টুনিটা আজ বড্ড জ্বালাতন করছে।
অন্যদিন দাদী আমেনা বেগমের সাথে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরে। আজ যে কি হয়েছে মেয়েটার। রাত বারোটা বেজে গেছে। ঘুমানোর নাম নেই। কেবল বক বক করে যাচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে মামুন পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পরেছে। জেগে আছে রাহেলা। মেয়েটা মায়ের বুকে গুটি সুটি হয়ে শুয়ে আছে। আর বলছে-আমাগো একটা রঙ্গিন টিভি কিনে দাও না। সারাদিন আমি আর দাদী তো একলা থাহি। আমাগো সাদা কালা টিভিটা পুরানো। ভালামতন দেহা যায় না। পাশের বাসায় দেখতে গেলে অরা বলে, মা বাপ দুইজনেই তো চাকরী করে, একটা টিভি কিনবার পারে না। নাকি মায়ার বিয়ার লাইগা সব জমাইয়া রাখতাছে।
পাঁচ বছরের টুনি এসবের কিছুই বুঝে না। বিয়ার লাইগা কেমনে ট্যাহা জমায়, রঙ্গিন টেলিভিশনই বা ক্যান কিনতাছে না ওসব মাথায় আসে না। শুধু এটুকু বুঝে একটা রঙ্গিন টিভি আর ডিশ লাইন থাকলে সুন্দর সুন্দর কার্টুন ছবি দেখতে পারবে। এতেই সে খুশী।
রাহেলার চোখ দু’টো ঘুমে ঢলে পরছে। চোখ টেনে কিছু বলতে গিয়েও পারল না। ঘুমের ঘোরে মেয়ে কি বলছে তা মুহুর্তেই ভুলে গেল। টুনিকে দু’হাত দিয়ে চেপে ধরল বুকের ভিতর। টুনি আবার জিজ্ঞাসা করে - ও মা, তুমি কি ঘুমাইছ। রাহেলা সাড়া দেয় না। টুনি আবার মায়ের গা ধরে নাড়া দেয়। বলে-ও মা বাবারে কওনা আমারে আর দাদীরে একটু শিশু পার্কে বেড়াইতে নিয়া যাইতে। কতদিন ধইরা খালি কইতাছ নিয়া যাবা নিয়া যাবা। তোমাদের কারোরই সময় হয় না।
রাহেলা ঘুমের ঘোরে রেগে বলল-অত প্যান প্যান করস ক্যান। কইলাম তো এই পয়লা মে বুধবারে নিয়া যামু। যা অহন ঘুমা। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটা খাটুনি, ওভারটাইম করে ঘরে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা। নাইট ডিউটি থাকলে সেদিন আর আসা হয় না। জীবনটায় যেন যন্ত্র হয়ে গেছে। রাতে যখন তখন ঘুমায় তখনও মাথার মধ্যে খট্ খট্ খট্ খট্ মেশিনের শব্দ কানে বাজে। কতদিন ভেবেছে টুনিটাকে নিয়ে দু’একদিন সবাই একটু কোথাও ঘুরে আসবে। ফ্যান্টাসী কিংডমটা রাহেলারও দেখার খুব ইচ্ছা। তা আর কখনও হয়ে উঠে না। যেদিন রাহেলা ছুটি কাটায়, তো সেদিন মামুনের সময় হয় না।
মামুনের চোখটাও লেগে আসছিল। রাহেলার কথা শুনে ঘুম জড়ানো গলায় বলল - আহা মেয়েটাকে বকছ ক্যান। আবদার করে বলছে। আমরাই তো মেয়েটাকে সময় দিবার পারি না। টুনিকে বুকে টেনে বলে, আয় আমার বুকে আয় মা। আমি তরে কইতাছি এই মে মাসের এক তারিখে আমরা সবাই ঠিকই বেড়াতে যামু। তরে পুতুল কিইনা দিমু। মেয়েটাকে বুকে নিয়ে আলতো করে রাহেলার মুখে হাত বুলিয়ে আদর করে।
- ঐ দিন তোমরা আবার কামে চলে যাবা নাতো।
- না মা ঐ দিন আমাগো সবার ছুটি। ১লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবস। ঐ দিন পৃথিবীর কোন শ্রমিক কাজ করবে না। সবাই ছুটি কাটাবে। ঐ একটা দিনের জন্য আমরা সবাই ¯^াধীন। ঐ দিনটা আমাগো মতন খেটে খাওয়া মানুষদের সম্মানের দিন।
- আইজ কয় তারিখ।
- আহজ হলো তেইশ তারিখ।
- তাইলে তো আরও মেলা দিন।
- না মা, এইতো আগামী সপ্তায় বুধবারে।
আমেনা বেগম রাহেলার কথা শুনে টুনিকে সাবধান করে বলে - আইজকা তর কি হইছে বইন। এত রাইত হইছে অহনও ঘুমাস নাই। তর মায়ের ত আবার মিজ্জি আযানের সময় উঠতে হইবো, ঘুমাইবো কহন। আয় আমার কাছে আয়। আমি তরে ভূতের কিচ্ছা কইয়া ঘুম পাড়াইয়া দিমু। টুনি বাবাকে আরও নিবিড় ভাবে জড়িয়ে ধরে। আমি তোমাগো লগে ঘুমামু বলে চুপ করে থাকে। পরম মমতায় মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় মামুন। আমেনা বেগম টুনির চালাকি বুঝতে পারে।
সেই সকাল ছয়টার সময় রাস্তার মোড় থেকে ফ্যাক্টরীর বাস ধরতে হয়। দু’জনের চাকরী একই বিল্ডিং-এ। রাহেলা তিন তলায়। মামুন ছয় তলায়। পাঁচটার সময় উঠে রান্না বান্না করে বের হয়ে যায়। সাথে করে নিজের জন্য একটু আলু সিদ্ধ অথবা ভাজি আর ভাত নিয়ে যায়। এর বেশী কিছু কখনও হয়ে উঠে না। মামুনের জন্যও একটা টিফিন বক্সে একইভাবে দুপুরের খাবারটা তৈরী করে দেয়। আজ একটা বাড়তি ডিম ছিল। সুন্দর করে পেঁয়াজ আর কাঁচা মরিচ কুচি করে ওটা মামুনের জন্য ভেজে দিয়েছে।
এতদিন রেল বস্তিতে ছিল। মামুন একা চাকরী করত। একই গার্মেন্টসে চাকরী করতে গিয়ে রাহেলার সাথে পরিচয়। তারপর বিয়ে। বছর যেতে না যেতেই কোল জুড়ে আসে মেয়ে রুবিনা। আদর করে ডাকে টুনি। দু’জনের চাকরী আর সংসার নিয়ে সীমাহীন ¯^প্ন। মামুন ছোটবেলায় পিতৃহীন। অনেক সংগ্রাম আর কষ্টের মধ্য দিয়ে দু’বেলা খেয়ে না খেয়ে ঢাকা শহরে এতটুকু ঠাঁই করে নিয়েছে। এর মধ্যে ছোট মেয়েকে দেখার জন্য বাড়ি তেকে মাকেও নিয়ে এসেছে। মেয়েটার ভবিষ্যত চিন্তা করে বস্তির ঘর ছেড়ে পাশেই এক রুমের টিনের চালা ঘর ভাড়া নিয়েছে। সামনে ছোট একটু বারান্দা। তাতে কোনভাবে একটা খাট পেতে আমেনা বেগমের সাথে থাকতে পারে টুনি। প্রথম প্রথম অমত করেছিল রাহেলা। বলেছিল আর কয়েকটা বছর যাক। আমরাও আর একটু শক্ত হইয়া লই। তারপর না হয় একটা ভালো বাসায় গিয়া উঠব। মামুনের একটাই কথা। বস্তির পরিবেশ সম্পর্কে তুমি জান না রাহেলা। আমি জানি। বস্তিতে থাকতে থাকতে আমি দেখেছি যে ক্ষুধা আর দারিদ্রতা মানুষকে কোথায় নিয়ে যায়। এখানে দিন আর রাতের মধ্যে কোন ফারাক নাই। আমি চাই না আমাদের টুনিটা ওইভাবে বড় হোক। দরকার হয় না খাইয়া থাকুম। তবুও আমাগো টুনিরে লেহাপড়া শিখাইয়া মানুষ কইরা তুলুম।
প্রথম প্রথম রাহেলার গা ঘিন ঘিন করত। বস্তিতে ঢোকার সময় কিংবা সকালে বের হবার সময় ঝুপরীর ভিতর থেকে, রাস্তার মোড়ে দাড়িয়ে থাকা লোকজন কত বিশ্রি রকমের মন্তব্য করত। শিষ কাটত। কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করত। ছেলে বুড়ো বলে কোন কথা নয়। সবারই যেন একই চরিত্র। মহিলারাও কম যায় না। একদিন শিউলীর মা তো সামনা সামনি বলে বসল - মাগীর দেমাগ কত। দেহুমনে কয় দিন এই দেমাগ লইয়া থাকতে পারস। মাগীরে কত কইরা কইলাম, ভালা নাগর আছে, মাল পানিও ভালা দিবো। বড় লোকের জোয়ান পোলা। কত জনরে দেখলাম এই বস্তিতে। একদিন যহন জামাই বেডা ভাড়াইট্ট্যা বেডা লইয়া ঘরে ডুকবো তহন বুঝবি। তহন দেহুমনে তোর দেমাগ কই যাই।
সেদিন রাহেলা প্রতিবাদ করেছিল। বলেছিল - এইডা আপনে কি কন খালা। আপনে আমার মায়ের মত। আপনার মেয়েরে আপনে এই কথা কইতে পারতেন।
পারুম না ক্যান। আমার মায়া হইলেও আমি পয়সার লাইগা তাই কইতাম। এহানে ভালা থাহন যায় না। মা আর পেডের মাইয়া বইলা কোন কথা নাই। এহানে বাপ মায়ারে চিনে না, ভাই বইনরে চিনে না। নেশা খাইলে মা বইন কেউ থাহে না। সব এক হইয়া যায়।
মামুনের কথায় রাহেলার শিউলীর মার কথা মনে পরে যায়। মামুন যদি কোনদিন ঐ বেডা লইয়া ঘরে আসে---রাহেলা আর ভাবতে পারে না। মামুন ঐ রকম ছেলে নয়। মামুনের কথায় রাহেলা আর না করতে পারেনি। মাস তিনেক হয়েছে নতুন বাসায় উঠেছে। এর মধ্যে প্রতি মাসে একটা খাট, একটা আলনাও কিনেছে। এই মাসের বেতন পেলে আয়না দেওয়া একটা স্টীলের আলমিরা কিনবে বলেছে। চাকরীতে যাওয়ার সময় একটু সাজগোছ করতে অসুবিধা হয়। একহাতে ছোট আয়না ধরে আর একহাতে ¯েœা পাউডার দিতে সমস্যা। একটা বড় আয়না থাকলে দাড়িয়ে ঝট পট সাজগোছটা সেরে নেওয়া যায়।
রাহেলা বিছানা ছেড়ে উঠতে গিয়েও তড়িঘড়ি উঠতে পারল না। টুনিটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আছে। বুকের ভিতর মাথা গুঁজে পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। মেয়েটাকে না জাগিয়ে কোনভাবে আলতো করে হাত ছাড়িয়ে উঠে পরেছে রাহেলা। মেয়েটা পাশ ফিরে শুতেই মামুন মেয়েটাকে বুকে টেনে নেয়। মামুনের আর ঘুম আসছে না। বার বার টুনির মায়াময় মুখখানা দেখছে। আর আদর করছে। আলমোরা ভেঙ্গে উঠতে গিয়েও উঠতে পারল না। মেয়েটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কাজে যেতে মন চাইছে না।
রাহেলা বারান্দা থেকে একবার ডেকেও সাড়া না পেয়ে ঘরে ঢুকে ডাকছে। কই উঠবা, না মেয়েকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকবা। দেরী হইলে কিন্তু ম্যানেজার হারামীর বাইচ্ছা একদিনের বেতন কাটবো।
- কাটলে কাটুক। আইজ যামু না। তুমিও যাইও না।
- যাইও না কইলে হইলো। কাল কি কইছে হুন নাই। অহন পুরাদমে প্রোডাকশান চলতাছে। ম্যালা অর্ডার পাইছে। সামনে ঈদের আগে নাকি সবাইরে দিনে রাইতে কাম করাইবো। না গেলে বেতন বেতন কাটবো। হাজিরা বোনাস দিবো না। মালিকদের আরও কত নিয়ম।
মামুন আবার উঠতে গিয়েও উঠতে পারল না। মেয়েটা গেঞ্জি টেনে ধরেছে। মামুন মেয়েটার চোখের দিকে অপলক তাকিয়ে কপালে আর একটা চুমু দেয়। আর ভাবছে আমার মায়াডা পরীর লাহান এত সোন্দর হইলো ক্যামনে। ঘুম জড়ানো মায়াবী মুখখানাতে যেন চাঁদের আলো ছিটকে পরেছে। এভাবে মেয়েটাকে কখনও দেখেনি। টুনির যত আবদার কথাবার্তা সব তার দাদীর সাথে।
ওভারটাইম সেরে রাতে যখন বাসায় আসে তখন যেমন মেয়েটা প্রায়ই ঘুমিয়ে থাকে তেমনি সকালে বের হবার সময়ও মেয়েটা ঘুমিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে এর ব্যতিক্রম হলেও ক্লান্ত অবসন্ন শরীরে মা বাবা কারুরই মেয়ের সাথে সেভাবে কথা বলা হয়ে উঠে না। মামুন মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে বিড় বিড় করে বলছে - আমার মেয়েটারে কিছুতেই আর বস্তিতে থাকতে হইবো না। এই সামনের বছর স্কুলে ভর্তি করাইয়া দিমু। মেয়ের জন্য আলাদা একটা পড়ার ঘর হবে। চেয়ার টেবিলে বসে আমাগো টুনি লেখাপড়া করবো। ভাবতে ভাবতে মামুনের চোখ দুইটা জলে ভরে উঠে।
রাহেলা আবার তাড়া দিতেই ধড়মড় করে উঠে পরে মামুন। মেয়েটা গলা জড়িয়ে ধরে আবদার করে - আব্বু তোমরা আইজ আর কামে যাইও না। আমার খুব বেড়াতে যাইতে ইচ্ছা করতাছে। তোমরা থাকলে তোমাগো লগে বেড়াতে যামু। ও আব্বু কওনা, তুমি না গেলে মাও যাইবো না। মামুন মেয়েকে শান্তনা দেয়। বলে - না গেলে যে বেতন পামু না। আর বেতন না পাইলে তরে এক তারিখে বেড়াইতে নিয়া যামু ক্যামনে। তাছাড়া অহন ম্যালা কাম। জিরানের সময় নাই। তয় এবার বেতন পাইলে তর জন্য একটা জামা আর একটা কার্টুন ছবির বই নিয়া আসব। তুই দাদীর সাথে বইসা অ আ ক খ পড়বি। সামনে আমার টুনি মায়ের স্কুলে যাইতে হইবো না। টুনি শান্ত হয়। বলল - আইচ্ছা তাইলে যাও। তয় তাড়াতাড়ি ফিরে আসবা। আর আসার সময় আমার জন্য একটা ষ্টিকার আর চিপস আনবা। হ ঠিকই নিয়া আসব বলে রাহেলা আর মামুন মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বেরিয়ে পরে। মেয়েটা ফ্যাল ফ্যাল করে ঠাঁই দাড়িয়ে থাকে দরজার সামনে। মামুন যতবার পিছন ফিরে তাকায় টুনি ততবার হাত নাড়ে।
মেয়েটার জন্য মন কেমন করছে। বাস থেকে নেমে ফ্যাক্টরীর গেইটের সামনে সহকর্মীদের জটলা দেখে চিন্তিত হয় মামুন। রাহেলাকে বলে মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছে। আজ বোধ হয় ফ্যাক্টরী বন্ধ দিয়া দিবো। কোন সময় যে বিল্ডিংটা মাথার উপর ভাইঙ্গা পরে তা আল্লাহই জানে। ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায় ওরা দু’জন। কলাপসিবল গেইটের সামনে দাড়িয়ে ম্যানেজার চিৎকার করে বলছে, চাকরী কি নানার বাড়ী যে ইচ্ছা হলে করবা, না হলে করবা না। মালিক কি বাপের জমি বিক্রি করে তোমাগো বেতন দিবো। আগে কাজ। কাজ মানে প্রোডাকশন। কাজ করবা না মানে প্রোডাকশান হবে না। প্রোডাকশান না হলে বেতন বন্ধ। আমি আধা ঘন্টা সময় দিচ্ছি। আধা ঘন্টার মধ্যে যে যার ফ্লোরে গিয়া কাজ শুরু কর। তা না হলে কাল থেকে কাজে আসার দরকার নাই। মামুন একবার রাহেলার দিকে তাকায়। রাহেলা চোখ টিপে সম্মতি দেয়। পাশ থেকে রাহেলার বান্ধবী মুন্নি বলে উঠে - শালা কেউটের বাইচ্ছাটারে মনে হয় জন্মের সময় মায়ে শালদুধ খাওয়াই নাই।
সে সময় কয়েকজন আপত্তি করলেও ধোপে ঠেকেনি। বেতনের ভয় দেখিয়ে, বিল্ডিং প্লাস্টার করে ঠিক করা হয়েছে বলে সবাইকে কাজ করার জন্য বাধ্য করা হয়। মালিকের যেমন প্রোডাকশন ঠিক থাকা চাই, শ্রমিকের তেমনি ন্যায্য মজুরীটা চাই। মাস শেষে যা বেতন পাওয়া যাবে, মাসের শেষে এসে তা কেনই বা হাতছাড়া করবে। মাথার উপর ছাদ ধ্বসে পড়লেও ক্ষতি কি। মাস শেষে বেতনটা তো আর হাতছাড়া হবে না। মুহুর্তে আকাশ ভেঙ্গে পড়লেও মালিককে নিরাপদে রাস্তা পার করে দেবার লোক অনেক। শ্রমিকরা মাথায় তুলে মালিককে নিরাপদে রাখবে। প্রোডাকশন বাড়াবে।
টুনি ঘরের দরজায় বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছে। আজ দু’দিন হয়ে গেলো। টুনির মা বাবা এখনও ফেরেনি। হয়তো ওভারটাইম করছে। অপেক্ষা করছে ১লা মে দিনটির জন্য। বিশ্ব শ্রমিক দিবসে মা বাবার সাথে বেড়াতে যাবে। ¯^াধীন ভাবে ঘুরে ফিরে শিশু পার্কে কাটাবে একটা দিন।
অপেক্ষার পালা শেষ। সে দিনটি আর ফিরে আসে না। আমেনা বেগমের বোবা কান্না এক সময় ¯^াভাবিক হয়। চোখের জলও শুকিয়ে যায়। আদরের ছোট্ট টুনি তা বুঝতে পারে না। রাত শেষে ভোর হয়। দিন শেষে রাত। সময়ের হাত ধরে জীবনের ¯্রােত। একদিন দাদী আমেনা বেগমের সাথে টুনি ফিরে যায় সেই পুরানো রেল ষ্টেশনের বস্তিতে। যেখানে প্রতিদিন সকাল হয় আবার সন্ধ্যা নামে। অথচ টুনি কোন ফারাক বুঝতে পারে না।
পাদটীকাঃ
কেবল চব্বিশ ঘন্টা, বাহাত্তর ঘন্টা, একশ চুয়াল্লিশ ঘন্টা ধরে উদ্ধার কাজ চলবে, পঁচা গলা শত শত লাশ বেরিয়ে আসবে শ্রমিকের। মিডিয়ার সুবাদে পৃথিবীর মানুষ দেখবে। হায় হায় করে বুক চাপড়াবে। তদন্ত কমিটি হবে। রিপোর্ট দেবে। ধনীরা বেড়িয়ে আসবে আইনের ফাঁক ফোকড় দিয়ে। মালিক বেঁচে যাবে। তাতে শত শত নিহত আহত শ্রমিকের কোন সুরাহা হবে না। হবে না কোন স্মৃতিসৌধ। হলে হয়তো জাতি স্মরণে রাখতো এমন একটি বিভীষিকাময় কালো অধ্যায়ের। যাতে করে শান্তি পেতো শ্রমিকদের আত্মা। যুগ যুগ ধরে বছরে অন্তত একটা দিন প্রভাত ফেরী করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতো তাদের ভবিষ্যত বংশধরেরা। সেই কাতারে টুনিও সামিল হতে পারতো।
০৭ এপ্রিল - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী