প্রকৃতি যেন অনাবিল সাজে সজ্জিত হয়ে উঠেছে এ বসন্তের মৃদু দোলা খেলা বাতাসে ।অতসীর মনে বসন্তের মৃদু ছোয়া ।আজ সে সেজেছে হৃদয় কাড়া সাজে ।কেনইবা সাজবে না ।আজ যে বাসন্তী পূজা ।স্বপ্নীল তো অতুকে দেখেই অবাক ।এত সুন্দর লাগছে রে তোকে ।আমি তো পাগল হয়ে যাব। যা: দুষ্টু বলে অতসী ওর হাতটা ধরে বলে চল পূজায় যাব ।দ্রুত ভাল জামা-প্যান্ট পরে আয় ।এইতো ভাল জামা ।এর থেকে আর কি ভাল পরব ।আমি গুছিয়েই এসেছি ।চল তাড়াতাড়ি চল বলে স্বপ্নীল অতসীক নিয়ে রাস্তায় উঠে আসে ।পড়ন্ত বিকালের উদাস আকাশ ।সূর্যটা তখনো ডুবে নাই ।প্রায় ডুবু ডুবু ভাব ।ওরা হাটছিল কাঁচা মাটির রাস্তা বেয়ে । অতসী ও স্বপ্নীল এবার ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে উঠেছে ।সরকারী চাকুরিজীবী মা-বাবার একমাত্র আদূরে মেয়ে অতসী ।গ্রাম্য এলাকায় উভয়েই সরকারী চাকুরিজীবী হওয়ায় লোকে ওদের খুব সম্মান করে বিশেষ করে অতসীকে সবাই ভালবাসে ।আর এমনিতেই অতসী খুবই মিষ্টি একটি মেয়ে ।পড়াশুনায় খুবই ভাল ।এবার ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছে ।স্বপ্নীলও পেয়েছে । তবে অতসীর সাথে স্বপ্নীল এর পার্থক্য হল স্বপ্নীল এর বাবা নেই ।মা কাজ করে অতসীদের বাসায় ।ভাল ব্রেন তাছাড়া অতসীদের বাড়ি স্বপ্নীলের মা কাজ করে বলেই স্বপ্নীলের সাথে অতসীর ভাল সম্পর্ক ।অতসীর মাও স্বপ্নীলের সাথে অতসীকে মিশতে বাধা দেয় না ।কেননা স্বপ্নীল ভাল ছাত্র হওয়ায় তারাও স্বপ্নীলকে খুব ভালবাসে ।এছাড়া গ্রাম্য এলাকা,আশেপাশের ছেলেমেয়েরা খুব একটা ভাল নয় ।একারনেই অতসী সবসময় স্বপ্নীলের সাথে মেশে ।তাছাড়া বাসা থেকে ২ কিলোমিটার দূরের স্কুলে অতসী একা একা যেতে ভয় পায় কাঁচা মাটির নীরব ফাকা রাস্তা দিয়ে ।সরকারী চাকুরিজীবী মা-বাবার পক্ষে স্কুলে প্রতিদিন দিয়ে আসা বা নিয়ে আসা সম্ভব নয় ।এ কারনেই অতসী স্বপ্নীলের সাথে একসাথে স্কুলে যায়, আসে । উচু কাঁচা রাস্তার দু পাশে অবারিত মাঠ ।আবার আছে নালা-খাল ।হঠাৎ অতসীর চোখ যায় দূরে খালের মাঝখানে একটি লালছে রং এ পদ্মের দিকে । *স্বপ্নীল দেখ, দেখ লাল রঙের একটা পদ্ম ।কি সুন্দর!তাই না । *হ্যা, ওটাকে রক্তপদ্ম বলে ।সব সময় পাওয়া যায়না । *আমাকে এনে দেনা ।মাথার খোপায় দিলে খুব ভাল দেখাবে । *দূর পাগলী, ওই পদ্ম ফুলের গোড়ায় সাপ থাকে ।এখন না, পরে এনে দেব ।এখন পূজায় চল । *না, আমাকে আগে এনে দে,ওটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে । *আমি এখন জলে নামতে পারব না ।তুই যাবি কিনা বল? *না যাবনা,তুই যা । *আচ্ছা চললাম । স্বপ্নীল রাগ করে একা একাই হাটতে থাকে ।কিছুদূর এসে পিছনে তাকায় ।দেখে অতসী নেই ।চমকে ওঠে ।কই গেলি অতু? দৌড়াতে দৌড়াতে খালের পাড়ে আসে ।দেখে খালের মাঝখানে জল বিজ বিজ করছে ।লাফিয়ে পড়ে খালে ।দু হাত দিয়ে জাপটে ধরে তুলে আনে অতসীকে । রাগে ক্ষোবে ওর গালে জোরে একটা থাপ্পড় মারে ।থাপ্পড়টা খেয়ে অতসী সজোরে কাঁদতে থাকে । স্বপ্নীলও কেঁদে দেয় । *তুই কাঁদছিস কেন?শয়তান একটা ।আমাকে আবার মারল । *কাঁদিস না অতু ।তুই কাঁদলে আমার কান্না পায় ।আমি তোকে ফুলটা এনে দিচ্ছি । এরপর থেকে প্রতি বাসন্তী পূজায স্বপ্নীল অতসীকে একটি করে রক্তপদ্ম এনে দেয ।অতসী বসন্ত হাওয়ায় মেতে মাথায় ফুলটা গুজে পূজা দেখতে যায় স্বপ্নীলের সাথে ।খুব মজা করে দুজনে ।মেলায় অতসী ওকে অনেক কিছু কিনে দেয় ।কিন্তু স্বপ্নীল কি দিবে ।তার তো একটা জিনিসই আছে দেবার ।কিন্তু অতু কি তা নিবে কখনো । সময়ের বিবর্তনে স্কুল পেরিয়ে কলেজ, কলেজ পেরিয়ে ভার্সিটিতে পড়ে এখন অতু ।এবারই সে চান্স পেয়েছে খুলনা ভার্সিটিতে ।একটা মাত্র মেয়ে দূরে থাকলে মা-বাবার কষ্ট হবে তাই অন্য ভার্সিটিতে পরীক্ষাই দেয়নি সে।এখানে সি.এস.ই তে ভর্তি হয়েছে সে ।কিন্তু স্বপ্নীল? সে কি করে পারবে ।মা পরের বাড়িতে কাজ করে ।ক্লাস নাইনে উঠেই সংসারের ঝড়ের গর্জন বুঝতে শিখেছিল সে ।তাইতো পরের বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়েদের পড়াতে যেত ।গ্রামের ছেলে মেয়ে তো? খুব বেশী টাকা পেত না ।যা পেত তা দিয়েই নিজে চলতো টুকিটাকি করে ।সংসারের ছোট খাট কাজগুলো তার দেখতে হত ।কিন্তু এমন করে কি ভাল রেজাল্ট সম্ভব? কোন রকমে ব্রেনের জোরে টেনেটুনে পাশ করেছে ।এতে তো ভাল জায়গায় চান্স সম্ভব নয় ।কিন্তু অতু তো শহরে পড়ে ।তাকেও যে পড়তে হবে শহরে ।তাইতো শহরের ছোটখাট একটা কলেজে ডিগ্রী ভর্তি হয়েছে সে । এখনো অতসী ও স্বপ্নীলের মধ্যে ভাল সম্পর্ক আছে ।যদিও সেই ছোটবেলার মত অতটা গভীর নয় ।তবে স্বপ্নীল এখনো অতুকে প্রতি বাসন্তী পূজায় একটি করে ফুল দেয় ।এইতো এ বছরের বাসন্তী পূজায় স্বপ্নীল যখন অতুকে একটি ফুল দিয়েছিল, অতু একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে ফুলটা নিয়েছিল ।হয়তো অতুর মনে কিছুই জাগেনি ।তবে স্বপ্নীলের মনে জেগেছিল ।তার নীল বেদনায় ভরা, লাল কষ্টে মোড়া বিদ্ধ:স্থ হৃদয়ে যেন একটা হিমেল পরশ নেমে এসেছিল ।কিন্তু সে তা ব্যাক্ত করতে পারেনি তখন । এখন অতসী অন্য জগতে ।ইদানীং থার্ড ইয়ারের এক বড় ভাইয়ের সাথে অতসীর খুবই মেলামেশা ।গ্রামের সেই নিষ্পাপ,নম্র, ভদ্র মেয়েটিকে এখন দেখা যায় ক্যাফেটেরীয়ায় সুমন ভাইয়ের সাথে বসে কফি খেতে, শহীদ মিনারের পিছনে মহা হাসাহাসি আর আড্ডায় মেতে থাকতে অথবা কটকার উপর একসাথে বসে বসে গল্প করতে । স্বপ্নীল কি জানে তা ।হয়তো জানে না ।জানবে কি করে তার অবুঝ মন ।সৃষ্টিকর্তা যে সবাইকে সুখী করে পৃথিবীতে পাঠায় না ।অনন্ত কষ্ট নিয়ে কেউ পৃথিবীতে আসে, টিকে থাকে কষ্টের সাথে সংগ্রাম করে এবং কোন এক সময় কষ্টের কাছে হার মেনে চলে যেতে হয় পৃথিবী থেকে । দিনটি ছিল শুক্রবার ।আবার এ বছর এসেছে বাসন্তী পূজা ।কিন্তু অতু গ্রামের বাড়িতে আসে নাই ।অবাক হয় স্বপ্নীল ।সারা এলাকা তন্ন তন্ন করে খোজে একটা রক্তপদ্ম ।কিন্তু কোথাও পায়না ।সৃষ্টিকর্তা সত্যিই তার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে ।খুঁজতে খুঁজতে না পেয়ে অবশেষে একটি শ্বেতপদ্ম নিয়েই রওনা হয় শহরের উদ্দেশ্যে । ভার্সিটির গেটের সামনে এসে দাড়ায় স্বপ্নীল ।যে ভার্সিটিতে তারও পড়ার কথা সেখানে ভাগ্যের নির্মমতায় পড়তে পারিনি ।এখানে ঢুকবই না মনে মনে বলে সে ।গেটের সামনে থেকে কল দেয় অতুকে । *অতু কোথায় তুই? *হ্যা রে স্বপ্নীল আমিতো গ্রামে আসব না ।আমার পরীক্ষার চাপ আছে । *আমি তোদের ভার্সিটির গেটের সামনে ।জানিস সারা এলাকা তন্ন তন্ন করে খুজেও রক্তপদ্ম পায়নি ।শ্বেতপদ্মই এনেছি । *সরি স্বপ্নীল, আমিতো হলে নেই ।আমি এক বান্ধবীর বাসায় এসেছি । হঠাৎ স্বপ্নীলের চোখ যায় একটা রিকশার দিকে ।শহর থেকে জিরো পয়েন্টের দিকে যাচ্ছে রিকশাটি ।কপাটটা ঢাকা ।তবু চিনতে ভূল হয়না অতুকে ।সাথে একটি ছেলেও ।মুছড়ে ওঠে স্বপ্নীলের ভেতরটা ।হাত দেয় নিজের বুকে ।হৃদপিন্ডটা চলছেতো ।হ্যা, এইতো চলছে ।তাহলে সমস্যা কি ।আমি বেঁচেতো আছি তোকে ছাড়া ।মরে তো যায়নি । আকাশের দিকে তাকায় স্বপ্নীল ।কারো প্রতি কোন অভিযোগ নেই তার ।শুধু উপরে তাকায় করুন দু নয়নে ।শুনেছে সৃষ্টকির্তা নাকি অনেক উপরে থাকে ।শুধু তাকে জানাতে এক নীরবে নিভৃতে পোড় খেকো কোন মানুষরূপী জঘন্য প্রানীর অস্ফুট আর্তনাদ । গেটের সামনে না দাড়িয়ে উদভ্রান্ত পথিকের মত হাটতে থাকে জিরো পয়েন্টের দিকে ।ওখান থেকে গাড়িতে উঠে সোজা বাড়ি ।মাকে আজ যে তার সব কাহিনী বলতেই হবে । প্রয়োজন হয়না স্বপ্নীলের আর মাকে বলার ।সৃষ্টিকর্তা কি এতটাই নির্দয় ।রূপসা ব্রীজের দিক থেকে হঠাৎ আসা দ্রুতগতির একটি অ্যাম্বুলেন্স সজোরে আঘাত করে স্বপ্নীলকে ।বুকের রক্তে ভিজে যায় শ্বেতপদ্মটা ।এইতো রক্তপদ্ম ।হয়তো স্বপ্নীলের আত্মা খুশী হবে এই ভেবে যে, সে তার প্রিয়ার জন্য রক্তপদ্মই রেখে যেতে পারল ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ আক্তারুজ্জামান
দু'ঘন্টায় একটা চৌকি বানানো যায় পালঙ্ক বানাতে লাগে দিন পনের......আপনি এখানটায় ভুল করেছেন| সময় নিয়ে ধীর স্থির ভাবে লিখলে এটা আরও অন্য রকম একটা কিছু হত| লেখা ভালো হয়েছে|
মাহমুদা rahman
পল্লব তোমাকে কি আর বলব আর একটু গুছিয়ে লিখলে অসাধারণ হত....সপ্নিল কে না মেরে ফেললেই ভালো হত...ছোট গল্পের পরিনতি যদি বুঝতে পারা যায় তাহলে আর baki কি roilo ? anek shuvo kamona tomar jonno
আবু ফয়সাল আহমেদ
বেশ নাটকীয়তায় ভরপুর! শেষ শ্বেতপদ্ম বানানোটা ভালো লেগেছে কিন্তু স্বপ্নীলের মৃত্যু ভালো লাগে নাই. প্রথম দিকে শরৎ বাবুর লেখার মত লেগেছিল. ক্লাস ৫/৬ এর বাচ্চারা কড়া কড়া রোমান্টিক ডায়লগ দিচ্ছে! অন্তত ৯/১০ ক্লাসের হলেও হত! আরও একটু সময় নিয়ে লিখলে ভালো হত
শাহ্নাজ আক্তার
শেষের দিকে একটু যেন তরিঘরি করে লেখা হযেছে , খুব আগ্রহ নিয়ে পড়তে পড়তে গল্পের ভিতর ডুবে গিয়েছিলাম , কিন্ত আচমকা থেমে গেলাম সপ্নীল এর মৃতুতে I শুধু এই আপত্তি টুকু ছাড়া পুরো গল্পটি ভালো লাগলো , শুভকামনা রইলো ................
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।