(১)
“কি জয়নাল মিয়া, তুমি এই রাইতের বেলা বাইরে! ডরভয় নাই?”
“গাঙ থিকা জাল তুলতি আইজকা দেরি হয়া গিছে দাদা। আর আপনেও যে দুকান খুলা রাখছেন, আপনের ডর লাগে না?”
“কী করতাম কও, ভুত-পেরেতের চাইতে বেশি ডরাই প্যাটরে”
কানাই দা’ একটা লাখ টাকার কথা বলেছে। মুদি দোকান বন্ধ রেখে ঘরে বসে থাকলে তো পেট চলে না। অবশ্য ইদানিং রাতের বেলা আর ব্যবসাপাতি জমছে না। সন্ধ্যার পর কেউ বাইরে থাকে না, সদাই কিনতে আসবে কে?
গত কয়েকদিন ধরে এই গ্রামেরই কয়েকজন তাকে নিজের চোখে দেখেছে। শাড়ি পরিহিত নারী। মাথায় লম্বা ঘোমটা টানা। এই আছে এই নেই! রাত বিরাতে মেয়েজহুত বাঁশঝাড়ে, খালপাড়ে, ক্ষেতের আইলে দাঁড়িয়ে থাকার কী মানে? আর অমন নিমেষেই বা উধাউ হয় ক্যাম্নে?
প্রথমে দেখেছে লাইজুর বাপ। গভীর রাতে ঘর থেকে বের হয়েছিল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে। ভুতুড়ে মহিলাকে সামনের ওপর দেখে ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যায়। মহিলা নাকি লাইজুর মা’র মতো দেখতে। কিন্তু সে তো গলায় ফাঁস নিয়েছে কয়েক বছর আগে!
লোকটা আতঙ্ক থেকে বেরোতে পারে নি। চোখে ভুলভাল দেখা শুরু করে। ধীরে ধীরে পাগলের মতো হয়ে যায়। কারণ ছাড়াই আঁতকে আঁতকে ওঠে। ঘুমের মধ্যে চেঁচায়। কিছুদিন পর বৌয়ের মতো সেও গলায় ফাঁস নেয়।
তার কয়েকদিন পর দেখল মজিদ কাকার ছোট ছেলে। সেও বেহুঁশ! দুদিন জ্বরে ভোগার পর জ্বরের সিরাপের বদলে ভুল করে কীটনাশক পান করে বসে। দু’বছর আগে তার স্ত্রীও ঠিক এভাবেই মারা গেছিল।
যে-ই রহস্যময় নারীকে দেখছে সে-ই মারা যাচ্ছে। পুরো গ্রাম আতঙ্কে আচ্ছন্ন। অবস্থা এমন যে সন্ধ্যা লাগার আগেই সবাই ঘরে ঢুকে দুয়ারে খিল দেয়।
গ্রামের আরো সবার মতো জয়নালও বিকেল বেলা নদীতে মাছ ধরে। আগে গভীর রাত, কেউ কেউ ভোর অব্দি জেলে নৌকায় কাটাত। এখন আর সেই চিত্র নেই। জয়নাল ভয় পায় না, তবে কেউ থাকে না বলে সেও উঠে আসে। আজ অবশ্য জেদ ধরে দেরি করেছে। ততক্ষণে গ্রামের পথঘাট জনমানবশূন্য। এক আছে শুধু কানাই চন্দ্র তার দোকান খুলে। পুরো গ্রামে মুদিমালের দোকান এই একটাই। কয়দিন আগেও সন্ধ্যার পর লোকজন তার দোকানে ভিড় করত। চা বিস্কুট খেত, জমিয়ে আড্ডা দিত। এখন মানুষও নাই, সন্ধ্যা পরবর্তী ব্যবসাও বন্ধ।
“যাইগা দাদা”
জয়নাল চায়ের কাপে শেষ চুমুকটুকু দিয়ে উঠে পড়ল। নদীতে জেদ করে দেরি করাটা ঠিক হয় নি। অনেক কাজ বাকি, জয়নাল জলদি পা বাড়াল।
ভূত-আতঙ্ক গ্রামটাকে মৃত্যুপুরীর মতো নিস্তব্ধ-নীরব করে দিয়েছে। আওয়াজ বলতে আছে শুধু ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডেকে চলা। অন্ধকারে ঢাকা জনপদকে ভুতুড়ে রূপ দিতেই যেন থেকে থেকে ডেকে উঠছে শেয়াল আর পেঁচা। কিন্তু বটতলার মোড়ে আসতেই ঝিঁঝিঁ পোকা, শেয়াল, পেঁচা সব একযোগে থম মেরে গেল।
জয়নাল সাহসী মানুষ- সেই তারও এখন কেমন গা ছমছম করছে। মনে হচ্ছে অন্ধকারের মধ্যে কেউ ওকে নীরবে অনুসরণ করছে। পায়ে শুকনো পাতা ভাঙার মচমচ শব্দ। দুয়েকবার আবছা ফিসফিসানিও কানে এসেছে। জয়নাল পিছন ফিরে দেখবে সে সাহস পাচ্ছে না।
বেশ কিছুক্ষণ চলার পর জয়নাল কী মনে করে থামল। টের দেখল পেছন পেছন আসা শব্দও থেমে গেছে। মনে সাহস জড়ো করে পেছন ফিরল জয়নাল
"অই, ক্যাডা?”
“আ… আমি”
মোলায়েম নারী কণ্ঠ। কণ্ঠস্বরে কাঁপন। জয়নাল কুপির আলোয় মেয়েটাকে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করল। শাড়ি পরিহিত অল্পবয়সী নারী। মাথায় লম্বা ঘোমটা। কোলে একটা বাচ্চা।
“কই যাইবেন?”
“পুরান গুরস্তান! মোরে একটু আগায়ে দিয়া আইবেন? একা যাইতে ডর লাগতাছে”
জয়নালের মায়া লাগল মেয়েটাকে দেখে। নিজের বাড়ির পথে না পড়লেও রাজি হলো এগিয়ে দিতে।
ওরা নীরবে হেঁটে চলেছে। মেয়েটা চলেছে জয়নালের পিছু পিছু। হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা বড়সড় একটা বাড়ির সামনে এসে থামল। জয়নাল এবার চিনতে পারল। মজিদ কাকার বাড়ি এটা।
“তুমি মজিদ কাকার মাইয়া?”
“হ! পিয়ারী”
“পিয়ারী! তুমি এই রাইতের বেলা বাইরে?”
“মামুগো বাড়িত গেছিলাম। আইতেকালে গাড়ি পাই না, হ্যার লাইগা দেরি অইয়া গ্যাছে”
“অ! তুমার পুত তো দেখি বড় হইয়া গিছে!”
পিয়ারী কিছু বলল না। জয়নাল ক্ষণিক চুপ থেকে বলল
“যাউগা তাইলে”
পিয়ারী ধীরপায়ে বাড়ির ভেতর যেতে যেতে থমকে পিছু ফিরল। জয়নাল তখনো ঠায় দাঁড়িয়ে
“এইডা মোর পুত না, আঙ্গুরির পুত!” বলেই পিয়ারী ফিক করে হেসে ছুট মারল।
তাই তো! পিয়ারী তো নিঃসন্তান বিধবা। মৃত ছোট বোনের ছেলেটাকে পালছে।
এক দেখাতেই পিয়ারীকে মনে ধরেছিল জয়নালের। মরিয়মকে বিয়ে করার আগে ওর সাথে বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে গেছিল মজিদ কাকার কাছে। কিন্তু চালচুলো নেই এমন লোকের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে তিনি রাজি হন নি। সেও অর্ধযুগ আগের কথা।
জয়নাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির পথ ধরল।
(২)
জয়নালের হাতের টুকরিতে দুটো মাঝারি সাইজের রুই আর কিছু ট্যাংরা-বেলে। নদীতে মাছ কমে গেছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি ভেশাল পেতে সামান্য যা উঠেছে তা বেচবে কি, নিজেদের খোরাকিই তো হয় না। আগামীকাল শহর থেকে ছোট ভাই আসবে বৌ-বাচ্চাসহ। সকালে ভেশালে যদি ভালো কিছু ওঠে তো উঠল; নইলে দুপুরে গঞ্জ থেকে বড় মাছ কিনতে হবে। ভাইটা আসেই বছর, দুই বছরে একবার। মেহমানদারী তো করা লাগে। এদিকে হাতে টানাটানি।
চিন্তায় কপালে ভাঁজ ফেলে মেঠো পথ ধরে হাঁটছিল জয়নাল। অমাবস্যা না হলেও আকাশে মেঘ থাকায় চারিধারে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কুপির আলোয় কোনোমতে পথটা বোঝা যায়। মেঠোপথ ঢুকে গেছে বাঁশঝাড় আর গাছগাছালি ভরা একটা জমাট অন্ধকারের পেটের মধ্যে। দিনের বেলাতেও অন্ধকার হয়ে থাকে জায়গাটা। নিজের হাতটাই দেখা যায় না এমন অবস্থা।
চলতে চলতে হঠাৎ একটা জিনিসে জয়নালের চোখ আটকে গেল। ঘন অন্ধকারে অনেক দূর থেকেই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। একদলা আগুন শূন্যে ভাসছে! জ্বলছে নিভছে।
বাঁশঝাড়ে জ্বিনের উপস্থিতি খুব সাধারণ ব্যাপার। ছোটবেলা থেকে এসব শুনে শুনে গ্রামের মানুষেরা বড় হয়। জয়নালও তা জানে। তবে সে ভয় পেলো না। জ্বিন হলে হোক, না ঘাটালেই হলো!
আগুনটাকে অগ্রাহ্য করে পাশ কাটিয়ে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু আরেকটু কাছে যেতেই আগুনটা আচমকা উধাও হয়ে গেল। বাঁশঝাড়ের ভেতর একটা অবয়বমতো মনে হলো জয়নালের। আরো কাছাকাছি যেতেই যা দেখল তাতে তার বুকটা কেঁপে উঠল। কড়া মিষ্টি গন্ধ নাকে ধাক্কা দিলো। ঠিক তখনই দমকা হাওয়ায় এক ফুঁৎকারে নিভে গেলো কুপিটা।
জয়নালের বুকের ভেতর হাতুড়িপেটা হচ্ছে। কয়দিন ধরে যে ফিসফাস সে শুনছে- অন্ধকারে একটা অবয়ব, শাড়ি পরা একটা মেয়েমানুষ, বাঁশঝাড় বিলের ধার ক্ষেতের আইলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে অনেকে… মূর্তিমান জিনিসটা এখন তার সামনে! কুপির আলোয় পরিষ্কার দেখা গেছে ঘোমটা টানা শাড়ি পরা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে!
জয়নাল প্রাণপণে সাহস ধরে রাখার চেষ্টা করছে। পারছে না। লুঙ্গির খুট থেকে দেয়াশলাইটা বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে শলাকা ঘষেই চলেছে, কিন্তু আগুন জ্বলছে না। হঠাৎ কাঁধে শীতল স্পর্শে জয়নাল আঁতকে প্রায় লাফিয়ে উঠল। দেয়াশলাইটা পড়ে গেল হাত থেকে। মিষ্টি গন্ধ আরো কাছ থেকে পাওয়া গেল এবার, নাকের খুব কাছে। গন্ধটা তার পরিচিত।
“ক্যাডা? ক্যাডা?”
“বাইজান, আমি… বাতেন”
“অ বাতেন! এইহানে কী করো রাইত বিরাইতে?”
“কিছু না ভাইজান, বাতাস খাইতাছি। আইজকা যেই গরম…”
বাতাসের সাথে আর কী খেতে এই বাঁশঝাড়ে সে এসেছে তা বুঝতে জয়নালের বাকি নেই। গাঁজার গন্ধ মিষ্টি হলেও খুব কড়া, অনেক দূর থেকেও টের পাওয়া যায়।
একটু আগে দেখা বাঁশঝাড়ের পাশে আগুনে আলোর রহস্য তাহলে এই! জয়নালের অবশ্য এই মুহূর্তে মাথায় ঘুরছে একটু আগে কুপির আলোয় দেখা নারীমূর্তিটা। বাতেন থাকাতে সাহস পাচ্ছে। মাটি হাতড়ে দেয়াশলাইটা খুঁজে পেয়েছে। কী আশ্চর্য, এবার এক ঘষাতেই ফস করে জ্বলে উঠল ম্যাচকাঠিটা!
কুপির সলতে জ্বলে উঠলেও সামনের ছায়ামূর্তিটা উধাও হয় নি। ভূতপ্রেত হলে তো এতক্ষণে হাওয়া হয়ে যেত।
মূর্তিটায় কোনো নড়চড় নেই। ওদের দিকে পেছন ফিরে আছে। পেছনে দুজন মানুষের সাড়াশব্দ কথাবার্তাতেও নির্বিকার। যেন অপেক্ষায় আছে কেউ তার কাঁধ স্পর্শ করে ঘোর ভাঙাবে। কিন্তু পুরুষ মানুষ একজন অচেনা অজানা নারীর শরীর স্পর্শ কীভাবে করে! কয়েকবার ‘ক্যাডা?’ ‘ক্যাডা?’ ডাকেও সাড়া না পেয়ে জয়নাল কুপিটা নিয়ে চক্কর ঘুরে মহিলার সামনের দিকে গেল।
এটা কোনো মানবী না, কাকতাড়ুয়া! গায়ে পুরনো একটা শাড়ি জড়ানো বটে, তবে দিনের আলোয় কোনোক্রমেই একে মানুষ মনে হবে না।
আগে হলে জয়নাল ভয়ে নিজের অবস্থা দেখে নিজেই হাসত। কিন্তু এখন সে মহাবিরক্ত এভাবে একটা কাকতাড়ুয়া মানুষের চলাচলের রাস্তায় ফেলে রাখায়। তুচ্ছ রঙ্গরসিকতা এখন আর তার ভালো লাগে না। দুনিয়ার কোনো কিছুই আসলে তার এখন ভালো লাগে না। সারাক্ষণ একটা বিরক্তি, একটা জ্বলুনীভাব দেহমন জুড়ে। অল্পতেই রেগে যায়। আপনজন শেষ কবে তাকে হাসিমুখে দেখেছে তা মনে করতে পারে না। এক রাতে ঘরে আগুন লেগে পোয়াতি বৌটা মারা যাওয়ার পর থেকে এভাবেই চলছে।
(৩)
বাড়ির উঠানে পৌঁছে জয়নাল জোরে গলা খাঁকারি দিল। সাথে সাথে ভেতরবাড়ি থেকে রমিলার মা বেরিয়ে এলো। জয়নালের হাত থেকে মাছের টুকরিটা নিয়ে রান্নাঘরে গেল। একটু পরে হুক্কায় আগুন সেজে দিয়ে গেল। জয়নাল উঠানে পাতা চৌকিটায় আধশোয়া হয়ে হুক্কায় টান দিতে লাগল। আড়চোখে কাকতাড়ুয়াটার দিকে একবার তাকালো।
ওটা বানানোর মধ্যে একটা ঢক আছে। সাধারণত মাটির হাড়িতে চক বা কাঠকয়লা দিয়ে কোনোমতে চোখমুখ এঁকে একটা বাঁশের ডগায় বসিয়ে ছেঁড়া জামা পরিয়ে কাজ সারা হয়। শস্যক্ষেতে পাখি তাড়ানোর জন্যে ওটুকুই যথেষ্ট। কিন্তু এটায় জামার বদলে একটা শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে। বাঁশের চারধার খড়ে মোড়ানো। মাটির হাড়িতে চোখমুখ আঁকা হয়েছে খুব যত্ন করে। জিনিসটা পুড়িয়ে ফেলবে বলে আনা। তবে এখন মনে হচ্ছে এটাকে কাজে লাগানো যায়।
ভাত-ডাল রান্নাই ছিল। রমিলার মা দ্রুত হাতে মাছের সালুন রান্না করে ভাত বেড়ে জয়নালের সামনে দিয়ে গেল। জয়নাল খেয়েদেয়ে ক্ষেতের দিকে যাবে। বর্গা জমিতে পেঁয়াজ বুনেছে এবার। পেঁয়াজ তোলার সময় কাছিয়ে এসেছে। এই সময়টায় চোরের উপদ্রব হয়। চোর ঠেকাতে পাহারা দিতে হয় রাত জেগে। ক্ষেতের সাথে একটা টং ঘরের মতো বানিয়ে নিয়েছে। ওইখানেই রাত কাটছে কিছুদিন ধরে।
তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে হুক্কা, কুপি আর দেয়াশলাই নিয়ে ক্ষেতের পথ ধরল জয়নাল। কাকতাড়ুয়াটাও নিলো সাথে। ক্ষেতের মাঝে ওটাকে বসিয়ে রাখবে। তাহলে দিনের বেলা পাখির উৎপাত কমবে।
(৪)
রাত্রী দ্বিপ্রহর। জয়নালের কাঁচা ঘুম ভেঙে গেছে ভ্যাঁপসা গরমে। এতক্ষণ বাতাস ছিল, গরম কিছু কম লাগত। হঠাৎ করে প্রকৃতি থম মেরে গেছে, গাছের একটা পাতাও নড়ে না। আকাশে ঘন মেঘ।
জয়নালের কপালে চিন্তার ভাঁজ। লক্ষণ ভালো না। বাতাস বন্ধ মানে যে-কোনো সময় ঝড় উঠবে। টংঘরে ঝড় সামলানো মুশকিল। জয়নাল চিন্তিতমুখে টংঘরের বাইরে এসে দাঁড়াল। লুঙ্গীর খুট থেকে বিড়ির প্যাকেট বের করে একটা বিড়ি ঠোঁটে গুঁজল। কিন্তু তাতে আগুন ধরাতে পারল না। সামনে যে দৃশ্যটা দেখল তাতে আতঙ্কে বরফের মতো জমে গেল যেন। বিড়িটা টুপ করে খসে পড়ল ঠোঁট থেকে।
জয়নাল কাকতাড়ুয়াটাকে ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। সেটাই এখন জীবন্ত হয়ে সাবধানী গ্রাম্যবধুর মতো ক্ষেতের আইল ধরে ধীরপায়ে হেঁটে আসছে তারই দিকে!
ভয়ে চিন্তার ক্ষমতা হারিয়েছে জয়নাল। একছুটে পালিয়ে যাওয়ার কথাটাও মাথায় আসছে না তার।
কাকতাড়ুয়াটা এখন জয়নালের সামনে দাঁড়িয়ে! হার্ট এটাকের জন্যে এটুকুই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আতঙ্কের এ তো সবে শুরু! খড়-বাঁশের মেকী জিনিসটা ওর সাথে কথা বলতে শুরু করেছে-
“আমারে চিনবার পারছেন? আমি আফনের মরিয়ম!”
জয়নাল কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের কানকেই সে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাকতাড়ুয়া কোথায়? এ তো তার স্ত্রী মরিয়ম!
মরিয়ম এবার ধাই করে চোখের পলকে জয়নালের মুখের একদম সামনে চলে এলো
“আমারে অহনও চিনবার পারস নাই হারামির পুত?”
মরিয়মের সুন্দর মুখটা দেখতে দেখতে বীভৎস হয়ে উঠল। পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়া চেহারা। চুলহীন মাথা। গালের মাংস ভেদ করে দাঁতগুলো দেখা যাচ্ছে। শরীর থেকে মাংস খুলে খুলে পড়ছে। মাংস পোড়া গন্ধ পাচ্ছে জয়নাল।
জয়নাল আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না, জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
…………………………….
পরদিন সকালে লোকজন জয়নালকে পেঁয়াজ ক্ষেতের ওপর অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। জ্ঞান ফেরার পর থেকে সে ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা কাকতাড়ুয়াটাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে জড়ানো কণ্ঠে মরিয়ম মরিয়ম বলে চেঁচাতে থাকে। মানুষ কিছুই বুঝতে না পেরে একে অন্যের দিকে তাকায়।
সময়ের সাথে সাথে জয়নালের পাগলামি বাড়তে থাকে। থেকে থেকে আঁতকে ওঠে। ঘুমের মধ্যে চেঁচায়।
রাতদিন একটা জমাট আতঙ্ক জয়নালকে আচ্ছন্ন করে রাখে। স্বপ্নে-জাগরণে মরিয়মের ঝলসান বিকৃত মুখটা সারাক্ষণ চোখের সামনে দেখে। মানুষকে আঙুল দিয়ে দেখায়, কেউ তা দেখতে পায় না। ওরা ভাবে জয়নালের মাথাটা বুঝি খারাপ হয়ে গেছে!
জয়নাল বেশিদিন এসব নিতে পারে নি। এক রাতে দগ্ধ মরিয়মকে আবার পোড়াতে ঘরে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। সেই আগুনে পুড়ে মরে জয়নাল নিজেই; যেভাবে পাঁচ বছর আগের সেই রাতে তার দেয়া আগুনে পুড়ে মরেছিল মরিয়ম।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
গল্পের নায়ক জয়নালের সাথে এক রাতে ঘটা কিছু আতঙ্কজনক ঘটনা নিয়ে এই গল্প।
৩০ সেপ্টেম্বর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
৪৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৫