সময়

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

মিলন বনিক
  • ১০
  • ২৯
এলোমেলো পথ চলছে অধীর বাবু।
ভাবছে আমিও একজন বাবা। আজ সকালে সাগর বায়না ধরেছিল। ফ্যান্টাসি কিংডম আর ওয়াটার পার্কে যাবে। সাথে নদীও। খরচের বিষয়টা মাথায় রেখে ছেলে মেয়েদের আবদার রক্ষা করা হয়নি। বেশ কিছু যৌক্তিক কারণও আছে। মাসের শেষ। দৈনন্দিন হালচাল আর সীমিত আয়। রীতিমত ম্যানেজ করে চলতে হয়।
ক্লাস সিক্সে পড়ে সাগর। আমার ”না” বলাটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি। প্রায়ই অভিযোগ করে-তোমাকে কতবার বলেছি। আজ নেবে কাল নেবে করে নিচ্ছনা। আমার বন্ধুরা কতবার যায়।
- ঠিক আছে বাবা আগামী মাসে ঠিকই নিয়ে যাবো। এই কথা দিলাম।
- এ্যাঁ, তোমার কথার কোন মূল্য নেই। আগেও বলেছ।

অধীর বাবু আর কথা বাড়ায়নি। থলেটা নিয়ে বাজারের দিকে পা বাড়ায়। কষ্ট হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের আবদার রাখতে পারছে না। এ আর এমন কি। ছোট ছেলে। এই বয়সে একটু বেড়াতে যেতে চায়। শহরে আর কোথায় বা যাবে। চার দেয়ালের মধ্যে বেড়ে উঠা। খেলার মাঠ নেই। মার্বেল, ডাংগুলি, হা-ডু-ডু, বল, ক্রিকেট কোনটায় খেলতে পারছে না। নিজেকে প্রশ্ন করল, আমি ছেলেমেয়েদের কাছে আসল সত্যটা লুকাতে চেষ্টা করলাম কেন। না না, এটা আমার মোটেও উচিৎ হয়নি। হোক না ছোট, তাদের সাথে আমার মনের কথাটা ভাগাভাগি করা উচিৎ ছিল। ঠিক আছে ফাস্ট ফুড-এর দোকান থেকে দু’টো স্যান্ডউইচ নিয়ে কোলে বসিয়ে আদর করে আমার কথাগুলো বলবো। তারা তো আমারই ছেলেমেয়ে। নিশ্চয় বুঝবে। অধীর বাবু যেন কিছুটা সান্ত্বনা খুঁজে পেলেন। আনন্দ লাগছে এই ভেবে যে, ওদের ভালোভাবে মানুষ করার জন্য লেখাপড়া কিংবা ছেলেমেয়েদের পারিবারিক আনন্দে বেড়ে উঠার জন্য যেটুকু সময় দেওয়া প্রয়োজন, তাতে কোন ত্রুটি করছি না। কোন আপোষ করছি না। একজন নিম্ম মধ্যবিত্তের সামর্থ্যের মধ্যে যেটুকু সম্ভব তা পূরণ করার চেষ্টা করছি। আজকালকার ছেলেমেয়েদের এ বিষয়গুলো ভাবা উচিত। আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে কি সব উদ্ভট চিন্তা ধারা ভর করছে মাথায়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ভালো। তাই বলে মানবিক দিকগুলো একটুও ভাববে না। মা বাবার কষ্টের কথাগুলো বুঝতে চেষ্টা করবে না।
কচি লাউয়ের ডাটা দিয়ে চিংড়ি মাছটা বেশ মজা। দু’আঁটি লাউয়ের ডাটা কিনতে গিয়ে রফিক সাহেবের সাথে দেখা।
পেছনে দশ বারো বছরের একটা ছেলে মোট বইছে। মাথার উপর ঝুড়ি ভর্তি বাজার। দেখা হতেই হাত বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন - আরে অধীর বাবু যে, কেমন আছেন?
- ভালো।
- আপনি? ব্যবসা কেমন চলছে।
- খুব একটা ভালো নেই ভাই।
- কেন কি হয়েছে ? ছেলে মেয়েরা ভালো? বড় ছেলেটা না এবার এইচ, এস, সি দিলো মনে হয়।
- আর বলবেন না। দু’বার পরীক্ষা দিল । মায়ের আদর পেয়ে পেয়ে ছেলেটা নষ্ট হয়ে গেছে।
- কি বলছেন আপনি।
- ঠিকই বলছি। এসব কথা বলতেও অপমানে মাথা হেট হয়ে আসছে। এখন পুরোপুরি মাদকাসক্ত। কদিন আগে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ছাড়িয়ে এনেছি। একটা মাত্র ছেলে। মেয়েটাও উচ্ছন্নে যাচ্ছে। সেদিন মিনি চাইনিজ থেকে..কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। কথার মোড় গুড়িয়ে বললেন-রাত বিরাতে কখন বাড়ী ফিরে তার কোন ঠিক নেই। সারাক্ষণ বন্ধু বান্ধব নিয়ে ব্যস্ত। কি করি বলেন। আমি একা মানুষ। সারাক্ষণ ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। অথচ কখনও কোন অভাব বোধ করতে দিইনি।

অধীর বাবু খেয়াল করল রফিক সাহেবে রীতিমত হাফাচ্ছে। চোখ দিয়ে পানি পরছে। অধীর বাবু ছেলে নিয়ে চিন্তিত। তবে এভাবে কখনও ভাবেনি। নিজের কষ্টটা কোন ভাবে বলতে পারল না। পরনে ধবধবে সাদা শিফনের পাজামা পাঞ্জাবী। পায়ে বহুদামী নাগড়া। শরীর থেকে মন কাড়া পারফিউমের গন্ধ খিলবিল করছে।
অধীর বাবুর সাথে বন্ধুত্ব অনেকদিনের। পারিবারিক ব্যাপারে এমন খোলামেলা আলোচনা আর কখনও হয়নি। অধীর বাবু চিন্তিত। হঠাৎ এ কি হলো রফিক সাহেবের। পাঞ্জাবীর পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছলেন রফিক সাহেব। কি সান্ত্বনা দেবেন ভেবে পাচ্ছিল না অধীর বাবু। বললেন- চলুন, চা খায়।
অন্য সময় হলে না করতেন। আজ না করল না। রফিক সাহেব পা বাড়ালেন।

বিয়ারিং এর ছোট তিন চাকার একটা কাঠের বাক্স। একজন মাঝবয়সী প্রতিবন্ধী লোক বসে আছে গাড়িতে। আট দশ বছরের একটা ছেলে দড়ি বেঁধে গাড়িটা টানছে আর বলছে-সাহেব গো আমার বা’জানের জন্য দুইটা টাকা দ্যানগো..বা’জানের জন্য দুইটা টাকা দ্যান..। লোকটির কোলের উপর প্লাস্টিকের গামলা। তার মধ্যে ক’টা খুচরো টাকা আর কিছু ভাংতি পয়সা। ছেলেটি রফিক সাহেবের সামনে এসে দাঁড়াল। হঠাৎ কি মনে করে রফিক সাহেব ছেলেটির মাথায় হাত রাখলেন। কিছু বললেন না। পকেট থেকে একটা পাঁচশ টাকার নোট বের করলেন। ছেলেটির হাতে দিয়ে অধীর বাবুর সাথে পা বাড়ালেন।

অধীর বাবুর বিস্ময়ের সীমা নেই। আজ রফিক সাহেব নিজে বাজার করছেন। তারপর এই ছেলেটির মাথায় হাত রেখে খচ করে পাঁচশ টাকার নোট বের করে দিলেন। গড় গড় করে কোনদিন না বলা কথাগুলো অকপটে বলে যাচ্ছেন। সাধারণত বাইরে কোন দোকানে বসে কারও আতিথেয়তা নেন না। অথচ আজ চা খেতে চললেন। বয় বেয়ারা কর্মচারীর অভাব নেয়। বড় অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ বলে মনে হলো।
চায়ে চুমুক দিয়ে কাপটা নামিয়ে রেখে বললেন-অধীর বাবু আপনি আমার বন্ধু মানুষ। আমাকে একটা উপায় বলে দেন আমি কি করব।
- আপনার স্ত্রী..কথাটা শেষ করলেন না অধীর বাবু।
- তারও সময় নেই। সভা সমিতি নিয়ে ব্যস্ত। এসব ব্যাপারে কোন মাথাব্যথা নেই। আরও বলে যুগ পাল্টেছে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা অমন এক আধটু বে-খেয়ালী হয়। সময় হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন যা সব শুনছি তাতে আমার আত্মহত্যা ছাড়া কোন উপায় নেয়। অথচ যখন যা চেয়েছে তা দিয়েছি।
- সময় কতটুকু দিয়েছেন।
রফিক সাহেব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালেন অধীর বাবুর দিকে। সান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলেন অধীর বাবু। আমার মনে হয় প্রত্যেক মা বাবার ছেলেমেয়েদের একটু সময় দেওয়া প্রয়োজন। তাদের বোঝার জন্য, বোঝানোর জন্য। একেবারে হাল ছেড়ে দেওয়া ঠিক না। ছেলেমেয়েদের বোঝান। তাদের সাথে সব বিষয় নিয়ে বন্ধুর মত আলাপ আলোচনা করেন।
রফিক সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-আসলে ভুলটা আমারই। যা করেছি সব ওদের কথা চিন্তা করে। আজ মনে হচ্ছে সব ভুল করেছি। আবার রুমালে চোখ মুছলেন। রফিক সাহেবকে এতটা অসহায় কখনও মনে হয়নি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ধ্রুব সত্য বেশ লাগলো আপনার গল্পটা । শুভেচ্ছা ।
ছন্দদীপ বেরা GalpoTa hote he darun Suveccha dilam tar dorun,, ArO likhun, likhe jan, Ninday deben na kan.......
সাদিয়া সুলতানা মিলনদা কিন্তু এবার অল্প লিখে ঠকিয়েছেন। প্রত্যাশা আরও বেশি। শুভকামনা।
আখতারুজ্জামান সোহাগ থিমটা দারুণ। শহুরে কালচারে যে ছেলেমেয়েগুলো প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে তাদের অধিকাংশই তাদের বাবা-মা কিংবা অভিভাবকদের কাছ থেকে যথেষ্ঠ কোয়ালিটি টাইম পাচ্ছে না। যে কারণে তাদের অনেকেই বিপথে যাচ্ছে অসৎ-সঙ্গে কিংবা মূল্যবোধহীন আকাশ সাংস্কৃতির বাতাসে। গল্প ভালো লেগেছে। লেখকের জন্য শুভকামনা।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু খুব ভাল লিখেছেন। শ্রদ্ধা জানবেন।
অনেক ধন্যবাদ ওয়াহিদ ভাই....
এশরার লতিফ সময় দেয়াটা সম্পর্কের জন্য সবচেয়ে জরুরী- চমৎকার এই গল্পটি সেই সত্যকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করল।
লতিফ ভাই...অনেক ধন্যবাদ....তবুও ভয় হয় ডিজিটালাইজেশনের কারনে মনে হচ্ছে অনেক কিছু মেকি হয়ে যাচ্ছে...আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো...মুভকামনা,,,,
biplobi biplob গল্পের মধ্যে শিক্ষনীয় অনেক কিছু বিদ্যমান, ভাল থাকবেন দাদা
বিপ্লব ভাই..আপনাকে পেয়ে ভালো লাগলো...শুভকামনা...
মোঃ আক্তারুজ্জামান সুন্দর লিখেছেন। সময় দেয়ার মধ্য দিয়ে সন্তানদেরকে বুঝাতে হবে বাবা-মা হিসেবে তাদের প্রতি আমাদের ভালবাসা অসীম। তবেই তারাও আমাদেরকে ভালবাসবে- জীবন থেকে হারাতে চাইবে না, বাবা মায়ের কাছে থেকে দূরে যেতে চাইবে না।
দাদা..ঠিক এই ভাবটায় উপরব্দি করছি েএবং তাই তু্লে ধরতে চেষ্টা করেছি...অনেক ধন্যবাদ...
শামীম খান সুন্দর গল্প । ভাল লাগলো । শুভেচ্ছা রেখে গেলাম ।
শামীম ভাই..ধন্যবাদ...
আফরান মোল্লা পড়লাম।ভালো লাগল।হৃদয়টা ভরে গেল।শুভকামনা রইল।
আরফান ভাই..ধন্যবাদ...

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪