ওর হাতে নীলরঙা বেলুন, অন্য হাতের ব্যাগ থেকে উকিঁ দেয় দুটো তিনটে সব্জি, মাছের মরা চোখ।......// সাদামটা টানালেখা নয়....কতকটা কাব্য করে উপমার ব্যাবহার গল্পটিকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে গেছে ....খুব ভালো.... যেমন গল্প....তেমন কবিতা.... দুই ভুবনেই আপনাকে সমান মানায়....যাইহোক যথাযথ মূল্যায়ন করে গেলাম...সেই সাথে আমার কবিতার পাতায় আমন্ত্রণ....শুভ কামনা রইলো....
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৮
মোঃ মোখলেছুর রহমান আপনার প্রতিটি লেখার প্রকাশ ভঙ্গির জৌলুস অসাধারন।
মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া অতীত স্মৃতিদল কেবলি তাড়িয়ে বেড়ায়, কখনোবা হানা দেয় দুঃস্বপ্ন হয়ে। স্বপ্ন হানায় চুরমার হয় অনাগত স্বপ্নশতদল। স্বপ্নঘুড়িকে উড়াতে পারে আরেকটি স্বপ্ন বেলুন; তাতে যতক্ষণ দম থাকে ততক্ষনই পাখা মেলে স্বপ্নডানা। কাব্যিক ঢংয়ের লেখাটি ভালো লেগেছে। মাঝে মাঝে কিছু অপ্রাঙ্গিকতা নাহয় উপেক্ষিতই থাকুক। সম্পাদনের টেবিলে আর ছুরি চালিয়ে মৌলিকতা নষ্ট করে কি লাভ। ভালো লাগল লেখাটি। পছন্দ, ভোট এবং অবশ্যই শুভকামনা থাকল। ভালো থাকুন এই শীতে।
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী সাদাসিধে লেখার মাঝে বেশ একটা মন জয় করে নিয়েছেন। আসলে কিছু কিছু সফলতার পিছনে লুকিয়ে থাকে কঠিন পরিশ্রম, আবার কিছু কিছু সফলতার পিছনে কঠিন পরিশ্রম থাকা সত্যেও সেখানে সামান্য দায়ীবদ্ধতা থাকলে আর আগাতে পারে না। গল্পের কাহিনী প্রমাণ করেছে যে, যদিও তার অনেক বড় স্বপ্ন ছিল চমৎকার খেলে স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে দেওয়ার, কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হওয়ার কারণে ভেঙে যায় তার বুকের ভিতর জমানো সবটুকু স্বপ্ন। এ ছাড়াও গল্পের শেষে দারুণ ভাবনার বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়...... শেষে বলবো, এটা যে অসাধারণ গল্প তা সহজে উপলব্দী করা যায়.... শুভকামনা দিদি, ভালো থাকুন।
সেলিনা ইসলাম আমাদের সমাজে প্রায় প্রতিটি বাবা মা-ই নিজের স্বপ্ন সন্তানের মাঝে দেখেন। নিজে যে স্বপ্নকে জীবন দিতে পারেননি। তাঁরা চান সন্তান সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করবেন। সন্তানের ইচ্ছে অনিচ্ছা স্বপ্নের চেয়েও বড় নিজের হেরে যাওয়া স্বপ্নকে জয়ী হতে দেখা। অসাধারণ সব উপমায়,গল্পে আমাদের সমাজের বাবাদের মানসিকতার একটা চমৎকার উদাহরণ তুলে ধরা হয়েছে। শুভকামনা নিরন্তর।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু খেলাধুলায় যে এত ভাল সে তো পৃথিবীর সকল কিংবদন্তি স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারে। কিন্তু পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপের কারণে তার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। তাকে বরণ করে নিতে হয় সাধারণ মানুষের জীবন। গল্পটা খুবই দুঃখজনক। অনেক খ্যাতি অর্জনের সম্ভাবনা ছিল আল আহসানের। কিন্তু সব নষ্ট হয়ে গেল। গল্পের ভাষা অত্যন্ত কঠিন। খুবই পরিপক্ক হাতের ও অগাধ জ্ঞানের স্বাক্ষর আছে লেখায়। অনেক মানসম্পন্ন একটি গল্প। আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করবেন। কেমন আছেন আপনি? আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। ভাল থাকবেন। নতুন বছরের অনেক অনেক শুভেচ্ছা নিবেন।

১০ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪