চমক

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

মৃন্ময় মিজান
  • ১৪
থেমে আছে ট্রেন।

সাইরেন বাজিয়ে একটি পুলিশ গাড়ি এসে থামে কানের উপর। আমার কান তখন আরশ মহল্লার মতই বিশাল, সুনিপুণ। সহস্র দিক থেকে ছুটে আসা বাঙ্ময় ধ্বনিপুঞ্জ আমাকে ভাসিয়ে দেয় স্রোতের মোহনায়। আমি ভাসতে ভাসতে সরষের ক্ষেত দেখি। ক্ষেতগুলো পায়ে পায়ে এখন মাটি। মাটি পেরিয়ে কৃষকের মুখ দেখি। মুখগুলো বেদনার্ত, হাহাকারে ঘেরা। আমার পাশেই তখন ভেউ ভেউ করে কেউ কাঁদে। এত বয়ষ্ক লোক 'আম্মা আম্মা' বলে কাঁদছে? ছিহ্!

কেয়াদের উঠোনটার কথা মনে পড়ে। ঘরের পাশে বিশাল মাঠ। সেই মাঠের দাড়িয়াবাঁধা আর গোল্লাছুট ক্লান্ত একটি কিশোর দাঁড়িয়ে আছে উঠোনে। পানি চায়। কেয়ার কোমল হাতে একটি গ্লাস শরবত হয়ে এগিয়ে আসে। কিশোরের বুক উথাল পাতাল। 'বাড়িতে মা আছে। এত সাহস ভাল না'।

একটা ট্রেনে কতগুলো বগি থাকে? বগি গুনবো নাকি মানুষ দেখবো ? রক্তাক্ত ছিন্ন ভিন্ন মানুষ! মানুষের মিছিল কোথা থেকে কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে। মিছিল থামছে না। আমি মিছিলে ঘুরতে ঘুরতে পড়ে যাই। আবার উঠি। কেয়া কোথায়? কেউ একজন আমাকে ধরে। আমি আর আমি থাকি না। কোন এক স্বপ্নপুরী আমাকে গ্রাস করে। আমি হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হাঁটতে থাকি।

কলাভবনের সামনে হাসছে কেয়া। ওর চারপাশে এত আলো কেন? পাখা গজাল কখন মেয়েটার! আজকাল ও বড্ড ছেলেমানুষ। কখন যে কী করে! সাদা পাখা হঠাৎ মেলে দেয় আকাশে। ছোট হতে হতে পাখি হয়ে যায়। চারদিক শুনশান হয়ে কখন যেন ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে। আমাদের কলাভবন তখনো কেয়াহীন কায়া নিয়ে নিথর!

হাসপাতালের বারান্দায় মানুষের ভীড়। আমি মুখে মুখে কেয়াকে খুঁজি। ওহ্ কেয়া! তুই কি ট্রেনটা মিস করেছিলি? আমার সাথে নিশ্চয়ই মিথ্যা বলেছিলি। ফোনটা কেউ ধরে না কেন? ফোনটা কি চুরি গেছে! কেয়া, তোকে চমকে দিতে গিয়ে আমি এ কোন চমকে পড়লাম! একটু দেখা দে সোনা! কেউ কি নেই, আমাকে কেয়ার কাছে নিয়ে যাবে। ও খোদা! তুমি কোথায়! একটু কেয়ার কাছে নিয়ে চলো আমাকে!

মানুষের মাতম শুনছি। এত এত কান্না আমাকে স্পর্শ করে না। আমি কান্নার ভেতর খুঁজি পরিচিত একটি মুখ। ছিন্ন ভিন্ন শরীরগুলি আমাকে আরো ক্ষেপিয়ে তোলে। এগুলোকে এখানে এনেছে কে? সব ফালতু মাল! ভাগ এখান থেকে। আহত কারো কান্নায় আমার মেজাজ সপ্তমে চড়ে যায়। কী এমন হয়েছে যে, এমন গরুর মত চিৎকার করতে হবে! কেয়া! সুইট কেয়া! তুই এখন কই সোনা! একটা বার ফোনটা ধর!

হঠাৎ আমার একটা পালস মিস হল। ফোনটা রিসিভ করেছে কেউ। 'হ্যালো' শুনতেই চিৎকার করে উঠি 'কেয়া কোথায়?' 'একটা ট্রেন এক্সিডেন্ট হয়েছে। সেখানে মোবাইলটা পেয়েছি। কার মোবাইল তা তো বলতে পারবো না।' ইয়া মাবুদ! কেয়া তাহলে ট্রেন মিস করেনি! হায় খোদা আমি কেয়াকে কোথায় পাই এখন!

কসাইগুলো সব আহত মানুষ নিয়ে ব্যস্ত। অথচ শালারা কেয়ার খবর রাখে না। কেয়াকে না পেলে সবগুলো হাসপাতাল আমি বোমা মেরে উড়িয়ে দিবো। কে মরল কে বাঁচলো কিছুই দেখবো না আর! বিড় বিড় করে পরিকল্পনা আওড়াতে আওড়াতে হাঁটছি। 'পেলেন'? একজন আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। ক্লান্ত মাথাটা এদিক ওদিক হেলাতেই বললো, 'লাশগুলো ওদিকটায় রাখা হয়েছে। দেখে আসতে পারেন।'

আমার পা চলে না। শরীর ভেঙ্গে আসছে। কাছে যেতে দেখি একটা লাশ কেয়া হয়ে শুয়ে আছে! এত্তবড় সাহস! আমার কেয়ার বেশ ধরে। ভাগ শয়তান! ভাগ এখান থেকে! আমি তোকে খুন করবো ইবলিশের বাচ্চা ইবলিশ! দু হাতে একটা ইট নিয়ে শয়তানের মাথায় মারতে উদ্যত হতেই কোন এক কসাই আমাকে জাপটে ধরে। আমি চিৎকার করে বলে উঠি, শয়তানটার কত বড় সাহস! আমার কেয়া হয়ে শুয়ে আছে! হারামীটারে আমি আজকে মেরেই ফেলবো!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি কলাভবনের সামনে হাসছে কেয়া। ওর চারপাশে এত আলো কেন? পাখা গজাল কখন মেয়েটার! আজকাল ও বড্ড ছেলেমানুষ। কখন যে কী করে! সাদা পাখা হঠাৎ মেলে দেয় আকাশে। ছোট হতে হতে পাখি হয়ে যায়। চারদিক শুনশান হয়ে কখন যেন ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে আসে। আমাদের কলাভবন তখনো কেয়াহীন কায়া নিয়ে নিথর!.............// গল্পের ছোট ছোট প্যারা গুলো এক একটি কবিতার পাপড়ি মনে হয়েছে অসাধারণ কাব্যময় অনুভূতি আপনার হাতে.....লেখাটি খুব ভালো লেগেছে.... মূল্যায়ন যোগ্য....অনেক ধন্যবাদ আপনাকে.....
ভালো লাগেনি ৩০ জানুয়ারী, ২০১৫
মনজুরুল ইসলাম symbol of real love.Have got much plesure and pain for keya.Good luck.
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫
রোদের ছায়া অ- নে-ক দিন পর আপনার লেখা পড়ছি। লেখনীর স্বকীয়তা উপভোগ করলাম। শুভকামনা অফুরন্ত।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৫
মাইদুল আলম সিদ্দিকী অসাধারণ লিখেছেন... বেদনার আহাজারি ছিল।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১৫
ওয়াহিদ মামুন লাভলু ভালোবাসার মানুষ চিরবিদায় নিলে এমনই হয়। দুঃখজনক গল্প। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
ভালো লাগেনি ১৩ জানুয়ারী, ২০১৫
মোস্তফা সোহেল দারুন লেখনি ভঙ্গী পড়ে সত্যি চমক পেলাম
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১৫
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ খুব ভাল লাগল মনে রাখার মত গল্পটা ।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৫
সৃজন শারফিনুল "..আমার পা চলে না। শরীর ভেঙ্গে আসছে। কাছে যেতে দেখি একটা লাশ কেয়া হয়ে শুয়ে আছে! এত্তবড় সাহস! আমার কেয়ার বেশ ধরে। ভাগ শয়তান! ভাগ এখান থেকে! আমি তোকে খুন করবো ইবলিশের বাচ্চা ইবলিশ! দু হাতে একটা ইট নিয়ে শয়তানের মাথায় মারতে উদ্যত হতেই কোন এক কসাই আমাকে জাপটে ধরে। আমি চিৎকার করে বলে উঠি, শয়তানটার কত বড় সাহস! আমার কেয়া হয়ে শুয়ে আছে! হারামীটারে আমি আজকে মেরেই ফেলবো..!" . কি বলবো আসাধারণ গল্প। সত্যি মন ছুয়ে গেল। শুভ কামনা এবং ভোট রইলো।
মাহমুদ হাসান পারভেজ আপনার গল্প প্রথম পড়লাম। প্রথম পাঠেই আপনার ভক্ত হয়ে গেলাম। এখন সিদ্ধান্ত- আপনার আগেরগুলোও পড়তে যাব। শুভকামনা জানবেন।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভাই।আমার কবিতা ও গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল।

১০ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪